সাম্প্রতিককালে ভুয়া বা মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন করে ওয়েবসাইটে হিট বাড়িয়ে অর্থ উপার্জনের প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই এমন ঘটছে। বিশেষ করে ভুঁইফোঁড় ওয়েবসাইটগুলো এ কাজে ওস্তাদ। এতে অনলাইন দুনিয়ার মানুষ বিব্রত ও বিভ্রান্ত হচ্ছেন। আস্থা ও বিশ্বাস কমে যাচ্ছে অনলাইনের খবরে। ফলে অনেক সময় প্রতিষ্ঠিত সংবাদমাধ্যমের গুরুত্বপূর্ণ সংবাদও কিছু-কিছু পাঠক ‘অনলাইনের খবর’ বলে উড়িয়ে দেন।
বিষয়টি ফেসবুক কর্তৃপক্ষের নজর এড়ায়নি। সেজন্য ভুয়া সংবাদের ভয়াবহ বিপদ থেকে মানুষকে সতর্ক করতে অনলাইন-অফলাইন বিভিন্ন ক্যাম্পেইন শুরু করেছে। ভুয়া সংবাদ থেকে সর্তক থাকতে এবং তা চিহ্নিত করতে বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছে ফেসবুক। যে পরামর্শ কাজে লাগিয়ে আপনিও বিভ্রান্ত ও বিব্রত হওয়া থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারেন।
শিরোনামের বিষয়ে সন্দেহপ্রবণ
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কোনো শিরোনাম দেখেই আবেগপ্রবণ না হয়ে, সন্দেহপ্রবণ হোন। ভুয়া বা মিথ্যা সংবাদ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আকর্ষণীয় শিরোনামের হয়। শিরোনামে বিস্ময় চিহ্ন থাকতে পারে, আপনি তা দেখে আঁতকে উঠতে পারেন। যা আপনাকে লিঙ্কে ক্লিক করতে আকৃষ্ট করবে। এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
ইউআরএল দেখতে প্রায়ই একই রকম
অনেক ভুয়া সংবাদ ওয়েবসাইটের নাম প্রায় মূলধারার সংবাদমাধ্যমের ওয়েবসাইটের কাছাকাছি। যেমন : প্রথম আলোর নামের সাথে নিউজ যোগ করে প্রথম আলো নিউজ। নয়া দিগন্তের নাম থেকে নয়া বাদ দিয়ে দিগন্ত সংবাদ ইত্যাদি। এক্ষেত্রে আপনাকে ইউআরএল বা Uniform Resource Locator দেখে নিশ্চিত হতে হবে।
সংবাদের উৎস অনুসন্ধান করুন
যে সংবাদমাধ্যমে সংশ্লিষ্ট খবর প্রকাশ হয়েছে, সেটার সঠিকতার বিষয়ে আপনার আস্থা নিশ্চিত করুন। সেই সংবাদ অস্বচ্ছ প্রতিষ্ঠান বা সংবাদমাধ্যম থেকে এসেছে কিনা সেটা আপনাকে যাচাই-বাছাই করে নিতে হবে। যেমন : ধরুন বাইরের একটা অনলাইন পোর্টালে একটি খবর দেখে অনুবাদ করে প্রকাশ করল। আবার সেখান থেকে কপি করে অনেক অনলাইনে প্রকাশ করা হলো। তাই উৎস অনুসন্ধান করুন। কোনো খবরের ব্যাপারে সন্দেহ হলে একাধিক পোর্টালে দেখুন।
সাইটের লেআউট আনারি, বানান ভুলে ভরা
অনেক ভুয়া সংবাদ সাইটে ভুল বানানের ছড়াছড়ি, তার লেআউট দেখেতেও আনাড়ি। এ ধরনের লক্ষণ দেখলে সেই মাধ্যমের সংবাদ সতর্কভাবে পড়ুন। ওই ধরনের ওয়েবসাইট বর্জন করাই ভালো।
ছবি বিবেচনা
ভুয়া সংবাদে প্রায়ই খুব সুক্ষ্মভাবে একাধিক ছবি ও ভিডিও সংযুক্ত করতে দেখা যায়। মাঝে-মাঝে সেই ছবি সত্য হতে পারে, তবে লেখা ভিন্ন, ছবির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। এ ধরনের ওয়েবসাইট বর্জন করুন।
তারিখ যাচাই
প্রায়ই ভুয়া নিউজ স্টোরিতে ঘটনার তারিখ ভিন্ন দেখা যায়। ঘটনা অনেক আগের হলেও তারিখ পরিবর্তন করে নতুন করে সেই বিষয় সামনে আনা হয়। অতএব সাবধান!
