অনেকে মনে করেন রুপচর্চা ও পরিপাটি সাজগোজ শুধু মেয়েদের জন্যই প্রযোজ্য। ফলে, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতাসহ শরীরের নিয়মিত যত্ন নেয়া বা সাজানো গোছানো চলাফেরার ব্যাপারে অনেক পুরুষেরাই উদাসীন। কাজকর্মের ক্ষেত্রেও অনেককেই দেখা যায় বেশ অগোছালো। অনেকেই আবার শরীরের যত্নের প্রতি অবহেলা ও অসচেতনতার কারনে আশে পাশের মানুষজনদের কাছে হয়ে যান বিরক্তির পাত্র। কিন্তু সত্যিকার অর্থে বেশ কিছু ক্ষেত্রে নারীদের থেকে বরং পুরুষদেরই আরো অনেক বেশি যত্নবান হওয়া প্রয়োজন। কারণ তাদেরকেই ঘরের বাইরে ঘোরাফেরা করতে হয় তুলনামূলকভাবে বেশি। তাই নগ্ন ত্বকে রোদ-বৃষ্টিসহ রাস্তার ধূলাবালি আর নানা ধরনের রোগ-জীবাণুর সরাসরি সংস্পর্শের ক্ষতিকর প্রভাবটা পুরুষদের ওপরেই পড়ে বেশি। তাই শারীরিক সুস্থ্যতা অর্জনের জন্য যেমন প্রয়োজন পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার দিকে খেয়াল রাখা, তেমনি নিজের পোশাক ও চলাফেরায় পেশাদারী মনোভাব সুস্পষ্ট করার জন্যই প্রয়োজন সঠিক ও পরিপাটি সাজগোজ ও অভ্যাস।
এমনটি ভাবার কোনো কারণ নেই যে টিভি মডেল বা ফ্যাশন তারকাদেরই শুধু দেখতে সুন্দর হতে হবে। সব পেশার ক্ষেত্রেই দেখতে সুন্দর, গোছানো ও কাজকর্মে পরিপাটি হওয়াটা একটা বাড়তি গুণ হিসেবে কাজ করে। কথায় আছে ’পয়লা দর্শনধারী, তারপর গুণবিচারী’। বলা তো যায় না, আপনার মার্জিত চলাফেরা ও কাজকর্মের কারণে হয়তো একটু তাড়াতাড়িই হয়ে যেতে পারে আপনার পেশায় কাঙ্ক্ষিত পদোন্নতি।
এখানে পেশাদারি মনোভাব বৃদ্ধিতে সহায়ক কিছু টিপস দেয়া হলো-
কর্মেক্ষত্রে যাওয়ার আগে……
১. সকালে একটু আগেভাগেই ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস করুন। দেখবেন তাতে একদিকে মনও যেমন ফুরফুরে থাকবে, অন্যদিকে সময়মতো কর্মক্ষেত্রে পৌছে কাজে মন দেয়াটাও সহজ হবে।
২. যারা সারাদিন অফিসে বা কর্মক্ষেত্রে থাকেন তাদের সকালে গোসল করে বের হওয়া ভালো। এতে একদিকে দেখতে আপনাকে সতেজ ও প্রাণবন্ত লাগবে, অন্যদিকে কাজের প্রতিও আপনার আগ্রহ বাড়বে, মনটাও চাঙা থাকবে। অফিস থেকে ফিরে আবার গোসল করে নিতে পারলে আরো ভালো। এতে সারাদিনে শরীরে জমা ময়লা আর ক্লান্তি দুইই দূর হয়, ঘুমটাও অনেক ভালো হয়।
৩. প্রতিদিন সাবান দিয়ে গোসল করার অভ্যাস করুন। সুগন্ধি সাবান বাদ দিয়ে ডেটল জাতীয় সাবান ব্যবহার করা ভালো। এগুলো রোগজীবাণু প্রতিরোধে বেশি কার্যকর।
৪. পরের দিন কী কী কাজ করবেন বা কার কার সাথে কখন দেখা করবেন তা আগের দিন রাতে ঘুমানোর আগেই পরিকল্পনা করে রাখুন। মনে না থাকার সম্ভাবনা থাকলে ডায়েরি, মোবাইল বা নির্দিষ্ট কোথাও নোট করে রাখতে পারেন। এতে পরের দিন পরিকল্পনামাফিক কাজ করা আপনার পক্ষে সহজ হবে।
