অ্যাকুরিয়াম : ঘরে প্রকৃতির আবহ

মো: রহমত উল্যাহ

বিশ্বে বেকারত্ব দিন দিন বাড়ছে। তবে বাড়ছে কাজের ক্ষেত্রও। আগে যা ছিল নিতান্তই শখের এখন তা হয়েছে উর্পাজনের একটি মাধ্যম। তেমনি এক ব্যবসা হচ্ছে অ্যাকুরিয়াম ব্যবসা। আগে মানুষ শুধু অ্যাকুরিয়াম ঘরের সৌন্দর্য হিসেবেই ভাবত। কিন্তু চাহিদার ব্যাপকতায় তা এখন রূপ নিয়েছে ভালো ব্যবসায়ে।

অ্যাকুরিয়াম ব্যবসায়ের ভবিষ্যৎ
অ্যাকুরিয়াম ব্যবসার ভবিষ্যৎ খুবই উজ্জ্বল। দিন দিন এর চাহিদা বাড়ছে। ঘর, অফিস কিংবা রেস্তোরা সাজানোর একটি বড় উপাদানে পরিণত হয়েছে এটি। একটি অ্যাকুরিয়াম পুরো একটি ঘরের চিত্রই বদলে দেয়। এটি প্রাকৃতিক পরিবেশ গড়ে তুলতে সাহায্য করে। মানুষকে প্রকৃতির কাছে নিয়ে যায়। ব্যবসায়ী সমাজ এবং নতুন উদ্যোক্তারা ক্রমেই ঝুঁকছেন এ ব্যবসায়ের দিকে।

মুলধন
ব্যবসায়ের কথা শুনলেই অনেকে নিরাশ হন মূলধনের কথা চিন্তা করে। কিন্তু আশার কথা হলো গতানুগতিক ব্যবসায়ের মত খুব বেশি মূলধন প্রয়োজন হয়না এতে।  আপনি যদি ভালো একটি পজিশন নিয়ে ব্যবসা করতে চান তাহলে সব মিলিয়ে ৩ থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা মুলধন দিয়ে আপনি এ ব্যবসা শুরু করতে পারবেন।

প্রয়োজনীয় উপকরণ ও প্রাপ্তিস্থান
অ্যাকুরিয়াম তৈরি করতে যে জিনিস দরকার তা হচ্ছে- কাঠ, পাথর কুচি, এয়ার মোটর, পাওয়ার ফিল্টার, রাবারের ফ্লেক্সিবল পাইপ, এয়ার এক্সিকিউটর, কালার টিউব লাইট। অ্যাকুরিয়ামে সামুদ্রিক পরিবেশ তৈরি করতে ঝিনুক, শামুক, প্রবাল, পাথর, শৈবাল, কৃত্রিম গাছ ইত্যাদি। আর অ্যাকুরিয়াম বক্স তৈরি করা যায় দুটি জিনিস দিয়ে। একটি কাঠ অন্যটি ফরমিকা। এগুলো পাওয়া যাবে কাঠ, ইলেকট্রনিক্স ও মোজাইকের দোকানে। চাইলে চায়না থেকেও অ্যাকুরিয়াম বক্স এবং অন্যান্য জিনিস আমদানি করা যায়।

মাছ প্রাপ্তি
কাঁটাবন মসজিদ মার্কেটের বিলাসী অ্যাকুরিয়ামের ব্যবসায়ী মফিজুল ইসলাম জানান, তাদের এখানে দেশী বিদেশী দুই ধরনের মাছ পাওয়া যায়। যদি কেউ ইচ্ছে করেন তাহলে বিদেশ থেকেও বিভিন্ন প্রজাতির মাছ আনতে পারেন। বিভিন্ন প্রজাতি এবং সাইজভেদে মাছের বিভিন্ন মূল্য হয়ে থাকে। দেশি মাছ জোড়াপ্রতি ৫০ থেকে শুরু করে ৩০০ টাকায় পাওয়া যায়। আর বিদেশী মাছ জোড়াপ্রতি পড়বে ৭০ টাকা থেকে ১০ হাজার টাকা।

