মাশিয়াত তানিয়া : আমাকে দিয়ে আর কিচ্ছু হবে না। কেন আমি ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারলাম না? কেন আমার সম্পর্কটি টিকলো না? আমার জীবন অন্য সবার মতো সফল না কেন? ইত্যাদি ইত্যাদি…। আমাদের সবার জীবনেই এমন একটি সময় আসে, যখন আমরা এই ভাবনাগুলোর সম্মুখীন হই। জীবনের উঁচু-নিচু পথ পাড়ি দিতে গিয়ে ধৈর্য হারিয়ে ফেলি। যদিও প্রত্যেক সফল মানুষের জীবনের একটি অংশ জুড়ে রয়েছে ব্যর্থতা। কিন্তু তাদের সফলতার রহস্য হলো- প্রবল ধৈর্যের সাথে ইচ্ছা শক্তি। ধৈর্য না থাকলে দীর্ঘমেয়াদী কোনো কাজ করা সম্ভব না। আবেগ বা আত্মনিয়ন্ত্রণের উপায় হচ্ছে দীর্ঘ অনুশীলন। নিচের কৌশলগুলো সঠিকভাবে নিয়মিত পালন করলে আপনিও সহজেই আপনার মনকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।
আত্মনিয়ন্ত্রণের উপায় কী?
প্রথমেই, মেডিটেশন
নিজের মনকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে ধ্যান বা মেডিটেশন করা খুব উপকারী একটি বিষয়। যখন নেতিবাচক চিন্তাগুলো মনে আসে তখন মানসিক দৃঢ়তা কমে যায়। এই ধরনের চিন্তা মানসিক শক্তিকে দুর্বল করে দেয়। মানসিক শক্তি দুর্বল হয়ে গেলে আমাদের আত্মবিশ্বাস হারিয়ে যায়। আর আমরা জানি আত্মবিশ্বাস হারিয়ে গেলে কাজের অনুপ্রেরণা থাকে না। তখন কাজের উপর আমাদের অনিহা চলে আসে। কাজটি করতে আর আমাদের মন বসে না। ফলে কাজটি অসম্পূর্ণ থেকে যায়। আর আমরা সাফল্যের খুব কাছাকাছি এসেও ব্যর্থতা নিয়ে ঘরে ফিরি। কিন্তু নিয়মিত মেডিটেশনের অভ্যাস মনকে শান্ত করে এবং দৃঢ় রাখতে সাহায্য করে। আর মন ঠিক থাকলে অনুপ্রেরণার ঘাটতি থাকে না। তাই মনকে শান্ত রাখতে মেডিটেশন করুন। এটা আত্মনিয়ন্ত্রণের উপায়গুলোর মধ্যে অন্যতম।
দ্বিতীয়ত, শ্বাস-প্রশ্বাসের নিয়ন্ত্রণকারী ব্যায়াম
মনকে শিথিল রাখতে শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম ভীষণ কার্যকারী একটা মাধ্যম। নানা চাপের কারণে আমাদের মন প্রায়শই বিক্ষিপ্ত থাকে। এই চাপ হতে পারে আপনার সংসারের চাপ, পড়ার চাপ, কাজের চাপ ইত্যাদি। আর এ কারণে মাঝে মাঝে বেঁচে থাকার আনন্দটাই নষ্ট হয়ে যায়। আর চাপ নিয়ে কাজ করলে তা কখনই ভালো হয় না। তাই আপনার মন ভীষণ বিক্ষিপ্ত ও অস্থির থাকলে একে নিয়ন্ত্রণের জন্য শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করতে পারেন। এই ব্যায়াম করতে- প্রথমে গভীরভাবে শ্বাস নিন। কিছুক্ষণ আটকে রাখুন। এরপর ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়ুন। এভাবে কয়েকবার করুন। এই ব্যায়াম আপনাকে শিথিল করতে সাহায্য করবে। নেতিবাচক চিন্তা ও আবেগগুলো থামাতে সহযোগিতা করবে। এর ফলে আপনি কর্মক্ষেত্রে ভালো করতে পারবেন। জীবনকে আরও সুন্দর মনে হবে।
তৃতীয়ত, নিজের নেতিবাচক চিন্তার উৎস চিহ্নিত করুন
আমাদের মন বিক্ষিপ্ত হওয়ার মূল কারণ হচ্ছে- কোনো কাজ শুরু করার আগেই নানা ধরনের নেতিবাচক চিন্তা এসে যাওয়া। ধীরে ধীরে এসব চিন্তা আমাদের মধ্যে বাসা বাধা শুরু করে। তখনই আমাদের মন বিক্ষিপ্ত হয়ে যায়, বিচলিত হয়ে পড়ে। ফলে আমাদের অনুপ্রেরণা হারিয়ে যায়। আর বেলাশেষে সেই কাজ আমাদের দ্বারা হয়ে ওঠে না। আর উঠলেও ফলাফল আমাদের আশানুরূপ হয় না। তাই যে চিন্তাগুলো আপনাকে এলোমেলো করে দিচ্ছে, সেগুলো চিহ্নিত করুন। নেতিবাচক চিন্তাগুলো বারবার মনে এলে অকারণেই অস্থির হয়ে উঠবেন। তাই প্রথমে চিন্তার উৎসটা খুঁজে বের করুন। এরপর ভাবনাগুলোকে একেবারে থামিয়ে দিন। ইতিবাচক চিন্তা করা শুরু করুন। ভাবুন আপনার জীবনে ইতিবাচক কী কী দিক রয়েছে। এ ছাড়া ইতিবাচক বিষয়গুলোর একটি তালিকাও তৈরি করতে পারেন। নেতিবাচক চিন্তাগুলো যখন মাথায় আসবে, তখন ইতিবাচক চিন্তার সেই তালিকাটি দেখুন। তাতে করে আপনার মন শান্ত হবে।
চতুর্থত, মনকে ভিন্ন দিকে নিয়ে যান
এক্ষেত্রে মন খারাপ হওয়ার পরিবেশ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। কোনো কিছু খুব বেশি সমস্যার মনে হলে বা কষ্টদায়ক হলে, কিছু সময়ের জন্য বিষয়টিকে এড়িয়ে যান। অন্য কোনো কাজে মন দিন। তাতে করে আপমার মনের উপর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারবে না। ফলে আপনার মন আপনার নিয়ন্ত্রণেই থাকবে।
আরও কিছু বিষয় আছে – যা আমাদের মনকে নিয়ন্ত্রণ করে ধৈর্য শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। যেমন – ভালো সঙ্গীত শুনতে হবে, আশাবাদী হতে হবে, ভালো ঘুমাতে হবে। মানবিক চর্চায় নিজেকে নিয়োজিত রাখতে হবে। পছন্দের সিনেমা বা সিরিজ দেখতে পারেন। পজিটিভ মানুষদের সাথে মিশতে পারেন। নিজের কথা লিখে রাখুন ডায়েরিতে। শরীরের যত্ন নিন, বই পড়ুন, বাস্তব চিন্তায় থাকুন। কারো সাথে তুলনা করবেন না, নিজেকে সময় দিন, আপনার পছন্দের কোনো একটা সৃজনশীল কাজে যুক্ত হোন। দেখবেন নিজেই নিজেকে চিনতে পারবেন না।
সূত্র : কোরা ডটকম