আসুন ২ মিনিট নিজের সাথে একটু কথা বলি…
গত ৪ বছরে পড়াশুনা ছাড়া আর কী কী করেছেন?
সময় পাননি? সময় কিন্তু ছিল নাকি ব্যবহার করতে পারেননি?
এক দিনের হিসাবটা বের করেন তো, পড়াশুনার বাইরে বাকি সময়টা কী কী করেছেন?
খুব সহজেই প্রতিদিন ৩-৪ ঘণ্টা সময় বের করা যায়। সেই ৩-৪ ঘণ্টা কী করেছেন গত ৪ বছরে, যা ৫৮৪০ ঘণ্টা (২৪৩ দিন)।
১। ঘণ্টার পর ঘণ্টা আড্ডা দিয়েছেন নাকি মাইক্রোসফট ওয়ার্ড, এক্সেল ও পাওয়ার পয়েন্ট শিখেছেন?
২। অন্যকে নিয়ে সমালোচনা করে সময় নষ্ট করেছেন নাকি ইংরেজিটা কিভাবে আরেকটু ভালো লিখতে ও বলতে পারা যায় তা শিখেছেন?
৩। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফেসবুকিং করে অন্যকে লাইক দিয়েছেন নাকি নিজে লাইক পাওয়া যায় এমন কোনো ভলান্টিয়ারিং (স্বেচ্ছাসেবা) কাজ করেছেন?
৪। প্রেম করার নামে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফোনে কথা বলেছেন, ডেটিং করেছেন নাকি রেস্টুরেন্টে, ফাস্টফুডে, বই মেলায়, বাণিজ্য মেলায় বা কোনো ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ফার্ম বা অন্য কোথাও পার্টটাইম কাজ করেছেন?
৫। বই মেলায়, বাণিজ্য মেলায় বা রেস্টুরেন্টে গিয়ে শুধু ঘুরে ঘুরে দেখেছেন বা খেয়েছেন নাকি খণ্ডকালীন একটা বিজনেস কিভাবে করতে হয় তা শেখার চেষ্টা করেছেন?
৬। রাজনীতির নামে আপনাকে ব্যাবহার করার সুযোগ দিয়ে নিজের মূল্যবান সময় নষ্ট করেছেন, নাকি সামাজিক কোনো কাজ করে একটু অবদান রাখার চেষ্টা করেছেন।
৭। কোথাও কোনো একটা সমস্যা দেখলে “এই দেশে আর কিছু হবে না বা দেশটার সবকিছু নষ্ট হয়ে গেল” এটা ভেবেছেন নাকি ঐ সমস্যাকে কিভাবে সমাধান করে একটা বিজনেস আইডিয়া বের করা যায় তা নিয়ে রিসার্চ করেছেন?
পড়াশুনার পাশাপাশি গত ৪ বছরে আপনি যদি প্রতিদিন ৩-৪ ঘণ্টা করে, প্রথম ২ বছর স্কিলস ডেভেলাপমেন্ট ও পরের ২ বছর কোনো পার্ট টাইম কাজ বা উদ্যোগের সাথে জড়িত থাকতেন – আপনার বেকার থাকা অসম্ভব এবং প্রশ্নই ওঠে না।
৪ বছরের এই অভিজ্ঞতা যদি থাকে, আপনার পড়াশুনা শেষ হওয়া মাত্রই আপনি কোনো চাকরি পেয়ে যাবেন। অথবা ব্যবসায়ের কোনো একটা উদ্যোগ শুরু করে দিতে পারবেন। কেউ আপনাকে বলতে পারবে না, আপনার কাজের কোনো অভিজ্ঞতা নেই। আর কাজের মানুষটাকেই সবাই খোঁজে।
তারপরও প্রশ্ন উঠতে পারে, এতো চাকরি কোথায় পাবে। পড়াশুনা করা মানেই বিসিএস বা সরকারি চাকরি অথবা বেসরকারি চাকরি না। বিদেশে একটি যুবক যেখানে ২৪ বছর বয়সে কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজার বা ডিরেক্টর হয়ে যায়, সেখানে আমরা দাবি করছি চাকরিতে ঢোকার বয়সসীমা ৩৫ করতে। কেন আপনি শুধু চাকরি করবেন, আপনি তো চাকরি সৃষ্টিও করতে পারেন। হ্যাঁ আপনি পারেন, এই বিশ্বাস আপনার মধ্যে তৈরি করতে হবে এবং শুরু করতে হবে।
আমরা শুরুই করছি অনেক দেরিতে। কেন ১৮-২০ বছর বয়স থেকেই কোনো পার্টটাইম কাজ বা উদ্যোগের পিছনে ছুটে চলা নয়? সমস্যা হচ্ছে আমরা কাজকে ছোট বড় বা জাত ইত্যাদিতে বিভাজন করে ফেলি। ছোট বড় বলে কিছু নেই। সবই কাজ এবং শুরুটা যে কোনো কাজ দিয়ে হতে পারে।
ধরুন, শুধু চাকরির চেষ্টা না করে ছাত্রজীবন থেকে এই ৩০ লাখ তরুণ থেকে মাত্র দেড় লাখ (৫%) যদি উদ্যোক্তা হতেন, গড়ে ২০ জনের (কেউ ৫ জন বা ১০ জন বা ৫০ জন) চাকরির ব্যবস্থা করতে পারলেও ৩০ লাখ চাকরি সৃষ্টি করা সম্ভব, অন্তত ২০ লাখ তো সম্ভব। সাথে সরকারকে একটু এগিয়ে আসতে হবে প্রশিক্ষণ এবং বিজনেস ফান্ড নিয়ে।
ধরেন কেউ আপনার জন্য কিছু করবে না। তাই বলে কি আপনি বসে থাকবেন? আপনি নিজে কিছু করে দেখাতে পারলে, আপনার জন্য এগিয়ে আসার মানুষের অভাব হবে না।
যারা গত ৪ বছরকে এভাবে ব্যবহার করে নিজেকে তৈরি করতে পারেননি, তাদের সব শেষ হয়ে গেছে তা কিন্তু ন। আজই শুরু করুন। আর যারা গ্রাজুয়েশান প্রথম বর্ষে আছেন তারা আজই নেমে পড়ুন উপরের ৭টা কাজে।
শুধু পড়াশুনা বা ডিগ্রি দিয়ে এখন আর চাকরি বা উদ্যোক্তা হওয়া সম্ভব নয়। পাশাপাশি দরকার অন্তত ২-৩টি স্কিলস। তাহলে আপনাকে কেউ দমিয়ে রাখতে পারবে না। কাজ আপনাকে খুঁজবে!
লেখক : ইকবাল বাহার জাহিদ। উদ্যোক্তা ও মেন্টর। লেখাটি তার ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া।