চাকরিক্ষেত্রে কভার লেটার (Cover Letter) কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা হয়তো অনেক চাকরিপ্রার্থীই জানেন না। কভার লেটার চাকরিপ্রার্থীকে নিয়োগকর্তার কাছে পরিপূর্ণভাবে তুলে ধরতে পারে।
বিভিন্ন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অথবা প্রতিষ্ঠানে আবেদনের ক্ষেত্রে জীবনবৃত্তান্ত বা সিভি জমা দিতে হয়। সিভির সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ সংযুক্তি হলো কভার লেটার। অনেকসময় নিয়োগকর্তা কভার লেটার দেখেই প্রার্থী নির্বাচন করেন। কারণ তার কাছে অসংখ্য সিভি জমা হয়। তাই, কভার লেটারে নিজের যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা তুলে ধরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কভার লেটার লেখার সময় অনেকে দ্বিধায় পড়ে যান, কী লিখব, কিভাবে লিখব? আজকে আমরা জানবো কভার লেটার কী, কিভাবে লিখতে হয়, কী সংযুক্ত করা উচিত এবং পেশাদার কভার লেটারের বেশ কিছু প্রকারভেদ।
কভার লেটার কী?
সিভির সাথে এক পৃষ্ঠার, কাঙ্খিত পদের উদ্দেশ্যে লেখা আবেদনপত্রই কভার লেটার। যেখানে মূলত আপনি কতটা আগ্রহী ও দায়িত্বশীল হতে পারবেন এবং অন্য প্রার্থীর তুলনায় কেন আপনি অধিক যোগ্যতাসম্পন্ন সেটি তুলে ধরা হয়।
নিয়োগকর্তা প্রথমে আপনার সিভি নয় বরং কভার লেটার দেখবেন। এটি নিয়োগকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণের বড় হাতিয়ার। একটি নির্দিষ্ট পদের জন্য আপনি কী কারণে যোগ্য, পদের দায়িত্বগুলো কিভাবে আপনি পালন করতে পারবেন- নিয়োগকারী আপনার কভার লেটারের মাধ্যমে তা বুঝতে পারেন। আপনার জীবনবৃত্তান্তে যা রয়েছে তা কেবল পুনরাবৃত্তি করবেন না। মনে রাখবেন, কভার লেটার আপনার যোগ্যতা ও সক্ষমতার প্রতিফলন। তাই এটিকে যতটা সম্ভব অনন্য হিসেবে তুলে ধরতে চেষ্টা করুন।
কভার লেটারের প্রকারভেদ
কভার লেটার বিভিন্ন প্রকারের হয়। ইন্টারনেটের সুবাদে আপনি কভার লেটার লেখার অনেক টেম্পলেট পেয়ে যাবেন। তবে উল্লেখযোগ্য তিন প্রকার কভার লেটার রয়েছে। এগুলো হলো-
১. অ্যাপ্লিকেশন লেটার
বিজ্ঞাপন দেয়া হয়েছে বা আপনি জানেন যে কোনো প্রতিষ্ঠান লোক নিচ্ছে এমন চাকরির ক্ষেত্রে অ্যাপ্লিকেশন লেটার ব্যবহার করা হয়।
২. প্রসপেক্টিং লেটার
ধরুন, প্রতিষ্ঠান লোক নিয়োগেরন কোনো বিজ্ঞাপন দেয়নি। তবে আপনি ধারণা করছেন তারা লোক নিতে পারে। এক্ষেত্রে সম্ভাব্য কোনো পদের জন্য আবদনের ক্ষেত্রে প্রসপেক্টিং লেটার ব্যবহার করা হয়। এটিকে চাকরি অনুসন্ধান লেটারও বলা যেতে পারে।
৩. নেটওয়ার্কিং লেটার
অনেক সময় প্রতিষ্ঠানগুলো বিজ্ঞাপন না দিয়ে নিজেদের পরিচিতদের মধ্য থেকে লোক নিয়োগ করে। সেক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা বা কর্তা ব্যক্তিদের সাথে পরিচিত হওয়া বা নেটওয়াকিং গড়ে তোলার জন্য এ ধরনের লেটার দরকার হতে পারে। এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের কর্তাদের একটা ধারণা থাকে যে আপনি চাকরি বা কাজ খুঁজছেন।
নেটওয়ার্কিং লেটার চাকরির সন্ধানে তথ্য উপস্থাপন করে। এধরনের কভার লেটার নতুন কাজের সুযোগ খুঁজে পেতে এবং মূল্যবান সংযোগ তৈরির জন্য অত্যন্ত কার্যকর উপায় হতে পারে।
লক্ষ্য রাখবেন, কোন ধরনের কভার লেটার লিখবেন, তা অনেক ক্ষেত্রে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করে দেয়া হতে পারে। তবে উল্লেখ না থাকলে বিজ্ঞপ্তি দেয়া চাকরির জন্য অ্যাপ্লিকেশন লেটার স্টাইলে কাভার লেটার লিখতে হবে।
তবে যে পদ্ধতিতেই লেটার লেখেন না কেন, তা যেন নিয়োগকর্তার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। নিয়োগকর্তার নিকট নিজেকে সর্বোচ্চ সেরা উপায়ে তুলে ধরতে চেষ্টা করুন কভার লেটারের মাধ্যমে। যথাসম্ভব পুনরাবৃত্তি এড়িয়ে স্পষ্ট ও প্রাঞ্জল করে তুলুন।
কভার লেটারে কী অন্তর্ভুক্ত করা উচিত?
