চাকরির গোপন বাজার কী? চাকরি খুঁজতে এটি আপনাকে কিভাবে সাহায্য করতে পারে?
চাকরির গোপন বাজার একটি টার্ম বা শব্দ, যা দিয়ে এমন সব চাকরিকে বোঝানো হয়, যার জন্য কোনো অনলাইন বা অফলাইনে কোনো বিজ্ঞাপন দেয়া হয় না।
নিয়োগকর্তারা বিভিন্ন কারণেই বিজ্ঞাপন দিতে না পারেন। যেমন- তারা বিজ্ঞাপন খরচ বাঁচাতে চাচ্ছেন, অথবা তারা বর্তমান কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সুপারিশের মাধ্যমে প্রার্থী পেতে চাচ্ছেন।
এই চাকরির বাজারটি ’গোপন’ হতে পারে। তবে এই চাকরিগুলোর খোঁজ পাওয়া আপনার পক্ষে সম্ভব। এমনকি নিয়মিত চ্যানেলের চেয়ে গোপন মার্কেট থেকে চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি হতে পারে। চাকরি খোঁজার প্রচলিত পদ্ধতির চেয়ে নেটওয়ার্কিংয়ের মাধ্যমে অনেক বেশি কাজ পাওয়া যায়।
২০১৯ সালে জবভাইটের করা এক জরিপে দেখা গেছে- বেশিরভাগ প্রার্থী চাকরির জন্য জব সাইটে আবেদন করলেও ৩৫ শতাংশ চাকরি পেয়েছেন স্যোশাল মিডিয়ায় করা পোস্ট থেকে। ৫০ শতাংশ চাকরির ব্যাপারে শুনেছেন বন্ধুদের থেকে। আর ৩৭ শতাংশ জানিয়েছেন, তারা চাকরির খবর জেনেছেন প্রফেশনাল নেটওয়ার্ক থেকে।
কেন চাকরিদাতারা চাকরির গোপন বাজার ব্যবহার করেন?
অনেক নিয়োগকর্তার চাকরির এই গোপন বাজার ব্যবহার করেন। কারণ তারা অনলাইন বা অফলাইন আবেদনের দীর্ঘ সময় ও ব্যয়বহুল প্রক্রিয়া এড়াতে চান। বিজ্ঞাপন দিয়ে লোক বাছাই করতে আবেদনপত্র গ্রহণ, বাছাই, লিখিত পরীক্ষা, সাক্ষাৎকার ইত্যাদি একটি বিশাল প্রক্রিয়া। খরচও নেহায়েত কম নয়।
পরিবর্তে তারা বর্তমান কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রেফারেন্সে কর্মী বাছাই করতে পারেন খুব সহজেই। খরচও নেই বললেই চলে।
কিছু প্রতিষ্ঠান আবার তাদের লোক নেয়ার বিষয়টি যতটা সম্ভব নীরবে করতে চান। তাই তারা অনলাইন বা প্রিন্ট মিডিয়ায় বিজ্ঞাপনের বিষয়টি এড়িয়ে চলেন। ধরুন- কোনো প্রতিষ্ঠান তাদের একটি শাখা খুলবে, বিষয়টি প্রতিদ্বন্দ্বীদের এখনই জানাতে চাচ্ছে না। সেক্ষেত্রে তারা বর্তমান কর্মকর্তাদের সোর্সেই লোক বাছাই করতে চেষ্টা করেন।
কোম্পানি সাধারণ বর্তমানদের থেকে ভালো মানের প্রার্থী পেতে পছন্দ করে। প্রতিষ্ঠানের মালিক বা কর্মকর্তা উভয়ে কাজের জন্য কেমন প্রার্থী দরকার সেটা ভালোভাবে বোঝেন। যেহেতু বর্তমান কর্মকর্তাদেরকে তাদেরই সাথে কাজ করতে হবে, সেক্ষেত্রে ভালো ফলাফল পেতে তারা অপেক্ষাকৃত যোগ্য ব্যক্তিকেই খুঁজে নিয়ে আসবেন।
কিভাবে এই গোপন চাকরির বাজারের তথ্য খুঁজে পাবেন?
