দর্শকদের কাছে তার পরিচিতিটা অভিনেত্রী হিসেবে। তবে মিডিয়া সংশ্লিষ্ট আরো কিছু কাজের সাথে সম্পৃক্ত তানিয়া আহমেদ। শুধু সম্পৃক্ত বললে, কম বলা হবে। কেননা খুব সফলতার সাথেই ওই ধাপগুলো অতিক্রম করেছেন তিনি। কিন্তু কীভাবে তা নিয়েই কথা বলেছেন তিনি। ক্যারিয়ার গঠনে করণীয় বিষয়ে কথা বলেছেন ক্যারিয়ার ইনটেলিজেন্সের সাথে।
শৈশব কাটিয়েছেন কোথায়?
– ঢাকার ওয়ারিতে।
তখনকার কোন স্মৃতিটা আপনাকে সবচেয়ে বেশি আনন্দিত করে?
– বাবা মায়ের শাসন। আমার মনে হয় এটি যে কারো কাছেই প্রিয় স্মৃতি। বিশেষ করে ছোট বাচ্চাটি যখন নিজে বাবা অথবা মা হবে তখন এ স্মৃতিটাই সবচেয়ে বেশি মনে পড়বে। আর এতে শিক্ষামূলক অনেক কিছুই থাকে যা প্রতিনিয়ত আমাদের বাস্তব জীবনে কাজে লাগে।
পড়াশোনা করেছেন কোথায়?
– ১৯৮৭ সালে উদয়ন স্কুল থেকে এসএসসি পাশ করার পর ইন্টারমিডিয়েট দিয়েছি ঢাকা মহিলা কলেজ থেকে। অনার্স করেছি জগন্নাথ থেকে।
ছোট বেলা কী হতে চেয়েছিলেন?
– শিক্ষক।
কেন?
– যখন মায়ের হাত ধরে স্কুলে যাই। তখনই ক্লাসে স্যাররা যেভাবে ডিরেকশন দিতেন সেটা ফলো করতাম। যখন একটু বড় হয়েছি তখন আশপাশের ছোট ছোট ছেলে মেয়েদেরকে নিয়ে এসে পড়াতে বসতাম। এছাড়া ক্লাসের ক্যাপ্টেনও ছিলাম অনেক দিন। মূলত এসব থেকেই শিক্ষক হওয়ার বাসনাটা মনে জাগ্রত হয়।
কিন্তু পরবর্তী সময়ে তো আপনাকে শিক্ষক হিসেবে দেখা যায়নি?
– দেখা যায়নি কথাটি ঠিক নয়। মূলত আমি প্রফেশন শুরু করি কোরিওগ্রাফি দিয়ে। এখন বাংলাদেশে যারা ভালো কোরিওগ্রাফি করছেন তার মধ্যে অনেকেই আমার ছাত্র-ছাত্রী। এই জায়গাটিতে যে তাদেরকে নিয়ে যেতে পেরেছি এটাই শিক্ষক হিসেবে আমার সার্থকতা।
মিডিয়ার সাথে যুক্ত হলেন কীভাবে?
– ১৯৯১ সালে মডেলিং এর মাধ্যমে আমার মিডিয়াতে আগমন। তবে নাটকে প্রথম অভিনয় করেছি ১৯৯৫ সালে। ফরিয়া হোসেনের রচনায় নাটকটি পরিচালনা করেছিলেন অরুণ চৌধুরী। ‘সম্পর্ক’ নামের এ নাটকটিতে আমার বিপরীতে ছিলেন জাহিদ হাসান।
প্রথম পেশা হিসেবে কী বেছে নিয়েছিলেন?
– প্রফেশনটা শুরু হয়েছিল কোরিওগ্রাফি দিয়ে। সেটা ১৯৯৩ সালের কথা, পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে মডেলিং করতাম। এর মধ্যে একদিন পরিচয় হয় বিবি রাসেলের সাথে। তিনিই একদিন তার সাথে কাজ করার অফার করেন। কাজ করতে গিয়ে পরিচয় হয় মৌ, পল্লব, ও ফয়সাল ভাইয়ের সাথে। একদিন বিবি রাসেল অসুস্থ হয়ে গেলে একটি প্রজেক্ট বাতিল করার চিন্তা করি আমরা। কিন্তু ফয়সাল ভাই বললেন এটা আমরা নিজেরাই করবো। ব্যাস, সাহস নিয়ে করে ফেললাম। এর পর থেকে এটা আমার পেশা হয়ে গিয়েছিল।
আজকের অবস্থানে আসতে কোন জিনিসটি আপনাকে বেশি অনুপ্রাণিত করেছে?
– নিজের ইচ্ছা ও পারিবারিক সাপোর্ট। আমার মনে হয় প্রত্যেকের জীবনেই ভালো পর্যায়ে যাবার জন্য বিষয় দু’টি খুব বেশি দরকার।
বর্তমান ক্যারিয়ার নিয়ে আপনি কতটুকু সস্তুষ্ট?
