শৈশবে অনেকেরই স্বপ্ন থাকে জীবনে বড় হয়ে পাইলট হওয়ার। স্বপ্ন পূরণের সময় এসেছে এখন। হতে পারেন পাইলট। সঠিক ধারণা কিংবা দিকনির্দেশনা না থাকায় পরবর্তীকালে আর স্বপ্ন ছোঁয়ার সুযোগ হয়ে ওঠে না। বর্তমানে দেশেই আছে পাইলট কোর্স করার সুযোগ।
বাংলাদেশ বিমানসহ যেকোনো বিমানের পাইলট হতে চাইলে এইচএসসি পর্যায়ে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পদার্থ, গণিতসহ ন্যূনতম জিপিএ ২.৫০ পেতে হবে। বয়স ন্যূনতম ১৬ বছর এবং শারীরিকভাবে ফিট হতে হবে। এ ছাড়া ইংরেজি বলা ও লেখায় দক্ষ হতে হবে। যারা স্নাতক শ্রেণীতে পড়ছেন বা পাস করেছেন, তারাও পাইলট কোর্সে ভর্তির আবেদন করতে পারবেন। এইচএসসির পর ভর্তি হতে হবে দেশের বা বাইরের কোনো ফ্লাইং ট্রেনিং একাডেমিতে। প্রথমত, গ্রাউন্ড ও ফ্লাইং প্রশিক্ষণ শেষ করে প্রাইভেট পাইলট লাইসেন্সের (পিপিএল) জন্য আবেদন করতে হয়। বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচলকারী কর্তৃপক্ষের (ক্যাব) নিয়ম অনুসারে লাইসেন্স পেতে কমপক্ষে ৪০ ঘণ্টা ফ্লাইং করতে হয়। ন্যূনতম বয়স হতে হয় ১৭ বছর। পিপিএল পাওয়ার পর আবেদন করতে হয় কমার্শিয়াল পাইলট লাইসেন্সের (সিপিএল) জন্য। এ ক্ষেত্রে ফ্লাইং করতে হয় ১৫০ ঘণ্টা। সিপিএলের জন্য ন্যূনতম বয়স হতে হবে ১৮ বছর। এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে দেশ-বিদেশের এয়ারলাইন্সে ফার্স্ট অফিসার বা কো-পাইলট হিসেবে আবেদন করা যাবে।
ভর্তি পরীক্ষা : পাইলট কোর্সে ভর্তি হতে সবার আগে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। এ পরীক্ষা হয় দু’টি ধাপে- মৌখিক ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা। মৌখিক পরীক্ষায় সাধারণত বিজ্ঞান ও সাধারণ জ্ঞানের ওপর প্রশ্ন করা হয়। এটি সংশ্লিষ্ট একাডেমি নিয়ে থাকে। আর স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয় সিভিল এভিয়েশন অনুমোদিত ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে।
গ্রাউন্ড কোর্স : ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণরা পাইলট কোর্স করার যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। তবে পাইলট হতে পেরোতে হবে আরো তিনটি ধাপ। গ্রাউন্ড কোর্সের পর পেতে হয় এসপি বা স্টুডেন্ট পাইলট লাইসেন্স। এরপর পিপিএল (প্রাইভেট পাইলট লাইসেন্স), আর সবশেষে পেতে হয় সিপিএল বা কমার্শিয়াল পাইলট লাইসেন্স। তিন মাসের থিওরি কোর্সে বিমানের কারিগরি এবং এয়ার ল বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। এ ছাড়া এয়ারক্রাফট জেনারেল নলেজ, ফ্লাইট পারফরম্যান্স অ্যান্ড প্লানিং, হিউম্যান পারফরম্যান্স অ্যান্ড লিমিটেশন, নেভিগেশন, অপারেশনাল প্রসিডিউর এবং প্রিন্সিপল অব ফ্লাইটের মতো বিষয়গুলো সম্পর্কে ধারণা দেয়া হয়।
