কথিত আছে, মোগল সম্রাজ্ঞীরা রূপচর্চার নানা কৌশল অবলম্বন করে নিজেদের সৌন্দর্যকে আকর্ষণীয় করে তুলতেন। তখন থেকেই বিভিন্ন ভেষজ উপাদান দ্বারা রূপচর্চার বিষয়টি স্বীকৃত। আজ কর্পোরেট জগত, সংসার কিংবা যে কোন সাধারণ নারীর নারীত্বের পূর্ণতা সৃষ্টিতে রূপ সচেতনতা আবশ্যকীয় স্থান দখল করেছে। রূপচর্চার বিষয়টি এখন কেবল নারীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। শিশু, কিশোর, পুরুষ, প্রবীণ, খেলোয়াড় বা যে কোন পেশাজীবী, এমনকি গৃহিনীরাও ব্যাপক রূপসচেতন। বাংলাদেশে সৌন্দর্য-শিল্প এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা উন্নয়নে যাদের অবদান অনস্বীকার্য তাদের মধ্যে ‘পারসোনা’ র ব্যবস্থাপনা পরিচালক কানিজ আলমাস এর নাম শীর্ষে।
জন্ম ও পরিচয়
চট্টগ্রামের দামপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন কানিজ আলমাস খান। ডাকনাম টুসি। জন্ম দিন ৪ ডিসেম্বর। পিতা দেওয়ান বদিউল আলম ছিলেন সরকারি কর্মকর্তা। মা জাহানারা আলম গৃহিনী। স্বামী হোসাইন নাসরাত আলী খান এবি ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট। একমাত্র মেয়ে নুজহাত খান দিশা লন্ডনে মার্কেটিং এ্যাডভারটাইজমেন্ট-এ পড়াশোনা করছেন।
কানিজ আলমাস ঢাকার হলি ফ্যামিলি স্কুল, সিদ্ধেশ্বরী গার্লস স্কুল এন্ড কলেজ এবং ইডেন কলেজে লেখাপড়া করেন।
কর্মজীবন
ইতিহাসে পড়াশোনা করেছেন কানিজ আলমাস। তবে মাস্টার্স ফাইনাল পরীক্ষাটি দেয়া হয়নি তার। ইন্টারমিডিয়েটের পরে শখের বশে জেরিন আজগর কাছে করা ৩ মাসের রূপচর্চার কোর্সটির বাস্তবায়নে মনোযোগী হন। গড়ে তোলেন সৌন্দর্য চর্চার প্রতিষ্ঠান ‘গ্ল্যামার’। শুরু থেকেই তিনি মহিলাদের স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি এবং প্রাকৃতিক উপকরণ দ্বারা সৌন্দর্য বিকাশের গবেষণা করতে থাকেন। ভেতরে ছিলো জেদ এবং সাফল্যের আকাঙ্খা।
১৯৯০ থেকে ১৯৯৭ পর্যন্ত গ্ল্যামার পার্লারের মাধ্যমে অত্যন্ত স্বল্প পরিসরে রূপসেবা দেন। ১৯৯৮ সালে আলমাস খান মাইডাস থেকে ২ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে ‘পারসোনা’ নামে বিউটি বিজনেস আরম্ভ করেন। ১৯৯৮ সালের মধ্যে তার প্রতিষ্ঠানে রূপকর্মী হয় ১২ জন এবং কার্যালয় পরিধি ১৮শ বর্গফুট। ২০০২ সালে পারসোনার রূপকারিগর হয় ৫০ জন এবং কার্যালয় আওতা ৩৮শ বর্গফুটে উন্নীত হয়। ২০০৪ এর মধ্যে তার কর্মী হয় ১শ জন। ২০০৫ এ কর্মী ২শ জনে দাড়ায় এবং এশিয়ার বৃহত্তম সৌন্দর্য-যত্ন সুবিধা নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন ১১ হাজার বর্গফুটের ‘পারসোনা’। ২০১০ সালে তার প্রতিষ্ঠানসমূহে কর্মী সংখ্যা দাঁড়ায় ১৩শ জনে, যার ৯৯ শতাংশ মহিলা। ২০০৮-০৯ বর্ষে তার প্রতিষ্ঠানসমূহের টার্নওভার হয় ১৪.৬৪ কোটি টাকা।
প্রতিষ্ঠানসমূহ
বিরল গুণ ও কর্মজীবনের অধিকারী কানিজ আলমাসের ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় গঠিত সৌন্দর্য প্রতিষ্ঠানসমূহ হলো – পারসোনা বিউটি পার্লার (ঢাকায় ৪টি আউটলেট), পারসোনা হেলথ, পারসোনা জিম, পারসোনা স্পা, পারসোনা স্টুডিও, পারসোনা আদমস (পুরুষদের জন্য) ও হাবিবস পারসোনা। আলমাসের প্রতিষ্ঠিত পারসোনা ইন্সটিটিউট অব বিউটি ইতোমধ্যে সৌন্দর্য শিক্ষার শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। কানিজ সম্পাদিত ফ্যাশন ম্যাগাজিন ‘ক্যানভাস’ সৌন্দর্যপ্রেয়সীদের প্রিয় কাগজ।
দেশভ্রমণ
কানিজ আলমাস ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন দেশসহ চীন, সিঙ্গাপুর, শ্রীলংকা, নেপাল, ভারত প্রভৃতি দেশ ভ্রমণ করেছেন।
পদক-পুরস্কার
সফল উদ্যোক্তা আলমাস ডিএইচএল-ডেইলি স্টার আউটস্ট্যান্ডিং উইমেন ইন বিজনেস অ্যাওয়ার্ড ২০০৯ সহ বহু পুরস্কার, পদক ও সম্মাননা লাভ করেন।
গুণাবলি
পরিশ্রম, সাহস, স্বপ্ন, দূরদৃষ্টি, উচ্চাকাঙ্খা, সততা, আন্তরিকতা, সৌন্দর্যপ্রিয়তা, ভালোবাসা ইত্যাদি গুণ কানিজ আলমাস খানকে সৌন্দর্য-শিল্পী এবং মহিয়সী কর্মযোগী ব্যক্তিত্বে পরিগণিত করেছে।
লেখক:
এস এম আলী আজম
সহযোগী অধ্যাপক, ঢাকা কমার্স কলেজ ও শিল্পোদ্যোগ বিষয়ক লেখক