ভিজ্যুয়ালাইজেশন (visualization) বা ভবিষ্যতের কল্পনা ব্যক্তিগত উন্নয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এটি আপনার লক্ষ্য অর্জনের মূল চাবিকাঠি। কোনো বিবৃতি বা উক্তি যেমন আমাদের প্রেরণা জুগিয়ে কার্যকর লক্ষ্য ঠিক করতে সাহায্য করে, ভিজ্যুয়ালাইজেশন (visualization) বা কল্পনাও তেমনই ভূমিকা রাখতে পারে।
সত্তর দশকের শেষের দিকে এবং আশির দশকের শুরু থেকে এটি ব্যক্তিগত বিকাশের কৌশল হিসেবে জনপ্রিয় হতে শুরু করেছে। যদিও আমরা মানুষ হিসেবে শুরু থেকেই এই ভিজ্যুয়ালাইজেশনের ব্যবহার করে আসছি।
যখনই আমরা কোনো কিছু করার কথা ভাবি, প্রথমেই সেটা ভিজ্যুয়ালাইজ (visualize) করি।
উদাহরণস্বরূপ, যখন আমাদের ক্ষুধা পায় এবং আমরা খেতে চাই তখন আমরা সম্ভাব্য খাবারগুলোর একটা চিত্র কল্পনা করি। অথবা, কী কী রান্না করবো সে সম্পর্কে ভাবি। কিংবা, বাইরে খেতে যাব কি-না; গেলে কাদের সাথে যাব ইত্যাদি। আবার ধরুন, কোনো একটা অনুষ্ঠানের আগে কোন ধরনের কাপড় পরবো এবং কোথা থেকে এগুলো কিনবো; এই সব কিছুই আমরা আগে থেকে কল্পনা করে রাখি।
ভিজ্যুয়ালাইজেশন (Visualization) কী?
আমরা আমাদের জীবনে যা চাই তা কিভাবে ঘটবে, সে সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করতে আমরা কল্পনায় যে চিত্র আঁকি তাই হলো ভিজ্যুয়ালইজেশন। আর যেহেতু এর সাথে আবেগের সম্পর্ক রয়েছে, তাই এটি আমাদের জীবনের লক্ষ্য অর্জনে একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হিসাবে কাজ করে। সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারলে এটি আপনার আত্ম-উন্নয়ন ঘটাবে, সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করবে, খেলাধুলায় পারফরম্যান্স বৃদ্ধি করবে। সর্বোপরি, আপনার জীবনের লক্ষ্যগুলো অর্জনে আপনাকে সহায়তা করবে।
এক কথায় বলতে গেলে, শুধুমাত্র ভিজ্যুয়ালাইজেশনকে একটি কৌশল হিসেবে ব্যবহার করে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করা সম্ভব।
ভিজ্যুয়ালাইজেশন কিভাবে কাজ করে?
আমরা যখন কোনো কাজ করতে চাই, তখন সেটার একটা নিখুঁত চিত্র কল্পনা করি। ফলে, আমাদের মস্তিষ্কে এক ধরনের স্নায়ুবিক নিদর্শন তৈরি হয়। ঠিক যেন কাজটি আমরা সত্যিই করছি। আর এভাবেই ভিজ্যুয়ালাইজেশন (visualization) বা মানসিক চিত্র আমাদের কাজের উদ্দীপনা হিসেবে কাজ করে। এটি আমাদের পেশিগুলোকে আমরা যা করতে চাই, ঠিক তা-ই করতে শেখায়।
প্রতিযোগিতামূলক খেলাধুলায় কেবল শারীরিক দক্ষতাই যথেষ্ট নয়। মানসিক দক্ষতাও সমানভাবে জরুরি। বেশিরভাগ কোচদের মতে, খেলাধুলা ৯০% মানসিক এবং কেবল ১০% শারীরিক। এ কারণেই অনেক খেলোয়ার তাদের শারীরিক রুটিনের পাশাপাশি ভিজ্যুয়ালাইজেশন বা মানসিক চিত্রের প্রশিক্ষণ নিয়ে থাকেন।
অন্যান্য দক্ষতার মতো মানসিক দক্ষতাও অনুশীলন করা প্রয়োজন। মানসিক চিত্রকল্পের চারটি উপাদন হলো-
- রিল্যাক্সেশন বা চাপ মুক্ত থাকা: নিজেকে যথাসম্ভব চাপ মুক্ত রাখার চেষ্টা করুন। অবসরে গান শোনা, খেলাধুলা কিংবা শরীর চর্চার মাধ্যমে নিজেকে চাপ মুক্ত রাখা যায়।
- রিয়ালিজম বা বাস্তববাদিতা: যে কোনো পরিস্থিতির বাস্তবিক অবস্থা বিবেচনা করতে শিখুন।
- রেগুলারিটি বা নিয়মানুবর্তিতা: ভিজ্যুয়ালাইজেশন বা মানসিক দক্ষতা উন্নয়নে ধারাবাহিক অনুশীলনের কোনো বিকল্প নেই।
- রিইনফোর্সমেন্ট বা শক্তিবৃদ্ধি: নিজেকে চাপ মুক্ত রেখে নিয়মিত চর্চার মাধ্যমে মানসিক দক্ষতা আরও শক্তিশালী করুন।
ভিজ্যুয়ালাইজেশন (Visualization) কেন ব্যবহার করবেন?