উড়াল দেয়া : গ্রাউন্ড কোর্সের পর সংশ্লিষ্ট একাডেমি লিখিত পরীক্ষা নেয়। পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের সরাসরি বিমান চালনার জন্য সিভিল এভিয়েশনে এসপিএল বা স্টুডেন্ট পাইলট লাইসেন্সের আবেদন করতে হয়। আবেদনের পর সিভিল এভিয়েশন অথরিটি (সিএএবি) পরীক্ষা নেয়। সিএএবির পরীক্ষা এবং সিএমবির (সার্টিফায়েড বাই দ্য মেডিক্যাল বোর্ড) স্বাস্থ্য পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেই কেবল এসপিএল দেয়া হয়। এ লাইসেন্স দিয়ে ৪০ থেকে ৫০ ঘণ্টা বিমান চালনার সার্টিফিকেট অর্জন করে পিপিএল বা প্রাইভেট পাইলট লাইসেন্সের আবেদন করতে হয়। এ সময় তিন মাসের থিওরি ক্লাসের সাথে একটি ক্রস কান্ট্রি ফ্লাইট (এক জেলা থেকে অন্য জেলায় যাওয়া-আসা) চালানোর অভিজ্ঞতাও অর্জন করতে হয়। এরপর আবারো লিখিত এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেই মিলবে প্রাইভেট পাইলট লাইসেন্স। এ লাইসেন্স দিয়ে কোনো বাণিজ্যিক বিমান চালানো যায় না। তাই পাইলট হিসেবে চাকরির জন্য প্রয়োজন সিপিএল বা কমার্শিয়াল পাইলট লাইসেন্স। এ লাইসেন্স পেতে ১৫০ থেকে ২০০ ঘণ্টা বিমান চালানোর অভিজ্ঞতা থাকতে হয়। এ ছাড়া উত্তীর্ণ হতে হয় লিখিত ও স্বাস্থ্য পরীক্ষায়। পাশাপাশি থাকতে হয় একটি ক্রস কান্ট্রি ফ্লাইট চালানোর অভিজ্ঞতা ও তিন মাসের থিওরি কোর্সের সার্টিফিকেট। সিপিএল পাওয়া মানেই নিশ্চিত চাকরি।
কাজের ক্ষেত্র : বর্তমানে দেশে ও বিদেশে দক্ষ পাইলটের বেশ চাহিদা রয়েছে। আন্তর্জাতিক বিমান পরিবহন সংস্থা দি ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের এক রিপোর্টে জানা গেছে, প্রতি বছর ১৭ হাজার নতুন পাইলট প্রয়োজন হচ্ছে। এ থেকেই বোঝা যাচ্ছে, আন্তর্জাতিক পরিসরে দক্ষ পাইলটের প্রয়োজন কতটুকু। এটি এমন এক পেশা, যেখানে চাকরিই প্রার্থীকে খোঁজে।
কোর্সের সময় : বৈমানিক কোর্স করতে দেড় থেকে সর্বোচ্চ তিন বছর লাগে। পিপিএল কোর্স করতে লাগে ছয় মাস। আর সিপিএল কোর্সে সময় লাগে এক বছর। বছরে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি ও জুলাই-আগস্ট দু’টি সেশনে বৈমানিক কোর্সে ভর্তি হওয়া যায়।
প্রশিক্ষণ : সিভিল এভিয়েশন একাডেমি ট্রেনিং সেন্টার, বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ট্রেনিং সেন্টার, বাংলাদেশ ফ্লাইং একাডেমি অ্যান্ড ফ্লাই এভিয়েশন লিমিটেড, আরিরাং এভিয়েশন লিমিটেড ও গ্যালাক্সি ফ্লাইং একাডেমি লিমিটেড।
বাইরের কোনো দেশ থেকেও করা যাবে। ফ্লায়িং একাডেমি থেকে মোট দেড়-দুই বছরের মধ্যে সম্পন্ন করা যাবে এ কোর্স। সব মিলিয়ে খরচ পড়বে ৩০ থেকে ৩২ লাখ টাকার মতো। বিভিন্ন বিমান সংস্থা বিভিন্ন সময় পাইলট নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। ফার্স্ট অফিসার বা কো-পাইলট হিসেবে প্রতিষ্ঠানভেদে মাসিক বেতন হতে পারে ৭৫ হাজার থেকে এক লাখ টাকা।