ড. ইনামুল হক। সবার কাছে পরিচিত একজন অভিনেতা হিসেবে। যিনি ১৯৫৯ সালে মঞ্চের মাধ্যমে এ জগতে পা রাখেন। তবে এ পরিচয়ের বাইরেও রয়েছে তার আরো একটি পরিচয়। সেই পরিচয় এবং ক্যারিয়ার গঠনে করণীয় বিষয়ে কথা বলেছেন ক্যারিয়ার ইনটেলিজেন্সের সাথে।
আপনার বেড়ে ওঠা সম্পর্কে কিছু বলুন।
ড. ইনামুল হক : অনেক বিচিত্র ঘটনার মধ্যে আমার বেড়ে ওঠা। সাত-আট বছর বয়সে মাকে হারানোর পর মানুষ হয়েছি ফুফুর কাছে। ফুপা সরকারের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা ছিলেন। তাই তাকে বিভিন্ন জায়গায় বদলি হতে হয়েছে। সেই সুবাদে আমিও নানা জায়গার মানুষের সাথে মিশেছি। এক স্কুলে ভর্তি হয়ে সবে কিছু নতুন বন্ধু-বান্ধব জুটিয়েছি। কিছুদিন পরেই ফুপা অন্য জায়গায় বদলি হয়ে গেছেন। তখন বন্ধু বান্ধবদের ছেড়ে যেতে অনেক খারাপ লেগেছে। অবশ্য পরে ভেবেছি এটাই বাস্তবতা। তাই বলা যেতে পারে ছোট বেলা থেকেই আমি চরম বাস্তবতা উপলব্ধি করে বড় হয়েছি।
শৈশব কাটিয়েছেন কোথায়?
ড. ইনামুল হক : ফুফুর সাথে থাকার কারণে বিভিন্ন জায়গায় কাটাতে হয়েছে আমার শৈশব। তবে আমার জন্মস্থান ফেনীর কথা এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ করা যেতে পারে। এসএসসি পাশ করেছি ফেনী পাইলট স্কুল থেকে। মায়ের স্মৃতি বিজরিত ফেনিতে গেলে এখানো দেখতে পাই শৈশবের অনেক বন্ধুকে।
এসএসসি পরবর্তী পড়াশোনা কোথায় করেছেন?
ড. ইনামুল হক : এসএসসি পাশ করার পরই স্থায়ীভাবে থাকার জন্য ঢাকায় আসি। ভর্তি হই নটরডেম কলেজে। এইচএসসি পাস করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই ক্যামিস্ট্রি নিয়ে। সেখান থেকে অনার্স মাস্টার্স সম্পন্ন করার পর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যামিস্ট্রির শিক্ষক হিসেবে যোগদান করি। কিছু দিন পর যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করি। পরবর্তীতে আবার এসে শিক্ষকতা শুরু করি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে।
পিএইচডি অর্জনের পর অন্য চাকরিও করতে পারতেন……
ড. ইনামুল হক : অনেকবার আমাকে এই প্রশ্নটির মুখোমুখি হতে হয়েছে। উত্তরে আমি বলব, আমাদের দেশের মেধাবীরা বিদেশে পড়াশোনা করে আর দেশে ফেরে না। যে ক’জন লোক ফেরে তার অধিকাংশই মোটা অংকের বেতনে কোম্পানিতে ঢুকে পড়ে। বিষয়টা নিয়ে আমি সমালোচনায় যাব না। এটি যার যার ব্যক্তিগত ব্যাপার। আমার মনে হয়েছে, আমি যা জানি তা তরুণদের জানানো উচিত। আর এটি সম্ভব শিক্ষকতার মাধ্যমেই। কর্মজীবনে সাড়াও পেয়েছি ব্যাপক। দু’বছর আমি প্রকৌশল অনুষদের ডীনও ছিলাম।
নাটকের সাথে জড়িত হলেন কীভাবে?
