ক্যারিয়ার ইনটেলিজেন্স : মাধ্যমিকে কোন গ্রুপ : সায়েন্স, আর্টস নাকি কমার্স? বছরের এ সময় নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বিভাগ পছন্দ করতে হয়। যার ওপর নির্ভর করে ছাত্রছাত্রীর ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার। সব বিষয়ই ভালো । তোমার যেটা ভালো লাগে, সেটা পড়ো। তাতে যদি তুমি ভালো করো তাতেই হবে। তোমরা চাইলেই বড় বিজ্ঞানী, চিকিৎসক, সাহিত্যিক কিংবা শিল্পী হতে পারবে। কিন্তু ওই বিষয়টা তোমার ভালো লাগতে হবে। সেই বিষয়ে তোমাকে প্রচুর পরিশ্রম করতে হবে।
আজকাল খুব বাণিজ্য পড়ার ঝোঁক এসেছে। কিন্তু সবার বাণিজ্য পড়ার দরকার নেই। বিজ্ঞান পড়লেও শুধু ডাক্তার কিংবা ইঞ্জিনিয়ার কিংবা কম্পিউটারবিদ হওয়ার সাধনা করার দরকার নেই। মৌলিক বিজ্ঞানও পড়তে পারো। পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, জীববিজ্ঞান পড়ে তুমি ভালো করতে পারবে। ধরো একটা বিষয় আছে, ভূগোল। আমাদের ভালো ভূগোলবিদ খুব দরকার। পৃথিবীতে ভূগোলবিদের সম্মানও আছে, সম্মানীও তারা ভালো পান। কিংবা ধরো কেউ ফার্সি পড়ল, ফার্সি-সাহিত্য অনুবাদ করল, তাতে আমরা সবাই কত উপকৃত হব!
উন্নত বিশ্বের ভালো বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তোমাকে যখন ভর্তি করতে চাইবে, তখন কেবল তোমার ফল দেখবে না। তুমি আর কী কী করো, সংস্কৃতি বা সমাজসেবা, সেটাও খুব করে দেখবে।
তোমার যে সাবজেক্ট ভালো লাগে, তুমি সেই বিষয় নিয়ে পড়ো। তোমার যদি খেলতে ভালো লাগে, খেলোয়ার হওয়ার চেষ্টা করো। যদি সাহিত্য ভালো লাগে, তুমি লেখক হওয়ার কথা ভাবতে পারো। তোমার যদি বিজ্ঞান ভালো লাগে, তুমি অবশ্যই বিজ্ঞান নিয়ে পড়বে। তোমার যদি বিজ্ঞান ভালো না লাগে, কবিতা পড়তে ভালো না লাগে, তুমি কমার্স নিয়ে পড়তে পারো।
এখন কথা হলো, যা-ই পড়ো না কেন, মন দিয়ে পড়তে হবে। ‘ও খুব ভালো সাবজেক্ট নিয়ে পড়ছে, আমি তো ভালো সাবজেক্ট পেলামই না’-এর চেয়ে বড় ভুল কথা আর নেই। সব বিষয়ই ভালো, যদি তোমার সেটা ভালো লাগে, আর তুমি সেটা মন দিয়ে পড়ো।
বাংলাদেশে প্রায় সবাই গণহারে কর্মাস বিভাগ পছন্দ করে। এর প্রধান কারণ বিজ্ঞানকে কঠিন মনে করা।
আগে কেউ যদি জিজ্ঞেস করত বড় হয়ে কী হবে বাবা? সবাই গণহারে বলত- ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার। আবার কেউবা বলত পাইলট। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বা পাইলট যায় হতে ইচ্ছে করে তা পছন্দ করার উপযুক্ত এবং এক মাত্র সময় হচ্ছে এই নবম শ্রেণি।
