মানসম্মত পড়াশোনা, প্রচুর বিষয়ে পড়ার সুযোগ, ফান্ডিংয়ের সহজলভ্যতা, জীবনমান—সব মিলিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকায় বেশ এগিয়ে থাকে। অনেক শিক্ষার্থীর কাছেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করার ক্ষেত্রে অন্যতম বড় বাধা মনে হয় জিআরই বা জিম্যাট পরীক্ষা। তবে এ পরীক্ষায় ভালো স্কোর করতে পারলে ভর্তির নিশ্চয়তা তো থাকেই, অনেক ক্ষেত্রে ফান্ডিং পাওয়াও সহজ হয়ে যায়। কাজেই জেনে নিন এর খুঁটিনাটি।
জিআরই বা জিম্যাট দুটো পরীক্ষাই স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ভর্তির জন্য প্রযোজ্য। এর যেকোনো একটিতে বসতে হবে আপনাকে। যে বিশ্ববিদ্যালয়ে যে বিষয়ে পড়তে চান, জেনে নিন সেখানে ভর্তির যোগ্যতা কী। সাধারণত বাণিজ্যের বিষয়গুলোতে পড়তে চাইলে জিম্যাট স্কোর প্রয়োজন হয়। আর মানবিক, সামাজিক বিজ্ঞান, বিজ্ঞান ইত্যাদি বিষয়ে লাগে জিআরই স্কোর। দুটো পরীক্ষাতে বসার আগেই নিবন্ধন করে নেওয়া প্রয়োজন।
জিআরই
গ্র্যাজুয়েট রেকর্ডস এক্সামিনেশনস বা জিআরই হলো কম্পিউটার অ্যাডাপটিভ পরীক্ষা অর্থাৎ কম্পিউটারে বসেই পরীক্ষা দিতে হবে। ২০১১ সালে এই পরীক্ষাপদ্ধতিতে কিছু বদল আনা হয়েছে। যেমন এখন থেকে এতে কোনো প্রশ্ন বাদ দিয়ে পরের প্রশ্নে এগিয়ে যাওয়া যাবে, পরে সময় থাকলে আবার সেই প্রশ্নে ফিরে আসা যাবে। পুরো পরীক্ষার সময় তিন ঘণ্টা ৪৫ মিনিট। এতে ছয়টি বিভাগ থাকে। প্রতি বিভাগের পর এক মিনিট বিরতি দেওয়া হবে। দুটি ভারবাল রিজনিং, দুটি কোয়ান্টিটেটিভ রিজনিং, একটি পরীক্ষামূলক বা গবেষণামূলক এবং একটি লিখিত অংশ।
লিখিত পরীক্ষা: জিআরইর শুরুতেই থাকে লিখিত পরীক্ষা। কম্পিউটারেই লিখে পরীক্ষা দিতে হবে। এতে দুটি ‘এসে’ লিখতে হবে—ইস্যু টাস্ক ও আর্গুমেন্ট টাস্ক। কোনো বিষয়ে একটি বা দুটি প্যারা তুলে দেওয়া হতে পারে। এর সঙ্গে আপনি একমত বা ভিন্নমত পোষণ করেন কি না তা লিখতে হবে, এর পাশাপাশি আপনার পক্ষে যুক্তিও দেখাতে হবে। আর্গুমেন্ট টাস্কেও একটি বক্তব্য তুলে ধরা হবে। আপনাকে যুক্তি দিয়ে বলতে হবে এই বক্তব্যে কী কী বিষয় ধরে নেওয়া হয়েছে (অ্যাজাম্পশনস)। শূন্য থেকে ছয়-এর মধ্যে স্কোর দেওয়া হবে। জিআরই প্রস্তুতিবিষয়ক বিভিন্ন ওয়েবসাইটে আপনি এ ধরনের প্রশ্ন ও উত্তর দেখতে পাবেন। কেমন উত্তরে কেমন স্কোর দেওয়া হয়েছে তা-ও দেখতে পাবেন। তা থেকে আপনি নিজে প্রস্তুতি নিতে পারেন। এই পরীক্ষায় আপনি কোনো স্পেল চেকারের সাহায্য নিতে পারবেন না।
