নাদিম চৌধুরী
আমরা প্রত্যেকেই চাই বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন করতে। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে কীভাবে পৌঁছা যাবে বা কোন বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিলে লক্ষ্যে পৌছানো সহজ হবে তা অনেকেরই অজানা। অনেকে ভাবেন, আমি তো অনেক পরিশ্রম করি। তারপরও কেন লক্ষ্যে পৌঁছাতে ব্যর্থ হই? এর কারণ হচ্ছে- আমরা হয়তো অনেক সময় নিজের শক্তি ও সামর্থের কথা মাথায় না রেখে অথবা আবেগেই অনেক সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি। যা পরবর্তীতে পূরণ করা অনেকটা অসম্ভব হয়ে পড়ে। তাই জীবনের প্রতিটি সিদ্ধান্ত কিংবা লক্ষ্য অর্জনের জন্য দরকার সঠিক পরিকল্পনা ও পদক্ষেপ।
যেভাবে শুরু করবেন
যে সব শিক্ষার্থী বর্তমানে হাইস্কুলে পড়ছেন অথবা মাধ্যমিক পর্যায়ে আছেন তারা এখনই ঠিক করে নিন আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা। তাহলে পরবর্তীতে তা বাস্তবায়ন করা অনেকটা সহজ হবে। আর জীবনে হতে পারবেন সফল।
আর যারা ইতোমধ্যেই ওই পর্যায়টি পার করে এসেছেন তাদেরও দুশ্চিন্তার কোন কারণ নেই। কেননা আপনি যে কোন সময়ই আপনার লক্ষ্য ঠিক করে নিতে পারেন। আসুন বিষয়টি শুরু করা যাক।
– প্রথমে একটি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিন । যেমন- ধরুন আগামী দশ বছর পরে আপনি নিজেকে কোথায় দেখতে চান ও কোন অবস্থানে যেতে চান তা নির্ধারণ করে নিন।
– এরপর ওই দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনাকে ছোট ছোট অংশে অর্থ্যাৎ ছোট ছোট লক্ষ্যে ভাগ করে ফেলুন। যা কিনা আপনার চূড়ান্ত সফলতা আনতে সহায়তা করবে।
– সর্বশেষে যখন আপনার পরিকল্পনা চূড়ান্তভাবে গ্রহণ করে ফেলবেন, তারপর তা বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় অনুশীলন ও পরিশ্রম শুরু করে দিন।
প্রথম ধাপ
লক্ষ্য ঠিক করার জন্য একটি দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণের কথা আগেই বলেছি। তবে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করার ক্ষেত্রে কী কী বিষয় মাথায় রাখা প্রয়োজন তা এখন আলোচনা করছি।
ক. আপনি ভবিষ্যতে কোন ধরনের ক্যারিয়ার গড়তে চান তা প্রথমে ঠিক করে নিন। এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিষয়ে ক্যারিয়ার নিয়ে প্রথমে চিন্তাভাবনা করুন। সবগুলো পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ শেষে আপনার পছন্দ অনুযায়ী একটি ক্যারিয়ারকে বেছে নিন।
খ. ক্যারিয়ারের সাথে যেহেতু আর্থিক ব্যাপারটাও জড়িত তাই এটাও ভেবে দেখুন যে আপনার পছন্দের ক্যারিয়ার থেকে কী পরিমাণ আয় রোজগার করতে পারবেন।
