আম্মু মজা করে বলে আমি হচ্ছি ‘ক্ষুদে অনলাইন উদ্যোক্তা। শৈশব থেকেই মায়ের রান্নার ভক্ত আমি। মা আমার প্রথম শিক্ষক। যার কাছ থেকে সুস্বাদু সব খাবার, মজার সব বেকিং আইটেম ও রান্নার নানা রকম টিপস রান্নাঘর থেকেই শেখা। তখন থেকেই মনের মাঝে স্বপ্ন বুনতে শুরু করি রান্না নিয়ে কিছু করার। পরে বাবা-মা ও কাছের বন্ধুদের উৎসাহে শুরু করি (২৯ মার্চ ২০১৭) নিজের বেকারি ‘সুগার স্প্রিংকলেস’। এই আট মাসে এত সাড়া পাবো ভাবনার বাইরে ছিল। রন্ধন শিল্প নিয়েই ক্রমাগত পথ চলতে চাই। নিজের পছন্দ ও আগ্রহে রান্নায় আসা হলেও রান্নাটা আমার রক্তেই ছিল। নিজের প্রসঙ্গে বলছিলেন নুসরাত জাবীন।
মেপললিফ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল থেকে ও এবং এ লেভেল শেষ করে স্বপ্নের পথে হাঁটছেন নুসরাত। নিজেকে একজন সেরা শেফ হিসেবে তৈরি করতে অর্জন করেছেন বিভিন্ন স্বনামধন্য রন্ধন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে সনদ। পর্যটন ও ন্যাশনাল হোটেল অ্যান্ড ট্যুরিজম ট্রেনিং ইনস্টিটিউট থেকে প্রফেশনাল কোর্স করছেন। চার ভাই-বোনের মধ্যে নুসরাত দ্বিতীয়। বাবা প্রখ্যাত ব্যবসায়ী বম্বে সুইটস অ্যান্ড চানাচুরের স্বত্বাধিকারী মো: সাইফুল আলম। তাই বলা যায় রক্তেই মিশে আছে রান্নার নেশা। সেই নেশাকেই পেশা হিসেবে নিতে চান নুসরাত।
তিনি বলেন, নামিদামী ব্র্যান্ড হিসেবে দেখতে চাই আমার সুগার স্প্রিংকলেসকে। বাবার যোগ্য উত্তরসূরি ও মা-বাবার সুযোগ্য কন্যা হতে চাই। জীবনের সব ক্ষেত্রেই মা-বাবার সহযোগিতা ও উৎসাহ পেয়েছি। আমিও তাদের গর্বিত করতে চাই। একদিন নিজের একটি বেকারি শপ হবে সেটা মাথায় রেখেই কাজ করে যাচ্ছি। বাবার কাছ থেকে কিছু পুঁজি আর নিজের পকেট মানি মিলিয়ে শুরু করি এই ব্যবসা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ‘সুগার স্প্রিংকলেস’ নামের একটি দোকানের যাত্রা শুরু করি। অল্প সময়ে আগ্রহীদের কাছে বেশ সাড়া ফেলে এটি। সেই থেকেই শুরু। নানা রকম স্বাদ, ডিজাইনে বৈচিত্র্য এনে শৈল্পিক ছোঁয়ায় সুস্বাদু সব কেক তৈরি করতে পছন্দ করেন নুসরাত। ভোক্তার স্বাদ ও খাদ্যের মানের কথা ভেবেই প্রতিটি আইটেম তৈরি হয়। করপোরেট থেকে ঘরোয়া অনুষ্ঠান সবখানেই যত্ন র সাথে নিজের সর্বোচ্চটুকু দিতে চেষ্টা করেন। ক্রেতারা যখন মুগ্ধ হন, প্রশংসা করেন সেটাই কাজের স্বীকৃতি, নিজের সবচেয়ে বড় অর্জন। সেই আত্মতৃপ্তির যে আনন্দ তা অন্য কিছুতেই খুঁজে পাওয়া যায় না বলে মনে করেন নুসরাত। পুরোটাই অনলাইন বেস ব্যবসা। কোথাও কোনো আউটলেট নেই। ২৪ ঘণ্টা আগে অর্ডার করতে হয়।
নুসরাত বলেন, প্রতিটি মানুষেরই উদ্ভাবনের ক্ষমতা আছে। সেই চিন্তার বিকাশ ঘটাতে হবে। নিজেকে আবিষ্কার করতে হবে। নিজের মতো করে কিছু করার মাঝে আলাদা শক্তি থাকে। সেই শক্তি, সাহস, ইচ্ছার সমন্বয়ে নিজেকে প্রকাশ করতে হবে। যে কাজ আমরা করতে চাই তার জন্য নিজেকে সর্বপ্রথম সব দিক থেকেই যোগ্য করে তুলতে হবে। নিজের স্বপ্নকে বাস্তবে পরিণত করতে, অবকাঠামো দিতে জানতে হবে। নিজের কাজকে ভালোবেসে, যত্ন নিয়ে করলে তবেই ভালো কিছু অর্জন করা সম্ভব।