‘শিক্ষাগত যোগ্যতা যা-ই হোক, চাকরি আপনার নিশ্চিত। সরকারি বা বেসরকারি সব চাকরিই মিলবে। যে কোনো পদে, যেমন চান তেমন বেতনেই চাকরি পাবেন। শুধু কিছু টাকা খরচ করতে হবে।’ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় কথিত চাকরিদাতা কয়েকটি প্রতিষ্ঠান দেখাচ্ছে এ রকম প্রলোভন। চাকরিপ্রার্থী হিসেবে এসব প্রতিষ্ঠানে ঘুরে জানা গেছে, তাদের ‘খরচ’-এর অঙ্ক পদ আর প্রতিষ্ঠান অনুযায়ী নূ্যনতম তিন হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত। প্রতারণার অভিযোগ থাকা এসব প্রতিষ্ঠান আবেদন ফরম পূরণ, রেজিস্ট্রেশন, প্রশিক্ষণ, জামানত ইত্যাদি নানা খাত দেখিয়ে এই টাকা নেয়। সহজ-সরল চাকরিপ্রার্থীরা তাদের প্রতারণার ফাঁদে পড়ে শুধু টাকাই খোয়ান; চাকরি কখনও পান না। এক পর্যায়ে হতাশ হয়ে তারা চাকরি বা জমা দেওয়া টাকা উদ্ধারের আশা ছেড়ে দেন। অনেক সময় পরিস্থিতি বেগতিক বুঝলে রাতারাতি কার্যালয় বন্ধ করে পালায় এসব প্রতারক। কিছুদিন পর ফের নতুন ঠিকানায় নতুন নামে চালু করে ‘ব্যবসা’। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে মাঝেমধ্যে কিছু প্রতারক ধরা পড়লেও থেমে নেই প্রতারণা। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন এলাকায় কার্যালয় খুলে প্রকাশ্যে নানা মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়ে তারা বিছিয়ে রেখেছে প্রতারণার ভয়ঙ্কর জাল।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বলেন, গোয়েন্দা তৎপরতা ও ভুক্তভোগীদের অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে প্রায়ই এ ধরনের প্রতারক গ্রেফতার করা হয়। চলতি বছরে পৃথক অভিযানে অন্তত ১৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ অভিযান অব্যাহত থাকবে। ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ শাখার অতিরিক্ত উপকমিশনার মোহাম্মদ সাঈদুর রহমান বলেন, চাকরিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতারণায় জড়িতদের বিরুদ্ধে সব সময়ই পুলিশ তৎপর। বিভিন্ন সময়ে এমন বহু প্রতারককে গ্রেফতার করা হয়েছে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ বা তথ্য পেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্র জানায়, নিরাপত্তাকর্মী থেকে শুরু করে প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক পদে চাকরি দেওয়ার নামে রাজধানীতে প্রতারণায় সক্রিয় রয়েছে শতাধিক চক্র। তারা মূলত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে জনবল নিয়োগের কথা জানিয়ে সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দিয়ে মানুষকে আকৃষ্ট করে। তবে ইদানীং পুলিশ-র্যাব বিজ্ঞাপনগুলো নজরদারির আওতায় রাখায় তারা বিকল্প পদ্ধতিতে মনোযোগী হয়েছে। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির লিফলেট ছাপিয়ে জনবহুল বিভিন্ন এলাকার দেয়াল, বৈদ্যুতিক খুঁটি ও গণপরিবহনে সেঁটে দেওয়া হয়। প্রতিটি বিজ্ঞাপনেই একটি মোবাইল ফোন নম্বর দেওয়া থাকে। ওই নম্বরে যোগাযোগ করলে তারা নিজেদের কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে চাকরি দেওয়ার কথা বলে ধাপে ধাপে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়। প্রতারকদের কয়েকটি চক্র এখনও পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্য ও ভুক্তভোগীদের অভিযোগের ভিত্তিতে বিষয়টি অনুসন্ধান করা হয়। সরেজমিন রাজধানীর ফার্মগেট, রাজাবাজার, গ্রিন রোড, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, মৎস্য ভবন, নয়াপল্টন, পুরানা পল্টন, ফকিরাপুল, মতিঝিল, মোহাম্মদপুর, মিরপুরের অনেক এলাকাতেই প্রচুর নিয়োগ বিজ্ঞাপন সাঁটানো দেখতে পাওয়া যায়। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে_ নয়াপল্টনের ১৬৪ নম্বর ভবনের তৃতীয় তলায় (ফকিরাপুল পানির ট্যাঙ্কের বিপরীতে) এলিট ফ্যাশন অ্যান্ড বায়িং হাউস, পুরানা পল্টনের ১৪ নম্বর ভবনের (দারুসসালাম অর্কেড) ১০ তলায় ইনো ফ্যাশন অ্যান্ড কনসালট্যান্সি, একই এলাকার কালভার্ট রোডের ৩৭/২ নম্বর ভবনের (ফায়েনাজ অ্যাপার্টমেন্ট) পঞ্চম তলায় নেটসি সিকিউরিটি সার্ভিসেস, মহাখালী চৌরাস্তার এলআইসি ইসলামিক প্রাইভেট কোম্পানি লিমিটেড, কল্যাণপুর বাসস্ট্যান্ডের খাজা সুপার মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় (কক্ষ নম্বর-১২৮) ম্যাবসিম ইন্টারন্যাশনাল, মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকার ৫৩ নম্বর ভবনের দশম তলায় ইমা ফ্যাশন অ্যান্ড বায়িং কনসালট্যান্সি ইত্যাদি। কিছু বিজ্ঞাপনে আবার প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ না করে শুধু ঠিকানা ও ফোন নম্বর দেওয়া হয়েছে। যেমন_ ২ ইন্দিরা রোড, সেজান পয়েন্ট, ফার্মগেট; ০১৯১১৯৯৩৯৯৬। বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্স, পান্থপথ, ঢাকা; ০১৯৬৭৩৫৬০১০। চাকরিপ্রার্থী সেজে এগুলোর তিনটি প্রতিষ্ঠানে গেলে সেখানে প্রতারিত কয়েকজনের সঙ্গে দেখা হয়। তবে তারা জমা দেওয়া টাকা উদ্ধারের স্বার্থে এখনই তাদের কথা পত্রিকায় প্রকাশ না করার অনুরোধ জানান।
ইনো ফ্যাশন অ্যান্ড কনসালট্যান্সি :পুরানা পল্টনে ইনো টেক্স ফ্যাশন অ্যান্ড বায়িং কনসালট্যান্সির কার্যালয়। বিজ্ঞাপনে অবশ্য প্রতিষ্ঠানটির নাম লেখা ছিল ইনো ফ্যাশন অ্যান্ড কনসালট্যান্সি। ঢুকতেই দেখা যায় ছোট্ট অভ্যর্থনা কক্ষে বসে আছেন এক তরুণী। চাকরিপ্রার্থী শুনে তিনি নিবন্ধন খাতা খুলে বসলেন। নাম, গ্রামের বাড়ি ও বর্তমান ঠিকানা, কোন ফোন নম্বরে যোগাযোগ করে এসেছেন এসব প্রশ্নের উত্তর লিপিবদ্ধ করলেন। এর পর অপেক্ষা করতে হলো কিছু সময়। থাই গ্গ্নাসে ঘেরা ছোট ছোট ছয়-সাতটি ঘর। এগুলোয় সাক্ষাৎকার নেওয়া হচ্ছে চাকরিপ্রার্থীদের। সাক্ষাৎকার গ্রহীতাদের বেশিরভাগই তরুণী। অভ্যর্থনা ডেস্কের পাশের দেয়ালে ঝুলতে দেখা গেল তৈরি পোশাকের কয়েকটি নমুনা।
