মো: বাকীবিল্লাহ : এক লোক চাকরির ইন্টারভিউতে দিতে গেছেন। চাকরিদাতা প্রশ্ন করলেন- কোন বিষয়টিকে আপনার খারাপ দিক বলে মনে করেন?
লোকটি বলল – ‘আমি সম্ভবত খুব বেশি সৎ’। চাকরিদাতা বললেন – ‘এটা কোনো খারাপ বিষয় না। আমি মনে করি – সৎ হওয়া একটি ভালো গুণ। লোকটি উত্তর দিল – ‘আপনি কী মনে করেন, তাতে আমার কিছু যায় আসে না।
হ্যাঁ, স্বাভাবিকভাবেই লোকটির আর ক্যারিয়ার শুরু করা হয়নি এবং প্রথমেই ব্যর্থ হয়েছিলেন। এখানে আরো কিছু মজার কথা-বার্তা উল্লেখ করা হলো, যাদের ক্যারিয়ার শুরু করাই হয়নি।
১. ‘টিম ওয়ার্ক খুবই গুরুত্বপূর্ণ; কেননা এটা অন্যকে দোষারোপ করার ক্ষেত্রে সাহায্য করে’।
২. ‘আমি মাল্টিটাস্কিং-এ খুবই ভালো। আমি সময় নষ্ট করতে পারি, অকর্মা হতে
পারি। একই সাথে সবকিছুতে দীর্ঘসূত্রিতা করতে পারি’।
৩. আমার বার্ষিক রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে- আমার
নাকি কাজের প্রতি তীব্র উৎসাহ উদ্দীপনার অভাব। মনে হয় কর্তৃপক্ষ আমার চিজ বার্গার
ও ফ্রেন্সফ্রাই খাওয়া দেখেননি।
কী বুঝলেন? এমনটা যদি আপনার দর্শন হয়, তবে হয়তো খুব শিগগিরই আপনার বস বলবেন – ‘আমি সবসময় ম্যানেজারকে বলি, আমাকে কখনো বস ভাববে না। বরং একজন বন্ধু ভাবুন, যিনি আপনাকে বরখাস্ত করতে পারে।
যে কাজগুলো করলে মানুষ সাধারণত ক্যারিয়ারে ব্যর্থ হয় এমন কিছু বিষয় এখানে আলোচনা করা হলো। আপনি যদি সফল হতে চান, তবে নিশ্চিত করুন যে সচেতন বা অবচেতনভাবে কাজগুলো আপনি করছেন কি-না।
১. সবাইকে নিজের ক্যারিয়ারের জন্য হুমকি ভাবা
নিজেকে অপরিহার্য করে তুলুন। তাহলে আপনার চাকরি বা পোস্ট নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। আপনি নিশ্চয়ই একই পোস্টে আজীবন থাকতে চাইবেন না। ঠিক তেমনিভাবে আপনার নিচের পোস্টেরও কেউ হয়তো পদোন্নতির জন্য চেষ্টা করছে। সেক্ষেত্রে তাকে প্রতিপক্ষ ভাবার কারণ নেই। আপনি যদি একটি পদকে আঁকড়ে থাকেন, তাহলে আপনার সামনে আসা অন্য সম্ভাবনাগুলোকে কাজে লাগাতে পারবেন না। আপনি যদি পদোন্নতি চান, তবে আপনাকে বর্তমান পদ ছাড়তেই হবে। সুতরাং আপনি নিচের কাউকে আপনার অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান শেয়ারের মাধ্যমে দক্ষ করে তুলুন। যাতে আপনার পদে তাকে বসানো যায়। তাহলেই আপনার পদোন্নতি তরান্বিত হবে অথবা অন্য কোনো সুযোগের দ্বার খুলে যাবে।
নেতৃত্ব একটি পূর্ণকালীন কাজ। একজন ভালো নেতা ভালো অনুসারী না বানিয়ে বরং ভালো নেতা তৈরি করেন।
২. সবসময় কাজ ও ব্যক্তিজীবনের ভারসাম্য
