বাংলাদেশের অর্থনীতি দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং এর সাথে সাথে বিভিন্ন পেশায় দক্ষ জনবলের চাহিদাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। শিক্ষা ও ক্যারিয়ার বিষয়ক জনপ্রিয় ম্যাগাজিন ক্যারিয়ার ইন্টেলিজেন্স-এর গবেষণা বিভাগ বিভিন্ন তথ্য ও উপাত্তের ভিত্তিতে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে। আগামী ১০ বছরে বাংলাদেশে যেসব পেশার কদর বাড়তে পারে সেগুলি হলো-
ভবিষ্যতে যেসব পেশার চাহিদা বাড়বে
প্রযুক্তি ক্ষেত্রে:
১. সফটওয়্যার ডেভেলপার: বাংলাদেশে তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি) খাত দ্রুত বর্ধনশীল এবং এর সাথে সাথে সফটওয়্যার ডেভেলপারদের চাহিদাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিভিন্ন প্রোগ্রামিং ভাষা, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, মোবাইল অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট, ডেটা সায়েন্স, এবং মেশিন লার্নিং এর জ্ঞান সম্পন্ন ডেভেলপারদের চাহিদা সবচেয়ে বেশি হবে।
২. ডেটা বিশ্লেষক: ডেটা বিশ্লেষক ডেটা থেকে মূল্যবান তথ্য বের করে ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করে। ডেটা বিশ্লেষণের জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতা সম্পন্ন জনবলের চাহিদা আগামী দিনগুলোতে আরও বৃদ্ধি পাবে।
৩. কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) বিশেষজ্ঞ: AI বিভিন্ন ক্ষেত্রে ক্রমবর্ধমানভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে এবং এর সাথে সাথে AI বিশেষজ্ঞদের চাহিদাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। AI অ্যালগরিদম ডেভেলপমেন্ট, মেশিন লার্নিং, এবং ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিং (NLP) এর জ্ঞান সম্পন্ন AI বিশেষজ্ঞদের চাহিদা সবচেয়ে বেশি হবে।
স্বাস্থ্যসেবা ক্ষেত্রে:
৪. ডাক্তার: বাংলাদেশে ডাক্তারদের চাহিদা সবসময়ই বেশি। বিশেষ করে, সার্জন, কার্ডিওলজিস্ট, অনকোলজিস্ট এবং নিউরোলজিস্টদের চাহিদা আগামী দিনগুলোতে আরও বৃদ্ধি পাবে।
৫. নার্স: নার্সরা রোগীদের যত্ন নেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশে নার্সদের চাহিদা সবসময়ই বেশি এবং আগামী দিনগুলোতেও এই চাহিদা বৃদ্ধি পাবে।
৬. ফিজিওথেরাপিস্ট: ফিজিওথেরাপিস্টরা আঘাতপ্রাপ্ত বা অসুস্থ ব্যক্তিদের পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে সহায়তা করে। বাংলাদেশে ফিজিওথেরাপিস্টদের চাহিদা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
শিক্ষা ক্ষেত্রে:
৭. শিক্ষক: শিক্ষকরা জাতির ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশে শিক্ষকদের চাহিদা সবসময়ই বেশি এবং আগামী দিনগুলোতেও এই চাহিদা বৃদ্ধি পাবে। বিশেষ করে, বিজ্ঞান, গণিত, এবং ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষকদের চাহিদা সবচেয়ে বেশি হবে।
৮. প্রযুক্তি-ভিত্তিক শিক্ষক:
ই-লার্নিং বিশেষজ্ঞ: ই-লার্নিং ক্রমশ জনপ্রিয় হচ্ছে এবং এর সাথে সাথে ই-লার্নিং বিশেষজ্ঞদের চাহিদাও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
শিক্ষা প্রযুক্তি (EdTech) বিশেষজ্ঞ: EdTech বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার করে শিক্ষাদানকে আরও কার্যকর করে তোলে। EdTech বিশেষজ্ঞদের চাহিদা আগামী দিনগুলোতে আরও বৃদ্ধি পাবে।
কম্পিউটার বিজ্ঞান শিক্ষক: তথ্যপ্রযুক্তির ক্রমবর্ধমান ব্যবহারের সাথে সাথে কম্পিউটার বিজ্ঞান শিক্ষকদের চাহিদাও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
৯. বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিক্ষক:
অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার (ASD) শিক্ষক: ASD-তে আক্রান্ত শিশুদের শেখানোর জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকদের চাহিদা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ইনক্লুসিভ শিক্ষক: বিভিন্ন ধরণের শেখার ধরণ এবং চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের একসাথে শেখানোর জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকদের চাহিদাও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
অন্যান্য ক্ষেত্রে:
১০. প্রকৌশলী: প্রকৌশলীরা বিভিন্ন ধরনের অবকাঠামো এবং প্রযুক্তি নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশের দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির সাথে সাথে প্রকৌশলীদের চাহিদাও বৃদ্ধি পাবে। বিশেষ করে, সিভিল, ইলেকট্রিক্যাল, এবং মেকানিক্যাল প্রকৌশলীদের চাহিদা সবচেয়ে বেশি হবে।
১১. উদ্যোক্তা: উদ্যোক্তারা নতুন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান তৈরি করে এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে। বাংলাদেশে উদ্যোক্তাদের চাহিদা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
১২. চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট (CA): CA-রা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের আর্থিক বিষয়গুলি পরিচালনা ও তদারকিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশে CA-দের চাহিদা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
১৩. আইনজীবী: আইনজীবীরা আইনি বিষয়ে পরামর্শ প্রদান করে এবং আইনি লড়াইয়ে সহায়তা করে। বাংলাদেশে আইনজীবীদের চাহিদা সবসময়ই বেশি।
উপসংহার:
বাংলাদেশের অর্থনীতি দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং এর সাথে সাথে বিভিন্ন পেশায় দক্ষ জনবলের চাহিদাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগামী ১০ বছরে বাংলাদেশে যেসব পেশার কদর বাড়তে পারে সেগুলির উপরে আলোচনা করা হয়েছে। এই পেশাগুলিতে দক্ষতা অর্জনকারী ব্যক্তিরা ভবিষ্যতে ভালো কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবেন।
কিছু দরকারী টিপস:
- আপনার আগ্রহ এবং দক্ষতার উপর ভিত্তি করে একটি পেশা বেছে নিন।
- ভবিষ্যতের চাহিদা সম্পর্কে জানতে গবেষণা করুন।
- প্রয়োজনীয় শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণ অর্জন করুন।
- আপনার দক্ষতা উন্নত করার জন্য ক্রমাগত চেষ্টা করুন।
মনে রাখবেন, ভালো কর্মসংস্থানের জন্য দক্ষতা অর্জন এবং নিজেকে প্রস্তুত রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।