একটু পর এক কিশোর এসে ডেকে নিয়ে গেল একটি বুথে। সেখানে সাক্ষাৎকার গ্রহীতা তরুণী তার নাম সাথী বলে জানালেন। এরপর জানতে চাইলেন_ কোন পদে যোগ দিতে চান? এর আগে চাকরি করেছেন কি-না? কোথায় থাকেন? উত্তর শোনার পর নিয়মাবলি হিসেবে তিনি জানালেন, সব পদেই চাকরি মিলবে। তবে কিছু ‘খরচ’ আছে। টাকা দিতে রাজি হলে তিনি জানালেন, সহকারী মার্চেন্ডাইজার পদের জন্য প্রথমে ৫০০ টাকা দিয়ে ফরম পূরণ করতে হবে। এর পর প্রশিক্ষণের জন্য দিতে হবে আট হাজার ৫০০ টাকা। এই চাকরির শুরুতেই বেতন হবে ১৬ থেকে ১৮ হাজার টাকা। পরদিন টাকা নিয়ে যাওয়ার কথা জানালে তিনি ৫০০ টাকা দিয়ে নিবন্ধন করার জন্য চাপ দেন। ওই পরিমাণ টাকা নেই জানালে সাথী বলেন, ‘২০০-৩০০ টাকা, যা আছে তা-ই দিয়ে যান। পরে বাকি টাকা দিয়েন।’
পরদিন সকাল থেকে সাথী বারবার ফোন করে টাকা নিয়ে যাওয়ার তাগিদ দেন। তখন এই প্রতিবেদক জানতে চান, সরকারি কোনো চাকরি তারা দিতে পারবেন কি-না? উত্তরে সাথী জানান, যে বায়িং হাউসে মার্চেন্ডাইজার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হবে, সেটি সরকারি! আর ৯ হাজার টাকার বদলে যদি ৫০ হাজার টাকা তাদের দেওয়া হয়, তাহলে ব্যবস্থাপক পদে চাকরি মিলবে। বেতন পাওয়া যাবে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা।এলিট ফ্যাশন অ্যান্ড বায়িং হাউস :বিজ্ঞাপনে দেওয়া ফোন নম্বরে কল করা হলে শাওন নামে একজন নিজেকে প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার পরিচয় দিয়ে তার কার্যালয়ে যেতে বলেন। বুধবার দুপুরে নয়াপল্টনে তার কার্যালয়ে গিয়ে সেটি তালাবদ্ধ পাওয়া যায়। ফের ফোন করা হলে তিনি জানান, অফিস বন্ধ হয়ে গেছে। সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টার মধ্যে সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। চাকরি পাওয়ার নিয়মাবলি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সহকারী মার্চেন্ডাইজার পদে নিবন্ধনের জন্য এক হাজার ও প্রশিক্ষণের জন্য পাঁচ হাজার টাকা দিতে হবে। টাকা দিলেই চাকরি নিশ্চিত। শিক্ষাগত যোগ্যতা কোনো ব্যাপার নয়।
নেটসি সিকিউরিটি সার্ভিসেস :পুরানা পল্টনের কালভার্ট রোডের কার্যালয়ে ঢুকতেই সুন্দর সাজানো-গোছানো অভ্যর্থনা কক্ষ। যথারীতি এক তরুণী মিষ্টি হেসে অভ্যর্থনা জানালেন। তিনি একটি খাতায় নাম-পরিচয় লিখে নিয়ে ‘বস’-এর কাছে পাঠালেন। থাই গ্গ্নাসে ঘেরা ছোট ঘরে বসে আছেন প্রতিষ্ঠানটির মানবসম্পদ ও প্রশাসন শাখার কর্মকর্তা আলী আকবর। তিনি জানালেন, চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো ঝামেলা নেই। রিত্রুক্রটিং অফিসার পদে চাকরির জন্য তিন হাজার টাকা দিয়ে নিবন্ধন করতে হবে। প্রথমে বেতন ১০ হাজার