চলতি বছর কানাডায় তিন লাখের বেশি মানুষ অভিবাসনের সুযোগ পাচ্ছে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের যেকোনো দেশ থেকেই আগ্রহীরা কানাডায় অভিবাসনের জন্য আবেদন করতে পারবেন। কানাডার সরকারি ওয়েবসাইটে www.canada.ca এ বিষয়ে বিস্তারিত দেয়া আছে। কানাডা সরকার ৫০টি ক্যাটাগরিতে দক্ষ শ্রমিকদের ভিসা প্রদানের ঘোষণা দিয়েছে। স্বাস্থ্য, প্রকৌশল, ব্যবসায় ও তথ্যপ্রযুক্তিসহ একাধিক খাতে কাজ করতে সমর্থ এবং অভিবাসনে ইচ্ছুক ব্যক্তিরা ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন। আবেদনকারী যোগ্য বলে প্রমাণিত হলে পূর্ণকালীন কাজের ভিসা দেয়া হবে। কানাডায় যেতে ইচ্ছুক ব্যক্তিরা নিজেই সরাসরি অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন।
ভাষাগত দক্ষতা : ভাষাগত দক্ষতা কানাডায় অভিবাসনের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখে। সরকারি ওয়েবসাইটের তথ্যমতে, দেশটিতে ভাষাগত দক্ষতা মাপার ব্যবস্থা হলো ক্যানাডিয়ান ল্যাংগুয়েজ বেঞ্চমার্ক বা সিএলবি। অভিবাসন প্রোগ্রামের ভিন্নতায় সিএলবির সর্বনিম্ন পয়েন্টে ৬ থেকে ৭ পর্যন্ত হতে পারে। এ ছাড়া ভাষাগত দক্ষতার বিভিন্ন কোর্সের সঙ্গে সিএলবির সম্পর্কে জানা যাবে কানাডা সরকারের ওয়েব ঠিকানায়। পেশাগতভাবে কানাডায় অভিবাসন পেতে নির্দিষ্ট পেশার দক্ষতাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কানাডার সরকার সব পেশার দক্ষতাকে পাঁচটি ধরনে ভাগ করেছে। নির্দিষ্ট পেশা এবং ওই পেশার দক্ষতা সম্পর্কে জানতে কানাডার সরকারি ওয়েবসাইট www.canada.ca দেখুন।
এক্সপ্রেস এন্ট্রি (Express Entry) : নির্দিষ্ট কাজে অভিজ্ঞদের কানাডায় অভিবাসনের সুযোগ দেয়া হচ্ছে। অভিজ্ঞদের কানাডায় অভিবাসন আবেদন করার নতুন পদ্ধতি হলো এক্সপ্রেস এন্ট্রি। এক্সপ্রেস এন্ট্রির আওতায় তিনটি প্রোগ্রামে আবেদন করা যাবে, ফেডারেল স্কিলড ওয়ার্কার প্রোগ্রাম, ফেডারেল স্কিলড ট্রেডার্স প্রোগ্রাম ও কানাডিয়ান এক্সপেরিয়েন্স এন্ট্রি।
ফেডারেল স্কিলড ওয়ার্কার প্রোগ্রাম : ভাষাগত দক্ষতা যাচাই হয় চারটি ক্ষেত্রে যেমন- পড়া, লেখা, শোনা ও বলা। এই প্রোগ্রামে ইংরেজি বা ফরাসি ভাষার চারটি ক্ষেত্রেই ন্যূনতম সিএলবি ৭ পেতে হবে। ইংরেজির ক্ষেত্রে এটি আইইএলটিএস পয়েন্ট ৬-এর সমান। আর পয়েন্টের তালিকায় দ্বিতীয় ভাষার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট ভাষায় ৫ নম্বর পেতে হবে। কাজের ক্ষেত্র হবে কানাডার সরকার ঘোষিত কাজের বিবরণী মোতাবেক। এই প্রোগ্রামে আগ্রহী প্রার্থীদের ছয়টি বিষয়ের ওপর কানাডায় অভিবাসনের আবেদন করার যোগ্যতা নির্ভর করে। প্রতিটি বিষয়ে নির্দিষ্ট পয়েন্ট থাকে। বিষয়গুলো হলো- শিক্ষা, ভাষা দক্ষতা, কাজের অভিজ্ঞতা, বয়স, জব অফার এবং কানাডায় মানিয়ে নেয়া।
কানাডার অভিবাসনপ্রক্রিয়ার নতুন পদ্ধতি সম্পর্কে জানাচ্ছেন শা অ্যাসোসিয়েটসের সিইও সুপ্রিয় কুমার চক্রবর্তী।
প্রশ্ন: কানাডায় Permanent Residency পাওয়ার জন্য কোনো উপায় আছে কি?