গ. কাঙ্ক্ষিত ক্যারিয়ারের সাথে আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা সঙ্গতিপূর্ণ কিনা তা যাচাই করুন। অর্থ্যাৎ আপনি যে ক্যারিয়ারের প্রতি আগ্রহী সে অনুযায়ী আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা আছে কিনা। যদি থাকে তাহলে তার ধারাবাহিকতা ধরে রাখুন। আর যদি মনে করেন আপনার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌছানোর জন্য আপনার বর্তমান অবস্থান সন্তোষজনক নয় তাহলে ফলাফল ভালো করার জন্য পদক্ষেপ নিন।
ঘ. আমাদের দেশে ভবিষ্যৎ লক্ষ্য ঠিক করার ক্ষেত্রে পরিবার বেশ বড় ধরনের ভূমিকা পালন করে থাকে। অনেক সময় পরিবারের সিদ্ধান্তের বলি হতে হয় অনেককেই। অনেক সময় আপনার পছন্দের ক্যারিয়ার সম্পর্কে আপনার পরিবারের পুরোপুরি ধারণা নাও থাকতে পারে। সেজন্য আপনার পছন্দের ক্যারিয়ারের সম্ভাবনাগুলো পরিবারের সামনে সুন্দর ও যুক্তিসঙ্গতভাবে তুলে ধরুন। এতে আশা করা যায়, আপনি পরিবারের সমর্থন নিয়েই ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারবেন।
ঙ. চেষ্টা করুন এমন একটি ক্যারিয়ার বেছে নিতে যেখানে আপনার আগ্রহ আছে। যেখানে কাজ করে পাবেন আনন্দ।
দ্বিতীয় ধাপ
এ পর্যায়ে দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনাকে ছোট ছোট অংশে ভাগ করে ফেলুন। মনে করুন, আপনি ভবিষ্যতে ডাক্তার হতে চান। তাহলে প্রথম লক্ষ্য নির্ধারণ করুন যে, আপনি সব পরীক্ষাতে ভালো ফলাফল অর্জন করবেন। এরপর মেডিকেল পরীক্ষায় কীভাবে উত্তীর্ণ হওয়া যায় বা কী যোগ্যতা থাকা প্রয়োজন তা জেনে নিন। এবার সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নিন। ভর্তি পরীক্ষায় ভালো করার চেষ্টা করুন। সবকিছু ঠিকভাবে করলে আপনি হতে পারবেন ভবিষ্যতের একজন চিকিৎসক।
ছোট লক্ষ্যগুলো পূরণে নিচের বিষয়গুলোর দিকে লক্ষ্য রাখুন-
ক. প্রথমে দশ বছরের পরিকল্পনা গ্রহণ করুন। এরপর তা ভাগ করে তিন বছর অথবা পাঁচ বছর করে নিন। অর্থাৎ প্রথম তিন বা পাঁচ বছরের একটি লক্ষ্য নির্ধারণ করে সে অনুযায়ী কাজ করে যান।
খ. আপনার ব্যক্তিগত ডায়েরিতে পরিকল্পনাগুলো লিখে রাখুন। কিছুদিন পরপর নিজেকে যাচাই করুন আপনি পরিকল্পনা অনুযায়ী চলছেন কি না।
গ. মনে রাখবেন আপনার প্রতিদিনের কর্মকাণ্ডই আপনার ভবিষ্যৎ গড়ে দেবে। তাই সময়কে পূর্ণভাবে কাজে লাগানোর চেষ্টা করুন।
ঘ. নিজেকে সবসময় আপডেট রাখার চেষ্টা করুন।
ঙ. প্রয়োজনে নিজের পরিকল্পনাকে সামান্য পরিবর্তন করে নিতে পারেন। তবে কিছুদিন পরপর লক্ষ্য পরিবর্তন করা উচিৎ নয়। এতে সময়ের যেমন অপচয় হয়, তেমনি আপনি মনোসংযোগ হারাতে পারেন। যা পরবর্তী সময়ে আপনাকে হতাশাগ্রস্থ করে তুলতে পারে।
একটি লক্ষ্য ঠিক করে সে অনুযায়ী কাজ করলে আপনি অবশ্যই সফল হবেন। আর একটি গুরত্বপূর্ণ কথা হচ্ছে- কখনোই সময়ের অপচয় করবেন না । মনে রাখবেন ভবিষ্যৎ আপনার হাতেই। মনে বিশ্বাস রেখে এগিয়ে যান কাঙ্ক্ষিত মনজিলে।