দৈনন্দিন জীবন পরিচালনার জন্য আমাদের যেসব দক্ষতা দরকার সেগুলোই হচ্ছে জীবনদক্ষতা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) জীবন দক্ষতাকে “অভিযোজিত এবং ইতিবাচক আচরণের ক্ষমতা’ হিসাবে সংজ্ঞায়িত করে। যা মানুষকে দৈনন্দিন জীবনের চাহিদা এবং চ্যালেঞ্জগুলিকে কার্যকরভাবে মোকাবেলা করতে সক্ষম করে।
WHO দ্বারা নির্বাচিত মূল জীবন দক্ষতার মধ্যে রয়েছে-
১. যোগাযোগের দক্ষতা (Communication Skill)
নিজেকে স্পষ্ট ও কার্যকরভাবে প্রকাশ করা, সক্রিয়ভাবে শোনা এবং অমৌখিক যোগাযোগের ব্যাখ্যা করতে পারা যোগাযোগ দক্ষতার অন্তর্ভুক্ত।
২. সিদ্ধান্ত গ্রহণের দক্ষতা (Decision Making Skill)
এতে তথ্য বিশ্লেষণ, অপশন বা বিকল্পগুলোকে মূল্যায়ন এবং কোনো বিষয়ে জেনেশুনে পছন্দ করা জড়িত।
৩. সমস্যা-সমাধানের দক্ষতা (Problem Solving Skill)
এর মধ্যে রয়েছে সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধান তৈরি এবং সেই সমাধানগুলির কার্যকারিতা মূল্যায়ন করার ক্ষমতা।
৪. ক্রিটিকাল থিংকিং স্কিল (Critical Thinking Skill)
তথ্য, আর্গুমেন্ট এবং ধারণাগুলিকে যুক্তিযুক্ত ও পদ্ধতিগতভাবে বিশ্লেষণ ও মূল্যায়ন করতে পারাই ক্রিটিকাল থিংকিং।
৫. সৃজনশীল চিন্তার দক্ষতা (Creative Thinking Skill)
বৃত্ত বা গণ্ডির বাইরে চিন্তা করতে পারা, নতুন আইডিয়া ও উদ্ভাবনী সমাধান খুঁজে বের করতে পারা ইত্যাদি।
৬. আত্মসচেতনতা দক্ষতা (Self-Awareness Skill)
নিজের আবেগ, মূল্যবোধ ও বিশ্বাসকে চিনতে পারা এবং এগুলো কীভাবে একজনের আচরণকে প্রভাবিত করে তা বোঝার ক্ষমতা।
৭. সহানুভূতি দক্ষতা (Empathy)
অন্যান্য মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি ও অনুভূতি বোঝা, সম্মান করা এবং তাদের সাথে কার্যকরভাবে যোগাযোগ করতে পারা।
৮. মোকাবিলা করার দক্ষতা (Coping)
এর মধ্যে স্ট্রেস চাপ ব্যবস্থাপনা, চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা এবং পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মানিয়ে নেওয়া জড়িত।
৯. আন্তঃব্যক্তিক দক্ষতা (Interpersonal Skill)
অন্যদের সাথে ইতিবাচক সম্পর্ক গড়ে তোলা ও বজায় রাখা এবং একটি দল বা গ্রুপে কার্যকরভাবে কাজ করা।
১০. নেতৃত্বের দক্ষতা (Leadership Skill)
অন্যদের অনুপ্রাণিত করা ও প্রেষণা দেয়া এবং একটি ভিশনকে সামনে রেখে দল বা সম্প্রদায়ের কল্যাণে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা।
স্কুলে শিক্ষার্থীদের যেভাবে জীবন দক্ষতা শেখানো যায়
বাংলাদেশে স্কুলের শিক্ষার্থীদের জীবন দক্ষতা শেখানো বিভিন্ন উপায়ে করা যেতে পারে। এখানে কিছু প্রস্তাবনা:
ক. পাঠ্যক্রমের মধ্যে জীবন দক্ষতা অন্তর্ভুক্তি
বিদ্যমান বিষয় যেমন ভাষা, গণিত, বিজ্ঞান ও সামাজিক অধ্যয়নের মধ্যে জীবন-দক্ষতা অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ভাষা ক্লাসে, শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন বিষয়ে উপস্থাপনা বা বিতর্কের মাধ্যমে যোগাযোগ দক্ষতা অনুশীলনের সুযোগ দেওয়া যেতে পারে।
খ. খেলা ও অ্যাকটিভিটির ব্যবহার
খেলা ও অ্যাকটিভিটি আকর্ষণীয় উপায়ে জীবন দক্ষতা শেখানোর জন্য ব্যবহার করা যায়। উদাহরণস্বরূপ, “রোলপ্লে” এর মতো একটি খেলা যোগাযোগ ও সহানুভূতি শেখানোর জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।
গ. অভিজ্ঞতামূলক শিক্ষার সুযোগ প্রদান
শিক্ষার্থীরা হাতে-কলমে অভিজ্ঞতার মাধ্যমে জীবন দক্ষতা শিখতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ছাত্র-ছাত্রীরা বিভিন্ন গ্রুপ কার্যক্রমে পছন্দ করতে দেয়ার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণের দক্ষতা অনুশীলন করার সুযোগ পেতে পারে।
ঘ. সহায়ক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার পরিবেশ
একটি সহায়ক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার পরিবেশ শিক্ষার্থীদের সহানুভূতি, আত্ম-সচেতনতা ও আন্তঃব্যক্তিক দক্ষতার মতো সামাজিক ও মানসিক দক্ষতা বিকাশে সহায়তা করতে পারে।
ঙ. শিক্ষকদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা
কীভাবে কার্যকরভাবে জীবন দক্ষতা শেখানো যায় সে সম্পর্কে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া দরকার। পেশাগত উন্নয়নের সুযোগ শিক্ষকদের নতুন শিক্ষণ কৌশল শিখতে এবং শিক্ষার্থীদেরকে মূল্যায়ন ও ফিডব্যাক প্রদানের দক্ষতা বিকাশে সহায়তা করতে পারে।
চ. পিতামাতা ও জনগণকে জড়িত করা
জীবনের দক্ষতা শেখানোর ক্ষেত্রে পিতামাতা ও স্থানীয় জনগণকে জড়িত করলে শিক্ষার্থীদের বাস্তব জীবনের পরিস্থিতিতে এই দক্ষতাগুলি অনুশীলন করার জন্য একটি সহায়ক পরিবেশ তৈরি করতে পারে।
এই কৌশলগুলি বাস্তবায়নের মাধ্যমে, বাংলাদেশের প্রাথমিক স্তরের স্কুলগুলি কার্যকরভাবে তাদের শিক্ষার্থীদের জীবন দক্ষতা শেখাতে পারে। শিক্ষার্থীরাও ব্যক্তিগত ও শিক্ষাগত জীবনে সফল হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো আত্মস্থ করতে পারে।