সুপ্রিয় কুমার চক্রবর্তী : এ দেশ থেকে যারা কানাডায় পড়াশোনা করতে গিয়েছেন বা যারা করতে যাবেন এবং যারা এ দেশ থেকে জব ভিসা নিয়ে কানাডায় চাকরি করছেন, তারা এক বছরের মধ্যে Permanent Recidency বা PR-এর জন্য কানাডার অভিবাসন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করতে পারবেন।
প্রশ্ন: জব ভিসা নিয়ে কানাডা যাওয়ার সহজ উপায় কী?
সুপ্রিয় কুমার চক্রবর্তী : কানাডার মতো উন্নত দেশে জব ভিসা নিয়ে যেতে চাইলে এ দেশের যেকোনো ব্যক্তিকে ওই দেশের ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের চাহিদা মোতাবেক যোগ্য করে নিজেকে গড়ে তুলতে হবে। অর্থাৎ ইংরেজি ভালো জানা, IELTS-এ ভালো স্কোর করা, এ দেশে ভালো পেশায় চাকরি করা, যেমন- ইঞ্জিনিয়ারিং, ডাক্তার। তবে জব ভিসা নিয়ে বাংলাদেশীদের কানাডায় যাওয়া একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। আমার জানা মতে, বাংলাদেশ থেকে এরূপ কোনো আবেদন এখন গ্রহণ করা হচ্ছে না।
প্রশ্ন: এ দেশের যারা কানাডায় অভিবাসী হতে চায় তাদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?
সুপ্রিয় কুমার চক্রবর্তী : বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য বা পরিবারের উন্নতির জন্য বিদেশে যাওয়া প্রয়োজন। এটাকে আমরা স্বাগত জানাই। কিন্তু বিদেশে যাওয়াটা যেন একটি সঠিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হয়। কেউ যেন প্রতারণার শিকার না হয়। কানাডায় এ দেশের যারা অভিবাসী হতে চায়, তারা যেন কানাডায় সরকারি ওয়েবসাইট ব্রাউজ করে নিজের শিক্ষাগত ও পেশাগত যোগ্যতা তুলে ধরে নিজের অভিবাসী হওয়ার যোগ্যতা আছে কিনা তা আগে যাচাই করে নেবেন।
ফেডারেল স্কিলড ট্রেডার্স প্রোগ্রাম : ইংরেজি অথবা ফরাসি ভাষার মধ্যে যে কোনো একটি বলা ও শোনার দক্ষতায় সিএলবি ৫ হতে হবে। একই ভাষায় পড়া ও লেখায় ন্যূনতম সিএলবি ৪ পেতে হবে। নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন দুই বছরের কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। আর এই কাজের অভিজ্ঞতা হতে হবে গত পাঁচ বছরের মধ্যে। পেশাগত দক্ষতার ধরন বি ক্যাটাগরির হতে হবে।
কানাডিয়ান এক্সপেরিয়েন্স এন্ট্রি : কানাডায় ন্যূনতম ১২ মাস অবস্থান করেছে এমন ব্যক্তিরা এই শ্রেণীতে আবেদন করতে পারবেন। নির্দিষ্ট কাজে দক্ষতা এবং ওই কাজের জন্য প্রয়োজনীয় ভাষাগত দক্ষতা প্রয়োজন।
এক্সপ্রেস এন্ট্রি ছাড়াও কানাডার অভিবাসন নেয়ার অন্য প্রোগ্রামগুলো হলো :
প্রভিনশিয়াল নমিনি প্রোগ্রাম : দুই পদ্ধতিতে এই আবেদন করা যায়। সরাসরি কাগজেকলমে অথবা এক্সপ্রেস এন্ট্রির মাধ্যমে। কানাডার নির্দিষ্ট কোনো প্রদেশের ওয়েবসাইট ঠিকানা জেনে সেখানে থাকা কাজের সুযোগ সম্পর্কে জেনে আবেদন করতে হবে । পরে ওই প্রদেশ থেকে কাজের সুযোগ থাকা সাপেক্ষে অনুমোদন পাওয়া যায়।