আপনার নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের মাধ্যমে আপনি এই বাজারের সুযোগগুলো খুঁজে বের করতে পারেন। প্রথমেই আপনার পেশাগত লক্ষ্য ঠিক করে তা সবার মাঝে শেয়ার করুন। সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রের মানুষদের সাথে নেটওয়ার্কিং করুন। যত বেশি সম্ভব পথ বের করুন। পেশাজীবীদের সাথে যোগাযোগ বাড়ান।
কিভাবে আপনার নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ করে ওই গোপন চাকরিগুলো সম্পর্কে জানবেন, তা নিম্নে আলোচনা করা হলো।
* আপনি যদি এখনো নেটওয়ার্কিং শুরু না করে থাকেন, তাহলে আজই প্রচলিত পদ্ধতিতে শুরু করুন।
* আনুষ্ঠানিক নেটওয়ার্কিং কার্যক্রম, যেমন- ক্যারিয়ার মেলা, চাকরি-মেলা, সেমিনার এবং ব্যবসায়িক সংগঠনগুলোর বিভিন্ন ইভেন্টে যোগ দিন।
* আপনার বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজেরে অ্যালামনাই, লিংকডইন কানেকশন ইত্যাদির মাধ্যমে লোকজনের সাথে যোগাযোগ করুন।
* আপনার ইন্ডাস্ট্রির লোকজনের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করে বিভিন্ন প্রাসঙ্গিক বিভিন্ন তথ্য জানতে চেষ্টা করুন।
* আপনি যে চাকরি খুঁজছেন এ ব্যাপারে আপনার বন্ধু বা পরিবারের লোকদের কাছে বার্তা পাঠান।
এসব প্রচলিত নেটওয়ার্কিং কৌশলের মাধ্যমে চাকরিতে নিয়োগ সম্পর্কিত তথ্য আপনি পেতে পারেন।
নেটওয়ার্কিং সংক্রান্ত অনুষ্ঠানে অংশ নিন
নেটওয়ার্কিংয়ের যেকোনো অনুষ্ঠানে হ্যাঁ বলুন। বন্ধুদের সাথে ঘুরেতে যান। বেবি-শাওয়ার, খতনা, বিয়ে-শাদী, বারবিকিউ পার্টি সব ধরনের অনুষ্ঠানে যোগ দিন।
যখন আপনি এসব অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন, তখন সামাজিক হোন। অপরিচিত লোকদের সাথে নিজেকে পরিচয় করান।
ইলেভেটর স্পিচ অনুশীলন করুন
আপনার ইলেভেটর স্পিচ অনুশীলন করুন। ইলেভেটর স্পিচ হচ্ছে কারো সাথে পরিচিত হওয়া বা সংযোগ স্থাপনের উদ্দেশ্যে সংক্ষিপ্ত কিছু কথা বলা।
যেমন- আপনি আপনার ক্যারিয়ার থেকে কি চান? একজন নিয়োগকর্তাকে আপনি কী অফার করবেন? আপনার স্বপ্নের চাকরীটি কেমন?