কভার লেটারে আপনার নিজের সম্পর্কে লিখুন। সিভির সাথে যেন মিলে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখবেন। এটি আপনার সিভির সম্পূরক হিসেবে কাজ করে। তাই কভার লেটারে যোগ্যতার ব্যাখ্যা না দিয়ে আগ্রহ প্রকাশে মনোযোগ দিন। আপনার আবেদনকৃত পদের জন্য আপনি কতটা সাবলীল ও উপযুক্ত সেটা উল্লেখ করুন।
একটি কভার লেটার প্রায়শই আপনার সম্ভাব্য নিয়োগকর্তার সাথে প্রথম দিকের লিখিত যোগাযোগ, প্রথম সমালোচনামূলক ধারণা তৈরি করে। তাই, লেখার মাঝে ত্রুটি এড়িয়ে চলুন। সংস্থা / প্রতিষ্ঠানের নামের উল্লেখ এবং কাজের বিবরণ যেন ঠিকঠাক থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখুন।
আপনার কভার লেটারটি কার্যকর করতে আপনার আকাঙ্ক্ষিত চাকরির সাথে প্রাসঙ্গিক অভিজ্ঞতা, দক্ষতার উদাহরণসহ উল্লেখ করতে পারেন। দক্ষতাগুলো অবশ্যই সিভিতে সংযুক্তির বাইরের হতে হবে।
আপনি কাজটি করতে কতটা আগ্রহী সেটা লিখতে পারেন। অথবা আপনি কাজটি শেখার জন্য কিভাবে পরিশ্রম করছেন তার উল্লেখ করতে পারেন। এতে করে নিয়োগকর্তার আপনার প্রতি ইতিবাচক ধারণা তৈরি হবে।
অল্প কথায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো গুছিয়ে লিখুন।একই ধরনের বাক্য বার বার ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। চেষ্টা করুন বাক্যগুলোর গঠনে পরিবর্তন আনতে। নিয়োগকারীর মনযোগ ধরে রাখতে পারে এমন শব্দ ব্যবহার করুন।
কভার লেটারে কী অন্তর্ভুক্ত করা উচিত নয়?
এমন কিছু জিনিস রয়েছে যা আপনার লেখার কভার লেটারে অন্তর্ভুক্ত করার দরকার নেই। বরং এগুলো সংযুক্ত করলে আপনার সিভি বাতিল হতে পারে। তাই কভার লেটার লেখার সময় এই বিষয়গুলো সতর্কতার সাথে লক্ষ্য রাখা উচিত।
কভার লেটার আপনার কর্মক্ষেত্রে যোগ্যতার সাথে সম্পর্কিত, ব্যক্তিগত জীবনের সাথে নয়। তাই কখনো আপনার ব্যক্তিগত তথ্য, কথা অথবা কাজের উল্লেখ করবেন না।
যদি এমন হয়, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে কোনো দক্ষতার কথা উল্লেখ করা আছে কিন্তু আপনার সেই দক্ষতা নেই তবে তা উল্লেখ না করাটাই সমীচীন। অথবা, কাজের সাথে প্রাসঙ্গিক নয় কভার লেটারে এমন কোনো দক্ষতার উল্লেখ করবেন না।
চাকরি, বেতন, তফসিল বা সুবিধা সম্পর্কে আপনার যদি প্রশ্ন থাকে তবে তাদের উল্লেখ করা ঠিক হবে না।
এমনকি আপনি বেতনের পরিমাণ নির্ধারণ করে কখনো কভার লেটারে উল্লেখ করবেন না।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয় সেটি হলো অতিরিক্ত না লেখা। চেষ্টা করবেন কভার লেটার যেন সংক্ষিপ্ত ও অল্প কথায় শেষ হয়। কোনো পুনরাবৃত্তি যেন না হয়। আপনি যদি খুব বেশি লেখেন তবে নিয়োগকর্তা আপনার লেখাটি পড়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারেন। তাই আপনার কভার লেটার আকর্ষণীয় করতে যথাসম্ভব সংক্ষিপ্ত রাখুন।
কিভাবে কভার লেটার সাজাবেন?
