সুমনা শারমিন
আপনি যদি জীবনে প্রতিষ্ঠা পেতে চান, তাহলে অবশ্যই আপনাকে একটি ভালো পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। কোনো কিছু করার আগে কাজটা কিভাবে সুন্দর, যথাযথ ও সঠিকভাবে, কম সময়ে শেষ করা যায় সে জন্য আগে থেকে চিন্তা করাই হলো পরিকল্পনা। একজন মানুষ তার জীবনের শুরুতেই যদি একটি ভালো পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারে তাহলেই তার জীবন পাল্টে যেতে পারে।
পরিকল্পনা
আমাদের সবার জীবনেরই কিছু না কিছু লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য রয়েছে। শৈশব থেকেই কেউ হতে চায় ডাক্তার, কেউ ইঞ্জিনিয়ার, কেউ আবার শিক্ষকতার মতো পেশায় আসতে আগ্রহী থাকে। সময়ের আবর্তনে এসব পেশার বাইরেও নানামুখী পেশায় কর্মসংস্থান বাড়ছে। শখ অনুযায়ী কিশোর বয়স থেকে শুরু করা উচিত ক্যারিয়ার পরিকল্পনা। কারণ প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেয়ার আসল সময় এই বয়সটাই। প্রস্তুতি যদি সঠিক হয়, তবে পরিকল্পনা অনুযায়ী এগিয়ে যেতে পারলে বয়স বাড়ার সাথে সাথে পরিকল্পনাটি সহজেই বাস্তব রূপলাভ করে। আপনার ব্যক্তিগত সামর্থ্য, দক্ষতা, আগ্রহ, রুচি, উৎসাহ, মূল্যবোধ, স্বপ্ন এবং গুণাবলিকে প্রাধান্য দিতে হবে। আর এই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে সহায়তা করে ক্যারিয়ার পরিকল্পনা।
সঠিক সময়ে সঠিক কাজ
আমাদের প্রচেষ্টা, ইচ্ছা, আগ্রহ এবং প্রয়োজনীয় দক্ষতার ওপরই নির্ভর করে ভবিষ্যৎ। সময় ও স্রোত কারো জন্য অপেক্ষা করে না। জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে হলে অবশ্যই আপনাকে সময়ের গুরুত্ব দিতে হবে। সব কাজ সম্পন্ন করতে হলে অবশ্যই সময়ের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার করতে হবে। তবে সময় ধরে রুটিন অনুযায়ী চললে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে বেগ পেতে হয় না।
রুটিন তৈরি করুন
পরীক্ষার আগের দিনগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একদম সময় নষ্ট করা যাবে না। প্রতিটি বিষয়কে সমান গুরুত্ব দিয়ে রুটিন তৈরি করুন। প্রতিদিনের পড়া প্রতিদিন শেষ করে ফেলুন। কোনোমতেই পড়া জমিয়ে রাখা যাবে না। আপনার সব কাজকর্ম রুটিনমাফিক করতে পারেন। রুটিন করার ক্ষেত্রে এমন লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করবেন না, যা আপনি বাস্তবভিত্তিক অনুসরণ করতে পারবেন না। প্রথম দিকে বিষয়টি বুঝতে একটু সময় লাগতে পারে। কিন্তু কয়েক দিন চেষ্টা করলেই এটি আপনি আয়ত্ত করতে পারবেন এবং অনুভব করবেন শৃঙ্খলার আনন্দকে। দিনের শুরুটা করুন পরিকল্পিতভাবে। তাহলে সারা দিনই বজায় রাখতে পারবেন সুন্দর কর্মছন্দ। লক্ষ করুন, দিন-রাতের কোন সময়ে আপনি বেশি মনোযোগী ও সক্রিয়। রুটিনের কঠিন, অপছন্দনীয় ও একঘেয়ে