আধুনিক বিশ্বের যত বড় দালানকোঠা গড়ে উঠেছে তার পেছনে সবচেয়ে বেশি অবদান পুরকৌশল বা সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং -এর। পৃথিবীর প্রাচীনতম ইঞ্জিনিয়ারিং হলো সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং। সভ্যতার বিকাশের সাথে সাথে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়টি স্বকীয়তা অর্জন করেছে। বর্তমানে অন্যান্য ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ের মতোই সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বা পুরকৌশল অত্যাধিক জনপ্রিয় বিষয়।
সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং একটি ব্যাপক ক্ষেত্র। মানবসভ্যতা ও বিলাসবহুল জীবন প্রদানের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় অবদান সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের। বিমানবন্দর, সেতু, পানি সরবরাহ এবং নিষ্কাশন ব্যবস্থা, বাঁধ, পোতাশ্রয়, রেলপথ, ফেরিঘাট, বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা, ভবন এমনকি নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট ও সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এর ফল। বলা যায়, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং না থাকলে এত উন্নত সভ্যতা আমরা পেতাম না। আমরা এত উন্নত রাস্তাঘাট, সেতু, ভবন কল্পনাও করতে পারতাম না। আজকের লেখায় আমরা জানবো, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে। সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কী, কোথায় পড়বেন, আলোচ্য বিষয় এবং বিশ্বে এ বিষয়ের চাহিদা ও ক্যারিয়ার সম্ভাবনা নিয়ে।
সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কী?
ডিজাইন, কনস্ট্রাকশন এবং রক্ষণাবেক্ষণের প্রকৌশল বিজ্ঞান হলো পুরকৌশল বা সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং। সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং মূলত অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্পের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের প্রকৌশলী বিজ্ঞানের সমন্বয়। সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং-কে প্রকৌশল বিজ্ঞান বা ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ‘মা’ বলে আখ্যায়িত করা হয়। সবচেয়ে পুরনো, বড় এবং সকল প্রকৌশল জ্ঞানের সমন্বয় হলো সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং। প্রকৌশলের এই শাখা কেবলমাত্র অবকাঠামোগত উন্নয়নই করে না। সেই সাথে পরিবেশের স্বাস্থ্যগত সংরক্ষণও নিশ্চিত করে থাকে।
১৮ শতাব্দীতে পুরকৌশল শব্দটিকে সামরিক প্রকৌশলবিদ্যার বিপরীত হিসেবে ব্যবহার করা হত। বিশ্বের প্রথম স্বঘোষিত সিভিল ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন জন স্মিয়াথন, যিনি এডিস্টোন লাইটহাউস তৈরি করেছিলেন। ১৭৭১ সালে স্মিয়াথন ও তার কয়েকজন সহকর্মী মিলে স্মিয়াথন সোসাইটি অব সিভিল ইঞ্জিনিয়ার নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন। যদিও তাদের কারিগরি বিষয় নিয়ে কিছু বৈঠক হয় তথাপিও এটি একটি সামাজিক সংগঠনের চেয়ে বেশি কিছু ছিল না।
১৮১৮ সালে লন্ডনে ইনস্টিটিউট অব সিভিল ইঞ্জিনিয়ার প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮২০ সালে থমাস টেলফোর্ড প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ১৮২৮ সালে প্রতিষ্ঠানটি রাজকীয় সনদ গ্রহণ করে যা পুরকৌশলকে একটি পেশা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
সিভিল ইঞ্জিনিয়ারের কাজ
সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ছাড়া সভ্যতার অত্যাধুনিক উন্নয়ন কল্পনা করা যায় না। কোনো প্রকল্পের নকশা, ব্যবস্থাপনা, গঠন, নির্মাণ তদারকি, পরিকল্পনা ইত্যাদি একজন পুরকৌশলীর প্রধান কাজ। ব্যক্তিগত বাড়ি, আবাসন প্রকল্প, বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ প্রকল্প, সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণ ও মেরামত, বাঁধ নির্মাণ, কলকারখানা নির্মাণ, বন্দর নির্মাণের অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্পের সাথে সিভিল ইঞ্জিনিয়াররা যুক্ত থাকেন।
এছাড়াও তাদের অবদান আমরা দেখি এরোস্পেস শিল্পে, জেট লাইনার এবং স্পেস স্টেশন ডিজাইনে। অটোমোবাইল শিল্প, চ্যাসিসের লোড বহনক্ষমতা নিখুঁতকরণে, জাহাজ নির্মাণ শিল্প, পাওয়ার ইন্ডাস্ট্রি এবং যেকোনো অন্যান্য শিল্প যেখানে নির্মাণ সংক্রান্ত কাজ রয়েছে সেখানেই সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং-এর অবদান রয়েছে। পুরকৌশলীরা বা সিভিল ইঞ্জিনিয়াররাই মূলত আমাদের সভ্যতার কারিগর। মানুষের বসবাসের অনুপযোগী একটি জায়গাকে বাসোপযোগী করে তোলার মূল কাজ সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদের।
সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বা পুরকৌশলের আলোচ্য বিষয় কী?
সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বা পুরকৌশল হচ্ছে সমাজের বিভিন্ন সমাধানের নিমিত্তে প্রাকৃতিক ও বৈজ্ঞানিক ধারণা এবং নীতিগুলোর প্রয়োগ। গণিত ও পদার্থবিজ্ঞানের সূত্রকে অধিকতর বাস্তবভিত্তিক সমস্যা সমাধানে ব্যবহারের মধ্য দিয়ে পুরকৌশল পেশা আজকের অবস্থানে আসতে সক্ষম হয়েছে।
পুরকৌশলের বিস্তৃতি অনেক ব্যাপক। এর জ্ঞান কাঠামোবিদ্যা, বস্তুবিদ্যা, ভূবিজ্ঞান, ভূতত্ত্ব, মাটি, জলবিজ্ঞান, পরিবেশবিদ্যা, বলবিদ্যা এবং বিজ্ঞানের আরো শাখার সাথে সংযুক্ত।
যেহেতু সময়ের সাথে সাথে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং -এর পরিসর বাড়ছে তাই এর অনেক শাখা বের হয়েছে। তবে প্রধানত ৪টি শাখা রয়েছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো হলো –
১. স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং (Structural Engineering)
বাড়ি, হোটেল, পার্ক, ব্রিজ, বিল্ডিং ইত্যাদির উপরে নিজস্ব ভার বা বাইরের ভার প্রতিরোধ ক্ষমতাসহ বাতাস, পানি, ভূমিকম্প, তাপমাত্রা ইত্যাদির প্রভাব থেকে রক্ষার জন্য সিমেন্ট, বালি, রি-ইনফোর্সমেন্ট, কাঠ ও অন্যান্য উপাদানের সমন্বয়ে সঠিক ডিজাইন কিভাবে করতে হয় সেই সম্পর্কিত আলোচনা করা হয় এ শাখায়।
২. ট্রান্সপোর্টেশন ইঞ্জিনিয়ারিং (Transportation Engineering)
কোনো সমাজের বৈশিষ্ট্য বা গুণ সেখানকার যোগাযোগ ব্যবস্থার ওপর নির্ভর করে। সমাজের উন্নয়ন অনেকটা প্রভাবিত হয় এই যোগাযোগ ব্যবস্থার দ্বারা। মানুষ, মালামাল ইত্যাদি পরিবহন ব্যবস্থা নিয়ে গবেষণা, ডিজাইন, সমস্যা, সমাধান নিয়ে কাজ করে ট্র্যান্সপোর্টেশন ইঞ্জিনিয়ারিং। অল্প রাস্তায় অধিক পরিবহন সুবিধা, দুর্ঘটনা কমানো, খরচ কমানো ইত্যাদি এ শাখার আলোচ্য বিষয়।
৩. জিওটেকনিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং (Geo technical Engineering)
প্রায় সকল সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং শাখাতেই এটি কাজে লাগে। কারণ বেশির ভাগ অবকাঠামো ভূমির উপর অবস্থিত। মাটি বা পাথরের উপর স্ট্রাকচারের প্রভাব এবং এদের বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করে এ শাখা। ভূগর্ভের সিপেজ, ভুমিকম্পের প্রভাব, স্থিতিশীলতা ইত্যাদি নিয়ে কাজ করে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং -এর এ শাখা। বাঁধ, রিটেইনিং ওয়াল, ফাউন্ডেশন ইত্যাদির আংশিক ডিজাইন করা হয় এই শাখার মাধ্যমে।