ফ্যামিলি স্পন্সরশিপ : কানাডার স্থায়ী নাগরিক এবং কমপক্ষে ১৮ বছর বা এর বেশি বয়স্ক হলে দেশের বাইরে থাকা কোনো আত্মীয়কে কানাডায় স্পন্সর করা যাবে। নির্দিষ্ট স্বজন কানাডার পূর্ণ নাগরিকত্ব পেলে সেখানে বসবাস, পড়ালেখা ও কাজ করতে পারবে।
সেলফ এমপ্লয়েড : কানাডায় স্বনির্ভরভাবে কাজ করতে চান এমন ব্যক্তিরা এই প্রোগ্রামে আবেদন করতে পারবেন। ফেডারেল স্কিলড ওয়ার্কার প্রোগ্রামের কাজ খোঁজা ছাড়া বাকি পাঁচটি বিষয়ে দক্ষতাই এই প্রোগ্রামের প্রার্থীদের যোগ্যতা হিসেবে বিবেচিত হয়। আর কাজের ক্ষেত্রে বিশেষ যোগ্যতা থাকতে হবে।
আবেদনের আগে জানা প্রয়োজন : কানাডায় সর্বাধিক অভিবাসনের সুযোগ পাবেন যোগ্য ও পেশায় অভিজ্ঞ ব্যক্তিরা। তবে প্রার্থীর সব সার্টিফিকেট ও সনদ যাচাই বাছাই করা হয়। তাই পেশা ও কাজের অভিজ্ঞতা নিয়ে যারা কানাডায় অভিবাসন পেতে চান, তারা আগে থেকেই নিজের যোগ্যতা যাচাই করে নিতে পারেন ট্রেড স্কিল এসেসমেন্ট সার্টিফিকেটের মাধ্যমে। পেশাজীবী হিসেবে কানাডায় অভিবাসনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো প্রভিনশিয়াল নমিনেশন। এর মাধ্যমে নির্দিষ্ট প্রদেশে ওই পেশার মানুষ প্রয়োজন আছে কি না এবং কোনো প্রতিষ্ঠান এমন পেশার লোক নেবে কি না তা জানা যায় এবং ছাড়পত্র আনা যায়।
আইআইপি প্রোগ্রাম : এ প্রোগ্রামে আবেদন করা প্রার্থীদের ১৬ লাখ কানাডিয়ান ডলারের (নয় কোটি ৫৯ লাখ টাকা) সমপরিমাণ সম্পত্তি থাকতে হবে এবং আট লাখ কানাডিয়ান ডলার (চার কোটি ৭৯ লাখ টাকা) পাঁচ বছরের জন্য বিনিয়োগ করতে হবে।
এন্টারপ্রেনার প্রোগ্রাম : তিন লাখ কানাডিয়ান ডলারের (এক কোটি ৭৯ লাখ টাকা) সম্পদ থাকতে হবে এবং একই সঙ্গে আবেদনকারীকে কোনো ব্যবস্থাপনায় ন্যূনতম এক বছর অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
জেনে রাখুন : কানাডায় ইমিগ্রেশনের ক্ষেত্রে আপনার প্রথম কাজ হচ্ছে- Express Entry-এর লিংকে গিয়ে একটি প্রোফাইল তৈরি করা। যে প্রোফাইলের প্রতিটি ধাপে ধাপে সব তথ্য সন্নিবেশ করে তাৎক্ষণিকভাবে জেনে যাবেন আপনার প্রোফাইলটি কানাডা সরকার কর্তৃক পরবর্তী প্রক্রিয়ার জন্য নির্বাচিত হয়েছে কি না। আপনাকে কানাডা সরকারের জব ব্যাংকের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন করার পর পরবর্তী প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হবে। এই প্রক্রিয়াকে বলে ITA (Invitation To Apply)। আপনার সব তথ্যের আলোকে ও প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে প্রতি মাসে ১-২ বার আপনার প্রোফাইলটি নির্বাচনের জন্য পুলে ওঠানো হবে। যদি এক বছরের মধ্যে আপনার প্রাপ্ত নম্বরটি কানাডার ইমিগ্রেশনের পুলে না ওঠে তাহলে ধরে নেবেন আপনি আবেদনের জন্য যোগ্য নন। আরো বিস্তারিত তথ্যের জন্য কানাডা সরকারের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট www.cic.gc.ca ব্রাউজ করে সব তথ্য জেনে নিন।