খুব স্বল্প সময়ের প্রশিক্ষণ নিয়ে যে কেউ বাটিক প্রিন্টকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করতে পারে। অন্যান্য কাজের ফাঁকে খুব কম সময়ে বাড়িতে করা যায় কাপড়ে বাটিক ছাপার কাজ।
বাটিক প্রিন্ট কী?
কাপড়ের কিছু অংশে নকশা এঁকে তার পর নকশাটি মোম দিয়ে ঢেকে সেটা রঙে ডুবিয়ে যে পদ্ধতিতে কাপড় রঙ করা হয় তাকে বাটিক প্রিন্ট বলে। এ ক্ষেত্রে মোম লাগানো অংশে রঙ ঠিকমতো প্রবেশ করতে পারে না। ফলে তা অনবদ্য রূপলাভ করে। বাটিক প্রিন্ট শুধু কাপড়েই নয়, চামড়ার ওপরও করা যায়। বাটিক শব্দটি ইন্দোনেশিয়ান ভাষা থেকে এসেছে। এ শব্দটি বাংলা করলে দাঁড়ায় একটি বিন্দু বা একটি ফোঁটা।
বাটিকের জনপ্রিয়তা
বাংলাদেশে বাটিক হস্ত ও কারুশিল্প হিসেবে ব্যাপক জনপ্রিয়। ষাটের দশকে গুটিকয়েক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এ শিল্প বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। হাল ফ্যাশনে বাটিক প্রিন্টের উপস্থিতি বেশ চোখে পড়ার মতো। বাটিক প্রিন্টের শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ-ওড়না, স্কার্ট, ফতুয়া, স্কার্ফ, শার্ট, পাঞ্জাবি ইত্যাদি দেখতে হয় অত্যন্ত আকর্ষণীয়। ফলে তা আরামদায়ক ও ফ্যাশনেবল পোশাক হিসেবে সবার মনে সহজেই স্থান করে নিয়েছে। বাটিকের গজ কাপড়ও পাওয়া যায় বেশ সুলভে। তাই গজ কাপড় কিনে অনেকেই বানিয়ে নেন নিজের পছন্দমতো পোশাক।
বাজার সম্ভাবনা
শহর বা গ্রাম সব জায়গাতেই বাটিক প্রিন্টের কাপড় খুব জনপ্রিয়। বাটিক প্রিন্ট করা কাপড়, শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, ফতুয়া, পাঞ্জাবি, বিছানার ছাদর, কুশন কভার ইত্যাদি বাজারে খুচরা ও পাইকারি দামে বিক্রি করা যায়। উদ্যোক্তা নিজেই দোকানে গিয়ে বাটিক প্রিন্টের কাপড় সরবরাহ করলে পাইকারের লাভের অংশটুকুও নিজের থাকে। আবার সরাসরি নিজে দোকান দিয়ে তাতে নিজে রঙ করা কাপড় বিক্রি করলে লাভ বেশি হবে। তবে এতে পুঁজি বেশি লাগে এবং স্থায়ী সম্পদের খরচ বেশি পড়ে। পাড়া-প্রতিবেশীর কাছে বা বিভিন্ন মেলা কিংবা হাটে বাটিক প্রিন্টের কাপড় বিক্রি করা সম্ভব। এ ছাড়া শহরে অবস্থিত কারু ও হস্তশিল্পের দোকানগুলোয় বাটিক প্রিন্টের কাপড়ের অনেক চাহিদা আছে। এসব দোকানগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করে বাটিক প্রিন্ট করা কাপড় বিক্রি করা যায়।
মূলধন
বাটিক প্রিন্ট করার জন্য প্রয়োজনীয় স্থায়ী উপকরণ কিনতে আনুমানিক ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকার প্রয়োজন হবে। এ ছাড়া আটটি শাড়ির বাটিক প্রিন্ট করার জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল কিনতে প্রায় ২ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকার প্রয়োজন হবে। যদি ব্যক্তিগত পুঁঁজি না থাকে, তাহলে মূলধন সংগ্রহের জন্য নিকটাত্মীয়স্বজন, ঋণদানকারী ব্যাংক, সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের (এনজিও) সঙ্গে যোগাযোগ করা যেতে পারে। এসব সরকারি, বেসরকারি ব্যাংক ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান (এনজিও) শর্তসাপেক্ষে ঋণ দিয়ে থাকে।
প্রশিক্ষণ
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক), যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর বাটিকের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। বাংলাদেশের প্রায় সব জেলাতেই এদের প্রশিক্ষণকেন্দ্র আছে। এসব প্রশিক্ষণকেন্দ্র ও বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থের বিনিময়ে বাটিক প্রিন্ট শিখে নেওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া অভিজ্ঞ কারো কাছ থেকে বাটিক প্রিন্টের বিস্তারিত জেনে নিলে বাটিক প্রিন্ট করতে সুবিধা হবে।
সূত্র : আমাদের সময়