চিন্তা করবেন না। সারাক্ষণ ক্যারিয়ারের বিষয়টি ঠোটস্থ রাখে এমন একটা মানুষ হওয়ার পরামর্শ আপনাকে দিচ্ছি না। তবে সুযোগের সন্ধানে থাকুন। যদি কেউ বিষয়টি আপনার সামনে তোলে, তবে নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে দ্বিধা করবেন না।
মনে রাখবেন- আপনার একটি চাকরির যতটা প্রয়োজন, যিনি নিয়োগ দিচ্ছেন তারও একজন যোগ্য প্রার্থী ততটাই প্রয়োজন। আপনি কিন্তু নিজের সমস্যার পাশাপাশি তাদের সমস্যারও সমাধান করছেন।
সামাজিক মাধ্যমের অ্যাকাউন্ট আপডেট রাখুন
আপনার সামাজিক মাধ্যমগুলো আপডেট রাখুন। যাতে আপনার নতুন মিশন সম্পর্কে মানুষ বুঝতে পারে। তবে আপনি যদি বর্তমানে কোনো জব করেন, তবে একটু বুঝে-শুনে সতর্কতার সাথে আপডেট দিন।
আপনার সর্বশেষ দক্ষতা ও অভিজ্ঞতাগুলো অনলাইন নেটওয়ার্কে আপড্টে রাখুন। নিজের প্রফেশনাল ব্রান্ড তৈরি করুন। এর মাধ্যমে আপনার নেটওয়ার্কের কাউকে হয়তো প্রভাবিত করতে পারবেন।
চাকরির গোপন মার্কেটে প্রবেশের ভিন্ন উপায়
নেটওয়ার্কিং চাকরির গোপন মার্কেটে প্রবেশের একমাত্র উপায় নয়। বিজ্ঞাপন ছাড়া চাকরিগুলোর ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত কৌশলগুলি প্রয়োগ করতে পারেন।
আগ্রহের চাকরিদাতাদের সাথে যোগাযোগ করুন
যদি আপনার বিশেষ কোনো প্রতিষ্ঠানে কাজ করার আগ্রহ থাকে, তবে তাদের বিজ্ঞাপনের জন্য অপেক্ষা করবেন না। তাদের অফিস পরিদর্শনে যান অথবা একটি সৌজন্য কল দিন কিংবা আপনার আগ্রহের বিষয়টি জানিয়ে চিঠি বা ইমেইল করুন।
কাঙ্খিত প্রতিষ্ঠানে সেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করুন
কোম্পানির সাথে সংযোগ তৈরির অন্যতম উপায় হচ্ছে ওই প্রতিষ্ঠানের সেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করা। যদি ওই প্রতিষ্ঠান সেচ্ছাসেবী নেয়, তবে আপনার কাঙ্খিত ক্ষেত্র বা ফিল্ডে না হলেও সেখানে যোগ দিন। এর মাধ্যমে আপনি কাঙ্খিত প্রতিষ্ঠানে অন্তত ঢোকার সুযোগ পেলেন।
এবার সেখানকার কর্মরতদের কাছে আপনার আগ্রহের কথা জানান।
কাঙ্খিত প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্নি করুন
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ফ্রেশারদেরকে ইন্টার্নি করার সুযোগ দেয়। আপনি যে ফিল্ডে কাজ করতে চান, কোম্পানির সেই বিভাগে ইন্টার্নি করার জন্য আবেদন করুন। প্রয়োজনে বিনামূল্যে হলেও। সুযোগ পেলে অত্যন্ত আন্তরিকভাবে কাজ করার চেষ্টা করুন। নিজেকে তুলে ধরুন।
এর মাধ্যমেও আপনি ওই প্রতিষ্ঠানের কর্মরতদের সাথে ভালো সম্পর্ক তৈরির সুযোগ পাবেন। এমনকি নিজেকে দক্ষ হিসেবে তুলে ধরার সুযোগও থাকছে। ফলে তাদের প্রতিষ্ঠানে লোক নেয়া হলে আপনিই পেতে পারেন সুযোগটি।
নিউজ অ্যালার্ট সাবস্ক্রাইব করুন
আপনি যে প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে চান সেই প্রতিষ্ঠানের লিংকডিন অ্যাকাউন্ট ফলো করুন। গুগল এলার্টের মতো কোনো নিউজ অ্যালার্ট সাবস্ক্রাইব করুন। এতে করে তাদের বিভিন্ন সেবা, নতুন শাখা খোলা ইত্যাদি গরুত্বপূর্ণ তথ্য আপনি সহজে জানতে পারবেন। এ ধরনের সময়ে প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করে পেয়ে যেতে পারেন কাঙ্খিত চাকরিটি।
পরিশেষে বলবো নিজেকে দক্ষ করে গড়ে তুলুন। কাঙ্খিত প্রতিষ্ঠানের সাথে সংযোগ গড়ুন। সামাজিক মাধ্যমে নিজের ব্যক্তিগত ব্র্যান্ড তৈরি করুন। আশা করা যায় গোপন বাজারের চাকরিটি আপনি পেয়ে যাবেন।
আপনার স্বপ্ন সফল হোক!
সূত্র : দ্যা ব্যালেন্স ক্যারিয়ার