আমরা সবাই শুনেছি “যারা হাল ছেড়ে দেয়, তারা কখনো জেতে না” – তাই না? তবে আমি আজ সেই ধারণাটিকে চ্যালেঞ্জ করতে চাই এবং আপনাকে একটি নতুন ধারণার সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে চাই। যার নাম দেয়া যায়- কৌশলগতভাবে হাল ছেড়ে দেওয়া।
আপনি দেখবেন, কখনো কখনো এগিয়ে যাওয়ার চাবিকাঠি হলো- আপনি করতে চাচ্ছেন এমন কিছু বিষয় ছেড়ে দেওয়া। এটি এমন জিনিসগুলোর জন্য জায়গা করে দেয়, যা সত্যিকার অর্থেই আপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আমরা একে বলতে পারি ” প্রাগমেটিক বা বাস্তববাদী অগ্রাধিকার”। এর মাধ্যমে আপনার মূল্যবান সময় ও শক্তি সত্যিকার অর্থে গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোতে ফোকাসড বা কেন্দ্রীভূত রাখা সম্ভব হয়।
আমি জানি, এখন আপনি কী ভাবছেন। “কিন্তু বিষয়টিতে আমি এত কিছু ইতিমধ্যেই বিনিয়োগ করেছি!” বিশ্বাস করুন, আমিও এই অবস্থার মধ্যে গিয়েছি অনেকবার। আমরা প্রায়ই “ডুবে যাওয়া জাহাজের খরচের ভুল”-এর ফাঁদে পড়ি। যেখানে আমরা ইতিমধ্যেই কোনো প্রকল্প বা কাজে অনেক কিছু বিনিয়োগ করেছি বলে আরও বেশি সম্পদ ঢালতে থাকি। কিন্তু সত্যিটা হলো: অব্যবহারযোগ্য প্রকল্প বা প্রতিজ্ঞা ধরে রাখা মানে হলো গোড়ালিতে ভারি ওজন বেধে নিয়ে ম্যারাথন দৌড়ানোর চেষ্টা করা। এটি ক্লান্তিকর এবং আপনার প্রকৃত সম্ভাবনায় পৌঁছাতে বাধা দেয়।
এখানেই আমাদের “টাইম কিলারস” ধারণা আসে। এগুলো হলো সেই কাজগুলো, প্রকল্পগুলো বা সম্পর্কগুলো যা আপনার শক্তি শুষে নেয় ঠিকই কিন্তু সঠিক মূল্য দেয় না। এরা “টাইম ড্রিফট” তৈরি করে — যেখানে আপনার সময় বা দিনগুলো কোনো বাস্তব অগ্রগতির পরিবর্তে ধীরে ধীরে শেষ যায়।
তাহলে, আসুন আমরা বাস্তবতার দিকে ফিরি। আমি চাই আপনি নিজেকে এই প্রশ্নটি করুন:
“বর্তমান কোন বিষয়টি আমার শক্তি শুষে নিচ্ছে কিন্তু এর জন্য যথাযথ লাভ বা প্রফিট দিচ্ছে না?”
একটু সময় নিয়ে সত্যিকারভাবে চিন্তা করুন। এটি অস্বস্তিকর হতে পারে, কিন্তু আমাকে বিশ্বাস করুন, এটি খুবই মূল্যবান।
আপনাকে এই প্রক্রিয়ায় সহায়তা করতে, আমি ‘কৌশলগতভাবে হাল ছেড়ে দেওয়া’র ফ্রেমওয়ার্কের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে চাই। এটি আমাদের প্রাথমিক নীতির চিন্তাধারার ওপর ভিত্তি করে তৈরি, যা আপনাকে কী রাখা উচিত এবং কী ছেড়ে দেওয়া উচিত সে বিষয়ে স্পষ্ট ও আত্মবিশ্বাসী সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করবে।
- এলাইনমেন্ট মূল্যায়ন করুন : প্রথমে নিজেকে জিজ্ঞাসা করুন: বিষয়টি কি আমার প্রধান মূল্যবোধ এবং দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্যগুলোর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ?
- সুযোগের মূল্যায়ন করুন : তারপর, ভাবুন যে, বিষয়টি ছেড়ে দিলে আপনি সেই সময় ও শক্তি দিয়ে আর কী করতে পারতেন।
- উন্নতির সম্ভাবনা বিবেচনা করুন : শেষে নিজেকে জিজ্ঞাসা করুন: বিষয়টিতে এখনও কি উল্লেখযোগ্য উন্নতি বা শেখার সুযোগ আছে? আপনি কি এখনও উন্নতি করছেন, নাকি থেমে গেছেন?
মনে রাখবেন, উন্নতি সবসময় সরলরেখায় হয় না। কখনো কখনো, আমরা আমাদের “ফ্লুইড প্রোগ্রেস” ধারণায় শিখাই, আপনাকে সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য পরিবর্তন করতে হবে।
আমি জানি, হাল ছেড়ে দেওয়া কঠিন মনে হতে পারে। এতে অপরাধবোধে ভোগার ভয় থাকতে পারে। কিন্তু আমরা চাই আপনি হাল ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টিকে ইতিবাচক, কৌশলগত একটি সিদ্ধান্ত হিসেবে দেখুন। এটি হাল ছেড়ে দেওয়া নয় — বরং এটি আপনার সম্পদগুলোকে সেই জায়গায় পুনর্নিবেশ করার জন্য বেছে নেওয়া, যেখানে তা সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলবে।
এখন এটি বাস্তবে প্রয়োগ করার জন্য প্রস্তুত? আমাদের কৌশলগতভাবে পরিত্যাগের চ্যালেঞ্জটি গ্রহণ করুন:
- এই মাসে একটি জিনিস চিহ্নিত করুন- যা আপনি ছেড়ে দেবেন।
- একটি পরিকল্পনা তৈরি করুন কিভাবে সঠিকভাবে সেই জিনিসটি থেকে বেরিয়ে আসবেন।
- এর মাধ্যমে বের হয়ে আসা সম্পদগুলো (সময়, টাকা, অন্যান্য সম্পদ) কীভাবে পুনঃবিনিয়োগ করবেন তা নির্ধারণ করুন।
মনে রাখবেন, কৌশলগতভাবে হাল ছেড়ে দেওয়া নতুন সুযোগের জায়গা তৈরি করে। এটি দরজা বন্ধ করার নয়, বরং এমন নতুন দরজা খোলার বিষয় যা আপনার আসল লক্ষ্য ও মূল্যবোধের সাথে আরও ঘনিষ্ঠভাবে খাপ খাবে। যদি সঠিকভাবে করা হয়, সেক্ষেত্রে হাল ছেড়ে দেওয়া একটি দক্ষতা — যা আপনাকে অন্ধভাবে কোনো কাজ বা প্রকল্প চালিয়ে যাওয়ার চেয়ে অনেক দ্রুত সাফল্যের দিকে নিয়ে যেতে পারে।
তাহলে আপনি কোন বিষয়টি ছেড়ে দেবেন আপনার পরবর্তী বড় সাফল্যের জন্য জায়গা তৈরি করতে?