নাজমুল হোসেন
প্রযুক্তি প্রসারের ফলে বিভিন্ন ঝামেলা এড়াতে বর্তমানে তারহীন যোগাযোগব্যবস্থা জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ইন্টারনেট, মোবাইল, জিপিএস, ওয়াইফাই, ব্লুটুথ, ওয়াইম্যাক্স প্রযুক্তি যোগাযোগব্যবস্থায় বিশ্বে
এনেছে ব্যাপক পরিবর্তন। বর্তমানে এসব ছাড়া আধুনিক প্রযুক্তি কল্পনা করা যায় না।
তারহীন যোগাযোগের শুরু হয়েছিল রেডিও ওয়েভের মাধ্যমে। রেডিও ওয়েভ হলো আলোক রশ্মি, ইলেকট্রোম্যাগনেটিক রশ্মি, অতি বেগুনি রশ্মি, ইনফ্রারেড রশ্মি ও এক্স-রে রশ্মির মতো এক প্রকার তরঙ্গ মাধ্যম। ১৮৮৮ সালে জার্মান পদার্থবিজ্ঞানী হেনরিক হার্টজ রেডিও ওয়েভ আবিষ্কার করেন। ১৮৯৫ সালে মার্কোনি ট্রান্সমিটার ও রিসিভার আবিষ্কার করেন, যা ২.৫ কিলোমিটার পর্যন্ত রেডিও সিগনাল পাঠাতে সক্ষম ছিল। ১৯০১ সালে এর উন্নত সংস্করণ আসে, যা গোটা আটলান্টিক মহাসাগরেই সিগনাল পাঠাতে সক্ষম ছিল। ১৯ শতকে রেডিও সিগনালের ব্যবহার বৃদ্ধি পায়। ১৯১২ সালে টাইটানিক বৃহৎ বরফ খণ্ডে দুর্ঘটনায় পড়লে এই রেডিও সিগনালের মাধ্যমেই সাহায্যের আবেদন করে। এরপর রেডিও ওয়েভের ব্যবহার আরো বৃদ্ধি পায়। আমেরিকান পদার্থবিজ্ঞানী রেজিন্যাল্ড ফেসেনডার রেডিও ওয়েভের নতুন ব্যবহার আবিষ্কার করেন। এটির মাধ্যমে শব্দের পাশাপাশি ছবিও পাঠানো যেত। এই রেডিও সিগনালের তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করেই ১৯২৮ সালে টেলিভিশন রিসিভার আবিষ্কার করা হয়। বর্তমানে আমরা যে ইন্টারনেট ব্যবহার করছি তা এই রেডিও ওয়েভেরই উন্নত সংস্করণ।
প্রথমে ইন্টারনেটের ব্যবহার শুরু হয় তারের মাধ্যমে। এরপর গবেষণা চলতে থাকে কিভাবে তারহীন ব্যবস্থায় এ প্রযুক্তিকে মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়া যায়। ১৯৯৯ সালে কার্নেগি মেলন ইউনিভার্সিটি প্রথম তাদের পিটাসবার্গ ক্যাম্পাসে ওয়াইফাই প্রযুক্তিসেবা চালু করে। এরপর ২০০০ সালে আমেরিকার ড্রেক্সেল ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাস জুড়ে ওয়াইফাই সেবা দেয়ার মাধ্যমে ইতিহাস সৃষ্টি করে।
ওয়াইফাই প্রযুক্তি
একটি সীমিত এলাকা অর্থাৎ একই ভবন, পাশাপাশি অবস্থিত ভবন অথবা একটি অফিস বা অ্যাপার্টমেন্টের সব কম্পিউটার, প্রিন্টার ও অন্য কোনো বিশেষ ইলেকট্রনিক ডিভাইসের মধ্যে তারের পরিবর্তে রেডিও তরঙ্গের মাধ্যমে স্থাপিত আন্তঃসংযোগ ব্যবস্থাকে ওয়্যারলেস লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক বলে। একটি ব্রডব্যান্ড লাইন থেকে একাধিক কম্পিউটারে ইন্টারনেট কানেকশনের জন্য একটি ওয়্যারলেস লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক প্রয়োজন। এ ধরনের নেটওয়ার্কে প্রয়োজন একটি ব্রডব্যান্ড মডেম ও একটি ওয়্যারলেস রাউটার। যেকোনো কম্পিউটারে ওয়্যারলেস অ্যাডাপ্টার অথবা ওয়্যারলেস কার্ড ইন্সটল থাকলে এই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ইন্টারনেট কানেকশন শেয়ার করতে পারবেন।
আর ওয়াইফাই হলো তারবিহীন লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্কিং প্রযুক্তি। এটাকে আইইইই ৮০২.১১ প্রযুক্তি নামেও ডাকা হয়। কম্পিউটার, ভিডিও গেম কনসোল, হ্যান্ডসেট, প্রিন্টারসহ এ ধরনের অন্যান্য প্রযুক্তিপণ্যে আইইইই ৮০২.১১ ডিভাইসের সমর্থন থাকলে ওয়াইফাই বিটিএসের মাধ্যমে ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত হওয়া যায়।
