মানুষ সব সময় প্রকৃতির কাছে থাকতে চায়। কারণ প্রকৃতি মনকে আন্দোলিত করে। জীবনে আনে ছন্দ । প্রকৃতিপ্রেমী মানুষরাই হয়তো নিজের ঘরকে প্রকৃতিময় করে তুলতে এককালে শুরু করেছিলেন বনসাই। শখের বশে তারা যে কাজটি শুরু করেছিলেন, কালের প্ররিক্রমায় সেটি হয়ে উঠেছে টাকা উপার্জনের একটি মাধ্যমও। বর্তমানে বনসাইয়ের কদর পৃথিবীজুড়ে।
বনসাই কী?
বনসাই শব্দটি জাপানি শব্দ। বন শব্দের অর্থ ছোট পাত্র। আর সাই শব্দের অর্থ গাছ। অর্থাৎ ছোট পাত্রে বিশেষ পদ্ধতির গাছ সাজানোকে বলা হয় বনসাই। বনসাইয়ের শুরুটা চীনে, কিন্তু বনসাইয়ের বিকাশ হয় জাপানে।
শুরু যার শখ থেকে
সাধরণত শখ থেকেই অনেকে শুরু করেন বনসাই। তবে এই শখকে কাজে লাগিয়ে অনেকে বেছে নিয়েছেন আয়ের পথ। বনসাই ফ্ল্যাটের বেলকনির সৌন্দর্য বাড়ায়। হোটেল রেস্তোরার সৌন্দর্যবর্ধনে এখন বনসাই অনিবার্য। এমনকি বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মঞ্চ সাজানোও বনসাই ছাড়া পূর্ণতা পায় না।
চাষ করবেন কীভাবে?
বনসাইয়ের জন্য প্রথমে যে কাজটি করতে হবে তা হলো গাছ নির্বাচন। আমাদের দেশে সাধারণত দেশি গাছের মধ্যে রয়েছে করমচা, কদবেল, তেতুল, কৃষ্ণচুড়া, বকুল, নিম, পলাশ প্রভৃতি। আর বিদেশি গাছের মধ্যে রয়েছে পাইন প্রভৃতি। টবের মধ্যে দোআশ মাটির সাথে শুরকি, একটু রাসায়নিক সার বেশ মোটা দানার বালি একত্র করে পানি দিতে হবে। রোদ নয়, চারদিকে থেকে আলো বাতাস আসে এমন জায়গায় বনসাই রাখতে হবে- জানালেন রেডিয়েন্ট ইনস্টিটিউট অব ডিজাইনের চেয়ারপারর্সন গুলশান নাসরিন চৌধুরী। গাছের পাতা বড় হলে তা কেটে ফেলতে হবে। কাটার জন্য বাজারে যন্ত্র পাওয়া যায়।
কোথায় চাষ করবেন?
ফ্ল্যাটের বেলকনিতে বা বাসার ছাদে অর্থাৎ যেখানে আলো বাতাসের ব্যবস্থা রয়েছে সেখানেই বনসাই চাষ করা যেতে পারে। তবে রোদ আছে এমন জায়গায় বনসাই চাষ করা যাবে না। আবদ্ধ রুমেও না। কারণ আলো বাতাসের অভাবে গাছ মারা যেতে পারে। মোটকথা পর্যাপ্ত আলো বাতাস আছে এমন জায়গা নির্বাচন করতে হবে বনসাইয়ের জন্য।
বিনিয়োগ ও আয় রোজগার
বাড়িতে বসে ৫০০০ থেকে ৭৫০০ টাকা বিনিয়োগ করে মাসে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব। সাধারণত বাড়িতে, উৎসবে, হাসপাতাল, ব্যাংক, রেস্তোরা, বহুজাতিক কোম্পানি, শপিং কমপ্লেক্স সাজানোর জন্য বনসাই প্রয়োজন হয়। যে কেউ প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করে শুরু করতে পারেন বনসাইয়ের কাজ ।
কোথায় নেবেন প্রশিক্ষণ?
