সরকার প্রণীত নীতি ও আইনসমূহের জনকল্যাণার্থে বাস্তবায়ন এবং প্রয়োগের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই হলো লোকপ্রশাসন। অন্য কথায় লোকপ্রশাসন হচ্ছে- রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সেবা জনগণের জন্য নিশ্চিত করতে রাজনীতিবিদগণের গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া।
সরকারের পলিসি প্ল্যানিং থেকে পলিসি ফর্মুলেশন, সরকারি প্রশাসনের রক্ষণাবেক্ষণ ও ম্যানেজমেন্ট, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, আইন ইত্যাদি হচ্ছে লোক প্রশাসনের ফোকাস এরিয়া। মোটা দাগে বলতে গেলে, লোকপ্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে সরকার। এবং সরকারের কার্যক্রমের এমন কোন বিশেষ জায়গা নেই যেটি লোক প্রশাসনের বহির্ভূত। যেকোনো প্রতিষ্ঠানের সফলতা/ব্যর্থতা নির্ভর করে একজন প্রশাসকের উপরে।
লোকপ্রশাসন বিভাগে কী পড়ানো হয়?
লোকপ্রশাসন বিভাগের একজন শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয়জীবনের শুরুতে তাত্ত্বিক কিছু বিষয় পড়ানো হয়। প্রশাসনের একেবারে তাত্ত্বিক দিকগুলোর পাশাপাশি সমাজবিজ্ঞানের মূল যে বিষয়গুলো আছে, যেমন- অর্থনীতি, সমাজতত্ত্ব, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ইত্যাদি বিষয় পড়ানো হয়।
এছাড়া হিসাববিজ্ঞান, তথ্য-প্রযুক্তি সম্পর্কেও একটা প্রাথমিক ধারণা দেয়া হয়। পরবর্তীকালে ব্যবহারিক দিক, যেমন বাংলাদেশের প্রশাসন ও রাজনীতির ইতিহাস, স্থানীয় সরকার ইত্যাদি সম্পর্কে জানানো হয়।
এসবের পর শিক্ষার্থীরা একটু তুলনামূলক আলোচনায় ঢুকে পড়ে। অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের লোকপ্রশাসনের তুলনার পাশাপাশি ব্যবসার সঙ্গে সম্পর্কিত কিছু বিষয়, যেমন মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা, ব্যাংক ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি পড়তে হয়।
চতুর্থ বর্ষের পড়ালেখা হয় গবেষণামূলক। প্রশাসনের ব্যাপারে সাম্প্রতিক যে অগ্রগতিগুলো হয়েছে, সেগুলো সম্পর্কেও জানানো হয়।
কোথায় পড়ানো হয়?
লোকপ্রশাসন বিভাগটি সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই। তাছাড়া বাংলাদেশের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়েও সরাসরি এই নামে নেই। আর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত কোনো কলেজেও এটি অধ্যয়ন করা হয় না।
যে সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে লোকপ্রশাসন বিষয়টি পড়ানো হয়, সেগুলো হলো-
১. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
২. রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
৩. জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
৪. চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
৫. জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়
৬. বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়
এছাড়াও আরো কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগটিকে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের (Faculty of Social Science) উচ্চ পর্যায়ের বিভাগ হিসেবে গণ্য হয়ে থাকে।
প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় সম্প্রতি জনপ্রশাসনে স্নাতক (বিপিএ) এবং স্নাতক প্রোগ্রাম (এমপিএ) উভয়ই শুরু করেছে। এছাড়াও নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় পাবলিক পলিসি অ্যান্ড গভর্নেন্স (এমপিপিজি) এবং এমএইচডি-তে এমএ করার সুযোগ দিচ্ছে।
লোকপ্রশাসন পড়ে চাকরির ক্ষেত্র
প্রতিটি প্রতিষ্ঠানেই রয়েছে অ্যাডমিনিস্ট্রেশন। সুতরাং, পাবলিক অ্যাডমিনিশট্রেশনের পরিসর অত্যন্ত বিস্তৃত। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবজেক্টগুলোর মধ্যে পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সাবজেক্টের নামে একটি মন্ত্রনালয় আছে এবং সেই জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়ে (Ministry of Public Administration) পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীদের জন্য রয়েছে লোভনীয় পদে চাকরির সুযোগ।
এছাড়া বিশেষ সুযোগ রয়েছে সরকারি কর্ম কমিশনে। বিসিএসে যতগুলো ক্যাডার রয়েছে, এর মধ্যে প্রশাসন, পুলিশ, সিভিল সার্ভিস ক্যাডারে চাকরি পান এ বিভাগের ছাত্রছাত্রীরা। এ ছাড়া দেশের সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা, প্রশাসন, প্রশিক্ষণ, গবেষণা ইত্যাদি বিভাগে তাঁরা অগ্রাধিকার পেয়ে থাকেন।
বাংলাদেশে কর্মরত বিভিন্ন মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি, মানবাধিকার সংস্থা, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন, ব্যাংক, বিমা ও বিভিন্ন এনজিওতে এ বিভাগের শিক্ষার্থীরা ভালো বেতনে কাজ করছেন। অনেকে আবার কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে শিক্ষকতা পেশায় চাকরি করছেন।
দেশের বাইরে যেমন যুক্তরাজ্য, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, কানাডাসহ বিভিন্ন দেশে এ বিভাগের ডিগ্রিধারীরা এখন ভালো বেতনে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছেন।
বিদেশে উচ্চশিক্ষা
এই বিভাগের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় ও সংস্থার সাথে সহযোগিতামূলক গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে অংশ নিতে পারেন। ইউরোপ-আমেরিকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এই বিভাগের শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান করে থাকে। এছাড়া চিন ও ভারতেও রয়েছে এই বিষয়ে উচ্চশিক্ষা অর্জনের সুযোগ।
বর্তমানে বিশ্বের নাম করা অনেক বিশ্ববিদ্যালয় এই বিষয়ে অনলাইনে কোর্স করার সুযোগ করে দিচ্ছে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-
১. আমেরিকান ইউনিভার্সিটি
২. পয়েন্ট পার্ক ইউনিভার্সিটি
৩. জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি
৪. ইউনিভার্সিটি অব নর্থ ক্যারেলিনা
লোকপ্রশাসন কাদের পড়া উচিৎ
দেশ ও জনগনের সেবা করার মানসিকতা আছে, এমন লোকেদেরই এই বিভাগে পড়া উচিৎ। বিশেষ করে আমাদের দেশের মত উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এটি বেশি প্রয়োজন। কাজের বিনিময়ে উপরি পাওয়ার মানসিকতা যাদের নেই তাদেরই লোক প্রশাসন পড়া উচিত। সে বিজ্ঞান, ব্যবসা কিংবা মানবিক যে শাখারই হোক না কেন।