সভ্যতার বিকাশে বিস্ময়কর আবিষ্কার কম্পিউটার। শুরু থেকেই মানুষের কম্পিউটারের প্রতি আগ্রহ ছিল এবং আছে। বর্তমানে শিক্ষার্থীদের কাছে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়টি সর্বোচ্চ প্রাধান্য পেয়ে থাকে।
বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর পাশাপাশি বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশেও কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়টি প্রথম সারিতে রয়েছে। চাহিদা ও সুযোগ থাকায় তরুণ প্রজন্মের পছন্দের বিষয় হয়ে উঠেছে এই বিষয়। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বা সিএসই বিষয়ে ক্যারিয়ার সম্ভাবনা কতটা, কী পড়ানো হয় এতে এবং কোথায় পড়ার সুযোগ রয়েছে সেটা আজ আমরা জানবো।
কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং কী?
কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং হলো কম্পিউটার এবং কম্পিউটিংয়ের পাশাপাশি তাদের তাত্ত্বিক এবং ব্যবহারিক অ্যাপ্লিকেশনগুলির গবেষণা। এটি গণিত, প্রকৌশল, অ্যালগরিদম সূত্র, সফ্টওয়্যার এবং হার্ডওয়্যার ডেভেলপমেন্ট ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসহ ফাংশনগুলিতে যুক্তির মূলনীতি প্রয়োগ করে। অর্থাৎ কম্পিউটার সম্পর্কিত পড়াশোনা এবং গবেষণাই কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, যাকে সংক্ষেপে সিএসই বলা হয়। ধরা-বাধা কাঠামোগত সিলেবাস পড়ে এসে বিশ্ববিদ্যালয়ে মুখস্থবিদ্যার মাধ্যমে পাস করার বিষয় নয়। এটি সম্পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে বুঝেশুনে পড়া এবং সমস্যা সমাধানের বিষয়। CSE পড়তে হলে ৩টা স্কিল থাকতে হবে।
১. গণিতের মোটামুটি দক্ষতা।
২. নতুন কিছু করার উদ্ভাবনী চিন্তা।
৩. প্রোগ্রামিং করার প্যাশন এবং ধৈর্য্য।
ধৈর্য না থাকলে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং সাব্জেক্টে ভালো করা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। কারণ এখানে প্রব্লেম সলভিং এবং কোডিং-এর মতো বিষয় রয়েছে। এগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং অত্যাবশ্যক যা এড়িয়ে চলা অসম্ভব।
সিএসই-এর আলোচ্য বিষয়
শিক্ষার্থীরা যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়, তখন তাদের মধ্যে অনেকেই কম্পিউটার বিজ্ঞান বিষয়টি বেছে নেয়। বিষয়টি শিক্ষার্থীদের মাঝে বেশ জনপ্রিয়। শিক্ষার্থীদের কম্পিউটার বিজ্ঞান বিষয়ে পড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পেছনে বিভিন্ন কারণ থাকে। কেউ কম্পিউটার বিজ্ঞানী হতে চায়, কেউ হতে চায় সফটওয়্যার নির্মাতা, কেউবা হয়তো কম্পিউটারে গেম খেলতে পছন্দ করে তাই কম্পিউটার বিজ্ঞানে পড়তে আসে। কিন্তু অনেকেই কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং সাব্জেক্টের আলোচ্য বিষয়গুলো সম্পর্কে জানেন না। এমনকি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরাও অনেকসময় বিষয়টি এড়িয়ে যায়। কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং -এর আলোচ্য বিষয়গুলো হলো:
১. অ্যালগরিদম অ্যান্ড কম্পলেক্সিটি (Algorithms and complexity)
২. আর্কিটেকচার অ্যান্ড অর্গানাইজেশন (Architecture and organization)
৩. কম্পুটেশনাল সায়েন্স (Computational science)
৪. গ্রাফিক্স অ্যান্ড ভিজ্যুয়াল কম্পিউটিং (Graphics and visual computing)
৫. হিউম্যান-কম্পিউটার ইন্টার্যাুকশন(Human-computer interaction)
৬. ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট (Information management)
৭. ইন্টেলিজেন্ট সিস্টেম (Intelligent systems)
৮. নেটওয়ার্কিং অ্যান্ড কমিউনিকেশন (Networking and communication)
৯. অপারেটিং সিস্টেম (Operating systems)
১০. প্যারালাল অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউটেড কম্পিউটিং (Parallel and distributed computing)
১১. প্ল্যাটফর্ম বেসড ডেভেলপমেন্ট (Platform-based development)
১২. প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ (Programming languages)
১৩. সিকিউরিটি অ্যান্ড ইনফরমেশন অ্যাসিউরেন্স (Security and information assurance)
১৪. সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং (Software engineering)
১৫. সোশ্যাল অ্যান্ড প্রফেশনাল ইস্যু (Social and professional issues)