ধরুন, আপনি দুই পায়ে সবসময় সমান ভর দিয়ে থাকতে চাচ্ছেন। এভাবে কি হাঁটা সম্ভব? হাঁটতে চাইলে আপনাকে একপায়ে ভর দিয়ে অন্য পা সামনে এগিয়ে দিতে হবে। একই সাথে দুই পা সামনে দিয়ে হাঁটার সুযোগ নেই। ক্যারিয়ারের ক্ষেত্রেও বিষয়টি একই। সবমসয় কাজ ও জীবনের ভারসাম্য রক্ষা করা যাবে না। সফল হতে চাইলে কখনো পেশায় বেশি মনযোগ দিতে হবে। আবার কখনো ব্যক্তিজীবনে।
ক্যারিয়ারে ভালো করতে চাইলে আপনাকে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। প্রচুর জানতে হবে। বিভিন্ন সভা, প্রশিক্ষণ ও সেমিনারে অংশ নিতে হবে। সেক্ষেত্রে পারিবারিক জীবনে কিছুটা প্রভাব পড়বেই। এটা অন্যভাবে পুষিয়ে নিতে হবে। তাই পেশা ও ব্যক্তিজীবনে ভারসাম্য নয়, সম্প্রীতি বা সদ্ভাব প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করুন।
৩. প্রশিক্ষণ ও সেমিনারকে সময়ের অপচয় মনে করা
‘আমাকে সেমিনারে অংশ নিতে হবে না। কী বলবে তা সবই জানি। এটা আমার সময়ের অপচয়’।–এ ধরনের কথা চাকরিজীবীদের অনেকেই বলে থাকেন। ভাবুন তো..। যিনি এ ধরনের কথা বলেন – তিনি ইতোমধ্যেই নিজের পদত্যাগ চূড়ান্ত করে ফেলেছেন। কারণ তিনি আর প্রতিষ্ঠানের সবার সাথে ভালোভাবে মিলেমিশে কাজ করতে পারছেন না।
আবার অনেকে বলেন- ‘এখানে নতুন কিছু নেই। সবই আগে শুনেছি’। হতে পারে আগে আপনি শুনেছেন, পড়েছেন বা জেনেছেন। কিন্তু আপনি এখনো সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য সময়, শক্তি ও মনযোগ দেননি। সেকারণে বিষয়গুলো এখনও নতুনই থেকে গেছে। সুতরাং সভা সেমিনারে অংশ নিন।নতুনভাবে উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে কাজে নামুন।
৪. অফিস পলিটিকসে জড়ানো
আপনি জনপ্রিয় হতে চান। আপনি টিম মেম্বার ও অধীনস্তদের মনযোগ পেতে চান। তাই আপনার বস ও অফিসের কর্তা ব্যক্তিদের নতুন নতুন সংবাদ বা গল্প হাজির করেন প্রতিনিয়ত। এটার অর্থ কী- জানেন? এর মানে হচ্ছে- আপনি অলস। আপনি আপনার কাজকে অর্থবহ করতে পারছেন না। আপনার অনেক সময় রয়েছে- যা আপনি অফিসের বিভিন্ন নাটক দেখে ও তার বর্ণনা দিয়ে ব্যয় করছেন। এর চেয়ে বরং সময়টুকু আপনার ব্যক্তিগত উন্নয়ন ও পেশাগত লক্ষ্য অর্জনের কাজে ব্যয় করুন। শুধু শুধু সময় নষ্ট করে নিজেকে সমস্যায় জড়াবেন না।
এরকম আরো অনেক কাজ আছে, যা আপনাকে নিশ্চিত ব্যর্থতার দিকে এগিয়ে নিচ্ছে। আপনি যদি ব্যর্থদের তালিকায় নিজেকে দেখতে না চান, তাহলে পেশাদারিত্ব বজায় রাখুন।কাজেকর্মে পেশাদার হোন। নিজের ক্যারিয়ার ও পেশাকে গুরুত্ব দিন। সফল হোন। আপনার সফলতা কামনা করছি।
The Philippine Star