৫. বেশি রাত জাগার অভ্যাস থাকলে তা ত্যাগ করার চেষ্টা করুন। এতে সকালের ঘুম ভাঙতে দেরি ও কষ্ট হয়, কাজেরও ক্ষতি হয়। বেশি দেরি করে ঘুম থেকে উঠলে আপনার সারাদিনের পরিকল্পনাটাই এলোমেলো হয়ে যেতে পারে। এছাড়া রাত জাগাটা স্বাস্থ্যের জন্যেও খুব খারাপ।
৬. কর্মক্ষেত্রের একাধিক পোশাক রাখুন। এক পোশাক বারবার না পরে একদিন পরার পরই ধুয়ে ফেলুন। সবসময় ধোয়া এবং ইস্ত্রী করা কাপড় পড়ার চেষ্টা করবেন।
৭. আপনার ঘামের দুর্গন্ধে যেনো আপনার পাশের লোকটির কষ্ট না হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন। প্রয়োজনে ডিওডোরেন্ট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. সুগন্ধী অর্থাৎ পারফিউম বা বডি স্প্রে ব্যবহার করতে পারেন। তবে অবশ্যই তা যেনো খুব বেশি কড়া না হয়।
৯. এক থেকে তিন দিন পরপর চুলে শ্যাম্পু করুন। শ্যাম্পু করার পর চুল শুকিয়ে তাতে হেয়ার ক্রীম, জেল বা হার্বাল অয়েল দিতে পারেন। এতে চুলের সৌন্দর্য্য বাড়বে। পুরুষদের চুলের ক্রীমের ক্ষেত্রে ব্রায়ল ক্রীমটা খারাপ না। জেলের ক্ষেত্রে বেশিরভাগ লোকদের গ্যাটস্বাই, মানু বা সেট-ওয়েট ব্যবহার করতে দেখা যায়। হার্বাল অয়েল আড়ং-এরটা ভালো বলে দাবি করেন অনেকে।
১০. রোদের হাত থেকে রক্ষার জন্য সানস্ক্রীনসমৃদ্ধ জেন্টস ক্রীম ব্যবহার করতে পারেন।
১১. অনেকের সারা বছরই ঠোট ফাটে। তারা লিপজেল সঙ্গে রাখতে পারেন।
১২. ত্বকের বাড়তি যত্ন নিতে জেন্টস্ উপটান ব্যবহার করতে পারেন। জেন্টস্ পার্লার থেকে মাসে একবার ফেসিয়ালও করাতে পারেন। তবে বেশি ফেসিয়াল করা উচিত নয়।
১৩. বাইরের ধুলাবালির কারণে অনেকের শ্বাস কষ্ট হয়। সেক্ষেত্রে মুখে মাস্ক ব্যবহার করলে অনেকটা রেহাই পাওয়া যায়। রুমালও ব্যবহার করা যেতে পারে।
১৪. সাথে সবসময় রুমাল ও টিস্যু পেপার রাখুন।
১৫. বাসে বা পথে ঘাটে চলার ক্ষেত্রে মাথায় ক্যাপ পড়লে বাইরের ধুলাবালি থেকে চুল বাঁচানো যায়।
১৬. বাইরে রোদ বেশি থাকলে আপনার ব্যক্তিত্ব ও পোশাকের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ রোদচশমা ব্যবহার করতে পারেন। এতে চোখে ধুলাবালি প্রবেশ করার সম্ভাবনাও কমে যাবে।
১৭. অনেকসময় দেখা যায় আপনি খুব সেজেগুজে বাসা থেকে বেড়িয়েছেন। কিন্তু মধ্যিপথে বাসের ঠেলাঠেলিতে অন্যের পা লেগে আপনার নতুন কালি করা জুতো ময়লা হয়ে গেছে। সেক্ষেত্রে জুতা মোছার জন্য আলাদা একটি ছোট্ট রুমাল রাখতে পারেন সঙ্গে। ব্যবহার শেষে একটু ঝেরে ফেললেই হলো।