ড. ইনামুল হক : ছোটবেলা থেকেই স্কুলের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃত্তি ও এককাভিনয় করতাম। তাছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন ছাত্রলীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক ছিলাম। প্রথমবার মঞ্চে কাজ করি ১৯৫৯ সালে। শুধু যে অভিনয়ই করতাম তা নয়। নাটকও লিখতাম। টেলিভিশনে পাকিস্তান আমলের সর্বশেষ প্রচারিত আবার আসিব ফিরে নাটকটি ছিল আমার লেখা। আবার স্বাধীন বাংলাদেশে প্রচারিত প্রথম নাটক বাংলা আমার বাংলাও ছিল আমার লেখা। অভিনয়ের সাথে জড়িত হওয়ার ব্যাপারটি আসলে হৃদ্যতার বিষয়। আমি মনে করি, সবার মনেই অভিনেতা-অভিনেত্রী হওয়ার একটি গোপন বাসনা আছে। সেটা হতে পারে পর্দায় কিংবা পর্দার অন্তরালে।
আজকের অবস্থানে আসতে কোন জিনিসটি আপনাকে বেশি অনুপ্রাণিত করেছে?
ড. ইনামুল হক : আমার ইচ্ছাশক্তি, অজানাকে জানা এবং অভিনয়ের মাধ্যমে কোনো জিনিস দর্শকদের সামনে ফুটিয়ে তোলার প্রবল বাসনা সব সময়ই আমাকে অনুপ্রাণিত করে।
বর্তমান ক্যারিয়ার নিয়ে আপনি কতটুকু সন্তুষ্ট?
ড. ইনামুল হক : আমি মনে করি এক জীবনে যতটুকু পেয়েছি তার চেয়ে আর বেশি কিছু চাওয়ার থাকতে পারেনা।
কাঙ্খিত ক্যারিয়ার অর্জনে তরুণদের কী করা উচিত বলে মনে করেন?
ড. ইনামুল হক : ক্যারিয়ারের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে সততা ও নিষ্ঠার সাথে কোনো কাজে লেগে থাকা। যদিও কেউ কেউ বলেন যে কে কী হবে তা আগে থেকে বলা যায়না। দেখা যায় লক্ষ্য থাকে একটি, হয়ে যায় আরেকটি। তবে আমি মনে করি, একটি মানুষ যে সময় ক্যারিয়ার নিয়ে চিন্তা করতে শেখে, সেই সময় সে এটিও উপলব্ধি করতে পারে যে তার কোন জিনিসটা বেছে নেয়া উচিত। এ ক্ষেত্রে যে জিনিসটির প্রতি প্রথম থেকে ভালোবাসা শুরু হবে সেটিকেই ক্যারিয়ার হিসেবে নির্বাচন করা উচিত। এখানে মনে রাখতে হবে, ক্যারিয়ার একটি লং প্রসেস। এ পথ পাড়ি দিতে হবে ধীরে ধীরে। অনেকটা বিল্ডিং নির্মাণের মতো। কখনো আশাহত হয়ে ছিটকে পড়া যাবেনা।
এ পর্যন্ত অনেক দেশ সফর করেছেন। বাইরের তরুণদের সাথে আমাদের দেশের তরুণদের কী পার্থক্য দেখেছেন?
ড. ইনামুল হক : আমার মনে হয়, অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের দেশের তরুণরা পার্টিকুলার বিষয় অনেক বেশি জানে। তবে আমাদের দেশের তরুণরা অনেক বেশি অস্থির প্রকৃতির। তাছাড়া পড়াশোনাটাও ওদের তুলনায় অনেক কম করে। আর দেশের প্রতিও কেন যেন দিনে দিনে তরুণদের উদাসীনতা বাড়ছে। দেখা যায়, দেশের ভেতরের অনেক গুরুত্বপূর্ণ জিনিস সম্পর্কে তার ধারণাই নেই অথচ বাইরের অনেক কিছুই তার জানা। অথচ ইউরোপ-আমেরিকার ছেলেরা এসব বিষয়ে খুব সচেতন।
আপনার পারিবারিক জীবন নিয়ে কিছু বলুন?
ড. ইনামুল হক : আমার পুরো পরিবারই নাটকের সাথে সংশ্লিষ্ট। আমি আর লাকী এনাম তো আগে থেকেই অভিনয় করি। দুই মেয়ে হৃদি হক এবং তৈথী হকও অভিনয় করছে। হৃদি তো নাটক নির্মাণও করছে। তাদের জামাই লিটু আনাম ও সাজু খাদেমও অভিনয় করছে। সব মিলিয়ে আমাদেরকে একটি নাট্য পরিবার বলা যেতে পারে।
সাক্ষাৎকার গ্রহণ
আলমগীর কবির
প্রতিবেদক, ক্যারিয়ার ইনটেলিজেন্স