আজ যারা স্বীয় ক্ষেত্রে আলো ছড়াচ্ছেন, আপন মহিমায় উজ্জ্বল হয়ে আছেন, একদিনেই কিন্তু তারা এ পর্যায়ে আসেননি। ধীরে ধীরে বিভিন্ন প্রতিকূল অবস্থা মোকাবেলা করেই এ পর্যায়ে এসেছেন তারা। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে তাদের নেতৃত্বের গুণাবলী। আসলে সফলতার চূড়ায় পৌঁছতে হলে নেতৃত্বগুণের কোনো বিকল্প নেই।
নেতৃত্ব কী?
আসুন প্রথমেই জেনে নেই নেতৃত্ব বা লিডারশিপ সম্পর্কে। নেতৃত্ব বা লিডারশিপ হচ্ছে এমন একটা প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে কোনো একটা কাজকে সফলভাবে পূর্ণতা দেয়া হয়। এখানে কাজ সম্পন্ন হওয়াই মূল টার্গেট। কীভাবে হলো, কে নেতৃত্ব দিল, কে সামনে ছিল বা কে পেছনে ছিল তা লিডারশিপের বিবেচ্য বিষয় নয়।
নেতৃত্বের গুণাবলী
কোনো কাজে সফল হতে হলে বেশ কিছু গুণাবলী আপনার থাকা চাই। যেমন-
১. ধৈর্য
২.টিমওয়ার্ক
৩.টার্গেট ও অর্জনের প্রক্রিয়া
৪.আন্তরিকতা
৫.বিষয় সম্পর্কে ধারণা
৬.আত্মবিশ্বাস
৭.সততা
৮.সুন্দরভাবে উপস্থাপন
৯.সংশ্লিষ্ট সবপক্ষের (স্টেকহোলডার) যোগাযোগ
১০.সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা ইত্যাদি।
এসব গুণাবলীই মূলত নেতৃত্বের গুণাবলী।
এবার আসুন গুণগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চেষ্টা করি।
ধৈর্য
কোনো কাজ সফল করতে হলে অনেক মানুষের সাথে যোগাযোগ বা লেনদেন করতে হয়। এক্ষেত্রে সবাই ভালো হবে, সবার আচরণ আপনার ভালো লাগবে এমনটি আশা করা যায়না। কিন্তু সফল হতে হলে ধৈর্য ধরে সবার সাথে মিলে মিশে কাজটি সম্পন্ন করতে হবে।
টিমওয়ার্ক
একা একা অধিকাংশ কাজই সফলভাবে করা যায় না। কাজের ক্ষেত্রে অনেকের সহযোগিতা নিতে হয়। তাই টিমের সবার সাথে সদ্ভাব রেখে রেখে চলতে হবে। আবার সময়মতো সবার থেকে কাজ আদায় করে নিতে হবে।
টার্গেট ও পরিকল্পনা
নিজের লক্ষ্য সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকতে হবে। আমি কী করতে চাই? নিজেকে কোথায় দেখতে চাই? এ সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকলে সফল হওয়া কষ্টকর।
আমি কোন পদ্ধতিতে কাজ করবো। কীভাবে এগিয়ে যাব আগে থেকেই তা পরিষ্কারভাবে ঠিক করে নিতে হবে। অন্যথায় সফলতা মরিচিকাই থেকে যাবে।
আন্তরিকতা
আন্তরিকতা ছাড়া ভালোভাবে কাজ করা যায় না। মন থেকে অনুভব না করলে কোনো কিছুই সুন্দর হয়না। তাই কাজ সম্পর্কে এবং সংশ্লিষ্ট সবার ব্যাপারে আন্তরিক হওয়া আবশ্যক।
বিষয় সম্পর্কে ধারণা
যে কাজটি করতে হবে সে বিষয়ে স্বচ্ছ ধারণা থাকতে হবে। ভাসা ভাসা ধারণা নিয়ে কাজ করে সফল হওয়া যায় না।
আত্মবিশ্বাস
আত্মবিশ্বাস ছাড়া কোনো কাজেই সফলতা আশা করা যায়না। বলা হয় যে,আত্মবিশ্বাসের সাথে শুরু করা মানেই হল অর্ধেক কাজ করে ফেলা।
আত্মবিশ্বাস মানে নিজেকে চেনা। নিজের সৃজনশীলতার ওপর আস্থা রাখা। হীনমন্যতা দূর করা।
ফার্সিতে একটি প্রবাদ আছে-
‘সব জিনিসের মূল্য জানো কোনটা কত দামী,
নিজের মূল্যই জানো না তুমি এ কেমন পাগলামি?’।
সততা
সততা একজন মানুষের মূলধন হিসেবে বিবেচিত হয়। যে কোনো প্রতিষ্ঠিত মানুষকে প্রশ্ন করলেই জবাব আসবে- ‘সততাই আমাকে এই অবস্থানে এনেছে’। সৎ মানুষকে সবাই বিশ্বাস ও সম্মান করে। সফলতার জন্য সততার বিকল্প নেই।
সুন্দরভাবে উপস্থাপন
আপনার সহকর্মী, দায়িত্বশীল ও বন্ধুদের কাছে আপনার ইচ্ছা ও বক্তব্য সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে হবে। না হয় ভালো ফল আশা করা কঠিন। অনেক সময় সুন্দরভাবে উপস্থাপনার কারণে বেশ কঠিন কাজও খুব সহজে হয়ে যায়। এটি নেতৃত্বের অন্যতম প্রধান গুণ। খেয়াল করলে দেখবেন বিশ্বের অনেক নেতাই সুন্দরভাবে কথা বলতে পারতেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার কথাই ধরুন। তিনি কিন্তু ভাষণ দিয়েই বাজিমাত করেছেন। আমাদের দেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের ভাষণ এখনো অনুপ্রাণিত করে।
স্টেকহোলডারদের সাথে যোগাযোগ
কোনো কাজের একাধিক পক্ষ থাকতে পারে। কাজটি সুচারুরূপে সম্পন্ন করতে হলে সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করা দরকার। কারণ কোনো এক পক্ষের দুর্বলতার কারণে পুরো কাজটি ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে।
সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা
মনে রাখবেন, আপনার প্রতি সমাজের অনেক অবদান আছে। তাই সমাজের জন্য আপনার অনেক কিছু করার আছে। শুধু নিজের উন্নয়ন নয়, সামগ্রিকভাবে সমাজের উন্নয়নই হওয়া উচিত আমাদের লক্ষ্য।
উপরে যেসব গুণের কথা আলোচনা করা হয়েছে, সেগুলো নিজের মধ্যে আনতে পারলে আপনি হয়ে উঠবেন যোগ্য নেতা। সফলতা ছুটবে আপনার পেছনে। আপনিও হয়ে উঠবেন একজন সফল মানুষ।