১৬. রোবোটিক্স (Robotics)
কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং -এর আলোচ্য এই বিষয়গুলো থিওরেটিক্যালি ৩টি এবং প্রাকটিক্যালি ২টি সাব-ডিসিপ্লিনের অন্তর্ভুক্ত। তবে এদের প্রত্যেকের আলাদা আলাদা গবেষণা ক্ষেত্র রয়েছে। ফলে সিএসই একটি বিস্তৃত বিষয় হিসেবে পরিচিত। থিওরিটিক্যাল সাব- ডিসিপ্লিনগুলো হলো:
১. অ্যালগরিদম (algorithm)
২. কম্পিউটেশন ( Computation)
৩. ইনফরমেশন (information)
এই সাবডিসিপ্লিনের অন্তর্ভুক্ত উপরিউক্ত তাত্ত্বিক বিষয়গুলো আলোচনা করা হয়। অর্থাৎ এলগারিদম, ডেটা স্ট্রাকচার, প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ, অপারেটিং ও ইনফরমেশন সিস্টেম প্রভৃতি।
প্রাকটিক্যাল সাব ডিসিপ্লিনগুলো হলো:
১. হার্ডওয়্যার (Hardware)
২. সফটওয়্যার (Software)
সফটওয়্যার অন্তর্ভুক্ত বিষয়গুলো ডেভেলপমেন্ট নিয়ে আলোচনা করে এবং হার্ডওয়্যারে প্রব্লেম সলভিং কিভাবে করতে হয় সেই বিষয়গুলো প্রাকটিক্যালি আলোচনা করে।
বাংলাদেশের কোথায় সিএসই পড়ানো হয়?
বাংলাদেশের নামকরা প্রায় প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়েই কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বা সিএসই পড়ার সুযোগ রয়েছে। অসংখ্য পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে সিএসই সাব্জেক্টটি রয়েছে। যেহেতু অধিকাংশ শিক্ষার্থীরই পছন্দের তালিকায় এই বিষয়টি সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পেয়ে থাকে, তাই পড়ার সুযোগও তৈরি হয়েছে অসংখ্য।
সাধারণত, বিশ্ববিদ্যালয়ের চারবছর মেয়াদি বিএসসি কোর্সে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ানো হয়। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পাস করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে হয়। তবে ভর্তি পরীক্ষার প্রতিযোগিতায় মেধাতালিকায় প্রথম সারির দিকে যারা থাকে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে তারাই সিএসই নিয়ে পড়ার সুযোগ পায়।এক্ষেত্রে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিন্ন ভিন্ন পূর্বশর্ত থাকে। যেমন, কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় এসএসসি, এইচএসসি উভয় পরীক্ষায় নির্ধারিত জিপিএ-সহ গণিত ও পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে নির্দিষ্ট জিপিএ চেয়ে থাকে।
এছাড়াও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে সিএসই নিয়ে পড়া যায়। তবে সেটি ব্যয়বহুল অনেকের জন্য। অনেক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে জিপিএ ভিত্তিতে স্কলারশিপ পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। চারবছর অনার্স শেষ করে মাস্টার্স এবং পিএইচডি করারও সুযোগ রয়েছে এই বিষয়ে। কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অধিকাংশই দেখা যায় এমবিএ কোর্সের দিকে আগ্রহী হয়ে থাকে। কারণ যেখানে বিশ্বে এই বিষয়ের ৫০+ কর্মক্ষেত্র রয়েছে সেই তুলনায় বাংলাদেশে অনেক কম সুযোগ রয়েছে।
বাংলাদেশের যে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সিএসই পড়ার সুযোগ রয়েছে সেগুলো হলো:
১. বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)
২. রাজশাহী প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট)
৩. চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট)
৪. খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট)
৫. ঢাকা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (ডুয়েট)
৬. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
৭. জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
৮. রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
৯. জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
১০. চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
১১. ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
১২. খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়
১৩. কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়
১৪. বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়
১৫. জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়
১৬. শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়
