শেখার জাদুকরি পদ্ধতি : ২০ মিনিট সকাল ও রাত

শেখার জাদুকরি পদ্ধতি : ২০ মিনিট সকাল ও রাত

মো: শামীম হোসেন : ইংরেজি পত্রিকা ‘ডেইলি স্টার’ বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে ছেলেমেয়েদের বিনামূল্যে পত্রিকা পাঠের সুযোগ করে দেয়ার জন্য প্রতিবছর কুইজের আয়োজন করে।

অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়ি তখন। একসাথে ১৪ বন্ধু থাকতাম। কুইজে জেতার পর আমাদের রুমেও ডেইলি স্টার আসতে লাগল। হলের পত্রিকা-রুমে রোজ ৩টা ইংরেজিসহ অনেকগুলো বাংলা পত্রিকা থাকে। কিন্তু ওখানে গিয়ে পড়া হতো না।

সকাল হলেই দরজার গোড়ায় পত্রিকা ফেলে যেত। কেউ একজন সেটা তুলে কারো একটা টেবিলের উপর ছুড়ে দিবে। ব্যস! ওখানেই পড়ে থাকবে। কেউ আর ধরেও দেখবে না। অবশ্য একটা কাজে লাগত। যখন বিকেলবেলা রুমের সবাই মিলে মুড়ি-পার্টি করতাম, তখন পত্রিকার দরকার হতো! সবার হাতে স্মার্টফোন, কেউ আর ওই কাগজের পত্রিকা ধরে দেখত না। দেখলেও বড়জোর কভার পেজের ছবিগুলো!

বেশিরভাগ ছেলেদের স্বভাব ছিল রাত জেগে ফোন চাপা আর ক্লাস ফাঁকি দিয়ে দিনের বেলা ঘুমানো। আমিও এর ব্যতিক্রম ছিলাম না। এরপর আমি নিজেকে পাল্টাতে শুরু করলাম। রাত না জেগে ১১টা বাজলে মোবাইল বালিশের নিচে রেখে জোর করে ঘুমিয়ে যেতাম।

আস্তে আস্তে রাত জাগা অভ্যাসটা পাল্টে যেতে লাগল। ভোরের দিকে উঠে যেতাম। ফজরের নামাজ পড়ে পাশের পুলিশ হেডকোয়ার্টারের সামনে ওসমানী উদ্যানে হাঁটতে যেতাম। ৭টার আগে পত্রিকা দিত না। হলে ফিরে পত্রিকা পেলে সাথে ডিকশনারি, খাতা নিয়ে রুমের সামনে একটা জায়গায় বসে যেতাম। ইংরেজি পত্রিকা দেখলে ভয় লাগত। কী ভয়ংকর সব শব্দ লিখে রাখে!

একপাতা করে পত্রিকা পড়া শুরু করলাম। যে শব্দগুলো জানতাম না, ডিকশনারি বের করে খাতায় লিখে ফেলতাম। পকেট ডিকশনারি ব্যবহার করতাম, মোবাইল না। আস্তে আস্তে পত্রিকার আরো কয়েকটা পাতা দেখতে লাগলাম। সম্পাদকীয়সহ মতামত পড়া শুরু করলাম। নতুন শব্দও খাতায় উঠতে লাগল। রাতে ঘুমানোর আগে ওই খাতার শব্দগুলোয় একবার চোখ বুলিয়ে নিতাম। পরদিন সকালে উঠে যতক্ষণ পত্রিকা না দিচ্ছে, ততক্ষণে আরেকবার ওই শব্দগুলো দেখে নিতাম।


পড়াশোনা বা কাজে মনোযোগ আনবেন যেভাবে


মাস খানেক পর, যেই ডেইলি স্টার দেখলে জ্বর আসত, সেই ডেইলি স্টার না পড়লে আর দিন শুরু হত না। ডেইলি স্টার দিয়ে শুরু, এরপর অ্যামাজন থেকে বেস্ট সেলিং সেলফ হেল্প, ব্যবসায়, উপন্যাস বই ডাউনলোড করে নিতাম আর সেগুলো পড়তাম। সেলফ হেল্প বইয়ের একটা সুবিধা হচ্ছে এগুলো সহজ ইংরেজিতে লেখা। ইংরেজি শেখার আর নিজেকে উন্নত করার জন্য খুবই কাজের। তারপর আস্তে আস্তে দেখলাম ইংরেজি থ্রিলারও আর বাংলায় অনুবাদ পড়ে মজা লাগে না। ইংরেজিতে পড়তেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছি।

আপনি আমার থেকে আজ ‌’২০ মিনিট সকাল ও রাত’ নিয়মটি শিখে নিতে পারেন। প্রতিদিন যদি এই নিয়মটি অনুসরণ করেন, তবে আপনি যে কোনো ভাষা শিখতে পারবেন। যে কোনো দক্ষতা অর্জন করতে পারবেন। যে কোনো বাদ্যযন্ত্র বাজানো শিখতে পারবেন। এমনকি যেসব দক্ষতা শিখতে গিয়ে বারবার হোঁচট খেতে হচ্ছিল, এই নিয়ম অনুসরণ করে ৩০ দিন বা তারও কম সময়ের মধ্যে সেগুলো শিখে নিতে পারবেন।

তাহলে নিয়মটা কী?
আপনি যা কিছু শিখতে চান তা সকালে ঘুম থেকে ওঠার ঠিক পরের ২০ মিনিট এবং ঘুমাতে যাওয়ার ঠিক ২০ মিনিট আগে অনুশীলন করবেন। ঘুম থেকে ওঠার ঠিক পরের সময়টাই আমাদের মস্তিষ্ক সবচেয়ে বেশি সক্রিয় থাকে। তাই ঘুম থেকে উঠে ২০ মিনিট কোনোকিছু শিখতে ব্যয় করলে, মস্তিষ্ক দ্রুত পাঠটি স্মৃতিতে গেঁথে ফেলতে পারে। আর এর জাদুকরি দিকটা হচ্ছে এখানেই। আপনি রাতে যে ২০ মিনিট অনুশীলন করবেন তা আরো গুরুত্বপূর্ণ, কেননা ঘুমের সময় মস্তিষ্ক—আপনি সারাদিনে যা শিখলেন তার সমস্ত কিছুই একত্রিত করে। মস্তিষ্কের কোষগুলিতে নতুন সংযোগ তৈরি হয় যা আপনার শেখার জন্য দারুণ সহায়তা করে। তারপর আপনি যখন ঘুম থেকে উঠে আবার অনুশীলন করেন তখন মস্তিষ্কে সেটি আরও দৃঢ়ভাবে গেঁথে যায়।

একবার পরখ করে দেখতেই পারেন।


[প্রিয় পাঠক, আপনিও লিখতে পারেন ক্যারিয়ার ইনটেলিজেন্সে। শিক্ষা, ক্যারিয়ার বা পেশা সম্পর্কে যে কোনো লেখা আমাদের কাছে পাঠিয়ে দিন। পাঠাতে পারেন অনুবাদ লেখাও। তবে সেক্ষেত্রে মূল উৎসটি অবশ্যই উল্লেখ করুন লেখার শেষে। লেখা পাঠাতে পারেন ইমেইলে অথবা ফেসবুক ইনবক্সে। ইমেইল : editor@careerintelligencebd.com]

ক্যারিয়ার, ট্রেনিং ও স্কলারশিপ সম্পর্কে
exclusive তথ্য পেতে ফেসবুক গ্রুপে
জয়েন করুন-

Scroll to Top