আমরা প্রত্যেকেই জীবনের কিছু কিছু মুহূর্তে এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হই, যখন কিছু কঠিন সিদ্ধান্ত নিতেই হয়। তখন আমরা দ্বিধাদ্বন্দে ভুগি, যে সিদ্ধান্ত নিচ্ছি তা কি ঠিক হচ্ছে, নাকি ভুল। আর সিদ্ধান্ত যদি হয় ক্যারিয়ার বদলানোর মতো কঠিন বিষয়ে, তাহলে তা আমাদের ওপর বিপুল মানসিক চাপ সৃষ্টি করে।
কখনো কখনো মনে হয়, এই পেশা বা ক্যারিয়ার আমার জন্য না। কিন্তু এই পেশা হয়তো আপনার জন্য একসময় অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিল, ছিল আপনার জীবনের লক্ষ্য। তাই পেশা বদলানোর মতো বড় সিদ্ধান্তগুলো ভেবে-চিন্তে নেওয়া উচিত। তাহলে কখন বুঝবেন আপনার চাকরি বা পেশা বদলানোর সময় হয়ে গেছে? চলুন জেনে নেওয়া যাক সেই ৬টি মুহূর্তের ব্যাপারে।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত দুই বছরে অসংখ্য মানুষ স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়েছেন। এই চাকরি ছাড়ার বিষয়টি এত ব্যাপক আকারে হয়েছে যে এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘দ্য গ্রেট রেজিগনেশন’। বেশিরভাগ মানুষেরই চাকরি বদল বা ছাড়ার পেছনের কারণ ছিল, কোভিড মহামারির সময় তারা তাদের জীবনকে ভিন্ন আঙ্গিকে উপলব্ধি করতে পেরেছেন। কেউ কেউ আবার জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনতে চাকরি ছেড়েছেন। অনেকে আর্থিক লাভের কথা বিবেচনা করে পুরোনো পেশা বদলে ফেলেছেন। সময়ের সাথে সাথে মানুষের চিন্তা-ভাবনায় যেমন পরিবর্তন আসে, তেমনি কর্মজীবনের সিদ্ধান্তও বদলে যায়।
১. কাজ যখন আপনাকে আর উৎসাহ জোগাতে পারবে না
কর্মজীবনে আমরা পদোন্নতির জন্য নিজেদের উদ্দেশ্য অনুযায়ী সামনে এগিয়ে যাই। কিন্তু কর্মজীবনের একটা সময়ে এসে হয়তো আমাদের মনে হতে থাকে, আগের মতো আমাদের কাজের গতি নেই বা গতিবৃদ্ধি কমে গেছে। তখন আমাদের কাজের প্রতি উৎসাহ কমে যায়। আপনি যখন আপনার কর্মক্ষেত্রে এ ধরনের বিষয়গুলো লক্ষ করবেন, তখন প্রথমেই চাকরি ছেড়ে না দিয়ে তার কারণ খুঁজে বের করে তা সমাধানের চেষ্টা করতে পারেন। কিন্তু সেই কাজটি করার পরও যদি বর্তমান পেশার প্রতি আপনার অনীহা থেকে যায়, তাহলে বুঝতে হবে চাকরি ছেড়ে দেওয়ার সময় এসে গেছে।
২. যা অর্জন করতে চেয়েছিলেন, তা যদি অর্জন করে ফেলেন
কখনও কখনো এমন হয় যে আমরা কাজের গতি হারিয়ে ফেলি। কারণ, আমাদের যে লক্ষ্য ছিল, সেখানে পৌঁছে গেছি বলে মনে হতে থাকে। তাই লক্ষ্য পূরণ হলে আমরা অনেকসময় নতুন কোনো লক্ষ্য হাসিলের জন্য ছুটতে থাকি। তাই আপনার যদি মনে হতে থাকে কর্মক্ষেত্রে আপনার লক্ষ্য অর্জন হয়ে গেছে—এবং আপনি সামনে এগিয়ে যেতে চান, কিন্তু এখানে আপনার আর অর্জন করার মতো কোনো অবশিষ্ট নেই—তখন আপনার উচিত হবে চাকরিটি ছেড়ে দেওয়া বা অন্য কোনো পেশায় নিজেকে নিয়ে যাওয়া।
