গিগ ইকোনমি এমন একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা যেখানে ব্যক্তিরা স্থায়ী চাকরির পরিবর্তে স্বল্পমেয়াদী কাজ বা চুক্তিভিত্তিক কাজ করেন। এই পদ্ধতিতে মানুষ মূলত বিভিন্ন প্রজেক্ট বা কাজের জন্য চুক্তি করেন এবং কাজ শেষ করার পর তারা নতুন কাজ বা প্রজেক্ট খোঁজেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম গিগ ইকোনমির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে। একটি জরিপে দেখা গেছে, ৪৪ শতাংশ তরুণ উদ্যোক্তা তাদের সাইড হাসলের (এমন একটি অতিরিক্ত আয়ের উৎস বা কাজ, যা একজন ব্যক্তি তার মূল কাজ বা চাকরির পাশাপাশি করেন) সেবা প্রচার এবং ব্র্যান্ড পরিচিতি বাড়ানোর জন্য ইন্সটাগ্রাম ও টিকটকের মতো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করছেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের শক্তি
ইন্টুইটের কনজিউমার ট্রেন্ড বিশেষজ্ঞ মারিসা কাজেম বলেন, “সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি সাংস্কৃতিক নবজাগরণ চলছে, যেখানে উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী এবং সাইড হাসলাররা তাদের টার্গেট অডিয়েন্স, গ্রাহক, বা পরবর্তী কাজ খুঁজে নিচ্ছেন হাতে থাকা ডিভাইসের মাধ্যমে, যখনই বা যেখানে প্রয়োজন।”
চ্যালেঞ্জ এবং ধারাবাহিকতা
বর্তমানে বেশিরভাগ সাইড হাসল একটি নিয়মিত চাকরির পাশাপাশি পরিচালিত হচ্ছে। জরিপে অংশগ্রহণকারী ৬৫ শতাংশ বলেছেন, তারা ২০২৫ সাল পর্যন্ত এটি চালিয়ে যেতে চান। তবে সময় ব্যবস্থাপনা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে থেকে যাচ্ছে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) ভূমিকা
এখানেই এআই তাদের সাহায্য করছে। এআই-এর সাহায্যে বিভিন্ন কাজ করার সময় কমে এসেছে। যেমন- কনটেন্ট তৈরি, কাস্টমার সার্ভিস, লোগো ডিজাইন এবং ওয়েব ডেভেলপমেন্টে এটি ভূমিকা রাখছে।
সাফল্যের গল্প: ব্যবসা বিক্রির উদাহরণ
কিছু তরুণ উদ্যোক্তা তাদের সাইড হাসল বিক্রি করতেও এআই ব্যবহার করছেন। যেমন, ২০১৮ সালে বেন জগবি হাইস্ট্রাইক নামে একটি ব্যবসা শুরু করেন, যা বিনিয়োগ শেখানোর জন্য শিক্ষামূলক রিসোর্স ও ওয়েবিনার সরবরাহ করত। ৯-৫টার চাকরির পরে রাত এবং সপ্তাহান্তে তিনি এই ব্যবসা চালাতেন।
তার ব্যবসাটি জনপ্রিয়তা পায় এবং ২০২৪ সালের শুরুতে তিনি এটি ১৮ লাখ ডলারে বিক্রি করেন।
বেন এই সফল বিক্রয় সম্ভব করেছেন ফ্লিপা প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে, যা এআই ব্যবহার করে বিক্রেতা এবং ক্রেতার মধ্যে সংযোগ তৈরি করে এবং মাত্র ৩০ মিনিটে মূল্য নির্ধারণের প্রস্তাব দেয়। ফ্লিপার বিশাল ক্রেতা ডাটাবেসের মাধ্যমে তিনি সঠিক ক্রেতা খুঁজে পান। এর ফলে একটি বিডিং ওয়ার (নিলাম প্রতিযোগিতা) তৈরি হয় এবং চূড়ান্ত বিক্রয়মূল্য বাড়ে।
উদ্যোগ এবং লাভ
মাত্র ৩ শতাংশ জেনারেশন জেড উদ্যোক্তা বলেছেন, তাদের সাইড হাসল ব্যর্থ হয়েছে। বেশিরভাগই যখন কোনও উদ্যোগ কাজ করছে না, তখন নতুন কৌশল নিয়ে এগিয়ে যান। ইন্টুইট জানায়, একটি সাইড হাসল গড়ে তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে লাভজনক হয়ে ওঠে। ব্যাংকরেটের একটি পৃথক সমীক্ষায় দেখা গেছে, সাইড হাসলের গড় মাসিক আয় ৮৯১ ডলার।
গিগ ইকোনমির নেতৃত্ব দিচ্ছে নতুন প্রজন্ম
মারিসা কাজেম লিখেছেন, “জেনারেশন জেড এবং মিলেনিয়ালরা অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তন করছে। তারা শুধু গিগ ইকোনমিতে অংশ নিচ্ছে না, বরং এটি নেতৃত্ব দিচ্ছে। ডিজিটাল সরঞ্জাম, উদ্যোক্তা মনোভাব এবং স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা নিয়ে তারা এগিয়ে যাচ্ছে।”
তাদের সৃজনশীলতা এবং প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম একটি নতুন অর্থনৈতিক যুগের সূচনা করছে।