একজন ভালো ছাত্র হওয়ার জন্য শুধু ক্লাসে যোগ দেওয়া ও অ্যাসাইনমেন্টগুলি শেষ করার চেয়ে আরও বেশি কিছু প্রয়োজন। সেজন্য কার্যকর অধ্যয়নের অভ্যাস তৈরি করা প্রয়োজন, যা উত্পাদনশীলতাকে সর্বাধিক করে ও শেখার উন্নতি নিশ্চিত করে। এই নিবন্ধে, আমরা সফল ও ভালো শিক্ষার্থীদের অধ্যয়নের আটটি অভ্যাসের কথা আলোচনা করব। যা আপনাকে আপনার অ্যাকাডেমিক কর্মক্ষমতা বাড়াতে ও সাফল্য অর্জনে সহায়তা করতে পারে। তাহলে আসুন আলোচনা শুরু করি।
১. পড়ার জন্য নিরব জায়গা বের করুন
কার্যকরভাবে অধ্যয়ন করার জন্য, একটি শান্ত ও নিরব স্থান খুঁজে পাওয়া জরুরি। যা আপনাকে কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই পড়ায় মনোনিবেশ করতে সাহায্য করে। এটি হতে পারে লাইব্রেরির একটি শান্ত কর্নার, একটি পূর্ণাঙ্গ স্টাডি রুম বা আপনার বাড়িতে একটি আরামদায়ক স্থান। একটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করে, আপনি বাইরের প্রতিবন্ধকতা কমিয়ে আনতে পারেন। এবং পড়ায় আপনার মনোযোগকে কেন্দ্রীভূত করতে পারেন।
২. প্রতিবন্ধকতা ও বিক্ষিপ্ততা কমান
বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা আপনার অধ্যয়ন সেশনকে লাইনচ্যুত করতে পারে এবং উত্পাদনশীলতা হ্রাস করতে পারে। আপনার ফোনটি বন্ধ বা সাইলেন্ড মোডে রাখুন। ল্যাপটপে বা কম্পিউটারে পড়লে অপ্রয়োজনীয় ব্রাউজার ট্যাবগুলি বন্ধ করুন। কোলাহলপূর্ণ পরিবেশ এড়িয়ে চলুন।
পড়ার ক্ষেত্রের এইসব প্রতিবন্ধকতা বা বিভ্রান্তি দূর করে, আপনি ফলপ্রসূ অধ্যয়নের জন্য একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরি করেন।
৩. নিয়মিত বিরতি নিন
বিরতি ছাড়া দীর্ঘ সময় ধরে অধ্যয়ন করলে মানসিক অবসাদ তৈরি এবং মনোযোগ কমে যেতে পারে। তাই ভালো শিক্ষার্থীরা সাধারণত পড়ার সময় নিয়মিত ছোটখাটো বিরতি নেয়।
বিরতি আপনার মস্তিষ্ককে বিশ্রাম ও রিচার্জ করতে সাহায্য করে। তথ্য ধরে রাখার ক্ষমতা বাড়ায়। সর্বোত্তম ফোকাস বজায় রাখতে প্রতি ঘন্টায় ৫-১০ মিনিটের ছোট বিরতি নিন।
৪. এক বসায় সব শেষ নয়
এক বসায় কোনো বিষয় পুরোপুরি শেষ করে ফেলার চিন্তা; শেখার জন্য ভালো উপায় নয়। বরং কয়েকটি সেশনে বিষয়গুলোকে আত্মস্থ করতে চেষ্টা করুন। এই পদ্ধতিটি আরও সুন্দরভাবে তথ্যগুলো মেমরিতে ধারণে সহায়তা করবে।
প্রতিটি বিষয়ের জন্য আলাদা সময় বরাদ্দ করে অধ্যয়নের একটি দৈনন্দিন সময়সূচি তৈরি করুন। সে অনুযায়ী পড়তে চেষ্টা করুন।
৫. নির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করুন