টাকা। পরে ধীরে ধীরে বাড়বে। এ ছাড়া প্রতি মাসে তাদের ২০০ নিরাপত্তাকর্মী দরকার হয়। এমন চাকরিপ্রার্থী নিয়ে গেলে তার জন্য মিলবে আলাদা কমিশন। পরদিন টাকা নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। সময়মতো না যাওয়ায় নেটসি থেকে ফোন করে দ্রুত যাওয়ার তাগিদ দেওয়া হয়। তখন এ প্রতিবেদক বলেন, এত অল্প বেতনে পোষাবে না। উত্তরে নেটসির কর্মকর্তা বলেন, ‘এটা কোনো সমস্যা না। যা বেতন চান তা-ই দেওয়া যাবে। তবে খরচ একটু বেশি দিতে হবে।’
ফোন কোম্পানির নামে বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রতারণা :সম্প্রতি পত্রিকায় প্রকাশিত দুটি আলাদা বিজ্ঞাপনে বলা হয়, দেশের শীর্ষস্থানীয় মোবাইল ফোন সংযোগদাতা প্রতিষ্ঠানের টাওয়ার ব্যবস্থাপনার জন্য লোক নিয়োগ করা হবে। একটি বিজ্ঞাপনে দেওয়া ০১৬২৫০৭৪৮৭৫ নম্বরে ১৬ নভেম্বর রাতে যোগাযোগ করেন পটুয়াখালীর এক যুবক। তখন তাকে একটি ই-মেইল ঠিকানা দিয়ে জীবনবৃত্তান্ত পাঠাতে বলা হয়। পরদিন সকালে জীবনবৃত্তান্ত পাঠানোর পর বিকেলে ওই নম্বর থেকে কল আসে। ফোনের অপর প্রান্ত থেকে জানানো হয়, আপনাকে নিজ এলাকায় নিয়োগ দেওয়ার জন্য মনোনীত করা হয়েছে। এ জন্য প্রথমে ৮৫০ টাকা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে পাঠিয়ে নিবন্ধন করতে হবে। সন্দেহজনক মনে হওয়ায় ওই যুবক বিষয়টি তার পরিচিত এক সাংবাদিককে জানান। এরপর খোঁজ নেওয়ার জন্য ওই নম্বরে ফোন দেওয়া হলে পরিচয় শুনেই গালাগাল শুরু করেন ফোনের অপর প্রান্তে থাকা ব্যক্তি। এর পর থেকে কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করে নম্বরটি বন্ধ পাওয়া গেছে। একইভাবে অন্য বিজ্ঞাপনটিতে দেওয়া নম্বরে যোগাযোগ করা হলে নিবন্ধন ফি হিসেবে মোবাইলে ৫০০ টাকা পাঠাতে বলা হয়।
এ ছাড়া বিজ্ঞাপনের সূত্র ধরে আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তারা ফরম পূরণ, নিবন্ধন, প্রশিক্ষণসহ নানা খাত দেখিয়ে বিভিন্ন অঙ্কের টাকা দেওয়ার নিয়মের কথা জানান। চলতি বছরের ২৬ অক্টোবর বাড্ডা লিঙ্ক রোডের জনতা বায়িং হাউস নামে একটি প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়ে র্যাব চারজনকে গ্রেফতার করে। সেপ্টেম্বরে খিলক্ষেতের নিকুঞ্জ এলাকার বিটকো নামে এক প্রতিষ্ঠানের চার প্রতারক কর্মকর্তাকে কারাদণ্ড দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এর আগে আগস্টে বিজয়নগরের গোল্ডস্টার গ্রুপের তিন প্রতারককেও আদালত কারাদণ্ড দেন। তারা দীর্ঘদিন ধরে চাকরি দেওয়ার নামে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিল।
সূত্র : সমকাল
SIR AMAR AIVABE TAKA NIYE JOB DAINI.PROTAROKER ADDRESS:-COMPANY NAME:- DAFFODILES JOB SERVICE,ADDRESS:-RANAGHAT,GOPALNAGAR ROAD, NADIA.
AMAR NAME:- SOMNATH PAUL
VILL+P.0- DAKSHIN KHANDA,
P.S- ANDAL
DIST- BURDWAN