রোমানিয়াকে হ্যাকারদের স্বর্গরাজ্য বলা যায়। সেখানকার স্কুলেই শেখানো হয় সাইবার নিরাপত্তা সংক্রান্ত পাঠ৷ ওই দেশে স্বশিক্ষিত হ্যাকারেরও অভাব নেই। কম খরচে কাজ করানো যায় বলে অনেকে এখন ওই দেশের হ্যাকারদের দিকে হাত বাড়াচ্ছে। এই সুযোগে রোমানিয়া হয়ে উঠেছে সাইবার জগতের ‘হটস্পট’।
সাইবার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানগুলোর ভাষ্য, সাইবার নিরাপত্তায় দক্ষ ব্যক্তিদের চাহিদা বাড়ছে। কম খরচ আর প্রযুক্তি দক্ষতার কারণে হ্যাকারদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে রোমানিয়া। প্রযুক্তিতে দক্ষরা পেশা হিসেবে বেছে নিচ্ছেন বেশি বেতনের সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ক কাজগুলো।
মাস তিনেক আগে কমিউটার গেম নির্মাতা গ্যাব্রিয়েল কারলিগ সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করার জন্য তার পেশা পরিবর্তন করেছেন। তার আগে পাঁচ বছর গেম তৈরিতে কাজ করেছেন তিনি। এখন পেশা বদলে সাইবার নিরাপত্তার কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান সিসকোর তথ্য অনুযায়ী, রোমানিয়াতে গেম সংক্রান্ত চাকরির সুযোগ কমছে। কিন্তু বিশ্বজুড়ে সাইবার নিরাপত্তায় দক্ষ কর্মীর চাহিদা হু হু করে বাড়ছে।
গ্যাব্রিয়েল কারলিগ সংবাদ সংস্থাকে বলছেন, এখন পরিবর্তনের যুগ। একজন পেশাদার হিসেবে প্রতিদিন নিজেকে উন্নত করে তোলা টিকে থাকার একমাত্র উপায়। গ্যাব্রিয়েলের মতে, রোমানিয়ার অনেকেই এখন এ পেশায় আসছে।
সাইবার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান সিমানটেকের প্রধান নির্বাহী মাইকেল ব্রাউনের মতে, ২০১৯ সাল নাগাদ সাইবার নিরাপত্তার ক্ষেত্রে দক্ষ লোকের ঘাটতি ১৫ লাখে পৌঁছবে।
বিটডিফেন্ডার, অ্যাভিরা, হেইমডালের মতো প্রতিষ্ঠান চলতি বছরেই রোমনিয়াতে তাদের প্রতিষ্ঠানের কর্মী সংখ্যা ২০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই দেশে তারা কয়েকশ’র বেশি কর্মী নিয়োগ করেছে। কারণ, দেশটিতে পশ্চিম ইউরোপের তুলনায় খুব কম খরচেই সাইবার নিরাপত্তায় দক্ষ কর্মী সহজে পাওয়া যায়।
ব্রেইনস্পটিং নামের একটি কর্মী নিয়োগ প্রতিষ্ঠানের তথ্য অনুযায়ী, দেশটিতে জুনিয়র স্তরের ইঞ্জিনিয়াররা ৫৮০ ডলারের মতো বেতন পান। মধ্য স্তরের বিশেষজ্ঞদের বেতন এক হাজার ৫০০ ডলার থেকে দুই হাজার ৫০০ ডলার আর উচ্চপর্যায়ের সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ বেতন পান তিন হাজার ৫০০ ডলারের মতো।
ব্রেইনস্পটিংয়ের পরামর্শক মারিয়া হসটিউক বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানগুলো সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ খুঁজলেও তারা ওয়েবে চাকরির বিজ্ঞাপন দেন না। বেশিরভাগ চাকরি হয় সুপারিশে।’