ভারবাল রিজনিং: প্রতিটি ভারবাল অংশে ত্রিশ মিনিটে ২০টি করে প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। সাধারণত চারটি বা পাঁচটি উত্তর দেওয়া থাকবে, সঠিকটি বেছে নিতে হবে। শূন্যস্থান পূরণ, বাক্য সম্পূর্ণ করা, রিডিং কমপ্রিহেনশন ইত্যাদি ধরনের প্রশ্ন থাকবে। একটি প্রশ্নের একাধিক উত্তর হতে পারে, উত্তরপত্রে দুটোই উল্লেখ করতে হবে, আংশিক উত্তরে কোনো নম্বর পাওয়া যাবে না।
কোয়ান্টিটেটিভ রিজনিং: ৩৫ মিনিটে ২০টি করে প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে প্রতি অংশে। সাধারণ গাণিতিক হিসাব, বীজগণিত, জ্যামিতির নানা প্রশ্ন থাকবে।
অন্যান্য: গবেষণা বা পরীক্ষামূলক অংশটি ভারবাল বা কোয়ান্টিটেটিভ হতে পারে। এর স্কোর মূল পরীক্ষায় যোগ হবে না। তবে পরীক্ষার্থীদের জানানো হবে না কোনটি গবেষণা বা পরীক্ষামূলক অংশ। ফলে সব অংশেই সমান মনোযোগ দিতে হবে।
স্কোর: ভারবাল ও কোয়ান্টিটেটিভ দুটি অংশেই ১৩০ থেকে ১৭০-এর মধ্যে স্কোর দেওয়া হয়।
জিম্যাট
গ্র্যাজুয়েট ম্যানেজমেন্ট অ্যাডমিশন টেস্ট বা জিম্যাটে মোট তিন ঘণ্টা ত্রিশ মিনিটে পরীক্ষা নেওয়া হবে। অ্যানালাইটিক্যাল রাইটিং ত্রিশ মিনিট, ইন্টিগ্রেটেড রিজনিং ৩০ মিনিট, কোয়ান্টিটেটিভ ৭৫ মিনিট, ভারবাল ৭৫ মিনিট।
অ্যানালাইটিক্যাল: এ অংশে ত্রিশ মিনিটে একটি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। একটি বক্তব্য তুলে দেওয়া হবে। এর বিশ্লেষণ করতে হবে। এক থেকে ছয়-এর মধ্যে নম্বর দেওয়া হবে।
ইন্টিগ্রেটেড রিজনিং: গ্রাফিকস, টেক্সট, চার্ট ইত্যাদি বিশ্লেষণ করে নানা প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। ১২টি প্রশ্ন থাকবে।
কোয়ান্টিটেটিভ: সাধারণ গণিত, বীজগণিত, জ্যামিতি থেকে ৩৭টি প্রশ্ন থাকবে।
ভারবাল: রিডিং কমপ্রিহেনশন, বক্তব্য বিশ্লেষণ ইত্যাদি থেকে ৩৭টি প্রশ্ন থাকবে।
প্রস্তুতি: এই পরীক্ষাগুলোর প্রস্তুতির জন্য বাজারে নানা বই কিনতে পাবেন। ব্যারনস, কাপলান, প্রিন্সটন ইত্যাদি বইয়ের সাহায্য নিতে পারেন। এ ছাড়া ঢাকার আমেরিকান সেন্টার এবং ইএমকে সেন্টার থেকে নিবন্ধন, ফি, পরীক্ষা প্রস্তুতি ইত্যাদি ব্যাপারে সাহায্য পাবেন।
ফোন: আমেরিকান সেন্টার: (৮৮০) (২) ৮৮৫-৫৫
ইএমকে সেন্টার: ৮৮ (০২) ৯১১৯৭৫২
এ ছাড়া দেখতে পারেন এই ওয়েবসাইট: www.ets.org, www.mba.com
সূত্র: প্রথম আলো
অনুলিখন : আতিকুর রহমান