১৯৯১ সালে নেদারল্যান্ডের এনসিআর করপোরেশন ওয়াইফাই প্রযুক্তি আবিষ্কার করে। WiFi-এর অর্থ Wireless Fidelity। এটি একটি বিশেষ ধরনের ওয়্যারলেস লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্কের টার্ম বা ট্রেডমার্ক, যেখানে ওয়াইফাই অ্যালায়েন্স নামে একটি কমিটি কর্তৃক পরীক্ষিত ও অনুমোদিত হার্ডওয়্যার ও স্পেসিফিকেশন ব্যবহার করা হয়। এর প্রধান উদ্দেশ্য নির্দিষ্ট ওয়্যারলেস নেটওয়ার্কের ডিভাইসগুলো যাতে পরস্পরের সাথে কাজ করতে পারে, সেজন্য নেটওয়ার্কটির কনফিগারেশনসহ অন্যান্য টেকনিক্যাল বিষয়ের একটি স্ট্যান্ডার্ড মান নির্ধারণ করা। যদি কারো মোবাইল ফোন বা ল্যাপটপে WiFi অ্যাডাপ্টার থাকে, তবে এটি যেকোনো WiFi নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ইন্টারনেটে সংযুক্ত হতে পারবে। সুতরাং আমরা বলতে পারি সব ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক হচ্ছে ওয়্যারলেস লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক, কিন্তু সব ওয়্যারলেস লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক ওয়াইফাই স্ট্যান্ডার্ড নেটওয়ার্ক নয়।
একটি ওয়াইফাই রাউটার, একসেস পয়েন্ট বা এন্টিনার মাধ্যমে কোনো বিশেষ স্থানে যখন ওয়্যারলেস ইন্টারনেট কানেকশনের সুবিধা প্রদান করা হয় তখন সেই স্থানকে Hot Spot বলা হয়। ওয়াইফাই হটস্পট একটি সীমিত এলাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ। সাইবার ক্যাফের নতুন জেনারেশন ওয়াইফাই হটস্পট।
একাধিক অ্যাকসেস পয়েন্ট বা এন্টিনার মাধ্যমে সৃষ্ট হটস্পটগুলোকে সমন্বয় করে যখন বড় এলাকা ভিত্তিক একটি ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক তৈরি হয় তখন সেই এলাকাকে Wi-Fi Zone বলা হয়। বর্তমানে শহরের বাস বা ট্রেন স্টেশন, শপিং সেন্টার ও গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে ওয়াইফাই জোনের চাহিদা বাড়ছে। ওয়াইফাই (Wi-fi) access হচ্ছে একটি সীমিত এলাকার (৩০-১৫০ মিটার) মধ্যে ওয়্যারলেস লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক সার্ভিস, যেখানে ওয়াইফাই রাউটারের মাধ্যমে সীমিত কিছু গ্রাহককে ইন্টারনেট সংযোগ দেয়া হয়।
দেশে ওয়াইফাই প্রযুক্তি
বিভিন্ন দেশের পর বর্তমানে ওয়াইফাই প্রযুক্তি আমাদের দেশেও পৌঁছেছে। এখন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পাশাপাশি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের এ প্রযুক্তির মাধ্যমে অনলাইন দুনিয়ায় প্রবেশের সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। সর্বপ্রথম দেশে ওয়াইফাই প্রযুক্তি চালু করে নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়। এরপর শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে বড় আকারে এ কার্যক্রম শুরু করে। বর্তমানে বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে এ প্রযুক্তি সফলভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজি আইআইটি ২০০৯ সালের এপ্রিল থেকে টিএসসি কমপ্লেক্সে তারবিহীন