১৭. বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়
১৮. বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
১৯. মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
২০. শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
২১. হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
২২. যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
২৩. পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
২৪. পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
২৫. রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
২৬. বঙ্গবন্ধু শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
অর্থাৎ ২০টিরও বেশি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সিএসই নিয়ে পড়ার সুযোগ রয়েছে শিক্ষার্থীদের। এছাড়াও অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সিএসই পড়ার সুযোগ রয়েছে। এগুলো হলো :
১. নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়
২. আন্তর্জাতিক ইসলামী্ বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম
৩. গণবিশ্ববিদ্যালয়
৪. ইন্ডিপেন্ডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ
৫. প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়
৬. ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
৭. ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়
৮. আহছানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
৯. প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম
১০. বিজিসি ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ
১১. বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয়
১২. রণদা প্রসাদ সাহা বিশ্ববিদ্যালয়
১৩. খাজা ইউনুস আলী বিশ্ববিদ্যালয়
১৪. ফেনী বিশ্ববিদ্যালয়
১৫. বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়
১৬. হামদর্দ বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ
১৭. সোনারগাঁও বিশ্ববিদ্যালয়
১৮. রাজশাহী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
১৯. জার্মান বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ
২০. শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিশ্ববিদ্যালয়
২১. ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি
২২. ফারইস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
২৩. নর্থ বেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
২৪. পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
২৫. ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ
২৬. ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ
২৭. শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি
২৮. মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি
২৯. বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি
৩০. ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ
৩১. ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি
৩২. ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়া
৩৩. ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্সস
৩৪. ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
৩৫. স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ
৩৬. স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ
৩৭. সিটি ইউনিভার্সিটি
৩৮. সাউথ ইস্ট ইউনিভার্সিটি
৩৯. লিডিং ইউনিভার্সিটি
৪০. প্রাইম ইউনিভার্সিটি
৪১. নর্দার্ন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ
৪২.গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ
৪৩. সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ
৪৪. মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
৪৫. পুন্ড্র ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি
৪৬. চট্টগ্রাম ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি (সিআইইউ)
৪৭. ইস্টওয়েস্ট ইইউনিভার্সিটি
৪৮. ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক
৪৯. ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
৫০. আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশ
