ইকবাল বাহার : যারা জিপিএ-৫ বা ৪ পাওনি অথবা ফেল করেছ রাতে নিজেকে সময় দাও, সারা রাত ভাবো। নিজের সাথে কথা বলো – কেন রেজাল্ট খারাপ হলো? তুমি কী কী ফাঁকি দিয়েছ নিজের সাথে? বাবা-মায়ের কথা শোনোনি? মা-বাবাকে কোনো কষ্ট দিয়েছ?
বাবা-মাকে সালাম করে আবার নতুন করে কাল সকাল থেকেই শুরু করো। থেমে যেওনা ততক্ষণ, যতক্ষণ কেউ বলেও তোমাকে থামাতে না পারে।
পড়াশুনার পাশাপাশি জানার চেষ্টা কর অনেক বেশি। কিছু স্কিলস শিখে ফেলো। যেমন- মাইক্রোসফট ওয়ার্ড, এক্সেল, পাওয়ার পয়েন্ট, ফ্রিল্যান্সিং, ভালো ইংরেজি বলতে ও লিখতে পারা, সুন্দর করে কথা বলতে পারা, ভলান্টিয়ারিং করা ইত্যাদি।
সবার সাথে ভালো সম্পর্ক রাখো। সবার কন্টাক্ট নাম্বার একটা নোট বুকে লিখে রাখ ও নেটওয়ার্কিংটা রাখো। তুমি চাইলে তোমার সবকিছু বদলে দিতে পারো। ওই রকম ১২ ডজন জিপিএ-৫ একদিন তোমার অফিসেও কাজ করবে।
আজকের ফলাফলকে জীবনের শেষ পরীক্ষা ভেবো না। জীবনের পরীক্ষা তো সবে শুরু। প্রথম ধাপে তুমি, আরো অসংখ্য সুযোগ পড়ে আছে তোমার জীবনে।
বাবা-মাদের বলছি। এই মুহূর্তে আপনাদের সন্তানদের কাছে টেনে নেয়া ও অনুপ্রেরণা সবচেয়ে বেশি দরকার। কোনো অবস্থাতেই রেজাল্ট নিয়ে কিছু বলা যাবে না – তাকে সাহায্য করুন যাতে সে তার ভুলগুলো ধরতে পারে। যদিও জিপিএ-৪ মোটেও খারাপ রেজাল্ট নয়।
যারা জিপিএ-৫ পেয়েছ তাদের অভিনন্দন। তোমাদের মা-বাবাকেও অভিনন্দন। তোমাদের কষ্ট সার্থক হয়েছে। থেমে যাবে না এটাই শুরু। ভালো কলেজে ভর্তি হতে না পারলেও হতাশ হবে না। মনে রাখবে সবসময় ভালো কিছু অপেক্ষা করছে তোমার জন্য। নিজের ভালোটা খুঁজে নিতে হবে। আর লেগে থাকতে হবে তা না পাওয়া পর্যন্ত।
আমি আমার জীবনে এইচএসসিতে ফেল করেছিলাম। চারিদিকে একটাই আলোড়ন- ‘আমাকে দিয়ে কিছু হবে না’, ‘আমি নষ্ট হয়ে গেছি’। অনেক কষ্ট করে নিজেকে সামাল দিয়েছিলাম। দ্বিতীয়বারে সেকেন্ড ডিভিশন পেয়েছিলাম।
ইঞ্জিনিয়ার হবার স্বপ্ন ছিল, অ্যাডমিশন টেস্ট দেবার নাম্বারই পাইনি। ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে চান্স পাইনি, জাহাঙ্গীরনগর ইউনিভার্সিটিতে চান্স পাইনি। না চট্রগ্রাম ইউনিভার্সিটিতে এমনকি জগন্নাথ ইউনিভার্সিটিতেও ভর্তি হবার সুযোগ পাইনি। ভর্তি হয়েছিলাম তিতুমীর কলেজে বিকম (পাস)।
যথারীতি সবাই বলা শুরু করলো আমাকে দিয়ে কিছু হবে না। কিন্তু ততদিনে আমি আমার জীবনের লক্ষ্য ঠিক করে ফেলেছি। আমি জানি আমি কী করছি। আমি জানি আমাকে কোথায় কতদুর যেতে হবে। তার জন্য আমি সব কিছু সেক্রিফাইস করতে প্রস্তুত ছিলাম।
বিকম-এও সেকেন্ড ডিভিশন পেলাম। কিন্তু আমি খুশি ছিলাম। কারণ জীবনে প্রথম বাণিজ্য বিভাগে পড়লাম বিজ্ঞান থেকে। তারপর শুধুই এগিয়ে চলা – CA, MCom, MBA সবই পড়লাম কিন্তু সবসময় সেকেন্ড ডিভিশনে পাস।
কিন্তু আমার কোনো দুঃখ ছিল না। কারণ ততদিনে আমি বাইরের জগতের তথা দুনিয়ার কোথায় কী হচ্ছে তা জানার ও শেখার আগ্রহ নিজের মাঝে তৈরি করে ফেলেছি। আমি তৈরি ছিলাম যেকোনো কষ্ট স্বীকার করার, নির্ঘুম পরিশ্রম করার ও নিজেকে বদলে ফেলার।
জীবনের প্রায় সকল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় দ্বিতীয় শ্রেণী পেলেও ক্যারিয়ার, পরিবার, আত্মীয় পরিজন, বন্ধু-বান্ধব ও নিজের কাছে প্রথম শ্রেণীতে থাকাটা কখনো হাতছাড়া করিনি।
ঠিক করে ফেলেছিলাম চাকরি করব না, চাকরি সৃষ্টি করব। জীবনে সফলতা মানে বাড়ি, গাড়ি ও টাকা নয়। সফলতা মানে সুশিক্ষা, সুস্বাস্থ্য, সুখ ও সম্পদ আর একজন ভালো মানুষ।
ভালো মানুষ হওয়া দরকার সবার আগে।
লেখক : প্রতিষ্ঠাতা, নিজের বলার মতো একটি গল্প