তথ্য-উপাত্ত পরীক্ষা
লেখকের ব্যবহৃত উৎসগুলোর সত্যতা ও সঠিকতার বিষয়ে নিশ্চিত হোন। সংবাদে প্রমাণ বা নির্ভরতার অভাব কিংবা নামহীন বিশেষজ্ঞদের মতামত অনেক ক্ষেত্রে ভুয়া খবরকে নির্দেশ করে। বিশেষ অধিকাংশ সংবাদে দেখতে পাবেন- বিশেষ সূত্র বলছে, সূত্রগুলো জানিয়েছে ইত্যাদি। কিন্তু কোথাও কারো নাম উল্লেখ করা হয় না। এ ধরনের বেনামি সূত্রের বরাত দিয়ে করা খবরগুলো এড়িয়ে যান।
অন্যান্য সংবাদমাধ্যম দেখুন
একই সংবাদের ওপর অন্যান্য সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট দেখুন। একই খবর যদি অন্য কোনো উৎসে না থাকে, সেক্ষেত্রে সন্দেহ বাড়িয়ে দিতে পারেন। প্রায়ই এ ধরনের সংবাদ ভুয়া হয়ে থাকে। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রের স্বার্থের জন্য নিউজটি এড়িয়ে যেতে পারে কোনো গণমাধ্যম।
লেখাটি কৌতুক কিনা
প্রায়ই হাসি ও বিদ্রুপের ঘটনার মোড়কে ভুয়া খবর প্রকাশ করা হয়। সেক্ষেত্রে আপনাকে দেখে নিতে হবে সেটা সংবাদভিত্তিক প্যারোডি সাইট কিনা। ইদানিং অনলাইনে অনেক প্যারোডি নিউজ সাইট লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যেমন : প্রথম আলু, মতিকণ্ঠ ইত্যাদি। এরকম দেশ-বিদেশে আরো অনেক সাইট আছে। কিছু দিন আগে দেশের একটি বড় পত্রিকাও এরকম একটি সাইট থেকে অনুবাদ করে প্রকাশ করে। পরে পাঠকরাই তা উদ্ঘাটন করে। অনলাইনে যারা সতর্ক পাঠক নন, তারা এই প্যারোডি নিউজের শিরোনাম দেখে বা নিউজ পড়ে বিভ্রান্ত হন। এতে তাদের সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিদ্যমান ধারণা ও আস্থায় চিড় ধরে।
কিছু খবর আন্তর্জাতিকভাবে ভুয়া
আপনি যে সম্পর্কে পড়েন, তা নিয়ে একটু ভাবুন। কমন সেন্স খাটান। সেই খবর বা ছবি শেয়ার করুন যা বিশ্বাসযোগ্য। কেননা প্রতিনিয়ত আন্তর্জাতিকভাবে কিছু ভুয়া নিউজ অনলাইন দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়ছে। যেমন : ‘সু চির ইসলাম গ্রহণ’, অমুক হলিউড নায়িকা আশ্রয় নিলেন ইসলামের ছায়াতলে ইত্যাদি।
এছাড়াও হেডলাইনের দিকে খেয়াল করুন। যেমন : ‘না পড়লে/দেখলে মিস’, ‘এ কি করলেন/বললেন অমুক’, ‘যা শুনলে আপনি চমকে যাবেন’ এ ধরনের কৌতুহল উদ্দীপক শিরোনাম এড়িয়ে চলুন।
মোদ্দা কথা
অনলাইন থেকে অধিক আর্থিক মুনাফার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন ফেক বা ভুয়া নিউজের ওয়েবসাইট অনলাইনে বর্তমানে সক্রিয় রয়েছে। তাছাড়া বেশি ভিউ পাওয়ার আশায় অনেক মূলধারার সংবাদমাধ্যমও চটকদার ও লোভনীয় শিরোনামের মাধ্যমে মানুষকে বিভ্রান্ত করে সংশ্লিষ্ট লিঙ্কে ক্লিক করতে প্ররোচিত করে। কোনো নিউজের আকর্ষণীয় শিরোনাম দেখেই ক্লিক করা ঠিক নয়। আবার কোনো কারণে সেই নিউজটি পড়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো বিষয়ে আস্থা বা বিশ্বাস রাখা না রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত নয়। নিউজটি কোন ইউআরএল থেকে প্রকাশ হয়েছে, সেটা যাচাই-বাছাই করতে হবে এবং সেই ইউআরএল ধারণকৃত ওয়েবসাইটির বিশ্বাসযোগ্যতা ও গ্রহণযোগ্যতা কেমন সেটা বিবেচনায় নিতে হবে।