৫১. সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটি
৫২. ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি চট্টগ্রাম
অর্থাৎ প্রায় ৫০ টিরও অধিক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সিএসই পড়ার সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশের ট্রেন্ডিং সাবজেক্ট সিএসই। ফলে মাঝারি মানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও পড়ার সুযোগ রয়েছে। এছাড়াও সিএসই-তে ডিপ্লোমা করার সুযোগ রয়েছে অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। এক্ষেত্রে সান্ধ্যকালীন অথবা ৩ বছরের কোর্স চালু আছে। একে সংক্ষেপে ডিসিএসই বা ডিপ্লোমা ইন কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বলা হয়। অনেকেই এসএসসি অথবা এইচএসসির পর ডিপ্লোমা কোর্স করে থাকেন।
দেশের বাইরে সিএসই পড়ার সুযোগ এবং চাহিদা
প্রযুক্তিবিজ্ঞান স্নাতকদের জন্য প্রতি বছর ক্যারিয়ারের সুযোগগুলি প্রসারিত হওয়ায় কম্পিউটার বিজ্ঞান অধ্যয়ন করা আজকের বিশ্বে একটি স্মার্ট বিষয়। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর পাশাপাশি উন্নয়নশীল তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতেও কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিষয় প্রাধান্য সর্বোচ্চ। বিশ্বের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে সিএসই নিয়ে পড়ার ব্যাপক সুবিধা রয়েছে। ফুল ফ্রি স্কলারশিপসহ পিএইচডি, গবেষণা ও পার্ট টাইম জবের পাশাপাশি পড়াশোনা করার সুযোগ রয়েছে শিক্ষার্থীদের জন্য।
উল্লেখযোগ্য কিছু বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে স্কলারশিপের পাশাপাশি অন্যান্য সুবিধা রয়েছে সেগুলো হলো:
১. ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি
২. স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি
৩. ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া
৪. ইউনিভার্সিটি অব অক্সফোর্ড
৫. ইউনিভার্সিটি অব ক্যামব্রিজ
৬. হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি
৭. ইউনিভার্সিটি অব টরেন্টো
৮. প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি
৯. ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুর
১০. ইম্পেরিয়াল কলেজ, লন্ডন
১১. ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটন
১২. কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি
১৩. নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটি
১৪. ইউনিভার্সিটি অব এডিনবার্গ
১৫. ইউনিভার্সিটি অব ওয়াটারলু
১৬. দ্যা হংকং ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি
১৭. জর্জিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি
১৮. দ্যা ইউনিভার্সিটি অফ টোকিও
১৯. ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাস
২০. ইউনিভার্সিটি অফ মেলবোর্ন
২১. কর্ণেল ইউনিভার্সিটি
এছাড়াও বহির্বিশ্বের মাঝারি মানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও সিএসই পড়ার সুযোগ রয়েছে। তবে স্কলারশিপ পাওয়ার সুযোগ সেখানে কম। অসংখ্য শিক্ষার্থী IELTS করে বাইরের দেশগুলোতে স্কলারশিপ নিয়ে পড়াশোনা করছে। পড়াশোনা শেষে গুগল, মাইক্রোসফটের মতো কোম্পানিগুলোতে নিজের ক্যারিয়ার গড়ে তুলছে। সিএসই পড়ার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়েও বেশি নিজের পরিশ্রম এবং চেষ্টা গুরুত্বপূর্ণ। নিজের পরিশ্রম ও চেষ্টা না থাকলে ক্যারিয়ার গড়ে তোলা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে ক্যারিয়ার
বাংলাদেশে কম্পিউটার সায়েন্স পড়ার দুইটা উদ্দেশ্য থাকতে পারে। এক. কম্পিউটার বিজ্ঞানী হওয়া, দুই. সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হওয়া। এছাড়াও যারা বাইরের দেশগুলোতে স্কলারশিপ নিয়ে এই বিষয়ে পড়াশোনা করছে তাদেরও একই উদ্দেশ্য থাকে। তবে বাইরের দেশগুলোতে যেরকম কাজের সুযোগ রয়েছে বাংলাদেশে সেই তুলনায় অনেকাংশে পিছিয়ে আছে।
প্রযুক্তির এই যুগে প্রতিনিয়ত সবকিছু আপডেট হচ্ছে। Change is the only constant in life – দার্শনিকদের এই কথাটি প্রযুক্তি বিশ্বের বেলাতে আরো বেশি সত্য। প্রতি পাঁচ বছরেই যেন বিশাল পরিবর্তন ঘটে যাচ্ছে, নতুন প্রোগ্রামিং ভাষা, নতুন ফ্রেমওয়ার্ক, নতুন ডেটাবেজ, ক্লাউড কম্পিউটিং, মেশিন লার্নিংয়ের নতুন নতুন প্রয়োগ, মোবাইল কম্পিউটিং, আইওটি ইত্যাদি।