একটি ভালো কভার লেটারের বৈশিষ্ট্য হলো প্রথম দর্শনেই নিয়োগকর্তার মনোযোগ আকর্ষণ করা। যে পদ্ধতি নির্বাচন করুন না কেন সেখানে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো থাকা উচিত।
- আপনি কোন কাজের জন্য আবেদন করছেন (জব টাইটেল থাকা উচিত)
- আপনি কিভাবে কাজ সম্পর্কে শিখলেন (যদি আপনার রেফারেন্স থাকে তার উল্লেখ থাকা উচিত )
- আপনি কেন কাজের জন্য যোগ্য (নির্দিষ্ট যোগ্যতার উল্লেখ থাকা উচিত)
- আপনি কেন এই প্রতিষ্ঠান বা সংস্থায় কাজ করতে চান (কাজের সাথে আপনার কোন দক্ষতা মেলে তার উল্লেখ থাকা উচিত )
এই চারটি বিষয় লক্ষ্য রেখে আপনি যদি আপনার কভার লেটার কাস্টমাইজ করেন তবে আপনার কভার লেটার গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পাবে। নিয়োগকর্তা আপনার লেখাটি পড়তে আগ্রহী হবেন।
কিভাবে কভার লেটার তৈরি করবেন?
আপনার কভার লেটারে যা লিখবেন, সেটা যেন আকাঙ্ক্ষিত পদের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হয়। প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি, ওয়েবসাইট, লিংকডইন প্রোফাইল থেকে বিস্তারিত জেনে সে অনুযায়ী লিখার চেষ্টা করবেন। ১০টি প্রতিষ্ঠানে আবেদন করলে ১০ রকমের লেখা লিখতে হবে। ভিন্ন ভিন্ন প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন কাজের কভার লেটারের বিষয় বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। তাই সময় নিয়ে নিজের মতো করে কভার লেটার লিখুন এবং আকর্ষণীয় করে তুলুন। কারণ এটির উপর নির্ভর করবে আপনি চাকরির ইন্টারভিউর জন্য নির্বাচিত হবেন কি-না।
কভার লেটার সাধারণত ইংরেজি ভাষায় লিখতে হয়। তাই ভালো কভার লেটার লিখতে হলে ইংরেজি ভাষায় নজর দেয়া প্রয়োজন। একটি সম্পূর্ণ কভার লেটারে ৬টি বিষয় থাকে।
১. শিরোনাম (Header)
২. অভিবাদন (Salutation)
৩. পরিচিতি (Introduction)
৪. মূল অংশ (Body)
৫. পরিসমাপ্তি (Closing)
৬. স্বাক্ষর (Signature)
কভার লেটারে প্রতিটি অংশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে প্রার্থীর যোগ্যতা তুলে ধরতে।
শিরোনাম (Header)
কভার লেটারের প্রথম ধাপ এটি। আপনার সার্টিফিকেট নাম এবং সঠিক ঠিকানা উল্লেখ করুন। কোনোভাবেই নিজের ডাকনাম অথবা অর্ধেক ঠিকানা উল্লেখ করবেন না। যোগাযোগের বৃত্তান্ত হিসেবে শুধুমাত্র নিজের ইমেইল ও লিংকড ইন প্রোফাইল থাকলে তার উল্লেখ করুন। কেননা আপনার বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা সিভিতে উল্লেখ করা থাকবে। যদি না থাকে সেক্ষেত্রে উল্লেখ করতে পারেন। নিম্নোক্ত পদ্ধতিতে আপনার যোগাযোগের তথ্য অন্তর্ভুক্ত করা উচিত:
First and Last Name
Street Address
City, State Zip
Phone
Email
নিয়োগকর্তার সঠিক পদবিসহ নাম,ঠিকানা উল্লেখ করবেন। এক্ষেত্রে যেন ভুল না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখুন।
অভিবাদন (Salutation)
