শ্রীতম সাহা : আমার মাতৃভাষা বাংলা কিন্তু আমি একটি ইংরেজি মাধ্যম বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছি। যার ফলে খুব স্বাভাবিকভাবেই আমি ছোট বয়স থেকেই ইংরেজি ভাষার সাথে পরিচিত হবার সুব্যবস্থা ও সুবিধা পেয়েছি। কিন্তু বিদ্যালয়ে প্রবেশ করা মাত্রই আমার ইংরেজি ভাষার উপর দক্ষতা তৈরি হয়েছে তা বললে অত্যুক্তি করা হবে।
মানুষের জীবনে যে কোনো শিক্ষায় দক্ষতা অর্জন করার জন্য কঠিন পরিশ্রম আবশ্যক। এই পথে কোনো শর্টকাটের অবকাশ নেই। কোনো ভাষা শেখার ক্ষেত্রেও একই সূত্র উপযুক্ত।
কোনো ভাষা শিখতে গেলে প্রথমে জানতে হবে ভাষা কী ও সেটি কোন কাজে লাগে? সরলভাবে বোঝাতে গেলে ভাষা প্রধানত কথোপকথনের মাধ্যম এবং এটি ব্যবহার করে আমরা অন্যদের কথা বুঝি, অন্যদেরকে নিজেদের কথা বোঝাই, হয়তো বলে বা লিখে বা শুনে অথবা পড়ে। যথাযথভাবেই ভাষা শেখবার চারটি পদ্ধতি – শোনা, বলা, পড়া ও লেখা।
এবার আসা যাক, ইংরেজি ভাষার প্রতি আমাদের একটা অদ্ভূত ভয়ের ব্যাপারে। সেটা কিছু না, আমাদের তুলনায় কিছু সুসজ্জিত বিদেশী সাহেবদেরকে এই ভাষাটি বলতে দেখে, আমরা ইংরেজি ভাষাকে এক বিজাতীয় এবং উচ্চপদস্থ শ্রদ্ধার জায়গায় নিজেরাই তুলে দিয়ে ডরাই। ভয় পাবেন না। আপনি তো তাও ইংরেজি ভাষার glass, chair, cinema ইত্যাদি শব্দগুলিকে নিজের ভাষায় অজান্তেই ঠাঁই দিয়েছেন। বলতে পারেন ইংরেজির কোনো শব্দ বাংলা কিংবা সংস্কৃত থেকে নেয়া হয়েছে? ওরা আপনার ভাষাটা একেবারেই পারে না। তাদেরকেও যদি আপনার ভাষাটা শিখতে হয়, অনেক পরিশ্রম লাগবে, অতএব আপনারও লাগা স্বাভাবিক। বরং, একজন ইংরেজের বাংলা শেখার তুলনায় একজন বাঙালির ইংরেজি শেখা অনেক সহজ। কারণ ইংরেজি ব্যাকরণ ও বর্ণমালা তুলনামূলকভাবে সরল। যেহেতু আপনি বাংলা ভাষা জানেন আর ইংরেজি জানেন না, তাই আপনার মনে হয় উল্টোটাই সঠিক। সেজন্য ভয়টা মন থেকে বের করতে হবে।
এবার বলি পদ্ধতি: জানি না সঠিক কি বেঠিক, কিন্তু এটি কার্যকরী।
১. ভাষা জানতে গেলে প্রথমেই প্রচুর পড়তে হবে – খবরের কাগজ, গল্পের বই, উপন্যাস, ছোট গল্প, ইত্যাদি। মুখ বুজে মনে মনে পড়লে অতটা কাজে দেবে না। আপনাকে উচ্চারণ করে পড়তে হবে, যাতে বাক্যের গঠন ও শব্দের সারিগুলি কেমনে একের পর এক বসে সেটা শুধুমাত্র দেখা না, সঙ্গে সঙ্গে শুনতেও পান। এতে একই সঙ্গে আপনার ব্রেন দুটি ইন্দ্রিয় দ্বারা শিখতে শুরু করবে।
২. প্রচুর শুনতে হবে – ইংরেজি খবরের চ্যানেল, ইংরেজি সিনেমা, ডকুমেন্টারি, রেডিও, টিভি, এমনকি যারা ভালোভাবে বলে তাদেরকেও। এটি করলে আপনি উচ্চারণ, ভঙ্গি ও বলার সুর শিখতে পারবেন
৩. পড়াশোনার পর, এবার পালা লেখার – এবার লিখুন। যা মনে আসছে, শব্দে সাজিয়ে লিখুন, লিখে নিয়ে কোনো ইংরেজিতে দক্ষ লোকের থেকে জেনে নিন আপনি যা লিখেছেন তা ঠিক হয়েছে নাকি এখনো সেটিকে আরো ঠিক করা যাবে। যদি কোনো সেরকম লোকের সন্ধান না পান, Google Translate ব্যবহার করেও যাচাই করতে পারেন।
৪. শেষ অধ্যায় – বলতে হবে। অনেক সমস্যা হবে। স্বভাবতই আপনার মস্তিস্ক চিন্তাটাও বাংলায় করে, ইংরেজিতে করে না। যার ফলে বলতে গেলে আপনার ব্রেন আপনার মুখের বুলিও বাঙলাতেই ফোটায়। কিন্তু এইখানেই আপনাকে আপনার ব্রেনকে সতর্ক রাখতে হবে। ভাববেন বাংলায়, আপনার ব্রেনই সেই বাংলা শব্দগুলোর ইংরেজি সমার্থক শব্দ খুঁজে আপনার মুখ দিয়ে ইংরেজি বলাবে। এটা কঠিন এবং খুব সময়সাপেক্ষ। কিন্তু শুরুতে এভাবেই করতে হবে। ধীরে ধীরে আপনার ব্রেন ইংরেজিতে ভাবতেও অভ্যস্ত হয়ে যাবে। তখন বুঝবেন আপনি ভাষাটিকে পুরোপুরি দখল করে ফেলেছেন। এবং আপনিও অন্যদেরকে ইংরেজি ভাষায় আপনার বক্তব্য বোঝাতে সক্ষম হচ্ছেন।
৫. প্রচুর অধ্যয়ন ও প্রয়োগের প্রয়োজন এবার। ভুল হওয়া স্বাভাবিক, তাই ভেবে থমকে দাঁড়িয়ে গেলে হবে না। চালিয়ে যেতে হবে। লেগে থাকতে হবে। ইংরেজি এমন কিছু নয়- যা ঠিক হবে না। অতএব চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।
আশা করি এভাবে নিয়মিত যদি প্রতিদিন পনের মিনিট পড়া, পনের মিনিট শোনা, পনের মিনিট লেখা এবং পনের মিনিট বলার অধ্যবসায় চালিয়ে যান, এক মাসে আপনি ইংরেজির ভীতি কাটিয়ে উঠতে পারবেন। এটিকে আপন ভাষা বলে গ্রহণ করতে পারবেন। দু মাসের মধ্যে আপনি ব্যাকরণ ও উচ্চারণ আরো ভালো করতে পারবেন। তিন থেকে চার মাস সময়ের মধ্যে আপনি নিজের দক্ষতা নিজেই উপভোগ করতে পারবেন। অবশ্যই নিয়ম-ভঙ্গ কিংবা ফাঁকি দিলে এই পদ্ধতি ফলপ্রসূ হবে না।