অনেকেই ব্যাচেলর ডিগ্রি নেওয়ার পর মাস্টার্স অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এমবিএ) ডিগ্রি নেবেন কি না, তা নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভুগে থাকেন। অনেকেই এ ডিগ্রি নেওয়ার আগে পরিবারের সদস্যদের প্রশ্নের মুখে পড়েন। প্রশ্ন ওঠে কষ্টসাধ্য ও ব্যয়বহুল এ ডিগ্রিটি নিয়ে সত্যিই কি বাস্তব জগতে কোনো উপকার হয়। ফলে ব্যাচেলর ডিগ্রি অর্জন করলেও এমবিএ করা হয় না অনেকেরই। এই লেখায় এমবিএ ডিগ্রি গ্রহণের উপযুক্ত কিছু কারণ তুলে ধরেছেন সানজিদা সুলতানা
বাড়তি যোগ্যতা অর্জন
এমবিএ নির্দিষ্ট কোনো বিষয়ে পড়ার মতো কোর্স নয়। এ কারণেই একে বলা হয় মাল্টিডিসিপ্লিনারি কোর্স। এতে আপনার আগে পঠিত বিষয়ের বাইরে ব্যবসায়ের জন্য প্রয়োজনীয় কৌশল, উদ্যোক্তা হওয়ার মূলমন্ত্র প্রভৃতি পড়ানো হয়ে থাকে। আর সে কারণেই একটি এমবিএ ডিগ্রি আপনার অর্জিত যোগ্যতাকে অনেকটাই বাড়িয়ে দিতে সক্ষম।
আয়ের সুযোগ বাড়ানো
বাস্তব জগতে এমবিএ ডিগ্রি নেওয়া ব্যক্তিদের আয় অন্যদের তুলনায় বেশি থাকে। আর আপনার পড়ালেখা চালিয়ে গেলে যদি আয় বাড়ার সুযোগ তৈরি হয়, তাহলে তা নিশ্চয়ই চালিয়ে যাওয়া উচিত। শিক্ষার পেছনে বিনিয়োগকে অনেকেই সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ হিসেবে দেখেন। আর আর্থিক সঙ্গতি থাকলে এ বিনিয়োগ করাই উচিত। দুই বছর ব্যয় করে অর্জিত এ ডিগ্রি আপনার বাকি জীবনের জন্য সম্বল হিসেবে কাজ করবে।
জীবনব্যাপী শেখার আগ্রহ
যখন আপনি একজন শিশু ছিলেন তখন সারাক্ষণ প্রশ্ন করতেন। সেসব প্রশ্ন ছিল আপনার জ্ঞানার্জনের প্রাথমিক ধাপ। আর এ ধারা বড় হয়েও আপনি বজায় রাখতে পারেন নিত্যনতুন ডিগ্রি অর্জনের মাধ্যমে। এ ধারারই একটি ডিগ্রি এমবিএ। এতে আপনার শেখার আগ্রহ প্রকাশ পাবে এবং জ্ঞানার্জনের ধারা বজায় থাকবে।
চাকরির লক্ষ্য অর্জন
আপনি কি কোনো প্রতিষ্ঠানের একটি অবস্থানে আটকে আছেন এবং তা থেকে কোনোভাবেই উন্নতি করতে পারছেন না? এ অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটাতে সাহায্য করতে পারে এমবিএ ডিগ্রি। কোনো প্রতিষ্ঠানে আপনার প্রতিদ্বন্দ্বীদের পাশ কাটিয়ে এগিয়ে যাওয়ার জন্য এ ডিগ্রিটি আপনার কাজে লাগতে পারে। আর এর মাধ্যমে অর্জিত হতে পারে আপনার ‘ক্যারিয়ারের লক্ষ্য’।
বিশ্ব সচেতনতা
বিশ্বব্যাপী আপনার চারপাশে আবর্তিত ঘটনাপ্রবাহ সম্পর্কে জানার জন্য এ ডিগ্রিটি গ্রহণ করা যেতে পারে। বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতি খুব দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে। এ অবস্থায় নতুন নতুন জ্ঞান অর্জন করে পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে চলার কোনো বিকল্প নেই।
সময় ও সুযোগ
অনেকেই সুবিধামতো সময় ও সুযোগের অভাবে এমবিএ ডিগ্রি অর্জন থেকে পিছিয়ে আসেন। তাদের জন্য রয়েছে অনলাইন এমবিএ ডিগ্রি নেওয়ার সুযোগ। এ ছাড়াও বর্তমানে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে সান্ধ্যকালীন এমবিএ ডিগ্রি নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। তবে উভয় ক্ষেত্রেই পড়ালেখার সময় বের করে নিতে হয় ব্যস্ততার মাঝেই।
ব্যবস্থাপনা ও নেতৃত্বের দক্ষতা
এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করার ফলে আপনার ব্যবস্থাপনা ও নেতৃত্বের দক্ষতা কিছুটা হলেও বাড়বে। এ কারণে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নেতৃস্থানীয় পদগুলোতে নিয়োগের জন্য এমবিএ ডিগ্রি থাকা ব্যক্তিদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।
ব্যবসার নেটওয়ার্ক বাড়ানো
যখন আপনি এমবিএ ডিগ্রি নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন, তখনই আপনার অন্য পেশাদারদের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়ানোর সম্ভাবনা তৈরি হয়। এমবিএ পড়তে গিয়ে আপনার পরিচয় হবে উচ্চাকাঙ্ক্ষী ব্যবসায়ী, ব্যাংক কর্মকর্তা ও কর্পোরেট ব্যক্তিদের সঙ্গে। এর মাধ্যমে আপনি বাড়িয়ে তুলতে পারবেন আপনার পরিচয়ের পরিধি। এ কারণে একটি এমবিএ ডিগ্রি নেওয়া শুধু শিক্ষার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, এতে আপনি পরিচিত হতে পারবেন বহু ব্যক্তির সঙ্গে। তাদের অনেকে পরে অনেক প্রতিষ্ঠানের শীর্ষস্থানেও আরোহণ করবে।
নতুন সুযোগ
পরিসংখানে প্রকাশ, যেসব ব্যবসায়ী বা প্রফেশনাল এমবিএ ডিগ্রি গ্রহণ করেন, তারা অন্যদের তুলনায় ব্যবসায় সাফল্য লাভ করেন বেশি। ব্যাচেলর ডিগ্রির তুলনায় এমবিএ ডিগ্রি অর্জনকারীদের আয় এবং সুযোগ বেশি হয়। এ কারণে এমবিএ ডিগ্রি হতে পারে আপনার ক্যারিয়ারের জন্য নতুন সুযোগ।
এমবিএ ডিগ্রি নিয়ে দ্বিধায় থাকলে উপর্যুক্ত কারণগুলোই বোধহয় সেই দ্বিধা কাটিয়ে উঠতে যথেষ্ট।
সৌজন্যে: ইত্তেফাক (২২.০৫.২০১৪)