বছরের বিভিন্ন সময়ে বিজ্ঞাপন দিয়ে এর প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। যেমন-
* রেডিয়েন্ট ইনস্টিটিউট অব ডিজাইন
অর্কিড প্লাজা, বাড়ি নং : ০২
রোড নং : ১৫/ পুরাতন ২৮
ধানমন্ডি, ঢাকা-১২০৯
* নাজমুল বনসাই স্টুডিও
৩৪/বি পূর্ব বাসাবো
কদমতলা রোড, ঢাকা-১২১৪
সা ক্ষা ৎ কা র
যাদের মধ্যে সৃজনশীলতা আছে, তাদের সবারই এ বিষয়ে এগিয়ে আসা উচিত : গুলশান নাসরিন চৌধুরী
রেডিয়েন্ট ইনস্টিটিউট অব ডিজাইনের চেয়ারপার্সন গুলশান নাসরিন চৌধুরী বলেন, বনসাই করে অনেক টাকা আয় করা যেতে পারে। শুধু এ ক্ষেত্রেও ক্যারিয়ার গড়া সম্ভব। তবে এর জন্য প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই। যে কোন শিক্ষিত লোক এ পেশায় স্বল্প টাকা বিনিয়োগ করে অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা আনতে পারে। তাছাড়া আমাদের ইনস্টিটিউট থেকে এ ব্যপারে সহযোগিতা করা হয়। তবে যেহেতু বনসাই সৌন্দর্য বর্ধনে মানুষ ব্যবহার করে তাই বনসাই চাষিকে সে দিকে নজর দিতে হবে। যারা পেশা হিসেবে এ কাজ করতে চায় তাদের অনুষ্ঠান ব্যবস্থাপনা এবং অন্দরসজ্জা প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে হবে।
যাদের মধ্যে সৃজনশীলতা আছে, তাদের সবারই এ বিষয়ে এগিয়ে আসা উচিত। মেয়েদের অবশ্যই সবার আগে এগিয়ে আসা উচিত। নিজেদের পায়ে দাড়ানো উচিত। কারণ কারিগরি শিক্ষার কোন বিকল্প নেই।
বনসাই করে সফল
বনসাই করতে ভালোবাসা ও আন্তরিকতা থাকতে হবে : নাজনিন আক্তার মিতা
গাছপালার সাথে থাকার শখ অনেক দিনের। দীর্ঘ চার বছর ধরে বনসাই করে আসছি। বনসাই করতে হলে ভালোবাসা ও আন্তরিকতা থাকতে হবে -জানান রেডিয়েন্ট সোসাইটির সম্পাদিকা নাজনিন আক্তার মিতা। তিনি বলেন, বনসাই একটি সৃষ্টি। এর মাধ্যমে আনন্দ পাওয়া যায়। বনসাই করতে হলে শ্রম দিতে হবে। এর পেছনে লেগে থাকতে হবে। বনসাই যেমন সহজ তেমন কঠিন। এটি একটি শিল্প। মিতা বলেন, কেউ যদি বনসাইয়ে ক্যারিয়ার গড়তে চায় তাহলে সম্ভব। তবে এর জন্য প্রয়োজন প্রশিক্ষণ। প্রশিক্ষণ ছাড়া বনসাই করা সম্ভব নয়। মৌলিক জ্ঞান না থাকলে এর থেকে সফলতা পাওয়া যায় না।
লেখক :
মোজাম্মেল হোসেন
প্রতিবেদক
ক্যারিয়ার ইনটেলিজেন্স
খুবই চমতকার। useful information.
আমি অশথ্ব , ছাতিম , বট , তেতুল , হিজল এবং জাম গাছের বনসাই করছি । এখন আমার প্রশ্ন হচ্ছে গাছের গোড়া বেশি মোটা হযে গেলে এবং ডাল বেশি ছাটলে কোন সমস্যা হবে কিনা । গাছের বযস যথাক্রমে ৩ , ২ , ১ , ৬ মাস