মো: মতিয়র রহমান। জন্ম ১৯৪৯ সালের ২০ অক্টোবর মাদারীপুর জেলার শিবচরে। শৈশব কেটেছে গ্রামেই। শিক্ষাজীবনে ১৯৬৫ সালে ঢাকা বোর্ডের অধীনে এসএসসি পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। ১৯৬৭ সালে এইচএসসিতে প্রথম বিভাগ পেয়ে ঢাকা বোর্ডে মেধা তালিকায় সপ্তম স্থান অধিকার করেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হিসাব বিজ্ঞানে বি.কম ও এম.কম ডিগ্রি অর্জন করেন। পরবর্তী সময়ে সম্পন্ন করেছেন ব্যাংকিং ডিপ্লোমা। বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছেন যমুনা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে।
কর্মজীবন শুরু করেছিলেন ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক হিসেবে। তবে ১৯৭৩ সালে সিনিয়র অফিসার হিসেবে পূবালী ব্যাংকে যোগ দিয়ে সময়ের পরিক্রমায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন একজন সফল ব্যাংকার হিসেবে। ১৯৯১ সাল পর্যন্ত উক্ত ব্যাংকের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। ইসলামী ব্যাংকিং কার্যক্রমেও আছে তাঁর অভিজ্ঞতা। তিনি ১৯৯১ সালে অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড-এ যোগ দেন। সেখানে বিভিন্ন বিভাগে প্রায় চার বছর দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৫ সালে প্রাইম ব্যাংকে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে যোগ দেন। নিজের দক্ষতা ও যোগ্যতায় ধীরে ধীরে সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে পদোন্নতি পান। ২০০৫ সালে যমুনা ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে যোগ দেন। ২০০৭ সালে অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেন। এরপর ২০০৯ সালে নিযুক্ত হন ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেছেন তিনি।
তাঁর ব্যক্তিগত জীবন, ক্যারিয়ার ভাবনা এবং তরুণ সমাজকে নিয়ে পরিকল্পনা ও পরামর্শসহ বিভিন্ন বিষয়ে ক্যারিয়ার ইনটেলিজেন্সের সাথে কথা বলেছেন তিনি।
ক্যারিয়ার ইনটেলিজেন্স : আপনার শৈশব কোথায় ও কীভাবে কেটেছে?
মো: মতিয়র রহমান : শৈশব কেটেছে মাদারীপুর জেলার শিবচর থানার নাওয়ারা গ্রামে । গ্রামের উন্মুক্ত প্রাকৃতিক পরিবেশে বাবা-মার স্নেহ, আদর ও শাসনে এবং বাল্যবন্ধুদের সাথে খেলাধুলা, আনন্দ উৎসব, আড়িয়াল খাঁ নদীতে সাতাঁর কাটার মধ্য দিয়ে।
ক্যারিয়ার ইনটেলিজেন্স : কোন বিষয়ে এবং কোথায় পড়াশোনা করেছেন?
মো: মতিয়র রহমান : একাউন্টিং-এ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ।
ক্যারিয়ার ইনটেলিজেন্স : পড়াশোনার সময় পেশা হিসেবে কোন সেক্টরকে নিতে চেয়েছিলেন এবং কেন?
মো: মতিয়র রহমান : পড়াশোনার সময়ই স্বপ্ন ছিল পেশা হিসেবে ব্যাংকিং সেক্টরকে বেছে নেয়ার। কারণ ব্যাংকিং পেশা একটি মর্যাদাপূর্ণ পেশা এবং অর্থনীতির একটি অপরিহার্য অঙ্গ। ব্যাংকিং সেক্টর নানামুখী কর্মের মাধ্যমে অর্থনীতির চাকাকে গতিশীল রাখে। এখানে সৃজনশীল প্রতিভা বিকাশের এবং দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখার সুযোগ আছে।
ক্যারিয়ার ইনটেলিজেন্স : বর্তমান পেশায় আপনি কতটুকু সন্তুষ্ট?
মো: মতিয়র রহমান : ব্যাংকিং পেশায় আমি পুরোপুরি সন্তুষ্ট। কারণ এ পেশায় আমি সামাজিক মর্যাদা ভোগ করা এবং দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখার মাধ্যমে দেশ সেবার বিরল সুযোগ পাচ্ছি ।
ক্যারিয়ার ইনটেলিজেন্স : আপনার প্রতিদিনের কর্মব্যস্ততা সর্ম্পকে যদি জানাতেন…..
মো: মতিয়র রহমান : প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে ফজরের নামাজ পড়ি ও কুরআন তেলাওয়াত করি। অত:পর কিছুক্ষণ হাঁটাহাটি করে বাসায় এসে সকালের নাস্তা করি। নাস্তার পর খবরের কাগজ ও পেশাগত পত্র-পত্রিকা পড়ি এবং যথাসময়ে অফিসে এসে সারাদিন দাপ্তরিক কাজ কর্মে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। সারাদিন এবং কখনো রাত পর্যন্ত পেশাগত বিভিন্ন মিটিং ও সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দিই। রাতের খাবারের পর কিছুক্ষণ টিভি দেখি অথবা পড়াশোনা করি। রাত ১২টার মধ্যে ঘুমিয়ে পড়ি।
ক্যারিয়ার ইনটেলিজেন্স : বর্তমান অবস্থানে আসতে আপনাকে কোন বিষয়গুলো সাহায্য করেছে বলে মনে করেন?