অ্যাকুরিয়ামের উপযোগী মাছ
অ্যাকুরিয়ামে রাখার মত অনেক মাছ পাওয়া যায়। কিন্তু সবগুলোর চাহিদা এক নয়। বেশি চাহিদাসম্পন্ন মাছগুলো হলো- শার্ক, টাইগার বার্ব, গোল্ড ফিস, ক্যাটফিস, অ্যাঞ্জেল, গাপ্পি, মলি, ফাইটার, সাফকার, রেমবো গ্লাস ফিস, ব্লাক গোস্ট, কাছিম, থাই পাঙ্গাস, চায়না পুটি, সিলভার ডলার, কার্প, অ্যালিফ্যান্ট নোজ, রোজি বার্ব, অ্যারোনা ইত্যাদি। এর মধ্যে গোল্ড ফিস প্রজাতির মাছ খুব কষ্টসহিষ্ণু। অক্সিজেন ছাড়াও তারা বেশ কয়েকদিন বেঁচে থাকতে পারে। এদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও অন্যদের তুলনায় বেশি।

পরিচর্যা
অ্যাকুরিয়াম এর নিয়মিত পরিচর্যা দরকার। কেননা সঠিকভাবে যতœ না নিলে এর মধ্যে থাকা মাছগুলো মরে যেতে পারে। মাছকে প্রতিদিন দু’বেলা করে খাবার দিতে হবে। মাঝে মাঝে খাবারের সাথে ভিটামিন দিতে হবে। এতে মাছ বাড়তি পুষ্টি পাবে।  অ্যাকুরিয়ামের পানি প্রতি মাসে একবার পরিবর্তন করে তাতে সাধারণ তাপমাত্রার পানি দিতে হবে। আর ট্যাপের পানি না দেয়াই ভালো। কারণ এতে অনেক রাসায়নিক উপাদান থাকে। পানি পরিবর্তনের পর পানিতে ব্লু,ওয়াটার কেয়ার, ফাংগাস প্রতিরোধক এবং কিছু অ্যাকুরিয়াম সল্ট দিতে হবে। এতে মাছ সুস্থ থাকবে। আর অ্যাকুরিয়ামে ছোট বড় মাছ একসাথে না রাখাই ভাল। এক আকারের মাছ রাখা উত্তম। মাছের কোন রোগবালাই হলে সাথে সাথে আক্রান্ত মাছকে আলাদা করতে হবে।

আয়-রোজগার
১২ থেকে ২৪ ইঞ্চি একটি কাঠের অ্যাকুরিয়াম তৈরিতে কাঠ লাগবে ১২শ’ টাকার। অন্যান্য জিনিসপত্র কিনতে খরচ পড়বে ৬শ’ টাকার মতো। সব মিলিয়ে খরচ হয় ১৮শ’ টাকা। তা বিক্রি করা হয় ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ২শ’ টাকা। আর ফরমিকায় তৈরি করলে ফরমিকা লাগবে ২ হাজার টাকার। অন্যান্য জিনিসপত্র লাগবে ৬ শ’ টাকা। সব মিলিয়ে খরচ হবে ২৬শ’ টাকা। যা বিক্রি করা যাবে ৪ হাজার থেকে ৪২শ’ টাকায়। এ ব্যাপারে কাটাবনের এক ব্যবসায়ী জানান, ৩ থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে মাসে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা অনায়াসে নীট লাভ করা যায়।

প্রশিক্ষণ
এ ব্যবসা করতে হলে এ সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হবে। না হলে লাভের চেয়ে ক্ষতির সম্ভাবনাই বেশি। এখানে যেহেতু মাছ নিয়ে কাজ হয় তাই মাছের পরিচর্যা সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখতে হবে।
এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়ার মতো তেমন কোনো প্রতিষ্ঠান নেই। তাই নতুন কেউ এ ব্যাবসা শুরু করতে চাইলে তার উচিৎ হবে প্রথমে কোনো অ্যাকুরিয়ামের দোকানে ৩-৪ মাস কাজ করা এবং সব বিষয় সম্পর্কে ধারণা নেয়া।

ক্যারিয়ার, ট্রেনিং ও স্কলারশিপ সম্পর্কে
exclusive তথ্য পেতে ফেসবুক গ্রুপে
জয়েন করুন-

Career Intelligence | My Career Partner

Scroll to Top