বিষয়গুলোকে সেভাবে সাজান। রুটিনে একই ধরনের বিষয় পর পর না রেখে বিষয়ের বৈচিত্র্য রাখুন। এতে মনোযোগ ধরে রাখা সহজ হবে। আপনি কত ঘণ্টা পড়লেন সেটা মুখ্য নয়, বরাদ্দকৃত সময়ে আপনি কতটা পড়লেন রুটিন পর্যালোচনায় এটাই গুরুত্বপূর্ণ। রুটিন অনুসরণে কখনো ছেদ পড়লেও হতাশ হবেন না। পরের ঘণ্টাগুলোর জন্য ফিরে আসুন রুটিনে। কারণ, রুটিনের ৮০% অনুসরণ করতে পারলেই অন্যদের চেয়ে আপনি এগিয়ে আছেন।
সিলেবাস তৈরি করুন
যদিও চাকরির পরীক্ষার কোনো নির্দিষ্ট সিলেবাস নেই। তবুও যে প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা দিচ্ছেন ওই প্রতিষ্ঠান এবং সমপর্যায়ের অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর অতীত নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নাবলি দেখে একটি সম্যক ধারণা নিয়ে নিন। কী ধরনের প্রশ্ন হয়, কোন কোন বিষয়ে পরীক্ষা হয়, প্রশ্নের মানবণ্টন, পরীক্ষার সময়, কোন বিষয়গুলো বেশি গুরুত্বপূর্ণ সে অনুযায়ী সিলেবাস তৈরি করে নিন।
না বুঝে কোনো কিছু মুখস্থ করা উচিত নয়। পরীক্ষার আগে অনেকে সময়ের অভাবে না বুঝে অনেক পড়া মুখস্থ করে। সেটা চাকরির পরীক্ষা বা ক্লাসের যে পরীক্ষাই হোক না কেন, যা কখনোই করা উচিত নয়। সব সমস্যা খুঁজে বের করুন এবং আপনার শিক্ষক বা সহপাঠীর সাহায্য নিন।
অবহেলা করবেন না
কোনো পড়াই আগামী দিনের জন্য ফেলে রাখবেন না। কারণ এই আগামী দিন আপনার জীবনে আর কখনোই আসবে না। প্রতিদিনের পড়া প্রতিদিন শেষ করা খুবই অত্যাবশ্যকীয়। প্রতিদিনের পড়া প্রতিদিন শেষ না করলে পরীক্ষার আগের রাতে জমানো পড়া পাহাড় সমান মনে হবে। এতে প্রস্তুতি আরো খারাপ হবে।
ইংরেজি ও অঙ্কের ওপর জোর দিন
ইংরেজি ও অঙ্ক হচ্ছে অনেকটা প্যারাসিটামলের মতো। এর গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। যারা ইংরেজি ও অঙ্কে ভালো তারা খুব দ্রুত ব্যাংকের চাকরি পেতে পারেন। আবার ভাইভা বোর্ডে, গ্রুপ ডিসকাশনে বা প্রেজেন্টেশনেও সব কিছু সুন্দরভাবে ইংরেজিতে উপস্থাপন করতে হয়। তাই যারা করপোরেট দুনিয়ায় চাকরির স্বপ্ন দেখছেন তারা এই দু’টি বিষয় মনোযোগ দিয়ে চর্চা করুন।
লেখার অভ্যাস করুন
পড়ার পাশাপাশি লেখার অভ্যাস গড়ে তুলুন। কথায় আছে একবার লেখা দশবার পড়ার সমান। যেকোনো পড়া কয়েকবার লিখে পড়লে বিষয়বস্তু খুব সহজে বোঝা যায়।
নিজের পরীক্ষা নিজেই দিন
পরীক্ষার প্রস্তুতি মোটামুটি শেষ হয়ে গেলে ঘরে বসে পরীক্ষা দেয়া শুরু করে দিন। সময় ধরে পরীক্ষা দিন। ভুলভ্রান্তি শুদ্ধ করে নিন। নিজের খাতায় নিজেই নম্বর দিন। এতে নিজের প্রতি অত্মবিশ্বাস বাড়বে।
রিভিশন
একই বিষয়ের পড়া বারবার পড়ুন ও রিভিশন দিন। বিশেষ বিশেষ পয়েন্টগুলো ভালো করে দেখে নিন। পরীক্ষার আগের রাতে নতুন কোনো বিষয় পড়ার দরকার নেই। আগের পড়াগুলোই ভালো করে ঝালাই করে নিন।