নাজমুল হাসান নাহিদ : বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মোটরবাইক বা প্রাইভেট কার শুনলেই ধারণা হতে পারে এগুলো কিছুটা অবস্থাসম্পন্ন মানুষের যানবাহন। জ্বালানি খরচ ছাড়াও এগুলোর রক্ষণাবেক্ষণে প্রতি মাসেই অনেক টাকা খরচ হয় যা স্বচ্ছল মানুষ ছাড়া বহন করা সম্ভব না। কিন্তু সম্প্রতি এই ধারণা ভেঙে দিয়েছে বাংলাদেশের অ্যাপনির্ভর যানবাহন প্রযুক্তি। মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে কিছু প্রতিষ্ঠান মোটরবাইক রাইড বা প্রাইভেট কার শেয়ারিং সেবা দিতে শুরু করেছে। যেখানে একজন চালক চাইলে তার গন্তব্যস্থানে যাতায়াতের সময় আগ্রহী যাত্রীকে নিয়ে যেতে পারেন। এর ফলে একদিকে যেমন যাত্রীর সুবিধা হচ্ছে অন্যদিকে চালক লাভবান হচ্ছেন বাড়তি উপার্জনের মাধ্যমে। জ্বালানি খরচ উঠে গিয়েও মাসে বেশ ভালো উপার্জন হচ্ছে। স্বাধীন পেশা হিসেবে বাইক শেয়ার করে মাসে ২০-৩০ হাজার টাকা এবং প্রাইভেট কার শেয়ারের মাধ্যমে ৬০-৭০ হাজার টাকা আয় করা যাচ্ছে অনায়াসেই।
এক্ষেত্রে যাত্রী ও চালকের মধ্যে পরিচয় হয় মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে। যা সরাসরি ইন্টারনেটে সংযুক্ত থাকে এবং কাছাকাছি থাকা যাত্রী ও চালকদের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে। এই সেবাটির জন্য যাত্রীকে প্রতি কিলোমিটার এবং অতিবাহিত সময় অনুযায়ী নির্দিষ্ট ভাড়া দিতে হয়; যা ট্যাক্সিক্যাব বা সিএনজিচালিত অটোরিক্সার চেয়ে তুলনামূলকভাবে সাশ্রয়ী। তাছাড়া ঢাকার ব্যস্ত রাস্তায় অন্যান্য যানবাহনের চেয়ে মোটরবাইক দ্রুতগামী বলে সঠিক সময়ে গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য অনেকেই এই প্রযুক্তিকে সাদরে গ্রহণ করছেন। একাধিক যাত্রী যাতে একসাথে সেবাটি নিতে পারে সেজন্য মোটরবাইকের পাশাপাশি অ্যাপগুলোতে যুক্ত হয়েছে প্রাইভেট কার। তাই যাদের ব্যক্তিগত গাড়ি নেই এমন পরিবার চাইলে খুব সহজে ও সাশ্রয়ে গন্তব্যে পৌঁছতে পারছে।
‘স্যাম’ নামের একটি অ্যাপের মাধ্যমে বাংলাদেশে প্রথম শুরু হয় বাইক রাইড শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম। এরপর ‘পাঠাও’ নামে একটি কোম্পানি প্রথমে ডেলিভারি সার্ভিস দিয়ে শুরু করলেও পরে অ্যাপের মাধ্যমে রাইড শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে। যা খুব দ্রুতই মার্কেটে আধিপত্য বিস্তার করে। এরপর মুভ, আমার রাইড, ঢাকা রাইডার্স, সহজ রাইড, যাত্রীসেবা, ট্রিপ্পো, ইজিয়ার, ওভাইসহ আরো কিছু প্রতিষ্ঠান ধীরে ধীরে মার্কেটে প্রবেশ করতে থাকে। ‘পাঠাও’ মার্কেট লিডার হলেও অন্যেরা বসে থাকছে না। একেক প্ল্যাটফর্ম একেক দিক দিয়ে ভিন্নতা এনে উন্নত গ্রাহকসেবা দেয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে। ‘মুভ’ তাদের অ্যাপে সিএনজিচালিত অটোরিক্সার রাইড যুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছে। ‘যাত্রীসেবা’ দিচ্ছে প্রতিটি বাইকারকে ইন্স্যুরেন্স সুবিধা যা অন্য কেউ দিচ্ছে না। ‘ওভাই’ দিচ্ছে অগ্রিম রাইড সিলেক্ট করে দেয়ার সুবিধা। অর্থাৎ গ্রাহক চাইলে আগামীকাল কোথাও যাওয়ার জন্য একটি গাড়ি বা মোটরবাইক নিশ্চিত করে রাখতে পারবেন।
অ্যাপনির্ভর কোম্পানিগুলোর এই তীব্র প্রতিযোগিতায় যানজটে পরিপূর্ণ প্রায় অচল ঢাকা শহর অনেকটাই সচল হয়ে যাচ্ছে। লোকাল বাসগুলোতে আগের মতো ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। সিএনজি অটোরিক্সাচালকেরাও অতিরিক্ত ভাড়া চাওয়া কমিয়ে দিয়েছে। এতে করে একদিকে যেমন কর্মব্যস্ত মানুষের সময় বেঁচে যাচ্ছে, তেমনি বেকারদের জন্য তৈরি হচ্ছে কর্মসংস্থান। মজার ব্যাপার হচ্ছে- চালক চাইলে এই পেশার পাশাপাশি অন্য চাকরি বা ব্যবসাও করতে পারছেন।
রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠানগুলো সম্প্রতি কিছু মোটরবাইক কোম্পানির সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে চালকদের জন্য কিস্তিতে মোটরবাইক কেনার সুযোগ করে দিচ্ছে যা বেকারদের জন্য খুলে দিয়েছে সম্ভাবনার এক নতুন দ্বার। সম্ভাবনার এ সময়ে যে কোনো বয়সের মানুষ বেছে নিতে পারেন রাইড শেয়ারিংয়ের এই স্বাধীন পেশা। বিশেষ করে তরুণদের জন্য এটি হতে পারে উপার্জনের অন্যতম একটি মাধ্যম।
শুরু করতে কী লাগবে?
– বৈধ মোটর ড্রাইভিং লাইসেন্স
– জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি
– ছবি
– বৈধভাবে নিবন্ধিত একটি মোটরবাইক বা প্রাইভেট কার এবং
– প্রতিদিন নতুন নতুন মানুষকে সেবা দেওয়ার মানসিকতা