বাংলাদেশের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশবাহিনীর রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। দেশের যেকোনো ক্রান্তিলগ্নে এই বাহিনীর প্রতিটি সদস্য জীবনবাজি রেখে ঝাঁপিয়ে পড়ে। পুলিশবাহিনীতে ৩৯তম ক্যাডেট সাব ইন্সপেক্টর (এসআই) নিরস্ত্র পদে নিয়োগের লিখিত পরীক্ষা আগামী ৩, ৪ ও ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে। পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন শিক্ষানবিশ সাব ইন্সপেক্টর (৩৮তম ব্যাচ) মাইনুল ইসলাম মঈন।
বাংলাদেশ পুলিশবাহিনীর মেরুদণ্ড বলা হয় সাব-ইন্সপেক্টরকে (এসআই)। ৩৯তম সাব ইন্সপেক্টর নিয়োগ লিখিত পরীক্ষার মোট নম্বর ২৫০। এর মধ্যে রয়েছে বাংলা, ইংরেজি, গণিত, সাধারণ জ্ঞান ও মানসিক দক্ষতা। প্রতিটি বিষয়ের মোট নম্বর ৫০। প্রতিটি বিষয়ে পৃথকভাবে পাস করতে হবে। পরীক্ষার সময় সতর্ক থাকতে হবে, যেন কোনো বিষয়ে মোট নম্বর ৫০ শতাংশের কম না হয়।
বাংলায় কী পড়বেন?
বাংলা পরীক্ষায় রচনা, ভাবসম্প্রসারণ, বাগধারা, প্রবাদ-প্রবচন, এককথায় প্রকাশ, বাক্যসংকোচন, অনুবাদ (ইংরেজি থেকে বাংলা), চিঠি, আবেদনপত্র থেকে প্রশ্ন আসে। সাধারণত অনুবাদ, ভাবসম্প্রসারণ, এককথায় প্রকাশ অংশে বেশি নম্বর পাওয়া সম্ভব। তাই এ অংশগুলোয় বেশি মনোযোগ দিতে হবে।
বাংলা ব্যাকরণের জন্য বোর্ড কর্তৃক প্রকাশিত নবম-দশম শ্রেণির ‘বাংলা ভাষার ব্যাকরণ’ বইটি পড়তে পারেন। পাশাপাশি, বাজারে বিভিন্ন প্রকাশনীর বই আছে। সেগুলোও পড়তে পারেন। মূলত, মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষায় যেসব বিষয় থেকে প্রশ্ন থাকে, সে বিষয়গুলোই বাংলা অংশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
রচনা অংশের জন্য প্রফেসর প্রকাশনীর ‘সাব-ইন্সপেক্টর নিয়োগ সহায়িকা’ বইটি পড়তে পারেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধে পুলিশবাহিনীর ভূমিকা, মেগা প্রজেক্ট, বর্তমান সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ভিশন-২১, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের ভূমিকা, নারীশিক্ষা, নারী নির্যাতন, জলবায়ু পরিবর্তন প্রভৃতি বিষয় রচনা অংশের জন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
এককথায় প্রকাশ, বাগধারার জন্যও প্রফেসর প্রকাশনীর বইটি পড়তে পারেন। এ ছাড়া বিসিএস পরীক্ষার জন্য বিভিন্ন প্রকাশনীর বাংলা বিষয়ে প্রস্তুতির যেকোনো বই থেকে উল্লিখিত বিষয়গুলো পড়তে পারেন।
অনেকের মধ্যে অনুবাদভীতি কাজ করে। তবে অনুবাদ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। অনুবাদবিষয়ক বিভিন্ন বই বাজারে আছে। নিয়মিত অনুশীলন করলে অনুবাদে ভালো নম্বর পাওয়া সম্ভব।
ইংরেজিতে যা না জানলেই নয়
লিখিত পরীক্ষায় বেশি নম্বর পেতে হলে ইংরেজি অংশে ভালো করতে হবে। নিয়মিত অনুশীলন ও পড়াশোনার মাধ্যমে ইংরেজি অংশে অধিক নম্বর পাওয়া সম্ভব।
ইংরেজি অংশে রচনা, অনুচ্ছেদ, প্রিপজিশন, ফ্রেজ অ্যান্ড ইডিয়মস, লেটার/অ্যাপ্লিকেশন, অনুবাদ (বাংলা থেকে ইংরেজি) থাকে। শুরুতে বিগত বছরের প্রশ্ন থেকে অনুশীলন করবেন। তাহলে প্রশ্নের ধরন সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা পাবেন এবং সে অনুযায়ী নিজস্ব পরিকল্পনা তৈরি করতে পারবেন।
এসআই পরীক্ষার ইংরেজি অংশে ভালো করার জন্য বাজারে বেশ কিছু বই আছে। সে বইগুলো থেকে ইংরেজি অংশের জন্য পড়াশোনা করতে পারেন। তাহলে ইংরেজির জন্য ভালো প্রস্তুতি হয়ে যাবে।