৪. এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং (Environmental Engineering)
পরিবেশ তথা বাতাস এবং পানির দূষণরোধ, বিশুদ্ধকরণ ইত্যাদি এই শাখার কাজ। বর্তমানে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা। বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ, বর্জ্য, মল ইত্যাদি অপসারণ এবং বিশুদ্ধকরণ করা নিয়ে আলোচনা করা হয় এই শাখাতে।
এছাড়াও আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ শাখা রয়েছে। এগুলো হলো :
১. ওয়াটার রিসোর্স ইঞ্জিনিয়ারিং (Water Resource Engineering)
২. কন্সট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং (Construction Engineering)
৩. আরবান অ্যান্ড কমিউনিটি প্ল্যানিং (Urban and Community Planning)
৪. ম্যাটেরিয়াল সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (Materials science and engineering)
৫. কোস্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং (Coastal engineering)
৬. আর্থকুয়েক ইঞ্জিনিয়ারিং (Earthquake engineering)
৭. সার্ভেয়িং (Surveying)
৮. ফরেন্সিক ইঞ্জিনিয়ারিং (Forensic engineering)
৯. কন্ট্রোল ইঞ্জিনিয়ারিং (Control engineering)
তাছাড়া একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারকে জরিপ ও প্রকল্প ব্যবস্থাপনার কাজও করতে হয়। প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় সকল স্থাপত্যের নকশা ও নির্মাণ রাজমিস্ত্রি ও কাঠমিস্ত্রি দ্বারা করা হতো। যার ফলে একসময় স্থপতির প্রয়োজন অনুভূত হয়। সকল জ্ঞান বিশেষ গোষ্ঠীর মুষ্টিবদ্ধ ছিল এবং তা খুব কম সময়ই অন্যদের জানানো হতো। এর ফলে একটি নির্দিষ্ট এলাকায় একই ধরনের স্থাপনা, রাস্তা ও অবকাঠামো দেখা যেত। ধীরে ধীরে সভ্যতার বিকাশের সাথে সাথে পুরকৌশল বিস্তৃতি লাভ করে। এবং বর্তমানে নির্মাণ সংক্রান্ত কার্যাবলির প্রতিটি শাখায় এটি আলোচিত হয়ে থাকে।
বাংলাদেশে কোথায় পুরকৌশল বা সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ানো হয় ?
