নানা উদ্যোগ নিলেও প্রসারিত করা যাচ্ছে না মেরিন একাডেমির ক্যাডেটদের চাকরি। এজন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বিদেশ ভ্রমন করলেও ফল মিলেছে সামান্যই।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মেরিন একাডেমির প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দেশি এবং বিদেশি জাহাজে চাকরি নিশ্চত করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাড়িয়েছে। বৈশ্বিক অর্থনীতিক মন্দাভাব ও দেশীয় বাণিজ্যিক নৌ-বহরের সংখ্যা কমে যাওয়ায় তাদের চাকরি পাওয়া এখন দুরহ ব্যাপার বলে স্বীকার করছে বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি।
২৮ মার্চ বুধবার জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ তথ্য জানায় প্রতিষ্ঠানটি। কমিটির সভাপতি মেজর (অব:) রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান, তালুকদার আব্দুল খালেক, মো: আব্দুল হাই, মো: হাবিবর রহমান, রণজিৎ কুমার রায় এবং মমতাজ বেগম অ্যাডভোকেট অংশ নেন।
নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবসহ, মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এসময় উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি, ন্যাশনাল মেরিটাইম ইন্সটিটিউট, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের কার্যক্রম এবং বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্পোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়।
চার্টার্ড মেরিন ইঞ্জিনিয়ার কমান্ড্যান্ট নৌ প্রকৌশলী সাজিদ হোসেন স্বাক্ষরিত বৈঠকের কার্যপত্র থেকে জানা যায়, ১৯৬২ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত প্রায় ৪ হাজার ৩৮৮ জন মেরিন ক্যাডেট (নটিক্যাল/ইঞ্জিনিয়ারিং) এই একাডেমি থেকে পাস করেছেন।
এছাড়া ১৯৮০ সালের পর থেকে বিভিন্ন পেশাদার প্রশিক্ষণ কোর্সের মাধ্যমে আরো প্রায় ৪০ হাজারের বেশি সংখ্যক মেরিন অফিসার ও মেরিন ইঞ্জিনিয়ারদের উচ্চতর ও সহায়ক প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। কিন্তু দিন দিন কাজের ক্ষেত্র কমে যাচ্ছে। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, মেরিন একাডেমির ক্যাডেটদের চাকরি সম্প্রসারণের জন্য সিঙ্গাপুর,যুক্তরাজ্য, মরিশাস, দক্ষিণ কোরিয়া, গ্রিস মোজাম্বিকসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে নিবিড় ও নিরবচ্ছিন্ন এবং প্রত্যক্ষ যোগাযোগের জন্য মন্ত্রণালয় ও একাডেমি কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি টিম গঠন করা হয়েছে।
উক্ত টিম ইতিপূর্বে দুবাই, সিঙ্গাপুর ইত্যাদি দেশ ভ্রমন করে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেছে। এজন্য কয়েকটি কোম্পানিতে তাদের চাকরিও হয়েছে।
আর তাদের চাকরি সম্প্রসারনের জন্য তিনটি সুপারিশও করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এসব সুপারিশের মধ্যে রয়েছে দেশীয় বাণিজ্যিক জাহাজের সংখ্যা বৃদ্ধি করা ও ফ্লাগ প্রটেকশন অর্ডিনেন্সের সঠিক বাস্তবায়ন করা। কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদারের মাধ্যমে বিশ্বের বড় বড় শিপিং কোম্পানির মালিক পক্ষের সাথে উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দলের সাক্ষাত ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া।আর বিদেশে বাংলাদেশি দূতাবাসের মাধ্যমে নাবিকদের ভিসা জটিলতার নিরসন করা। প্রয়োজনে নাবিকদের জন্য বৈমানিকদের মতো ভিন্নতর ভিসা পদ্ধতি অনুসরনের ব্যবস্থা নেয়ার কথা সুপারিশে রয়েছে।
এ বিষয়ে কমিটির সভাপতি মেজর (অব:) রফিকুল ইসলাম বলেন, ১৯৬২ প্রতিষ্ঠিত একাডেমিটি মুক্তিযুদ্ধ কালে পাকিস্তান সরকার অভিভাবকহীন অবস্থায় রেখে এর কার্যক্রম করাচিতে স্থানান্তর করে। পরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিন একাডেমি বাংলাদেশ নামে পুনরায় চালু করেন। তবে এখান থেকে পাস করা ক্যাডেটরা আগের মতো চাকরি পাচ্ছেন না। তবে তারা যেন বিদেশে সুনামের সঙ্গে কাজ করে বৈদেশিক অর্থ উপার্জন করতে পারেন সেই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
সূত্র : যুগান্তর