বর্তমানে দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ৬০-৬৫ হাজার আসন রয়েছে গ্র্যাজুয়েশন করার জন্য। এতে সহজে বোঝা যাচ্ছে, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়াটা বেশ কঠিন ও সৌভাগ্যের বিষয়। তবে যাঁরা পরিকল্পনা অনুযায়ী মাঝের এই সময়টুকু যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পারবেন, তাঁদের সফল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। আসুন জেনে নিই একদম শুরু থেকে কীভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তুতি শুরু করবেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি : প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা
লক্ষ্য ঠিক করুন
আপনি প্রথমে কমপক্ষে ৫টি বিশ্ববিদ্যালয়কে টার্গেট করুন (১০টি হলে আরও ভালো হয়), ‘আমি এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়তে চাই’ এবং সেই লক্ষ্যে নিজেকে প্রস্তুত করতে সচেষ্ট হোন।
বিগত সালের প্রশ্ন সমাধান
আপনার টার্গেটেড বিশ্ববিদ্যালয়ের গত ১০ বছরের প্রশ্নগুলো প্রাথমিকভাবে ঘেঁটে দেখুন। এরপর সেখান থেকে ফাইন্ড আউট করুন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় কোন টপিক থেকে প্রশ্ন বেশি আসে, কোন কোন টপিক থেকে প্রশ্ন কম আসে, আর কোন কোন টপিক থেকে প্রশ্ন আসেই না। আপনার টার্গেটেড বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আলাদা আলাদা টপিকগুলো নোট করলে বেশি ভালো হয়।
গুরুত্বপূর্ণ টপিকগুলো আগে শেষ করুন
এবার দেখুন, আপনার চিহ্নিত টপিকগুলোর মাঝে কোন টপিকগুলো আপনি ভালো পারেন, কোন টপিকগুলো মোটামুটি পারেন আর কোন টপিকগুলো একদমই পারেন না। আপনি যে টপিকগুলো ভালো পারেন, সেগুলো আগে পড়ে ফেলুন। কারণ, পারা বিষয়গুলো দ্রুত শেষ করা যায়। এরপর যেগুলো মোটামুটি পারেন, সেই টপিকগুলো পড়ুন। এরপর যে টপিকগুলো একদমই পারেন না; সেগুলো পড়ুন। নিজে না পারলে সহপাঠী বা অভিজ্ঞদের সহযোগিতা নিন।
দাগিয়ে দাগিয়ে টেক্সটবুক পড়ুন
আপনার টেক্সটবুক তথা পাঠ্যবইগুলো লাইন বাই লাইন পড়ুন। মনে রাখতে হবে, এইচএসসি পরীক্ষার জন্য পাঠ্যবই থেকে বেছে বেছে পড়ে ভালো রেজাল্ট করা গেলেও বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার ক্ষেত্রে ভালো করা যায় না। এ ক্ষেত্রে পাঠ্যবইয়ের সবকিছু পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে পড়তে হবে। তবে পড়ার সময় অবশ্যই লাল কলম বা হাইলাইট দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ শব্দ ও লাইনগুলো পড়বেন। এতে করে মনে থাকবে বেশি।
রুটিন ও স্টাডিপ্ল্যান তৈরি করুন
নিজের সময় ও সুবিধা অনুযায়ী একটা পড়ার রুটিন তৈরি করে নেবেন এবং পাশাপাশি প্রতিদিন ও প্রতি সপ্তাহে কী কী পড়বেন তার একটি স্টাডিপ্ল্যান বা পাঠ-পরিকল্পনা তৈরি করে নেবেন। পাঠ-পরিকল্পনা তৈরি করার সময় বড় বড় অধ্যায় ও কঠিন বিষয়গুলো অল্প অল্প করে ভাগ করে নেবেন। এতে করে আপনার পড়তে ভালো লাগবে।
প্রতিদিন পড়া রিভিশন দিন
প্রতিদিন যা পড়বেন তা ঘুমাতে যাওয়ার আগে একবার রিভিশন দিবেন। সম্ভব হলে আগামী দিন যা পড়বেন, সেটাও ঘুমাতে যাওয়ার আগেই একবার চোখ বুলিয়ে নেবেন। এতে করে কঠিন পড়াও সহজে আয়ত্ত হয়ে যাবে। কারণ পরের দিন যখন পড়তে যাবেন, তখন পড়াগুলো কিছুটা পরিচিত মনে হবে। এমনকি মনেও থাকবে বেশি দিন। তবে পড়া দীর্ঘদিন মনে রাখার একটি কার্যকরী উপায় হলো পড়া লিখে লিখে এবং হালকা শব্দ করে পড়া।
আরও কিছু পরামর্শ
- এ সময়টায় অহেতুক ঘোরাঘুরি ও আড্ডা দেওয়া থেকে বিরত থাকুন, অর্থাৎ এমন কিছু করবেন না, যা আপনার সময় নষ্ট করে কিংবা পড়াশোনার প্রতি অমনোযোগী করে তোলে।
- যতটুকু পড়েন, ফেসবুক, মেসেঞ্জার, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম এজাতীয় সোশ্যাল মিডিয়া থেকে এই সময় দূরে থাকুন এবং পড়ার সময় কখনো এগুলো ব্যবহার করবেন না।
- কোনো মডেল টেস্টে কম নম্বর পেলে হতাশ হবেন না; আবার বেশি নম্বর পেলে অত্যধিক উচ্ছ্বসিতও হবে না। কারণ, এগুলো চূড়ান্ত পরীক্ষা নয়। এগুলো কেবল নিজেকে উন্নীত করার জন্য যাচাই করা কেবল। এসব মডেল টেস্ট পরীক্ষায় কখনো কম, আবার কখনো বেশি নম্বর পেতে পারেন।
- নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস রাখুন এবং অন্যের সঙ্গে নিজের পড়াশোনাকে তুলনা করে হতাশ হবেন না। নিজের সঙ্গে নিজেকে তুলনা করুন এবং প্রতিদিন নিজেকে আরও এগিয়ে নিতে চেষ্টা করুন।
গাজী মিজানুর রহমান: ৩৫তম বিসিএস ক্যাডার (সাধারণ শিক্ষা) ও মোটিভেশনাল স্পিকার