অনুবাদে দক্ষ হতে গেলে অনুশীলনের বিকল্প নেই। প্রয়োজনে কয়েকজন বন্ধু মিলে নিয়মিত বাংলা থেকে ইংরেজি অনুবাদ করবেন। তাহলে কিছুদিনের মধ্যে নিজেই নিজের উন্নতি বুঝতে পারবেন।
অনুচ্ছেদ অংশে ভালো করতে হলে প্রচুর পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। এ জন্য নিয়মিত ইংরেজি পত্রিকা, ম্যাগাজিন, উপন্যাস প্রভৃতি পড়তে হবে। পাশাপাশি নিয়মিত লেখার অভ্যাসও গড়ে তুলতে হবে। একটি রচনা কীভাবে লিখলে বেশি নম্বর পাওয়া যায়, সে বিষয়গুলো জানতে হবে। গুগলে সার্চ দিলেই এ-সংক্রান্ত অসংখ্য লেখা খুঁজে পাবেন।
সাধারণ জ্ঞানের নির্দিষ্ট সিলেবাস নেই
সাধারণ জ্ঞান অংশে বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি থেকে প্রশ্ন হয়। সাধারণ জ্ঞানের নির্দিষ্ট কোনো সিলেবাস নেই। এ ক্ষেত্রে যেসব ঘটনা স্থায়ী, সে বিষয়গুলো মুখস্থ করতে হবে। বাজারে সাধারণ জ্ঞানবিষয়ক বহু বই রয়েছে। ২০১৯ সালে এসআই লিখিত পরীক্ষায় যে প্যাটার্নের প্রশ্ন এসেছিল, এবারও হয়তো একই ধরনের প্রশ্ন আসবে। এর জন্য প্রফেসর সিরিজের বইগুলো শেষ করতে পারলেই সাধারণ জ্ঞান অংশে ভালো নম্বর পাবেন।
গণিতে অবশ্যই ভালো করতে হবে
এসআই পরীক্ষায় পাস করতে হলে গণিতে অবশ্যই ভালো করতে হবে। সাধারণত গণিতে দুর্বলতার কারণে অনেকেই লিখিত পরীক্ষায় পাস করতে পারে না। ফলে, যাঁরা গণিতে বেশি নম্বর পাবেন, তাঁরা লিখিত পরীক্ষায় এগিয়ে থাকবেন।
আগের পরীক্ষাগুলোয় গণিত অংশে শুধু পাটিগণিত থেকে প্রশ্ন আসত। কিন্তু এবার সার্কুলারে শুধু ‘গণিত’ উল্লেখ করা হয়েছে। ফলে, গণিত অংশে পাটিগণিতের পাশাপাশি বীজগণিত ও জ্যামিতি থেকে প্রশ্ন আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
গণিতের জন্য ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত বোর্ডের গণিত বইগুলো শেষ করতে হবে। বোর্ডের বইগুলো শেষ করতে পারলেই গণিতভীতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। তারপর বিভিন্ন প্রকাশনীর গণিতের বই থেকে প্রচুর অনুশীলন করতে হবে। গণিতে ভালো নম্বর পেতে হলে অনুশীলনের বিকল্প নেই।
গণিত পরীক্ষায় ক্যালকুলেটর ব্যবহার করা যাবে না, তবে খাতার পেছনে রাফ করা যাবে। ফলে বাসায় গণিতের অনুশীলনের সময় ক্যালকুলেটর ছাড়াই চর্চার অভ্যাস গড়ে তোলার চেষ্টা করবেন।
মানসিক দক্ষতা : প্রস্তুতিতে অবহেলা নয়
বিগত পরীক্ষায় মানসিক দক্ষতা অংশে নম্বর ছিল ২৫। এবারের পরীক্ষায় মোট নম্বর ৫০। এ অংশ তুলনামূলক সহজ হওয়ায় অনেকেই মানসিক দক্ষতার পরিবর্তে অন্য বিষয়গুলোয় বেশি মনোযোগ দেন। তবে এ মানসিকতা ভালো নয়। কারণ, লিখিত পরীক্ষায় যাঁরা বেশি নম্বর পাবেন, তাঁরাই মৌখিক পরীক্ষার জন্য নির্বাচিত হবেন। এ কারণে সব বিষয় সমান মনোযোগের সঙ্গে পড়তে হবে।
লিখিত পরীক্ষায় আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, পরীক্ষার খাতা সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা। মনে রাখবেন, সুন্দর হাতের লেখা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন খাতা, সঠিক বানান, লেখার গঠন, তথ্য ও তত্ত্ব, রেফারেন্স, পরীক্ষার কৌশল আপনাকে সবার চেয়ে অনেকখানি এগিয়ে রাখবে।
৩৯তম এসআই পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী প্রত্যেক পরীক্ষার্থীর লিখিত পরীক্ষার জন্য শুভকামনা রইল।
মাইনুল ইসলাম মঈন, শিক্ষানবিশ সাব-ইন্সপেক্টর (৩৮তম ব্যাচ) সিআইডি, বাংলাদেশ পুলিশ