আমাদের দেশে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াশোনার একটি অন্যতম বিষয় বলে বিবেচিত হয়। পৃথিবীর প্রাচীনতম ইঞ্জিনিয়ারিং বললে যে বিষয়টি মানুষের মাথায় খেলা করে, তা হলো সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বা পুরকৌশল। একজন সাধারণ মানুষ ইঞ্জিনিয়ার বলতে একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারকেই কল্পনা করে থাকেন। অন্যান্য বিষয়ের মতো এ বিষয়টি শিক্ষার্থীদের পছন্দ এবং প্রায়োরিটির মূলে রয়েছে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সাধারণত দুইভাবে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করা যায়। প্রথমত বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পাস করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চার বছরের বিএসসি অনার্স এবং তারপর এমএসসি। দ্বিতীয়ত, বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি পাস করে ডিপ্লোমা করা এবং তারপর বিএসসি করা। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় অথবা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলো কিছু শর্ত দিয়ে থাকে। যেমন- গণিত, উচ্চতর গণিতে সর্বনিম্ন ২ পয়েন্টসহ পদার্থবিজ্ঞানে ভালো রেজাল্ট করা। এছাড়াও ভর্তি পরীক্ষায় বিশ্ববিদ্যালয়ভেদে ভিন্ন ভিন্ন শর্ত থাকে। এগুলো পূরণ করতে পারলেই একজন শিক্ষার্থী বিএসসি অথবা ডিপ্লোমা করার সুযোগ পায়।
বাংলাদেশের খুব অল্পসংখ্যক সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বা পুরকৌশল নিয়ে পড়ার সুযোগ রয়েছে। কারণ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন সীমিত থাকে। যেসকল সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়টি রয়েছে সেগুলো হলো :
- ১. বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)
- ২. ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (ডুয়েট ) [শুধুমাত্র ডিপ্লোমা ব্যাকগ্রাউন্ডদের জন্যে]
- ৩. খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট)
- ৪. রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট)
- ৫. চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট)
- ৬. শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (সাস্ট)
- ৭. হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (হাবিপ্রবি)
- ৮. বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বশেমুরবিপ্রবি)
- ৯. মিলিটারি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (MIST)
এছাড়াও সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত বেশ কিছু ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজেও সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং -এ বিএসসি করার সুযোগ আছে।এগুলো নতুন প্রতিষ্ঠান হওয়ায় অনেকের কাছে এখনও অপরিচিত। এগুলো হলো :
- ১. ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ (ঢাবি অধিভুক্ত)
- ২. ফরিদপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ (ঢাবি অধিভুক্ত)
- ৩. বরিশাল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ (ঢাবি অধিভুক্ত)
- ৪. সিলেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ (শাবিপ্রবি অধিভুক্ত)
- ৫. রংপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ (রাবি অধিভুক্ত)
সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়ার সুযোগ আছে। তবে তা প্রচুর ব্যয়বহুল। বাংলাদেশের যেসকল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়টি রয়েছে সেগুলো হলো :
১. ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
২. আন্তর্জাতিক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম
৩. আহছানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (ডিপ্লোমাসহ)
৪. ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক
৫. আন্তর্জাতিক কৃষি ব্যবসায় এবং প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
৬. স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি
৭. বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা
৮. রাজশাহী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (ডিপ্লোমাসহ)
৯. সোনারগাঁও বিশ্ববিদ্যালয়
১০. পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
১১. নর্থ ওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ
১২. জেড এইচ সিকদার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
১৩. ঈশা খাঁ ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
১৪. ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ
১৫. প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়
১৬. ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ
১৭. ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্সস
১৮. সিটি ইউনিভার্সিটি
১৯. লিডিং ইউনিভার্সিটি
২০. প্রাইম ইউনিভার্সিটি
২১. সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি
২২. পুন্ড্র ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি
২৩. কুইন্স বিশ্ববিদ্যালয়
২৪. ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
এছাড়াও প্রায় ৪৯ টি সরকারি ও বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট রয়েছে যেখানে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং -এর ওপর ডিপ্লোমা করা যায়। সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং -এ ডিপ্লোমার চারবছর মেয়াদি আট সেমিস্টারের কোর্স সিস্টেম চালু আছে।
যেকোনো সরকারি অথবা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়া সম্ভব। তবে সরকারি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে কারিগরি শিক্ষাবোর্ড নীতিমালা প্রণয়ন করে। ডিপ্লোমা ইন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং -এর মান এইচএসসি সার্টিফিকেট এর তুলনায় বেশি হলেও বিএসসি সার্টিফিকেট এর তুলনায় কম মূল্যায়ন পায়। তবে ডিপ্লোমা করার পর বিএসসিও করা যায় এই বিষয়ে।
বিশ্বে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং -এর চাহিদা এবং উচ্চশিক্ষার সুযোগ কেমন?
