বিসিএস উত্তীর্ণ প্রার্থীদের চাকরির সুযোগ বাড়ছে। এখন থেকে বিসিএস পাস করে ক্যাডার পদ না পেলেও চাকরির জন্য বসে থাকতে হবে না। ক্যাডার সার্ভিসে চাকরি না হলেও নন-ক্যাডার পদের শতভাগ শূন্য পদে বিসিএস উত্তীর্ণদের চাকরি দেওয়া হবে। এর আগে বিসিএস পাস করা প্রার্থীদের নন-ক্যাডারে শতকরা ৫০ ভাগ পদে নিয়োগ করা যেত। জনস্বার্থে ও জরুরি প্রয়োজনে বিসিএস পাস করা চাকরিপ্রার্থীদের মধ্য থেকে প্রথম শ্রেণীর নন-ক্যাডার সকল শূন্য পদে নিয়োগ দেওয়া যেত। এখন ‘জনস্বার্থে ও জরুরি প্রয়োজনে’ শব্দ দুটো উঠিয়ে দিয়ে নন-ক্যাডার শতভাগ পদেই তাদের নিয়োগ দেওয়া যাবে। এমন বিধান রেখে নন-ক্যাডার নিয়োগ বিধিমালা সংশোধন করা হচ্ছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে বিধিমালা সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, বিসিএস পরীক্ষায় শতকরা ৫০ ভাগ থেকে শুরু করে তদূর্ধ্ব পর্যায়ে যারা নম্বর পান তাদের পিএসসি উত্তীর্ণ পরীক্ষার্থী হিসেবে মনোনীত করে। এখান থেকে মেধাক্রম অনুযায়ী শূন্যপদের বিপরীতে বিভিন্ন ক্যাডার সার্ভিসে নিয়োগ দেওয়া হয়। তবে বিসিএস পরীক্ষায় পাস করলেও ক্যাডার সার্ভিসে শূন্যপদ কম থাকায় পিএসসি প্রতি বছর অর্ধেকেরও বেশি প্রার্থীকে নিয়োগ দেওয়ার সুপারিশ করতে পারে না। ক্যাডার সার্ভিসের সুযোগবঞ্চিত বিসিএস পাস এসব চাকরিপ্রার্থীর মধ্য থেকে আগ্রহীদের বিভিন্ন দপ্তরের প্রথম শ্রেণীর নন-ক্যাডার শূন্য পদে নিয়োগ দিতে ২০১১ সালে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে নন-ক্যাডার বিধিমালা জারি করা হয়। বিধি অনুযায়ী শূন্যপদের ৫০ ভাগ পদে বিসিএস পাস প্রার্থীকে সরাসরি নিয়োগ দেওয়া যাবে। পরে এ বিধিমালা অনুযায়ী নন-ক্যাডার ৫০ ভাগ পদে বিসিএস পাস করা প্রার্থীদের নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। ২৮তম
বিসিএস থেকে নন-ক্যাডার নিয়োগ বিধিমালা কার্যকর হয়েছে। এভাবে কয়েকটি বিসিএসে পাস করা প্রার্থীদের নন-ক্যাডার শূন্য পদে চাকরি দেওয়া হচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, প্রতিটি বিসিএসে পাস করা প্রার্থীদের মধ্যে অর্ধেকেরও কম সংখ্যককে বিভিন্ন ক্যাডারে মেধাক্রম অনুযায়ী নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হয়। তাদের ক্যাডার পদে চাকরি দেওয়া হয়। অবশিষ্টরা পিএসসির হাতে রিজার্ভ হিসেবে থাকেন। এর মধ্যে নন-ক্যাডার প্রথম শ্রেণীর পদে নিয়োগ পেতে প্রায় সবাই পিএসসির কাছে আবেদন করেন। এর থেকে শূন্য পদের ৫০ ভাগের বেশি পাস করা প্রার্থীকে নিয়োগ দেওয়া যাচ্ছে না। বিভিন্ন দপ্তরের নন-ক্যাডার পদের ৫০ ভাগ তাদের দিয়ে পূরণ করা হলেও বাকি ৫০ ভাগ শূন্য থাকছে। এ ৫০ ভাগ সরাসরি নিয়োগে পূরণ করা হচ্ছে। তবে সরাসরি নিয়োগের ফল ভালো পাওয়া যাচ্ছে না। এমনও দেখা যাচ্ছে, এক নিয়োগেই পার হচ্ছে এক বছর। নিয়োগের দীর্ঘসূত্রতার কারণে পদগুলো সময়মতো পূরণ সম্ভব হচ্ছে না। ফলে বিভিন্ন দপ্তর নন-ক্যাডার শূন্য পদের বিপরীতে শতভাগ পদে বিসিএস পাস করা প্রার্থী নিয়োগ দিতে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। সম্প্রতি সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে শতভাগ শূন্য পদে বিএসএস পাস করা প্রার্থীদের নিয়োগ দেওয়া যায় কি-না সে ব্যাপারে পর্যালোচনা করতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এমনকি কয়েকটি মন্ত্রণালয় ও সংস্থারও নন-ক্যাডার প্রথম শ্রেণীর পদ শূন্য রয়েছে। ইতিমধ্যে এসব মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। এতে দেখা গেছে, এমন প্রায় ৫ হাজার পদ শূন্য রয়েছে। এ চাহিদাপত্রের ভিত্তিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় নন-ক্যাডার বিধিমালা সংশোধন করার উদ্যোগ নিয়েছে। ইতিমধ্যে তারা কয়েক দফা বৈঠক করে নন-ক্যাডার পদের ৫০ শতাংশ বিসিএস পাস করা প্রার্থীদের দিয়ে পূরণের শর্ত উঠিয়ে দিয়ে নন-ক্যাডার নিয়োগ বিধিমালা সংশোধনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শিগগিরই এটি চূড়ান্ত করে সচিব কমিটির বৈঠকে পাঠানো হবে বলেও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, নন-ক্যাডার নিয়োগ বিধিমালার সংশোধনীর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এটি চূড়ান্ত হলে সরকার নন-ক্যাডার পদের শতভাগ পদই বিসিএস পাস করা প্রার্থীদের দিয়ে পূরণ করতে পারবে।
সমকাল