আমরা প্রায়ই শুনি ‘আপনাকে কোনো কাজে লেগে থাকতে হবে। তাহলে এক সময় সফলতা আপনাকে ধরা দেবেই।’ কিন্তু আমরা চাইলেই লেগে থাকতে পারি না। এখন খুব উৎসাহ নিয়ে শুরু করলাম, দুদিন পরেই আগ্রহে ভাটা পড়ে। তাহলে এই লেগে থাকার উপায় কী? সেটাই জানাবো এই নিবন্ধে। এ বিষয়ে গবেষণা ও খোঁজ খবর নিয়ে লিখেছেন- মো: শামীম হোসেন।
রোজ সকালে আপনি ঠিকই ঘুম থেকে উঠে চোখ মুছতে মুছতে আয়েশিভঙ্গিতে ব্রাশ করতে থাকেন। কাউকে বলে দিতে হয় না এটা। কারণ রোজ ব্রাশ করতে করতে আপনি একরকম অভ্যস্ত হয়ে গেছেন। এখন সকালে ঘুম ভাঙলে আপনার মস্তিষ্কই আপনাকে পথ দেখায়—কী করতে হবে, না হবে।
ঠিক এভাবেই, কোনো কিছুতে লেগে থাকার উপায় হচ্ছে- আপনাকে আগে সেই কাজটার সাথে নিজেকে অভ্যস্ত করাতে হবে। তারপর বাকিটা আপনার মস্তিষ্ক দেখে নিবে। তাহলে কীভাবে নিজেকে কোনোকিছুর সাথে অভ্যস্ত করাবেন?
১. কেন করবেন/করছেন?
কোনো কিছু শুরু করার আগে, সেটা কেন করবেন— কারণটা খুঁজে নিন। আপনি কিছু একটা করতে চান, কেন করবেন, সেটাই যদি না জানেন তবে লেগে থাকাটা মুশকিল। যেমন- ওজন বাড়াতে হলে আমাকে ঠিকমতো খেতে হবে। কিন্তু আমি একদিন ঠিকমতো খাই তো পরের দিন আবার ভুলে যাই। একদিন সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠি তো পরের দিন ক্লাস মিস হয়। সেই যা তাই! শুরুই করতে পারি না, তো লেগে থাকব কী করে?
এরপর আমি নিজেকে প্রশ্ন করলাম—কেন ওজন বাড়াতে চাইছি? শুকনা-পাতলা দেখতে হওয়ার কারণে আমার আত্মবিশ্বাস কম। হীনমন্যতায় ভুগি। এটাই আমার কারণ। রোজ যখন একবার করে আমি এই কারণ মনে করি, আমি তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে পড়ি, ঠিকমত খেতে পারি—মোটকথা লেগে থাকতে পারি।
২. বড় কাজকে ছোট ছোট করে ভাগ করে নিন
আমেরিকান নেভি সিলের এই কৌশলটা শিখে নিন— একটা বড় কাজকে ছোট ছোট আকারে ভেঙে ফেলা। যখন কোনো বড় কাজের সম্মুখীন হবেন, ছোট ছোট আকারে ভেঙে ভেঙে আগাতে থাকবেন। একটা অংশ হয়ে গেলে, নিজেকে একটু বিশ্রাম দিন, তারপর আবার শুরু করুন।
আপনার ছোট ছোট সাফল্য উদযাপন করুন। এর থেকে লেগে থাকার জন্য দারুণ উৎসাহ পাবেন।
৩. প্রতিদিন মাত্র ১% করে উন্নতি করুন
আইডিয়াটা দারুন। আপনাকে সারাদিন গাধার খাটুনি খাটতে হবে না। লক্ষ্য রাখুন মাত্র ১% উন্নতি করার। কাল যা করেছেন, তার থেকে ১% বেশি করার। আপনি যদি প্রতিদিন ১ শতাংশ করেও উন্নতি করেন, তবে বছর শেষে কত শতাংশ উন্নতি করবেন ভাবুন তো!
৪. নিজেকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিন
একটা নির্দিষ্ট লক্ষ্য ঠিক করে, নিজেকে ডেডলাইন না পেরুনোর চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিন। এটা আপনাকে লেগে থাকতে অনেক সাহায্য করবে। চ্যালেঞ্জ ঠিকমত পূরণ করতে পারলে— নিজেকে বাহবা দিন, পুরস্কৃত করুন। আর না পারলে নেভি সিলের মতো— নিজেদের ভুল বা কোনোকিছু না পারার জন্য গঠনমূলক সমালোচনা করুন।
৫. মজার করে তুলুন
একঘেয়েমির মধ্যে খুব বেশিক্ষণ কোনোকিছুতে লেগে থাকা যায় না। বাকি যারা আপনার মতো একই কাজ করছে, পারলে তাদের সাথে মিলে করুন। কোনো কিছু শিখছেন, অন্যরা যারা এটা শিখছে—তাদের সাথে অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করুন, টিপস নিন/দিন, আড্ডা দিন।
সারাদিন ধরে বই নিয়ে বসে না থেকে, টানা ২৫ মিনিট পড়ার পর ৫ মিনিট বিরতি নিন। তারপর আবার ২৫ মিনিট পড়ে ৫ মিনিট বিরতি। একে বলে পমোডরো কৌশল। এভাবে চারটা পমোডরোর পর ১৫-২০ মিনিটের একটা বড় বিরতি নিন।
৬. নিজেকে তুলে ধরুন
“আপনি যদি নিজেকে চকলেট খাওয়ার সময় ধরে ফেলেন, নিজেকে শাস্তি দিবেন না; শুধু এটুকু দেখবেন, সবটা যেন খেয়ে না ফেলেন। একটা পিছলে যাওয়াকে— বিপর্যয়কর পতনে পরিণত করবেন না।”
—অপরাহ উইনফ্রে
আমি চাই রোজ যেন ভোর ৬ টায় ঘুম থেকে উঠতে পারি। কিন্তু একদিন যদি ৬ টায় উঠতে না পেরে ৬:৩০ বা ৭:০০ বেজে যায়, আমি নিজেকে বকাবকি করি না, বরং আর একটুও দেরি না করে চটপট উঠে পড়ার চেষ্টা করি। আলসেমি লাগলে আমি একটা টেকনিক ব্যবহার করি, উল্টা গুনি—৫,৪,৩,২,১…বুম! আমি বেডের বাইরে।
একটু ভুল হয়ে গেলে নিজেকে বকাবকি না করে, বরং আমাদের উচিত হবে—জল যেন আর বেশিদূর না গড়ায়, সেদিকে খেয়াল রাখা।
প্রিয় পাঠক, লেগে থাকায় উপায় তো জানলেন- এবার তাহলে বাস্তবায়ন শুরু হোক। মনে রাখবেন- আপনিই আপনার সেরা বন্ধু। যখনই পিছলে যাবেন—নিজেকে তুলে ধরুন।
সূত্র : কোরা ডটকম