বর্তমান বিশ্বে শিক্ষা দীক্ষায় সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বা পুরোকৌশল বিদ্যা অনেক গুরুত্ব বহন করছে। এর চাহিদা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। দুবাই সিঙ্গাপুর নিউজিল্যান্ডকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদের স্বর্গ বলা হয়। এসকল দেশে প্রতিবছর প্রচুর পরিমাণে তৈরি হচ্ছে সিভিল ইঞ্জিনিয়ার।
বর্তমান বিশ্বের অবকাঠামোগত উন্নয়ন অত্যন্ত দ্রুত বৃদ্ধির পেছনে এসকল দক্ষ সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদের অবদান অনেক বেশি। উন্নত দেশগুলোতে স্কলারশিপসহ উচ্চশিক্ষার সুযোগ এবং চাহিদা রয়েছে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়াদের।
IELTS করে বাইরের দেশগুলোতে স্কলারশিপ নিয়ে পড়ার সুযোগ রয়েছে। পাশাপাশি পার্টটাইম চাকরি সুবিধা আছে কিছু কিছু দেশে। বিশ্বের উল্লেখযোগ্য কিছু বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সুযোগ রয়েছে-
১. মাস্যাচুসেট্স ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি
২. সিঙ্গাপুর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় (NUS)
৩. ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, বার্কলে
৪. টেকনোলজি অব জর্জিয়া ইনস্টিটিউট, যুক্তরাষ্ট্র
৫. ডেলফ্ট প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, নেদারল্যান্ড
৬. ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাজ্য
৭. ETH জুরিখ-সুইস ফেডারেল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি, সুইজারল্যান্ড
৮. পলিটেকনিকো ডি মিলানো, ইতালি
৯. স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাষ্ট্র
১০. সিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়, চীন
১১. অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাজ্য
১২. সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়, অস্ট্রেলিয়া
১৩. টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়, জাপান
এছাড়াও উন্নত দেশগুলোর পাশাপাশি মাঝারি উন্নত দেশগুলোতেও এই বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করার সুযোগ সুবিধা রয়েছে। দিনদিন সভ্যতা ও প্রযুক্তি যতটা উন্নতি হচ্ছে ততটাই অবকাঠামোগত অগ্রগতি বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে পুরকৌশল বা সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এর চাহিদা ও বৃদ্ধি পাচ্ছে। নতুন নতুন কর্মক্ষেত্র সৃষ্টি হচ্ছে যার ফলে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা বেড়ে যাচ্ছে।
সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং : কর্মক্ষেত্র ও ক্যারিয়ার সম্ভাবনা
সভ্যতার যত উন্নতি হচ্ছে, প্রতিনিয়ত অবকাঠামোর পরিবর্তন হচ্ছে। এক হাজার বছর আগের সভ্যতার অবকাঠামোগত অবস্থায় প্রযুক্তির ব্যবহার কম ছিল। বর্তমান সভ্যতার অবকাঠামোর সাথে সাথে প্রযুক্তির অত্যাধুনিক ব্যবহার এবং স্বল্প জায়গায় অধিক সুবিধার পদ্ধতি প্রচলিত ও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এই যে ব্যাপক পরিবর্তন তার পেছনে পুরকৌশলীদের অবদান অন্যতম। আমাদের জীবনযাত্রার মান কতটা উন্নতি করতে চাই, তার ওপর নির্ভর করছে পুরকৌশলের ভবিষ্যৎ। আমরা প্রতিনিয়ত রেকর্ড ছাড়িয়ে যাচ্ছি উন্নয়নে।
বাংলাদেশের মতো মধ্যম আয়ের উন্নয়নশীল দেশেও গত এক দশকে অবকাঠামোগত উন্নয়ন চোখে পড়ার মতো।