ব্যবসা শিক্ষা পড়লেই বড় ব্যবসায়ী হওয়া যাবে এর কোনো মানে নেই। বেশির ভাগই চিন্তা করে পাস করে কোনো ভালো প্রতিষ্ঠানে বা ব্যাংকে জব করার। ব্যবসা শিক্ষা শাখার মধ্যে উচ্চশিক্ষার জন্য সাবজেক্ট তুলনামূলকভাবে কম এবং ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা অনেক বেশি। পরে বিশাল একটা প্রতিযোগিতা করতে হয়। এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অনেকেই উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে নিজের পছন্দের বিষয়টি পড়তে পারে না। এবং শেষে দেখা যায় অনেকেই যেটা পছন্দের নয় এমন একটি বিষয় বা মানবিক শাখার একটি বিষয় নিয়ে পড়ালেখা করতে হয়।
বিজ্ঞান বিভাগে বিষয় সংখ্যা অনেক বেশি। পড়ালেখার সুযোগ বেশি। ভালো একটা ক্যারিয়ার তৈরির ও সুযোগ তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। তা ছাড়া ছোট বেলার স্বপ্নগুলো সত্যি করারও সুযোগ এ বিজ্ঞান বিভাগেই।
অনেকেই মনে করে বিজ্ঞান বিভাগ অনেক কঠিন। আসলেই কি তাই? কতগুলো প্রশ্ন এবং ঐ প্রশ্ন গুলোর উত্তরই হচ্ছে বিজ্ঞান। এ প্রশ্নগুলো আমাদের সবার মাথাতেই আসে। যেমন বৃষ্টি হয় কেন? চাঁদের আলো বাড়ে কমে কেনো? ইত্যাদি, এমন কত গুলো প্রশ্নের উত্তর নিয়েই বিজ্ঞান। আর উত্তরগুলো যত জানা যাবে, তত আগ্রহ বেড়ে যাবে। এতে কঠিন কিছুই নেই।
অনেকেই ভয় পায় গণিতকে। ব্যবসা শিক্ষা শাখাতেও অংক করতে হবে, বিজ্ঞানেও। বিজ্ঞানে পাসের হার বেশি। এর মানে হয়তো এটাই যে বিজ্ঞানের বিষয়গুলো পড়ার আগ্রহ, জানার আগ্রহ বাড়িয়ে দেয়। তাছাড়া কোনো একটা বিষয় বুঝতে পারলেই তার সম্পর্কে পরীক্ষার সময় লেখা যায়। আর মুখস্ত বিদ্যাকে না বলে এই বিজ্ঞানই।
উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে সত্যি, বিজ্ঞান বিভাগের জন্য সব দিক খোলা। যা পছন্দ তাই পড়ার সুযোগ থাকে। একটা ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সুযোগ না থাকলে আরেকটাতে পড়া যায়।
মানবিক বা ব্যবসা শিক্ষা শাখায় পড়লে ক্যারিয়ার খারাপ হবে এমন কিছুও না। সবগুলো বিষয়ই ভালো এবং সব জায়গা থেকেই ভালো করা যায়। বিশেষ করে মানবিক শাখায় একটু ভালো করতে পারলে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে চান্স পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়।কারণ মানবিকের অনেক সাবজেক্ট আছে বিশ্ববিদ্যালয় লেভেলে। কিন্তু সবাই সায়েন্স বা কমার্সের দিকে দৌড়ানোর ফলে মানবিকের বিষয়গুলোতে প্রতিযোহগতা অপেক্ষাকৃত কম থাকে।
জীবনে কী হবে, তা ঠিক করার সময় এখনি। এ ক্ষেত্রে অন্য কারো মতকে প্রাধান্য না দিয়ে নিজের ইচ্ছেটাকে প্রাধান্য দেয়া উচিত। কারণ জীবনের বাকি সময় নির্ভর করবে এর ওপর। তবে একটি কথা মনে রাখবে। তুমি যা হতে চাচ্ছ সেটা হয়ে তোমার জীবন পরিচালনার মতো প্রয়োজনীয় অর্থ পাবে তো?