রোমানিয়ার অধিকাংশ সাইবার নিরাপত্তা ইঞ্জিনিয়াররা স্বশিক্ষিত। স্কুলে তারা যে কম্পিউটার সায়েন্সের জ্ঞান অর্জন করেন তা কাজে লাগিয়েই এ বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করেন তারা। গেম নির্মাতা গ্যাব্রিয়েল বলেন, যখন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়তেন তখন শখের বসে এ বিষয়টি শিখেছিলেন। এ ছাড়া হ্যাকারদের বিভিন্ন পুরোনো গল্প এখানকার হ্যাকারদের এ বিষয়ে ক্যারিয়ার গঠনে উদ্বুদ্ধ করে।
যারা এই বিষয়ে শিখতে আগ্রহী তাদের জন্য ‘সাইব্রারি’ নামের একটি বিনা মূল্যের অনলাইন কোর্স দারুণ কাজে লাগবে। সাইব্রারির সহ-প্রতিষ্ঠাতা রায়ান কোরে বলেন, রোমানিয়ানদের বেসিক বা মূল বিষয়গুলো আগে থেকেই জানা থাকে। অধিকাংশ এই প্ল্যাটফর্মটি নিরাপত্তা দক্ষতার জ্ঞান আরও বাড়াতে ব্যবহার করে।
কোরে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আর যুক্তরাজ্যে সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ে প্রাথমিক স্তরের কোর্সগুলো বেশি জনপ্রিয়। এক্ষেত্রে নেটওয়ার্ক প্লাস, সিসিএনএ, লিনাক্স প্লাসে বেশি আগ্রহ দেখা যায়। কিন্তু রোমানিয়ায় উচ্চতর কোর্সগুলোতে মানুষের বেশি আগ্রহ দেখা যায়। এর মধ্যে আছে ম্যালওয়্যার অ্যানালাইসিস, অ্যাডভান্সড পেনিট্রেশন টেস্টিং প্রভৃতি।
২০১৫ সালের শেষ তিন মাসে সাইব্রারির চালানো এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, সাইবার নিরাপত্তায় কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়তে হয় প্রতিষ্ঠানের উচ্চপর্যায়ের প্রযুক্তি কর্মকর্তাদের। সমীক্ষায় ৪৩৫ জন কর্মকর্তাকে প্রশ্ন করে সাইব্রারি। তাদের ৮০ শতাংশ সাইবার নিরাপত্তায় লোক নিয়োগের ক্ষেত্রে সমস্যার কথা বলেন। এর কারণ হিসেবে ৪০ শতাংশ বলেন, দক্ষতার অভাব, ১৮ শতাংশ বলেন বিশেষজ্ঞদের আকর্ষণ করার মতো রসদের অভাব আর ১৪ শতাংশ বলেন, কর্মীদের অবস্থানের কারণে নিয়োগে সমস্যা হয়।
রোমানিয়ার বৃহত্তম সাইবার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান হচ্ছে বিটডিফেন্ডার। প্রতিষ্ঠানটিতে বিশ্বজুড়ে ৯০০ জনের বেশি কর্মী আছে। তবে প্রতিষ্ঠানটির গবেষণা ও উন্নয়নের অধিকাংশ কর্মী স্থানীয়।
বিটডিফেন্ডারের নিয়োগ কর্মকর্তা এলভিস পপোভিসি বলেন, সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ নিয়োগে এক থেকে তিন মাস সময় লেগে যায়। এতে সাক্ষাৎকার কারিগরি পরীক্ষার বিষয় থাকে। এ ক্ষেত্রে নতুন লোক নিয়োগের জন্য বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
রোমানিয়ায় কাজ করছে আরেক অ্যান্টিভাইরাস নির্মাতা প্রতিষ্ঠান অ্যাভিরা। রোমানিয়ায় ১০০ জনের বেশি কর্মী আছে অ্যাভিরার। প্রতিষ্ঠানটির মানবসম্পদ বিভাগের ব্যবস্থাপক এলেনা নাসতাসা সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, তাদের অধিকাংশ নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ প্রোগ্রামার হিসেবে ডেস্কটপ ও মোবাইলের নিরাপত্তা অ্যাপ্লিকেশন তৈরিতে কাজ করে। এ ছাড়া ম্যালওয়্যারের নমুনা পরীক্ষার কর্মীও আছে।