ওয়াইফাই পদ্ধতিতে ইন্টারনেট সুবিধা দিয়ে আসছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আবাসিক হলগুলোতে ওয়াইফাই প্রযুক্তি চালু করছে ২০১০ সালের শেষ দিকে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে এক প্রকল্পের আওতায় এ বছরের ২৮ জুন ওয়াইফাই প্রযুক্তি চালু হয়েছে। এ বছরের এপ্রিল মাস থেকে উচ্চগতির ওয়াইফাই নেটওয়ার্কের আওতায় পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০০টি কম্পিউটারে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধা পাচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
ওয়াইম্যাক্স প্রযুক্তি
শহর, গ্রাম, বিচ্ছিন্ন জনপদ, দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে সহজে ও কম খরচে দ্রুতগতির ইন্টারনেটকে সবখানে ও সব সময় সাধারণ মানুষের কাছে সহজলভ্য করার উদ্দেশ্যে সৃষ্ট উচ্চগতির ওয়্যারলেস নেটওয়ার্কই হচ্ছে ওয়াইম্যাক্স। WiMAX-এর পুরো নাম Worldwide Interoperability for Microwave Access. ওয়াইম্যাক্স হচ্ছে ওয়ার্ল্ডওয়াইড ইন্টারঅপারেবিলিটি ফর মাইক্রোওয়েভ অ্যাকসেসের সংক্ষিপ্ত রূপ। এটি একটি টেলিযোগাযোগ প্রযুক্তি, যার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট থেকে শুরু করে পূর্ণাঙ্গ মোবাইল সেলুলার ইত্যাদি বিভিন্ন রকম তারবিহীন তথ্য আদান-প্রদান করা। মূলত আইইইই ৮০২.১৬ স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী এটি প্রণীত হচ্ছে, যার অপর নাম ওয়্যারলেসম্যান।
ওয়াইম্যাক্স হলো তারহীন ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্কের ব্যবস্থা, যা প্রচলিত কেবল বা ডিএসএলের একটি বিকল্প প্রযুক্তি। টেলিফোন নেটওয়ার্ক থেকে এই লাইন দেয়া হয়। মডেম বা DSL-এর মাধ্যমে Broadband access সার্ভিস দেয়া হয়। এই পদ্ধতিতে উচ্চগতির Broadband access পেতে খরচ বেশি। যেসব জায়গায় টেলিফোনের ল্যান্ড লাইন নেই, সেখানে এ ধরনের সংযোগ সম্ভব নয়।
ওয়াইম্যাক্স কিভাবে কাজ করে
তারবিহীন নেটওয়ার্ক ওয়াইম্যাক্স তথ্যপ্রযুক্তির লোকের কাছে IEEE ৮০২.১৬ নামেও পরিচিত। ওয়াইম্যাক্সের দু’টি গুরুত্বপূর্ণ অংশ টাওয়ার ও রিসিভার। উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি টাওয়ারের কভারেজ হবে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (ব্যাসার্ধ)। এই টাওয়ারগুলো তারের মাধ্যমে সরাসরি হাই ব্যান্ডউইথ ইন্টারনেট ব্যাকবোনের সাথে সংযুক্ত থাকে। আবার দু’টি টাওয়ারের মধ্যে তারবিহীন (মাইক্রোওয়েভ লিঙ্ক) সংযোগও থাকতে পারে। এভাবে একাধিক টাওয়ার দিয়ে তার ছাড়াই শহরের অলিগলি থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল পর্যন্ত কভারেজ করা যায়। ওয়াইম্যাক্স তারবিহীন সংযোগ সার্ভিস আবার দু’ধরনের হতে পারে।
Non-line-of-sight: এ সার্ভিসে ব্যবহার করা হবে lower frequency range (2 GHz to 22 Ghz) Lower-wavelength transmissions সব ধরনের প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে অলিগলি ঘুরে ওয়াইম্যাক্স রিসিভারে (এন্টিনা) পৌঁছে যাবে।