বিশ্বের বড় বড় কোম্পানিগুলোতে সিএসই নিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের কাজের সুযোগ থাকলেও বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তুলনামূলক কম সুযোগ। তবে যারা শিক্ষাজীবনে পরিশ্রম করে তারা তাদের দক্ষতার মাধ্যমে নিজের ক্যারিয়ার গড়ে তুলতে সক্ষম হয়। আগামী দিনের প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করার জন্য তৈরি হতে হলে, নতুন প্রবলেম সলভ করা বা নতুন সমস্যা নিয়ে চিন্তা করার দক্ষতা থাকা উচিত। সমস্যার সমাধান করতে করতেই এই দক্ষতা তৈরি হবে এবং ভার্সিটির সময়টুকুই এই দক্ষতা তৈরির শ্রেষ্ঠ সময়।
বাংলাদেশের বর্তমান উন্নয়ন রেখা প্রযুক্তির দিকে ধাবমান। এর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত, সম্প্রতি বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট। আমাদের দেশে এখনো চাহিদার তুলনায় দক্ষ কম্পিউটার সায়েন্স গ্র্যাজুয়েট অনেক কম। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশে তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে। সাথে সাথে শিল্পে আধুনিকায়ন হচ্ছে। পরমাণু শক্তি কমিশন, Satellite Transmission থেকে Traffic Controlling, E-governance, রেল যোগাযোগসহ সকল ক্ষেত্রেই কম্পিউটারের ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। ফলে সকল ক্ষেত্রেই CSE -এর চাহিদা প্রচুর। এর ফলে তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন কর্মক্ষেত্র। এগুলো হলো:
১। সরকারি বিভিন্ন বিভাগ-বিদ্যুৎ উন্নয়ন অধিদপ্তর, পল্লীবিদ্যুতায়ন বোর্ড, জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তর, গণপূর্ত বিভাগ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর, পরিবেশ অধিদপ্তর, আবহাওয়া অধিদপ্তর প্রভৃতিতে কম্পিউটার প্রকৌশলী হিসেবে
২। বিভিন্ন ফার্মে Software Engineer & Programmer, IT Professional
৩। Network Administration, System Analyst
৪। Web Mastering & Developing Company
৫। গ্রাফিক্স ডিজাইনার
৬। ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে Simulation এবং Animation Director
৭। সামরিক বাহিনীতে কম্পিউটার প্রকৌশলী হিসেবে
৮। সকল আধুনিক শিল্পকারখানায় প্রসেস কন্ট্রোলিং
৯। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা
১০। ফ্রিল্যান্সিং ও আউটসোর্সিং
১১। কম্পিউটার প্রোগ্রামার
১২। সিস্টেম ডিজাইনার
১৩। সফটওয়্যার ডেভলপার
১৪। একাডেমিক রিসার্চ এডিটর
এছাড়াও অনেকেই সিএসই করার পর এমবিএ করে থাকেন। সেক্ষেত্রে তাদের পছন্দ অনুযায়ী ক্যারিয়ার গড়ে তোলেন।
সিএসইতে পড়ে দেশের বাইরের যেসব বড় বড় কোম্পানিতে নিজের ক্যারিয়ার গড়ে তোলার সম্ভাবনা রয়েছে সেগুলো হলো:
১. Microsoft
২. Google
৩. Yahoo
৪. Facebook
৫. Intel
৬. Hewlett-Packard
৭. International Business Machines Corporation
৮. Toshiba Corporation
৯. Dell Inc
১০. NEC Corporation
১১. Canon Inc
১২. Apple Inc
১৩. ASUSTEK Computer Inc
১৪. Acer Inc
১৫. Lenovo Group Limited
১৬. SAIC
১৭. Sun Microsystem
১৮. TCS
১৯. Infosys
২০. Techmahindra
এছাড়াও Nasa, সার্নের মত বিভিন্ন বিখ্যাত গবেষণা ইন্সটিটিউটে ক্যারিয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বা সিএসই এমন এক বিষয় যার ক্যারিয়ার সম্ভাবনা অনেক। কিন্তু শুধুমাত্র তারাই সফল হতে পারে যারা ধৈর্য্য ও পরিশ্রমের মাধ্যমে তাদের পড়াশোনা সম্পন্ন করে। এই ক্ষেত্রে অনেক বিষয় জানার এবং বোঝার আছে। ফলে প্রতিনিয়ত শেখার ধৈর্য্য না থাকলে ক্যারিয়ারে উন্নয়ন করা কষ্টকর হয়ে পড়বে। তবে, দিন দিন কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং সাবজেক্টের চাহিদা যেমন বাড়ছে, তেমনি পাল্লা দিয়ে বাড়ছে কর্মসংস্থানের সুযোগ। বাংলাদেশের অনেক সিএসই ইঞ্জিনিয়ারই বিশ্বের নামকরা প্রতিষ্ঠানে সাফল্যের সঙ্গে চাকরি করছে।
সিএসই বিষয়টি প্রধান কর্মক্ষেত্র হচ্ছে শিক্ষকতা, গবেষণা, প্রোগ্রামিং। এসব সেক্টরের পাশাপাশি সুযোগ থাকছে ব্যাংক, কর্পোরেট হাউস, মিডিয়াসহ প্রায় সব জায়গায়। বর্তমান সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী ডিজিটাল বাংলাদেশ তৈরি হবার পর এই সেক্টরের সুযোগ আরও বেড়ে যাবে বলে আশা করা যায়।