“Dr./Mr./Ms সম্বোধন দিয়ে অভিবাদন শুরু করা যেতে পারে। বর্তমানে Sir/Madam না লিখে নিয়োগকর্তার শেষ নাম উল্লেখ করা হয়। ধরুন আপনি যার বরাবর আবেদন করছেন তার নাম৷ Mr. Nurul Ahmed এক্ষেত্রে আপনি তাকে Mr. Ahmed বলে সম্বোধন করতে পারেন। আপনি যদি নিয়োগকর্তার নাম না জানেন তবে Hiring Manager বলেও অভিবাদন করতে পারেন। এই পদ্ধতি প্রচলিত পদ্ধতির তুলনায় বেশ গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি।
[সম্পাদকীয় নোট : তবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আমাদের মতামত হলো- Sir/Madam লেখাই ভালো। কারণ আমাদের সমাজের উচ্চপদস্থ লোকেরা নিম্নপদস্থদের মুখে নিজের নাম শুনতে অভ্যস্ত না। এটাকে তারা বেয়াদবি মনে করতে পারেন।]
পরিচিতি (Introduction)
শুরুতে আপনার পরিচয় দিন তবে গতানুগতিক বৈশিষ্ট্যের বাইরে গিয়ে। নিজেকে আলাদাভাবে উপস্থাপন করতে পারলে নিয়োগকর্তার মনোযোগ আকর্ষণে সক্ষম হবেন। ভূমিকা এবং প্রথমেই মনোযোগ আকর্ষণ করা অত্যন্ত জরুরি।
এরপর আপনি কোন মাধ্যমে কাজটি সম্পর্কে কিভাবে জানতে পেরেছেন স্বল্পকথায় তার উল্লেখ করুন। এতে করে নিয়োগকর্তার আপনার সম্পর্কে মৌলিক একটি ধারণা তৈরি হবে।
মূল অংশ (Body)
একটি অনুচ্ছেদে বা দুটি অনুচ্ছেদে ব্যাখ্যা করুন যে আপনি কেন চাকরিতে আগ্রহী এবং কেন আপনি এই পদের জন্য একজন সেরা প্রার্থী। মূল অংশে যতটা সুস্পষ্ট এবং সাবলীলভাবে আপনার যোগ্যতা ও দক্ষতা তুলে ধরতে পারলে আপনি অন্যদের তুলনায় একধাপ এগিয়ে থাকবেন। আপনার চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে।
আপনি কিভাবে আপনার দক্ষতা কাজে লাগিয়ে সফলতা অর্জন করেছেন তা তুলে ধরুন। আপনি কেন কাজটি করতে আগ্রহী এবং কতটা আগ্রহী সেটা লেখার মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলুন। এতে করে নিয়োগকারী আপনার সিভি দেখতে আগ্রহী এবং কৌতুহলী হবেন। আপনি যদি উক্ত কোম্পানি সম্পর্কে কোনো ধারণা না রাখেন, তবে তা আপনার প্রত্যাখ্যাত হওয়ার আশঙ্কা বাড়িয়ে দেয়। এ ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করুন।
পরিসমাপ্তি (Closing)
পরিশেষে আপনি উক্ত প্রতিষ্ঠান/সংস্থানের সাথে কাজ করতে কতটা ইচ্ছুক এবং আপনার যোগ্যতা ও দক্ষতা কিভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে তার উল্লেখ করুন। নিয়োগকর্তার নিকট আপনার যোগ্যতা বিবেচনা করে ইন্টারভিউ কলের জন্য আবেদন করুন।
অবশ্যই কভার লেটারে আপনার জন্য চাকরি কতটা প্রয়োজনীয় সেটা উল্লেখ না করে বরং আপনাকে সেই প্রতিষ্ঠান/সংস্থার জন্য কতটা দরকার তার উল্লেখ করবেন।
শেষ পরিচ্ছদে নিয়োগকর্তাকে বিদায় সম্ভাষণ জানাবেন। এক্ষেত্রে আপনি Best Regards/Sincerely /Thank you শব্দের ব্যবহার করতে পারেন।
স্বাক্ষর (Signature)
সর্বশেষ পরিচ্ছদে প্রশংসাসূচক পরিসমাপ্তির পর আপনার স্বাক্ষর সংযুক্ত করুন। যদি ইমেইল করেন তবে টাইপ করে নিজের নাম স্বাক্ষর করতে পারেন।
এই ধাপে আপনার কভার লেটারটি সম্পূর্ণ হবে।
কিভাবে কভার লেটার ফরম্যাট করবেন?