Line-of-sight:: এ সার্ভিসে ব্যবহার করা হবে higher frequency range (66 Ghz) Higher-wavelength transmissions কোনো ত্রুটি ছাড়া একসাথে বেশি ডেটা প্রেরণ করতে সম্ভব এবং ব্যান্ডউইথও বেশি হয়। এ ধরনের সার্ভিসে টাওয়ার ও এন্টিনার মাঝখানে কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকতে পারবে না। অর্থাৎ কোনো উঁচু ভবনের ছাদ থেকে যদি ওয়াইম্যাক্স টাওয়ার সরাসরি দেখা যায়, তবেই ছাদে এন্টিনা লাগিয়ে এই উচ্চগতির সার্ভিস নেয়া যাবে।
ওয়াইম্যাক্সকে আবার দু’ভাগে ভাগে করা যায়-
১. ফিক্সড ওয়াইম্যাক্স
২. মোবাইল ওয়াইম্যাক্স
১. ফিক্সড ওয়াইম্যাক্স : ফিক্সড ওয়াইম্যাক্সের ক্ষেত্রে গ্রাহকপ্রান্তে একটি রিসিভার টাওয়ার বা এন্টিনা বসানো হয়। এই পদ্ধতিতে হাই ফ্রিকোয়েন্সি রেঞ্জ (১০ গি.হা. থেকে ৬৬ গি.হা.) ব্যবহৃত হয়। ফিক্সড ওয়াইম্যাক্সের রেঞ্জ ও ব্যান্ডউইথ ক্যাপাসিটি মোবাইল ওয়াইম্যাক্সের চেয়ে বেশি হয়ে থাকে। তবে মোবিলিটি না থাকায় এটি তেমন জনপ্রিয় নয়।
২. মোবাইল ওয়াইম্যাক্স : মোবাইল ওয়াইম্যাক্সের ক্ষেত্রে গ্রাহকপ্রান্তে এজ মডেমের মতো একটি ওয়াইম্যাক্স মডেম ব্যবহার করতে হয়। মোবাইল ওয়াইম্যাক্সের ক্ষেত্রে লো ফ্রিকোয়েন্সি রেঞ্জ (২ গি.হা. থেকে ১১ গি.হা.) ব্যবহৃত হয়। ক্ষুদ্র তরঙ্গ দৈর্ঘ্যে ট্রান্সমিশন হয় বলে এর মাধ্যমে ঘিঞ্জি এলাকা অথবা বাসার ভেতরে আনায়াসে ওয়াইম্যাক্সের সিগন্যাল ওয়াইম্যাক্স মডেম দিয়ে রিসিভ করা সম্ভব হয়। তবে ফিক্সড ওয়াইম্যাক্সের তুলনায় মোবাইল ওয়াইম্যাক্সের ইনডোর ইউনিট অর্থাৎ মডেমের ক্ষেত্রে ইউজারকে ওয়াইম্যাক্সের বেজ স্টেশনের কাছাকাছি থাকতে হয়। অন্যথায় রেডিও সিগন্যাল লসের আশঙ্কা থেকে যায়। এ কারণে মোবাইল ওয়াইম্যাক্স সার্ভিস দিতে গেলে সার্ভিস প্রোভাইডারকে অধিকসংখ্যক বেজ স্টেশন স্থাপন করতে হয়।
ওয়াইম্যাক্সের সুবিধা
ওয়াইম্যাক্স প্রযুক্তি তুলনামূলক কম ব্যান্ডউইথ ফ্রিকোয়েন্সির মাধ্যমে ব্যবহার করা যায়। একটি টাওয়ার দিয়ে চার-পাঁচ বর্গকিলোমিটার এলাকায় তারবিহীন ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ দেয়া সম্ভব। মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ ও ডেস্কটপ কম্পিউটারে ক্ষুদ্র একটি চিপ যুক্ত করে ওয়াইম্যাক্স প্রযুক্তি ব্যবহার করা যাবে। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে গ্রামের সুবিধাবঞ্চিত দরিদ্র মানুষ বিশেষ করে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা সহজে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবে। আর মোবাইল ফোন ব্যবহারের মতো সহজ এই প্রযুক্তিটি।
গ্রাহক কিভাবে ওয়াইম্যাক্স সার্ভিস নেবে
আপনি যদি ওয়াইম্যাক্স সংযোগ পেতে চান তাহলে আপনার একটি ওয়াইম্যাক্স মডেম লাগবে বা ওয়াইম্যাক্স অ্যানাবল ল্যাপটপ লাগবে। ওয়াইম্যাক্স সার্ভিস প্রোভাইডার আপনাকে একটি স্পেশাল এনক্রিপটেড কোড দেবে, যার মাধ্যমে আপনি সরাসরি ওয়াইম্যাক্সের বেজ স্টেশনে সংযুক্ত হতে পারেন। এই সংযোগ পদ্ধতি অনেকটা ওয়াইফাইের মতো। ওয়াইম্যাক্সের ক্ষেত্রে বর্তমানের ক্যাবল সংযোগের চেয়ে কম খরচে ইন্টারনেট সংযোগ দেয়া সম্ভব। কারণ সংযোগের ক্ষেত্রে ওয়াইম্যাক্স প্রোভাইডারকে আপনার বাসা পর্যন্ত ক্যাবল টানতে হয় না। তা ছাড়া এই প্রযুক্তিতে সামগ্রিকভাবে মেনটেন্যান্স খরচ কম পড়ে, যার ফলে বর্তমান ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারের তুলনায় ওয়াইম্যাক্স প্রোভাইডাররা কম খরচে ইন্টারনেট সার্ভিস দিতে পারবে। তবে একটি ব্যাপার ভুলে গেলে চলবে না, ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইড করতে গেলে প্রধান খরচ হলো ব্যান্ডউইথ; যা বিটিআরসি অথবা ম্যাংগো টেলিকম থেকে কিনে নিতে হয়। আর এই ব্যান্ডউইথ সব ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার প্রায় একই রেটে কিনে থাকে। তাই ৪০ এমবিপিএস বা ৭০ এমবিপিএস ক্যাপাসিটি থাকা মানে এই নয় যে আমরা ৪০ এমবিপিএস বা ৭০ এমবিপিএসে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারব।
বাংলাদেশে ওয়াইম্যাক্স
বিশ্বের দ্রুততম ওয়্যারলেস ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সার্ভিস ওয়াইম্যাক্স কিছু দিন আগে বাংলাদেশে চালু হয়েছে। বাংলাদেশে দু’টি কোম্পানিকে লাইসেন্স দেয়া হয়েছে ওয়াইম্যাক্স প্রযুক্তিকে সবার কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য। বাংলাদেশের ইন্টারনেট ইউজারের বহু দিনের প্রত্যাশা এবার পূরণের পথে। প্রথমে বাংলা লায়ন ঢাকা মহানগরীতে তাদের নেটওয়ার্ক স্থাপনের কাজ শুরু করলেও বর্তমানে চট্টগ্রামসহ সারা দেশে নেটওয়ার্কের কাজ শুরু করেছে।
বিটিআরসি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মাত্র একটি টাওয়ার দিয়ে চার-পাঁচ বর্গকিলোমিটার এলাকায় তারবিহীন ব্রডব্যান্ড সংযোগ দেয়া যাবে ওয়াইম্যাক্সে। মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ কিংবা কম্পিউটারে মাত্র একটি ক্ষুদ্র চিপ দিয়েই এর ইন্টারনেট সার্ভিস পাওয়া যাবে। ইন্টারনেট সংযোগ দেয়া সম্ভব, এমন সব মোবাইল বা ল্যাপটপ ওয়াইফাই প্রযুক্তির যন্ত্র বসানো থাকে।
ওয়াইম্যাক্স ও ওয়াইফাইয়ের পার্থক্য
ওয়াইম্যাক্স ও ওয়াইফাই একই পর্যায়ের প্রযুক্তি। তবে এদের মধ্যে বেশ কিছু পার্থক্য রয়েছে। ওয়াইফাইয়ের কভারেজ ৩০ থেকে ১০০ মিটার। আর ওয়াইম্যাক্সের কভারেজ প্রায় ৫০ কিলোমিটার। ওয়াইম্যাক্সে ওয়াইফাইয়ের চেয়ে বেশি ইউজার একসাথে ব্যবহার করতে পারে। ওয়াইফাই অপারেট করে আইইইই ৮০২.১৬ স্ট্যান্ডার্ডের ওপর ভিত্তি করে। এর রেঞ্জ সর্বোচ্চ ৩০০ ফুট ব্যাসার্ধ। সর্বোচ্চ স্পিড ৫৪ এমবিপিএস। অপর দিকে আইইইই ৮০২.১৬ স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী ওয়াইম্যাক্সের রেঞ্জ সর্বোচ্চ ৩০ মাইল ব্যাসার্ধ। ডেটা ট্রান্সফার রেট সর্বোচ্চ ৭০ এমবিপিএস।
উন্নত বিশ্বসহ উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ইতোমধ্যে ইন্টারনেটভিত্তিক সমাজব্যবস্থার দিকে এগিয়ে গেছে। তথ্যপ্রযুক্তির অবাধপ্রবাহ নিশ্চিত করতে ইন্টারনেটের বিকল্প নেই। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলেও বাংলাদেশে ইন্টারনেটের অবস্থা এতই দুর্বল যে, ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা ইন্টারনেটের একসেস দিতে পারছে না। দেশের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল ওয়াইম্যাক্স প্রযুক্তির জন্য। অবশেষে সরকার ওয়াইম্যাক্স প্রযুক্তির লাইসেন্স দিয়েছে দু’টি কোম্পানিকে। তবে ইন্টারনেটের উচ্চমূল্য ইন্টারনেট-কেন্দ্রিক সমাজ গড়ার পথ বাধাগ্রস্ত করছে।