অধ্যয়নের জন্য স্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নির্ধারণ করুন। লক্ষ্যহীনভাবে অধ্যয়ন করার পরিবর্তে, ভালো শিক্ষার্থীরা প্রতিটি অধ্যয়ন সেশনের সময় তারা কী অর্জন করতে চান তা নির্ধারণ করেন। নির্দিষ্ট সংখ্যক অনুশীলনের সমস্যা সমাধান করা, নির্দিষ্ট অধ্যায় পর্যালোচনা বা রিভাইস দেয়া বা একটি নির্দিষ্ট ধারণা আয়ত্ত করা ইত্যাদি। এই লক্ষ্যগুলি আপনাকে ফোকাস থাকতে এবং নির্দিষ্ট সময়ে আপনার অগ্রগতি পরিমাপ করতে সাহায্য করবে।
৬. নিজেকে পুরস্কৃত করুন
অধ্যয়নের লক্ষ্যগুলি অর্জন করার পরে নিজেকে পুরস্কৃত করা একটি শক্তিশালী প্রেরণা হতে পারে। আপনার কৃতিত্বগুলি উদযাপন করুন, বড় হোক বা ছোট। আপনি উপভোগ করেন এমন কিছু দিয়ে, যেমন- একটি প্রিয় খাবার, একটি টিভি শো দেখার জন্য একটি ছোট বিরতি, বা বন্ধুদের সাথে সময় কাটানো।
আপনার অধ্যয়নের রুটিনে পুরষ্কারগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করে, আপনি প্রক্রিয়াটির সাথে একটি ইতিবাচক সম্পর্ক তৈরি করুন। সফলতার জন্য আপনার উৎসাহ ও প্রেরণা বাড়ান।
৭. প্রয়োজনে সাহায্য নিন
ভালো শিক্ষার্থীরা যখন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয় বা কোনো বিষয়ে সমস্যায় পড়েন, তখন সাহায্য নিতে দ্বিধা করেন না। আপনার যখন স্পষ্টীকরণ বা নির্দেশনা প্রয়োজন হয়, তখন আপনার শিক্ষক, সহপাঠীর সাথে যোগাযোগ করতে বা অনলাইন রিসোর্সগুলোর সহায়তা নিতে দ্বিধা করবেন না। প্রশ্ন করা ও সাহায্য চাওয়া শুধুমাত্র আপনার জানাশোনাই বাড়াবে না। বরং শেখার ও উন্নতির প্রতি আপনার আগ্রহ বা প্রতিশ্রুতির স্বাক্ষর বহন করে।
৮. স্ব-যত্ন অনুশীলন করুন
আপনার শারীরিক এবং মানসিক সুস্থতার যত্ন নেওয়া অ্যাকাডেমিক সাফল্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শীর্ষ শিক্ষার্থীরা একটি ভারসাম্যপূর্ণ জীবনধারা বজায় রেখে সেলফ-কেয়ার বা স্ব-যত্নকে অগ্রাধিকার দেয়। নিশ্চিত করুন যে, আপনি পর্যাপ্ত ঘুমাচ্ছেন। নিয়মিত ব্যায়াম করছেন এবং পুষ্টিকর খাবার খাচ্ছেন। এমন ক্রিয়াকলাপে নিযুক্ত থাকুন যা আপনাকে রিল্যাক্স বা শিথিল রাখতে এবং চাপ কমাতে সাহায্য করে। মনে রাখবেন, সর্বোত্তম শিক্ষা ও কর্মক্ষমতার জন্য একটি সুস্থ মন ও শরীর অপরিহার্য।
এই আটটি অভ্যাসকে রুটিনে অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে আপনার অ্যাকাডেমিক কর্মক্ষমতাকে উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়াতে পারেন। যা আপনাকে একজন ভালো ছাত্র হতে সাহায্য করতে পারে। অভ্যাসগুলি গ্রহণ করে, আপনি একটি কার্যকর ও সফল অধ্যয়নের রুটিন গড়ে তুলতে পারলে, তা একাডেমিক শ্রেষ্ঠত্বের পথ প্রশস্ত করবে।
প্রিয় পাঠক, এ ধরনের আরো টিপস পেতে ক্যারিয়ার ইনটেলিজেন্সের ফেইসবুক গ্রুপে যুক্ত হোন। সেখানে আলোচনায় অংশ নিন।