এই মুহূর্তে দেশের সবচেয়ে উঁচু ভবন ৩৪ তলা। সরকার ১৪২ তলা আইকনিক টাওয়ার বানানোর পরিকল্পনা করছে। আমাদের জায়গার সীমাবদ্ধতা আছে, ফলে আমাদের উঁচু ভবনের দিকে যেতে হবে। সে ক্ষেত্রে পুরকৌশলীদের ভূমিকা মূখ্য। বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বা পুরকৌশল -এর কর্মক্ষেত্র তুলনামূলক কম থাকলেও বর্তমানে অসংখ্য সরকারি বেসরকারি ক্ষেত্রে পুরকৌশলী বা সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদের ক্যারিয়ার গড়ে তোলার সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে।
সরকারি যেসকল সেক্টরে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদের কাজ করার সুযোগ রয়েছে সেগুলো হলো –
১. পানি উন্নয়ন বোর্ড
২. সড়ক ও জনপদ বিভাগ
৩. এলজিইডি (LGED)
৪. এলজিডি (LGD)
৫. বাংলাদেশ রেলওয়ে
৬. বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ -বিআরটিএ
৭. সিটি করপোরেশন
৮. গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়
৯. সেনাবাহিনী
১০. মিলিটারি ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিস
১১. ইউনিভার্সিটির শিক্ষকতা
এছাড়াও, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর, মৎস্য অধিদপ্তর বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড, পল্লী বিদ্যুৎ কোম্পানি লিমিটেড, পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লি., বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড এসব ক্ষেত্রেও সিভিল ইঞ্জিনিয়াররা নিজেদের ক্যারিয়ার গড়ে তুলতে পারেন।
বেসরকারি যেসকল কর্মক্ষেত্র রয়েছে সেগুলো হলো-
১. রিয়েল এস্টেট কোম্পানি (Real estate company)
২. ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্ম
৩. কন্সট্রাকশন ফার্ম
৪. কনসাল্টেন্সি ফার্ম
৫. পরিবেশ নিয়ে কর্মরত বিভিন্ন multinational company
৬. দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর
বিশ্বে মূল্যায়নের দিক থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং প্রথম সারিতে রয়েছে। উন্নত দেশগুলোতে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদের চাহিদা ও কর্মক্ষেত্র ব্যাপক। এসকল দেশে বেশ ভালো মানের এবং উচ্চ বেতনের চাকরির সুযোগ সুবিধা রয়েছে। ফলে বাংলাদেশের পাশাপাশি বাইরের দেশগুলোতেও এই বিষয় থেকে নিজের ক্যারিয়ার গড়ে তোলা সম্ভব। এছাড়া অভিজ্ঞতা ভালো থাকলে ক্যারিয়ার সম্ভাবনা আরও সমৃদ্ধ হওয়ার সুযোগ রয়েছে।
বিশ্বের বড় বড় নির্মাণ কোম্পানি, মাল্টিন্যশনাল কোম্পানিসহ বিভিন্ন রিয়েল এস্টেট কোম্পানিতে প্রচুর সেক্টর রয়েছে যেখানে সিভিল ইঞ্জিনিয়াররা তাদের কর্মজীবন শুরু করতে এবং উন্নয়ন করতে পারে।
বিশ্বের প্রতিটা দেশ তাদের অবকাঠামোগত উন্নয়নের দিকে নজর দিয়েছে। যার ফলে বাজারে দিনে দিনে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারের চাহিদা ব্যপক হারে বাড়ছে। ইঞ্জিনিয়ারিং এমন এক বিষয় এখানে যত অভিজ্ঞতা বাড়বে, সেই হারে ক্যারিয়ারও উন্নয়ন হবে।
কিছু বিষয়ের চাহিদা কখনো কমে না। বরং দিনদিন বৃদ্ধি পায়। সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বা পুরকৌশল এমনই এক বিষয়। গত ১০০ বছরে যেভাবে অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে, আগামী ১০০ বছরে এর চেয়ে অনেকগুন উন্নয়ন ঘটবে। প্রতিনিয়ত এই বিষয়ের নতুন নতুন কর্মক্ষেত্র সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং অন্যান্য ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ের চেয়ে অনেকটা এগিয়ে আছে।
কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং কী? ক্যারিয়ার সম্ভাবনা কেমন?
ইলেক্ট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং কী? ক্যারিয়ার সম্ভাবনা কেমন?