ভালো ফলাফলের জন্য
নিজেকে এমন একটি স্তরে কল্পনা করুন যেখানে আপনি আপনার লক্ষ্যগুলো অর্জন করে নিজের মতো জীবনযাপন করছেন।
অনুপ্রাণিত করতে
নিজের লক্ষ্যগুলো সুনির্দিষ্টভাবে অর্জনের কথা কল্পনা করুন। এটি আপনার লক্ষ্য পূরণে আপনাকে অনুপ্রাণিত করবে। অনেক খেলোয়ার, অভিনেতা ও গায়কেরা কোনো পারফরমেন্স করার আগে বেশ কয়েকবার মনে মনে সেটি পুরোপুরি অনুশীলন করেন।
কাজের মঞ্চ পরিচিত করতে
ভিজ্যুয়ালাইজেশনের মাধ্যমে আপনি কাজের মঞ্চ বা প্রেক্ষাপট সম্পর্কে আগে থেকেই ধারণা করতে পারবেন। ফলে, কাজটি করার সময় আপনি আরো বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবেন।
মানসিক অনুশীলন করতে
খেলোয়ার বা পারফরমাররা প্রায়শই তাদের রুটিনের মূল উপাদানগুলো পুরোপুরি মানসিকভাবে চর্চা করেন। এটি তাদের লক্ষ্য ঠিক রাখতে ও নার্ভাসনেস বা স্নায়ুবিক দুর্বলতা দূর করতে সাহায্য করে। এটি ওয়ার্ম-আপ বা মিনি রিহার্সাল হিসেবেও কাজ করে।
আপনার চাওয়াকে কিভাবে ভিজ্যুয়ালাইজ করবেন?
- শান্ত ও নিরিবিলি কোনো জায়গায় যান, যেখানে আপনাকে কেউ বিরক্ত করবে না। চোখ বন্ধ করুন এবং আপনার লক্ষ্য ও দক্ষতার কথা চিন্তা করুন।
- গভীর নিঃশ্বাস নিন এবং শান্ত থাকুন।
- আপনি যা অর্জন করতে চান সে বিষয়ে যথাসম্ভব বিস্তারিত কল্পনা করুন।
- আপনার দর্শনে আবেগ, অনুভূতি এবং আপনার নিজস্ববোধ যুক্ত করুন।
- পুরো ব্যাপারটি দশ মিনিট করে দিনে অন্তত দুইবার চর্চা করুন।
- সফল না হওয়া পর্যন্ত চালিয়ে যান।
- ইতিবাচক চিন্তাভাবনা এবং একটি ভালো মনোভাব বজায় রাখুন।
ভিজ্যুয়ালাইজেশনের সুবিধা
- লক্ষ্যে অটুট থাকতে সাহায্য করে।
- অনুপ্রাণিত করে এবং প্রেরণা জোগায়।
- খেলাধুলাসহ যে কোনো দক্ষতা উন্নয়নে সাহায্য করে।
- অনুশীলনের মাধ্যমে নতুন এবং ইতিবাচক আচরণ অর্জন করা যায়।
- ইতিবাচক ও প্রশান্তিদায়ক কল্পনা নেতিবাচক মনোভাবকে বদলে দেয়।
- আত্মবিশ্বাস তৈরি করতে সহায়তা করে।
প্রিয় বন্ধু, ভিজ্যুয়ালাইজেশন (visualization) শব্দটি হয়তো আপনার কাছে একটু নতুন বিষয়। কিন্তু আমরা প্রকৃতিগতভাবেই জীবনে এর চর্চা করে আসছি। এখন এটার সিসটেমেটিক চর্চার মাধ্যমে নিজের লক্ষ্যপূরণে কার্যকরভাবে প্রয়োগ করুন। আর দেখুন আশ্চর্য ফলাফল। কোনো প্রশ্ন থাকলে অবশ্যই মন্তব্যে জানান।
সূত্র : essentiallifeskills.net