কভার লেটার সুন্দর এবং আকর্ষণীয় করে উপস্থাপনের জন্য নির্দিষ্ট ফরম্যাটে থাকা অত্যাবশ্যক। আপনার লেটার যতটা পেশাদার হবে নিয়োগকারী ততটা আগ্রহী হবে। সহজ, সাধারণ এবং সাবলীল ও সংক্ষিপ্তভাবে কভার লেটার লেখা মোটেই সহজ কাজ নয়। এক্ষেত্রে অনেক অনুসন্ধান ও পরিশ্রম করতে হয়।
কভার লেটারের ফন্ট যেন সহজবোধ্য এবং পড়তে সুবিধা হয় সেদিকে খেয়াল রাখবেন। Arial, Calibri, Georgia, Verdana, and Times New Roman প্রভৃতি ফন্টের লেখা পড়তে সুবিধা হয়৷ লেখার সময় অবশ্যই মাথায় রাখবেন লেখা যেন বড় অথবা বেশি ছোট না হয়। ১০/১২ সাইজের ফন্ট সাবলীলভাবে পড়া যায়।
আপনার লেখার ফরম্যাটে উপরে এবং বামপাশে ১ ইঞ্চি করে জায়গা রেখে নিবেন। এতে করে লেখাটি প্রফেশনাল হবে। প্রতিটি অনুচ্ছেদ(Paragraph), শিরোনাম(Header), পরিসমাপ্তি(Closing),
স্বাক্ষরের (Signature) মাঝে অবশ্যই স্পেস দেয়া উচিত।
চেষ্টা করবেন লেটারটি যেন এক পৃষ্ঠার মাঝেই সম্পন্ন হয়। এক্ষেত্রে ফন্ট সাইজ কমিয়ে দিতে পারেন তবে তা যেন পড়তে এবং বুঝতে অসুবিধা সৃষ্টি না করে।
এই ফরম্যাট অনুসরণ করলে আপনার কভার লেটার পেশাদার হয়ে উঠবে। নিয়োগকারীর মনোযোগ আকর্ষণ করতে সক্ষম হবেন। এছাড়াও আপনি যোগ্য হিসেবে বিবেচিত হবেন।
কভার লেটার সম্পাদনা এবং প্রুফ দেখা
সিভির কভার লেটার লেখা খুব চ্যালেঞ্জিং। শুধুমাত্র নবীনদের জন্য না, অভিজ্ঞ পেশাদারদের জন্যও। তাই সিভি কভার লেটার লেখার নিয়ম জেনে নিয়ে লিখতে হবে নির্ভুলভাবে। প্রত্যেক পদ ও প্রতিষ্ঠানের জন্য আলাদা আলাদাভাবে কভার লেটার লিখতে হবে। অনেকেই একই ধরনের লিখে ভুল করে থাকেন।
কভার লেটার এমনভাবে লিখতে হয় যেন নিয়োগকারী আপনার সম্পর্কে আগ্রহী হন। আপনার কভার লেটারটি যেন ১০-১৫ সেকেন্ডের মাঝেই পড়ে শেষ করা যায়। তাই এতে ভুল এড়িয়ে চলুন সতর্কতার সাথে। কভার লেটারে ভুল ধরা পড়লে নিয়োগদাতা ওই প্রার্থীর প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন।
কভার লেটার লেখার পর তা জোরে জোরে পড়ুন। এতে করে বোঝা যায় কোথায় কোন শব্দচয়নে ভুল রয়েছে অথবা কোথায় কতটা পরিবর্তন করা উচিত। অন্যকে দিয়ে প্রুফরিড করান। এতে করে আপনার কাছে যে ভুল ধরা পড়েনি সেটা অন্যকেউ ধরতে পারবে। এতে করে আপনার লেটার নির্ভুল এবং সুন্দর হবে। ফলে নিয়োগকর্তার কাছেও আপনার সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা তৈরি হবে। তাই কভার লেটার সম্পাদনা ও প্রুফরিডিং অত্যন্ত জরুরি এবং প্রয়োজনীয় একটি ধাপ।
পরিশেষে বলা যায়, সিভির মতো কভার লেটারও প্রার্থীর চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। আমাদের দেশে অনেক প্রতিষ্ঠান সিভির সাথে কভার লেটার চেয়ে থাকে। এর মাধ্যমে আপনার লিখিত যোগাযোগ দক্ষতা বিবেচনা করে থাকেন তারা। তাই চেষ্টা করবেন কভার লেটারের শুরু যেন আকর্ষণীয় বাক্যের মাধ্যমে এবং শেষটা যেন দৃঢ় হয়। ভাষার দক্ষতা দেখাতে গিয়ে যেন ভুল না হয়। আপনার কভার লেটার নির্ধারণ করতে পারে আপনি কতটা যোগ্য কাঙ্ক্ষিত পদ/কাজের জন্য।
তথ্যসূত্র : দ্যা ব্যালেন্স ক্যারিয়ার