৩. কর্মক্ষেত্রে যখন নিজের কাজ এড়িয়ে যেতে চান
শুধুই যে ক্লান্তি থেকে কাজ করার প্রতি আমাদের অনীহা সৃষ্টি হয়, ব্যাপারটা এমন নয়। অনেকসময় আমরা আমাদের কর্মস্থল বা পেশায় অসন্তুষ্টিতে ভুগি। তখন আমরা কাজে গিয়েও কীভাবে কাজ না করে থাকা যায়, তার অজুহাত খুঁজতে থাকি। কর্মজীবনে যদি এই বিষয়টি একাধিকবার আপনার সাথে ঘটছে বলে উপলব্ধি করেন, তাহলে বুঝতে হবে এই পেশায় আপনি সন্তুষ্ট নন। তখন আপনার উচিত হবে নিজের আগ্রহের কোনো পেশা বেছে নেওয়া।
৪. কর্মক্ষেত্রে যদি ক্লান্তি, অবসাদগ্রস্ত অনুভব করতে থাকেন
কর্মক্ষেত্র মানেই যে শুধু গাধার মতো একটানা কাজ করে যাবেন, এমনটি নয়। কর্মক্ষেত্রেও আমাদের একটা কমফোর্টের জায়গা থাকতে হয়, যেন কখনো একঘেয়েমিতে আমাদের পেয়ে না বসে।
কাজ করতে গিয়ে যদি নিয়মিতই অস্বস্তি বোধ করেন বা পরদিন ফের কাজে যেতে হবে এটা ভেবে ক্লান্তি বোধ করতে থাকেন, তাহলে এটি আপনার কর্মজীবনকে আরও সংকুচিত করে তুলবে। তখন বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে হবে এবং চাকরি পরিবর্তন করে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।
৫. কাজ যখন আপনার চরিত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে
এমন অনেক পেশা আছে যেখানে উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য মিথ্যা বলা থেকে শুরু করে অনেক রকমের অনৈতিক কাজ করা হয়। এগুলো শুধু যে ব্যবসা বা কাজের ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক লাভ এনে দেবে তা নয়, এর প্রভাব আপনার ব্যক্তিগত জীবনে বয়ে আনতে পারে অনেক নেতিবাচক প্রভাব। তখন আপনার করা এই খারাপ কাজগুলো হয়তো একরকম অভ্যাসে পরিণত হবে। তাই যে কাজ করতে গেলে আপনার নৈতিক স্খলন ঘটে এমন পেশা বা কর্মক্ষেত্র থেকে এখনই বেরিয়ে আসা উচিত।
৬. অফিসের পরিবেশ যদি বৈরী হয়
সহকর্মী বা বস যদি কর্মক্ষেত্রে আপনার ওপর চিৎকার করে কথা বলা থেকে শুরু করে আপনাকে ব্যক্তিগতভাবে অপমান করে, তাহলে সেই পরিবেশ কখনোই কাজের জন্য উপযুক্ত হতে পারে না। এটি আপনার ওপর শুধু মানসিক চাপই সৃষ্টি করে না, আপনার ব্যাক্তিত্বকেও ছোট করে ফেলে। কর্মক্ষেত্রে যদি নিজেকে এই অবস্থানে দেখতে পান, তাহলে বুঝবেন সময় এসেছে চাকরি ছেড়ে দেওয়ার।
এগুলো ছাড়াও আরও অনেক কারণ থাকতে পারে চাকরি ছেড়ে দেওয়ার বা বদলে ফেলার পেছনে। কিন্তু তার আগে আপনাকে উপলব্ধি করতে হবে, আপনি আসলে কী চান বা আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী। তবে আপনাকে মনে রাখতে হবে পরিবর্তন সবসময় খারাপ হয় না। অনেক সময় এটি জীবনকে আরও সহজ করে সামনে এগিয়ে নিয়ে যায়। তাই পরিবর্তনে ভয় না পেয়ে নতুন উদ্যম নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য শক্ত মানসিকতা তৈরি করতে হবে।
সূত্র: হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