ক্যারিয়ার ইনটেলিজেন্স : আইন পেশার শুরুটা একটু চ্যালেঞ্জের, একটু দুর্গম। তাই শুরু থেকে কঠিন পরিশ্রম এবং একাগ্রতা নিয়ে কাজ করার প্রস্তুতি নিতে হবে।
এ পেশার শুরুটা করতে হবে একজন সিনিয়র আইনজীবীর সাথে কাজ করার মধ্য দিয়ে। প্রথমে আয়-রোজগারের দিকে না তাকিয়ে কাজের প্রতি মনোযোগী হতে হবে। অ্যাকাডেমিক ফলের চেয়ে আইন পেশায় পেশাজীবনের মেধা, পরিশ্রম ও ধৈর্যই আপনাকে এনে দেবে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ।
শুরু
আইনজীবী হতে হলে আপনাকে আইনের ওপর স্নাতক ডিগ্রি নেওয়ার পর বার কাউন্সিল থেকে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। তা ছাড়া সুপ্রিম কোর্টে আইনজীবী হতে হলে নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত নিম্ন আদালতে কাজের অভিজ্ঞতার পাশাপাশি বার কাউন্সিলের পরীক্ষার দেয়াল টপকাতে হবে। আর বিচারক হতে হলে জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের সহকারী জজ নিয়োগের পরীক্ষায় বসতে হবে। তবে এখন সহকারী জজ নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতেও আপনার আইনজীবী হিসেবে সনদ থাকতে হবে। বিচারক আর আইনজীবী হিসেবে কমপক্ষে ১০ বছরের অভিজ্ঞতা থাকলে নেওয়া যায় বিচারপতি হওয়ার সুযোগ। তাই এ পেশাকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখে সবাই।
জুনিয়রশিপ
আইন বিভাগে স্নাতক পাস করে ক্যারিয়ারের শুরুতে তরুণ আইনজীবীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হচ্ছে জুনিয়রশিপ। এ ক্ষেত্রে অনুগত জুনিয়র-সিনিয়রের সঠিক দিকনির্দেশনায় অনুশীলন বা পথচলা শুরু করলে খুঁটিনাটি বিষয়ে সহজেই অবগত হতে পারেন, যা আইন পেশায় সফলতা পেতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
তা ছাড়া এ পেশায় সফলতা পেতে একজন জুনিয়রের আচার-আচরণসহ কী কী বিষয়ে মনোনিবেশ করা প্রয়োজন সেসবও ধরিয়ে দেন সিনিয়ররা। প্রচুর পরিশ্রমের পাশাপাশি আপনি আপনার শেখার আগ্রহটা ধরে রাখতে পারলে ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যেই অনুশীলন পর্ব শেষ করে কাজে নেমে পড়তে পারেন। তখন অভিজ্ঞতাটা আপনাকে বড় ধরনের সাপোর্ট দিয়ে যাবে।
কাজের ক্ষেত্র
একজন আইনজীবী আইন পেশার পাশাপাশি যে কোনো কোম্পানির লিগ্যাল অ্যাডভাইজার, যে কোনো ব্যাংকের নিজস্ব আইনজীবী অথবা জাতীয় বা আন্তর্জাতিক কোনো সংস্থার আইন উপদেষ্টা হিসেবে চাকরি করতে পারেন। আইন কমিশনেও চাকরির সুযোগ আছে। এখানে আয় ও সম্মান উভয়টি ভালো মানের।
বর্তমানে ব্যাংক, বীমা ছাড়াও বিভিন্ন মার্কেট ও বিউটি পার্লারসহ ছোট-বড় প্রায় সব প্রতিষ্ঠানে লিগ্যাল অ্যাডভাইজার নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এতে একজন আইনজীবীর কাজের পরিধি সম্প্রসারিত হচ্ছে। তা ছাড়া মানবাধিকারকর্মী হিসেবে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি মানবাধিকার সংস্থায় কাজের ব্যাপক সুযোগ রয়েছে। দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক-বীমা প্রতিষ্ঠানে আইন কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত বিচারক ও আইনজীবী হিসেবে কাজেরও সুযোগ আছে। বিস্তর জায়গা আছে আইন সাংবাদিকতায়ও। বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমে আদালত প্রতিবেদক হিসেবে আইনজীবীদের নিয়োগ দেয়। তা ছাড়া আইন একটি মুক্ত পেশা। এখানে রাজ্যের স্বাধীনতা। নিজের পছন্দ অনুযায়ী ক্ষেত্র নিয়ে কাজ করা যায়।
আয়-রোজগার
আইন পেশাটা পুরোই আপনার কাজের ওপর নির্ভর করবে। কাজ বলতে মেধা এবং অভিজ্ঞতা। আপনি এখানে যতই মাথা খাটাতে পারবেন ততই ভালো উপার্জন করেত পারবেন। তা ছাড়া জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বা সহকারী জজ পদে নিয়োগ পেলে সর্বোচ্চ সম্মান, রাজ্যের সুবিধাসহ ভালো অঙ্কের বেতন তো আছেই। তবে আইনজীবী হলে আয়-রোজগারের বিষয়টি অভিজ্ঞতা, ব্যক্তিগত দক্ষতা, সামাজিক যোগাযোগ ও মামলার ধরনের ওপর নির্ভর করে।
হাইকোর্ট অথবা সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীদের মাসিক আয় মামলার ধরন অনুযায়ী ৬০ হাজার থেকে ৭ লাখ টাকা পর্যন্ত। আইন পেশায় সদ্য যোগদানকারীরা ভালো টাকা আয় করতে পারেন মাথা খাটিয়ে। একজন নতুন আইনজীবী সাধারণত ৩০-৩৫ হাজার টাকার বেশি আয় করতে পারেন অনায়াসে।