– আমি ভাগ্যে বিশ্বাসী। আমার মনে হয়, কে কী করবে তা বিধাতা অনেক আগেই নির্ধারণ করে রেখেছেন। তার মানে এই নয় যে, কিছু না করেই আমি ভাগ্যে কী ঘটে সেটা দেখার আশায় বসে থাকব। আমি বলতে চাচ্ছি, কোনো কিছু করার লক্ষ্য স্থির করে, সেই কাজের জন্য পরিশ্রম করতে হবে। এরপর ভাগ্যটাকে সামনে নিয়ে আসতে হবে। এখন যদি জিজ্ঞাসা করা হয়, ভাগ্যের প্রতি আমার অসন্তুষ্টি আছে কিনা? তবে আমি এক বাক্যে উত্তর দেব, না।
কাঙ্ক্ষিত ক্যারিয়ার অর্জনে তরুণদের কী করা উচিত?
– এক্ষেত্রে আমি তিনটি জিনিসের কথা বলব। প্রথমত: পেশাদারিত্বটা খুব ভালোভাবেই থাকতে হবে। দ্বিতীয়ত: ডিবুশন থাকতে হবে। তৃতীয়ত: নিজের প্রতি সম্মানবোধ থাকতে হবে। মূলত এ তিনটি জিনিস যার মধ্যে থাকবে তাকে ক্যারিয়ার নিয়ে কোনো প্রবলেমে পড়তে হবে না। এক্ষেত্রে অভিভাবকদের একটি কথা বলবো। সেটি হলো, ‘সব সময় দেখতে হবে বাচ্চাদের আগ্রহ কোন দিকে। আগ্রহের বিষয়কেই ক্যারিয়ার হিসেবে বেছে নিতে পরামর্শ দেয়া উচিত। মনে রাখতে হবে, কোনো কিছু চাপিয়ে দিয়ে সুন্দর ক্যারিয়ার গড়ানো সম্ভব নয়।
পশ্চিমা দেশগুলোর সাথে আমাদের দেশের তরুণদের কী পার্থক্য দেখেছেন?
– পশ্চিমাদের চেয়ে আমাদের দেশের তরুণরা অনেক বেশি জানে। বিশেষ করে রেস্পেক্টের জায়গাটা বিবেচনা করলে এমনটিই মনে হয় আমার। বিষয়টা আরো স্পষ্ট হওয়া যাবে পশ্চিমাদের সমাজ ব্যবস্থার দিকে তাকালে। ১৮ বছর বয়সে তাদেরকে পরিবার থেকে স্বাধীন করে দেয়া হয়। অথচ আমার মনে হয় ওই বয়সে মানুষ সবচেয়ে বেশি সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগে। এতে করে অনেকে মানসিক বিকারগ্রস্থ হয়ে পরে। এছাড়া বাচ্চাদেরকে তার অভিভাকরা মারতে পারবেন না। অথচ বাস্তবতা কী বলে? অন্যায় ছাড়া কখনো পিতা মাতা তার সন্তানের গায়ে হাত তোলে? কিন্তু ওই সমাজ ব্যবস্থায় বাবা-মা সন্তানকে মারলে ফোন করে পুলিশকে খবর দেয়। যা আমার কাছে খুব বাজে একটি কাজ বলে মনে হয়। তাছাড়া আমার মনে হয়, যে সন্তান বাবা মার মার খায়নি, তার অনেক কিছুই অজানা থাকে। কারণ আদর করে সব কিছু শেখানো যায় না।
পারিবারিক জীবন নিয়ে বলুন?
– বাবা মায়ের এক ছেলে এক মেয়ের মধ্যে আমি বড়। ১৯৯৮ সালে আমার বিয়ে হয় এসআই টুটুলের সাথে। এখন আমি দুই সন্তানের জননী। আমার বাচ্চাদেরকে যদি জিজ্ঞাসা করা হয় তোমরা কয় ভাই, তবে ওরা উত্তর দেয় আমরা ১২ ভাই। কারণ চাচাত ফুফাত মিলে ওরা ১২ জন। এটা সম্ভব হয়েছে যৌথ পরিবার থাকার কারণেই।
টুটুল ভাইয়ের সাথে পরিচয় হয়েছিল কীভাবে?
– আমি এলআরবি’র খুব ভক্ত ছিলাম। আর বাচ্চু ভাই আমাকে ছোট বোনের মত দেখতেন। তারলেন গিটারিস্ট ছিল টুটুল। অনেক আগে থেকেই তার সাথে পরিচয় ছিল। তবে ৯৮ সালে আমেরিকায় একটি শো করতে গিয়ে সে আমাকে বিয়ের প্রস্তাব করে। এইতো।
সাক্ষাৎকার গ্রহণ
আলমগীর কবির
প্রতিবেদক, ক্যারিয়ার ইনটেলিজেন্স