১৮. সময়ানুবর্তিতা ঠিক রাখার জন্য সঙ্গে অবশ্যই একটি ঘড়ি রাখুন। ভালো ব্র্যান্ডের রুচিসম্মত হাতঘড়ি ব্যবহার করাই ভালো। এতে চলতে ফিরতে বা কর্মক্ষেত্রে আপনার সুন্দর রুচির পরিচয় ফুটে উঠবে।
১৯. যেসব অফিসের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট করে দেয়া কোনো পোশাক নেই সেসব ক্ষেত্রে জাঁকালো বা চোখ ধাঁধানো পোশাক পরিহার করে মার্জিত ও ভদ্র পোশাক পড়াই ভালো। আপনার পোশাক আপনার ব্যক্তিত্বের অনেকটাই প্রকাশ করে।
২০. সবসময় ইস্ত্রি বা আয়রণ করা জামা-কাপড় পড়ার চেষ্টা করুন। এটা আপনার রুচিশীলতা ও পেশাদারী মনোভাবের পরিচায়ক।
২১. বড় চুল বা ঝুটি, গলায় চেইন, হাতে আংটি, ব্রেসলেট ইত্যাদি যতটা পারা যায় পরিহার করাই ভালো। এগুলো সাধারণত পেশাদারিত্ব ক্ষুন্ন করে।
২২. অনেকের মুখে দুর্গন্ধ হয়। এতে আশে পাশের লোকজনেরও সমস্যা হয়। এরকম হয়ে থাকলে সমস্যাটাকে এড়িয়ে না গিয়ে নিয়মিত মাউথওয়াশ ব্যবহার করুন। বাসা থেকে বের হবার আগে মাউথওয়াশ দিয়ে ভালোভাবে কুলি করে নিলে ভালো কাজ হয়। এছাড়াও বাইরে সিগারেটের দোকানগুলোতে অনেক কম দামেই মীন্ট বা মেন্থল টাইপের চুউইং গাম পাওয়া যায়। তাই মাউথওয়াশের বোতল নিয়ে ঘুরতে সমস্যা হলে সেগুলো সবসময় কয়েকটা পকেটে রাখতে পারেন। বিভিন্ন কারণে মুখে দুর্গন্ধ হতে পারে। নির্দিষ্ট কিছু রোগের কারণেও মুখে দুর্গন্ধ হতে পারে। তাই মাউথওয়াশ ব্যবহারের পরেও কাজ না হলে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নিতে পারেন।
২৩. অনেক সময় মোজা না ধোয়ার ফলে দুর্গন্ধ হয়। এতে চারপাশের লোকজনের চরম অস্বস্তি হয়। মোজা নিয়মিত ধুয়ে পড়বেন।
২৪. নিয়মিত চুল ও নখ কেটে ছোট রাখবেন।
২৫. গ্যাস্ট্রিক, এলার্জি, হাপানি ইত্যাদি রোগ থাকলে প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র সাথেই রাখুন। কারণ প্রয়োজনের সময় হাতের কাছে এসব নাও থাকতে পারে।
২৬. অফিসে যাওয়ার সময় গাড়ি রাস্তায় জ্যামে আটকে থাকলে বিরক্ত না হয়ে এই সময়টায় বাসে বা গাড়িতে বসে সকালের পত্রিকাটা পড়ে ফেলতে পারেন। মোবাইলে নেট থাকলে ইন্টারনেটে আজকের তাঁজা খবরগুলো পড়ে নিতে পারেন। এতে সময়টা অপচয় হলো না আর আপনিও আপ-টু-ডেট হয়ে গেলেন।
লেখক :
মো: নাজমুল হাসান নাহিদ
জাবি প্রতিনিধি, ক্যারিয়ার ইন্টেলিজেন্স
ধন্যবাদ বাকিবিল্লাহ্ ভাইয়াকে
So nice and beautiful written for as a service holders. We will try to follow.
Thanks.
Really nice……more post………………thanks.
This nice tips. sobay ababe cholar cesta korben,
অনেক গুরুত্বপূর্ণ কিছু টিপস পেলাম। ধন্যবাদ, লেখক কে। আরও চাই। 🙂