মো: মতিয়র রহমান : আমি মনে করি, আমার বর্তমান অবস্থানে আসার জন্য আমাকে যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি সাহায্য করেছে তা হলো- পেশার প্রতি নিষ্ঠা, কমিটমেন্ট, কঠোর পরিশ্রম, সততা, দক্ষতা, নিরপেক্ষতা, দূরদৃষ্টি, স্বপ্ন, ধৈর্য ও পেশাগত উৎকর্ষতা অর্জনের জন্য বিভিন্নভাবে নিজেকে তৈরি করা। অর্থাৎ প্রথম থেকেই আমার পেশাকে আমি আনন্দের সাথে গ্রহণ করেছি।
ক্যারিয়ার ইনটেলিজেন্স : আপনার সেক্টরে ক্যারিয়ার গড়তে হলে কী গুণ ও যোগ্যতা থাকা দরকার?
মো: মতিয়র রহমান : বর্তমানে ব্যাংকিং পেশা অনেক প্রতিযোগিতামূলক। এ পেশায় আসার জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রয়োজন মাস্টার্স। এক্ষেত্রে ব্যবসায় প্রশাসন বা কমার্স ব্যাকগ্রাউন্ড বেশি উপযুক্ত। অন্যান্য পেশার মতো এ পেশায়ও প্রয়োজন পেশার প্রতি মমত্ববোধ, সততা, সময়ানুবর্তিতা, দক্ষতা, কঠোর পরিশ্রম ও পেশাগত জ্ঞান অর্জন।
ক্যারিয়ার ইনটেলিজেন্স : কাঙ্খিত ক্যারিয়ার অর্জনে তরুণদের কী করা উচিত?
মো: মতিয়র রহমান : কাঙ্খিত ক্যারিয়ার গঠনে তরুণদেরকে প্রথমেই তাদের জীবনের লক্ষ্য স্থির করতে হবে এবং সেটা অর্জনে একাগ্রচিত্তে কাজ করে যেতে হবে। যে পেশায় ক্যারিয়ার গঠন করতে ইচ্ছুক সেই পেশার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ বিষয়ে শিক্ষা অর্জনে সচেষ্ট হতে হবে। নিজেকে সৎ ও পরিশ্রমী হিসেবে তৈরি করতে হবে।
ক্যারিয়ার ইনটেলিজেন্স : তরুণ ও যুবকদের জন্য বিশেষ কিছু করার পরিকল্পনা আছে কি?
মো: মতিয়র রহমান : তরুণ ও যুবকদেরকে কর্মোদ্যোগী ও আত্মনির্ভরশীল করার জন্য উপযুক্ত আত্মকর্মসংস্থানমূলক প্রকল্প গ্রহণ করার পরিকল্পনা আছে। বিশেষভাবে তরুণদের মাদকমুক্ত রাখার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো আমার একান্ত কাম্য।
ক্যারিয়ার ইনটেলিজেন্স : বর্তমানে অনেক শিক্ষার্থীকে উচ্চশিক্ষা লাভের পরও চাকরি পেতে ভীষণ বেগ পেতে হচ্ছে। তাদের উদ্দেশে কিছু বলুন।
মো: মতিয়র রহমান : তাদের উদ্দেশে আমার বক্তব্য হচ্ছে, হতাশ না হয়ে যে পেশাতেই তাদের সুযোগ আসে সেটাতেই আত্মনিয়োগ করে নিজের সততা ও পরিশ্রম দিয়ে উন্নতির চেষ্টা করা। এছাড়াও শিক্ষাগত যোগ্যতার অহমিকা ত্যাগ করে আত্মকর্মসংস্থানমূলক কর্মকাণ্ডে যথাসম্ভব নিজেকে সম্পৃক্ত করা। মেধার বিকাশ ও পড়াশুনার চর্চা অব্যাহত রাখতে হবে।
ক্যারিয়ার ইনটেলিজেন্স : আপনার পারিবারিক জীবন সম্পর্কে কিছু বলুন।
মো: মতিয়র রহমান : আমি তিন কন্যার জনক। দু’জন বিবাহিত। ছোট মেয়ে এবার এইচএসসি পাশ করেছে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছে। এখন কোথাও ভর্তি হবার জন্য চেষ্টা করছে।
ক্যারিয়ার ইনটেলিজেন্স : ক্যারিয়ার ম্যাগাজিন হিসেবে ক্যারিয়ার ইনটেলিজেন্সের ব্যাপারে আপনার পরামর্শ কী?
মো: মতিয়র রহমান : ক্যারিয়ার ইনটেলিজেন্স আমাদের দেশের তরুণ ও যুবকদেরকে ক্যারিয়ার গঠনের ব্যাপারে, বিভিন্ন পেশা সম্পর্কে তথ্য ও পরামর্শ প্রদান করতে পারে। তাদেরকে আত্মকর্মসংস্থানের ব্যাপারেও উৎসাহিত করতে পারে। আমি ক্যারিয়ার ইনটেলিজেন্সের সাফল্য কামনা করি।
সাক্ষাৎকার গ্রহণ
শরীফ হুসাইন