স্টার্টআপ সবার জন্য না – এটা আগেই বলেছি। মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান তাহলে কী ব্যবসায় করবে? কিভাবে সে তার ভাগ্য বদলাবে?
সহজ উত্তর হচ্ছে- SME Business শুরু করে।
বাংলাদেশি যত কোম্পানি আছে সেগুলোর ফাউন্ডার বেশিরভাগ মধ্যবিত্ত বা নিম্ন-মধ্যবিত্ত ফ্যামিলি থেকে উঠে এসেছে। ৩০-৫০ বছরের পুরাতন এই কোম্পানিগুলো শূন্য থেকে শুরু করে এখন মিলিয়ন-বিলিয়ন ডলারের কোম্পানি। এই সব কোম্পানিগুলোই শুরুর ৫-১০ বছর SME ছিল।
স্টার্টআপের রিস্কের ধাক্কা অনেক মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান নিতে পারবে না। কিন্তু তাদের অনেকের শিক্ষা ভালো, স্কিল আছে, দুনিয়া সম্পর্কে আপডেটেড নলেজ আছে। তাই তারা এমন কিছু সেক্টরে বিজনেস করতে পারে যেগুলোতে আগামী ২০ বছরে মাল্টি মিলিয়ন ডলার কোম্পানি তৈরি করা সম্ভব।
১. ম্যানুফ্যাকচারিং বিজনেস
ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে পাস করেছে এবং উদ্যোক্তা হতে চায়, তারা বিভিন্ন সেক্টরের ম্যানুফ্যাকচারিং বিজনেসে ঢুকতে পারে। বাংলাদেশের ম্যানুফাকচারিং সেক্টরের অবস্থা খুবই খারাপ, এখনও প্রায় সব কিছুই ম্যানুয়াল। প্রতিটি সেক্টরেই ভালো টেকনোলোজি বা প্রসেস ব্যবহার করে এফিসিয়েন্সি অনেক বাড়ানোর সুযোগ আছে।
এটা আমি খেলনার ব্যবসায় ঢুকেই বুঝেছি। কেবল ভালো ম্যানুফ্যাকচারার না পাওয়ার জন্য আমি অনেক খেলনাই তৈরি করতে পারি না। তাই ১০ হাজার কোটি টাকার এই মার্কেটের “টপ ক্রিম” খাচ্ছে চাইনিজরা।
২. এক্সপোর্ট বিজনেস
এক্সপোর্ট মানে গার্মেন্টস না। যেমন, হ্যান্ডমেড খেলনা তৈরি করতে গিয়ে দেখেছি ঢাকার বাইরে অনেক অনেক গ্রুপ আছে, যারা দারুণ সব জিনিস বানায়। সেগুলোর কিছু দেশের বাইরে যায়। কিন্তু যে ক্যাপাসিটি আছে, তাতে খালি হস্তশিল্প থেকেই বছরে কয়েক বিলিয়ন ডলার উপার্জন করা সম্ভব। স্মার্ট লোকজন যদি খালি বাইরের বায়ারদের সাথে লিঙ্ক করে, সেখানে ইমেইল চালাচালি করে আর তাদেরকে কিছু ভিজিট করিয়ে কোটি টাকা উপার্জন করা সম্ভব।
এগ্রো প্রোডাক্ট, প্রসেসড ফুড, মাথার চুল থেকে শুরু করে ট্রেইন্ড কেয়ারগিভার – সব সাপ্লাই করা সম্ভব দেশের বাইরে।
৩. এগ্রো বিজনেস
বছরে কয়েক লাখ টাকা থেকে শুরু করে কয়েক কোটি টাকা উপার্জনের জন্য অন্তত ২০-৩০ ক্যাটাগরিতে এগ্রো বিজনেস করা সম্ভব। আপনার গ্রামের মাছের ব্যবসায়ী, কিংবা মুরগির ব্যবসায়ীর লুঙ্গির কোঁচে এক লাখ টাকা ক্যাশ থাকে। আপনার ব্যাঙ্কে কয় টাকা আছে?
৪. ওয়ানম্যান নলেজ বিজনেস
১০-১২ বছর ধরে কোন কিছু নিয়ে কাজ করে করে অনেক অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। এখন সেটা ব্যবহার করে চাকরির পাশাপাশি ব্যবহার করে কিছু উপার্জন করেন। ডাক্তারদের মতো।
যেমন- আমি গত ৫ বছর ধরে বিভিন্ন প্রোডাক্ট ডিজাইন করেছি, প্যাকেজিং ডিজাইন করেছি। সেগুলো বেশ সফল। গুফি ব্র্যান্ডের প্রোডাক্টগুলোর চেহারা দেখলেই বুঝা যায় এর পেছনে কী পরিমাণ স্কিল ব্যবহার হয়েছে। এখন আমি চাইলেই আমার এই স্কিল মার্কেটে অফার করতে পারি। বাংলাদেশের মার্কেটে কোনো ‘প্রফেশনাল প্রোডাক্ট ডিজাইনার’ বা ‘প্যাকেজ ডিজাইনার’ বলে কিছু নেই। ব্র্যান্ডের লোকেরা এজেন্সি দিয়ে প্যাকেজ ডিজাইন করায়।
এভাবে কোনো একটা নিস জায়গায় যদি নিজের স্কিল থাকে, তাহলে সেটার মাধ্যমে নিজের মূল কাজের পাশাপাশি উপার্জন করতে পারবেন।
Ghulam Sumdany এরকম ওয়ানম্যান বিজনেস শুরু করেছিলেন। আজকে তার কতগুলো আলাদা ব্যবসা।
৫. এনিথিং নন-ইন্টারনেট বিজনেস
ইন্টারনেট-বেজড ব্যবসায় বরকত নেই- যদি না সেই প্রোডাক্ট আপনি নিজে তৈরি করছেন। যেমন, অনলাইন কোর্স কিংবা প্রোডাক্ট তৈরি। ফেসবুকে প্রোডাক্ট সেল করে আপনার বউ তার হাতখরচ চালাতে পারবে, এর বেশি কিছু হবে না।
এটা দিয়ে কোনদিন বড় ব্যবসায় দাঁড় করাতে পারবেন না। তার জন্য কোটি কোটি টাকা ফান্ডিং নিয়ে নামতে হবে।
তাই এনিথিং নন-ইন্টারনেট বিজনেসে সফল কোম্পানি গড়ে তোলার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
তাই মধ্যবিত্ত ভাইব্রাদার, SME Business শুরু করেন, রিয়েল ভ্যালু তৈরি করেন। ভালো করলে, ২০ বছর পরে আপনার সন্তান নিজের পরিচয় দিতে গিয়ে বলবে, আমার বাবা ‘অমুক’ গ্রুপ অব কোম্পানির মালিক।
লেখক: Waliullah Bhuiyan ; Co-founder & CEO at Light of Hope