ক্যারিয়ারে উত্থান-পতন একটি অনিবার্য বাস্তবতা। সমগতিতে কাঙ্খিত লক্ষ্যে অথবা ক্যারিয়ারের শীর্ষে পৌঁছেছেন এমন লোক পৃথিবীতে পাওয়া দায়। কিন্তু কেন এই উত্থান-পতন। এর পেছনে দায়ী কে? অনেক সময় প্রতিষ্ঠানের সামগ্রিক ব্যবস্থাপনা দায়ী হতে পারে এক্ষেত্রে। কিন্তু আপনি নিজেই দায়ী নন তো? একটু ভেবে দেখুন তো। হতে পারে নিজের কিছু আচরণ ও দৃষ্টিভঙ্গির কারণেই হয়তো নষ্ট হতে বসেছে আপনার ক্যারিয়ার। জেনে নিন এমন ৯টি আচরণের কথা।
১. অতিরিক্ত দায়িত্ব নেয়া
সাধ্যের অতিরিক্ত দায়িত্ব নেয়া, কিন্তু সব কাজ সম্পন্ন করতে না পারা। অনেকে আছেন, বস বা কর্তৃপক্ষের সুনজর পেতে অনেক কাজের দায়িত্ব নিয়ে নেন। কিন্তু অতিরিক্ত কাজের চাপে সব কাজ ভালোভাবে করতে পারেন না। অনেক সময় আবার কোনো কোনো কাজ অসম্পন্নও থেকে যায়।
বিষয়টি আপনার ক্যারিয়ারের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এতে আপনার ব্যাপারে ইতিবাচকের পরিবর্তে নেতিবাচক মনোভাব গড়ে উঠতে পারে আপনার দলনেতা বা কর্তৃপক্ষের।
২. পরিবর্তনে বাধা
পরিবর্তনে বাধা দেয়া এবং নতুন ধারণার সাথে খাপ খাইয়ে চলতে না পারা। পরিবর্তন যেকোনো প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি অপরিহার্য বিষয়। সময়ের সাথে খাপ খাইয়ে চলতে চাইলে ব্যবস্থাপনা বা ধারণায় পরিবর্তন আসতেই পারে।
এক্ষেত্রে পরিবর্তনে বাধা দেয়া বা নতুন ধারণাকে গ্রহণ করতে না পারলে আপনার ক্যারিয়ারে আসতে পারে দুর্যোগ। আপনি হয়ে পড়তে পারেন একঘরে।
৩. শুধু সমস্যা চিহ্নিত করা
সমাধানকারী না হয়ে সমস্যা চিহ্নিতকারী হওয়া। আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন, যারা শুধু সমস্যা নিয়ে কথা বলতে ভালোবাসেন। কীভাবে তা সমাধান করা যায় সে ব্যাপারে তাদের আগ্রহ নেই বললেই চলে। তারা সমস্যাগুলোকে নিজের ব্যর্থতার ক্ষেত্রে অযুহাত হিসেবে দাঁড় করান।
আপনার ভেতরে যদি এ প্রবণতা থাকে তাহলে এখনই সাবধান হোন। নচেৎ ক্যারিয়ারের বারোটা বাজতে পারে।
৪. শুধু বসকে জয়ের চেষ্টা
বসের মন জয় করলেও সহকর্মীদের মন জয় করার চেষ্টা না করা। অনেকে আছেন বসের মনোরঞ্জন ও তোষামোদিতেই অধিকাংশ সময় ব্যয় করেন। আর এ কাজ করতে গিয়ে নিজের টিমের সদস্য ও সহকর্মীদের ব্যাপারে থাকেন নিস্পৃহ। এঠা কোনোভাবেই ঠিক নয়।
কারণ আপনার যে কোনো সমস্যায় সহকর্মীরা যতটুকু এগিয়ে আসবে, বস বিভিন্ন বিষয় বিবেচনা করে ততটুকু না-ও করতে পারেন।
৫. বর্তমান ছেড়ে ভবিষ্যতের চিন্তা
বর্তমানের ওপর নজর না দিয়ে সব সময় ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকা। সারাক্ষণ ভবিষ্যতের চিন্তা না করে বর্তমানের কাজটুকু যথাযথভাবে সম্পন্ন করাই বুদ্ধিমানের কাজ। ভবিষ্যতের ব্যাপারে উদ্বিগ্ন হয়ে বর্তমান সময়ের কাজগুলোতে সামান্য দুর্বলতা আপনার ক্যারিয়ারকে সঙ্কটের মুখে ফেলে দিতে পারে।
সুতরাং বর্তমানের ওপর আগে নজর দিন। পরে ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবুন।
৬. নিজেকে নিরস উপস্থাপন
নিজেকে নিরস ও কঠিন হিসেবে উপস্থাপন করা। অনেকে নিজেকে কর্মব্যস্ত ও দায়িত্ববোধসম্পন্ন প্রমাণ করতে গিয়ে হালকা রসিকতার কথাও ভুলে যান। ফলে সহকর্মীদের থেকে ধীরে ধীরে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন তিনি।
৭. ব্যবস্থার পরিবর্তনে সাহসের অভাব
প্রচলিত ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে সাহস ও দৃঢ় বিশ্বাসের ঘাটতি থাকা। সময়ের সাথে সাথে প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থায়ও পরিবর্তন আনাটা জরুরি। কিন্তু অনেকে সে সাহস পান না। ফলে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়েন তিনি ও তার প্রতিষ্ঠান। স্বভাবতই তার প্রভাব পড়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ক্যারিয়ারে।
৮. শুধুই বর্তমান
পদোন্নতি পেলে আপনি কী করবেন, সে পরিকল্পনা করতে ভুলে যাওয়া। অনেকে আবার বর্তমান নিয়ে এত ব্যস্ত থাকেন যে, ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবার ফুরসত নেই। ফলে তার পদোন্নতি হলে বা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য কোনো দায়িত্ব পেলে সময়ের সদ্ব্যবহার করতে পারেন। তাই এ বিষয়ে আগেই ভেবে রাখা বুদ্ধিমানের কাজ।
৯. আত্মপ্রসাদ
এটি আপনার উন্নতি বন্ধ করে দেবে। নিজের কাজে খুব বেশি সন্তুষ্ট থাকবেন না। অথবা অন্যের প্রশংসায় বিগলিত হয়ে নিজেকে খুব বড় ভাববেন না। বরং সময়ের সাথে সাথে নিজেকে আপডেট করুন। আত্মসমালোচনা করে নিজের দুর্বলতাগুলো বের করে তা সংশোধন করুন।