স্কুল শিক্ষার্থীদের অবস্থা : সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ

মাদক সেবনের দায়ে (বাথরুমের গিয়ে সিগারেটের মধ্যে গাজা ভরে সেবন ও কোল্ড ড্রিংক এর মধ্যে সিগারেটের তামাক দিয়ে পান) বাগেরহাট মোড়লগঞ্জের নবম শ্রেণির ৩ ছাত্রী বহিষ্কার। কিছু অভিভাবক বলেছেন বাসাতে তো মাদক সেবন শেখেনি, শিক্ষকরা দায়িত্ব পালনে অবহেলা করেছে।
# পরিপত্র অনুযায়ী শিক্ষক কোনো অবস্থাতেই শিক্ষার্থীকে শারীরিক, মানসিক শাস্তি দিতে পারবেন না, উপযুক্ত প্রমাণ পেলে চাকরিও চলে যেতে পারে।
এ অবস্থাতে একজন শিক্ষককে সব সময় উৎকণ্ঠার সাথে ক্লাস নিতে হয়, নাজানি কোন কথা মানসিক নির্যাতনের ক্ষেত্রের মধ্যে পড়ে!!!!!
আমি বহু অভিভাবককে দেখেছি তারা নিজেরাই সন্তানকে ভয় পান, যেখানে ছেলেমেয়ে ১০০% তাদের ওপর নির্ভরশীল। এখন কথা হলো ১০০% বাবা মায়ের ওপর নির্ভরশীল থেকেও যদি বাবা-মাকে ভয় না পায় তাহলে আমি শিক্ষক ( ঠুটো জগন্নাথ) সুন্দর ভাবে বুঝিয়ে, পড়িয়ে, নৈতিক শিক্ষা দিয়ে যদি না শোনে তো শিক্ষক কী করবেন? আগেই বলেছি শারীরিক ও মানসিক শাস্তিতেই কিন্তু চাকরি যাওয়ার সম্ভাবনা, টিসি দেওয়ার সাহস ও ক্ষমতা শতকরা ৫% প্রতিষ্ঠানের আছে কিনা আমার সন্দেহ। আমি কিন্তু সরকারি হাই স্কুল ও সরকারি কলেজ দুটো চাকরি করার অভিজ্ঞতা নিয়েই কথা বলছি, শিক্ষকদের নিরাপত্তা কোথায়? শিক্ষকদের ক্ষমতাই হলো নৈতিকতা আর আদর্শ শিক্ষা, সেই মধু যদি কোন শিক্ষার্থী না গ্রহণ করে বিষ গ্রহণ করে! আমার ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থীর বাবা বলেছিলেন প্রতিদিন ৫০০/- টাকা ছেলেকে নেশার জন্য না দিলে বাসার কোন কিছু আস্ত থাকবে না, স্যার প্লিজ আপনি একটু শাসনে রাখবেন! খুবই হাস্যকর! আমি তাকে কিভাবে শাসনে রাখতে পারি! না টিসির হুমকি দিতে পারি, না খাওয়াচ্ছি, না পরাচ্ছি ; আমি শুধুমাত্র তাকে পড়াচ্ছি তাও ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মাত্র ৫ ঘণ্টা সময়ের ৪৫ মিনিটের একটি ক্লাস তাও যদি বিদ্যালয়ে/ কলেজে আসে তাহলে। আর ছুটির সময় তো কথাই নাই। ৯টার ক্লাসে দ্বাদশ শ্রেণির মেয়ে ২০মিনিট দেরীতে আসলে কারণ জানতে চাইলে টোনের সাথে বলে ঘুম থেকে উঠতে দেরী হয়েছে, কিছু বলার সাথে সাথে উত্তর, ঘুম থেকে উঠতে তো দেরী হতেই পারে, বললাম তা পারে কিন্তু বিনয়ের সাথে তো বলবে। আমি বুঝতে পারছি না যে আমার মানসিক নির্যাতন করার পর্যায়ে পড়েছে কিনা।

# আমি দেখেছি শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন সমাবেশে উপস্থিত হয়ে ও জাতীয় সংগীত গাওয়ার মাধ্যমে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হতে বাধ্যকারী প্রতিষ্ঠান প্রধানকে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের গালি দিতে।
# ক্লাস চলাকালীন ইউনিফর্ম পরে শহরের রেস্টুরেন্টে, মোড়ে আড্ডা দেওয়া শিক্ষার্থীকে ধরে এনেছি সহকর্মীরা মিলে।
# কিছু শিক্ষার্থী বাথরুমে যে অশ্লীল কথা লেখে তা নিশ্চয় শিক্ষকরা শ্রেণিকক্ষে শেখান না।
# পরিবার বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোথাও কি ধর্মীয় ব্যাপারে কোন সঠিক শিক্ষা দেওয়া হয়? শেখানো হয় গুরুত্ব দিয়ে সমাজের প্রতি, দেশের প্রতি, পিতামাতার প্রতি, শিক্ষকের প্রতি সর্বোপরি মানুষের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য?
# শিক্ষককে শ্রদ্ধা করতে বাবা-মাকেই শেখাতে হবে, জনৈক প্রধান শিক্ষকের মত দাঁড় করিয়ে যদি শিক্ষা দিতে হয় বাবারে আমিতো তোমাদের শিক্ষক, আমাকে তো রাস্তাঘাটে একটা সালাম দিতে টাকা লাগে না!
# আমি বিদ্যালয়ে পড়াকালীন ১০ম শ্রেণির কিছু দুষ্টু ছেলে মেয়েদের টয়লেটের বদনাতে দয়ার গুড়া (খুব যন্ত্রণাদায়ক) দিয়েছিল, পরে ধরা পড়লে ৪/৫ জন ছেলেকে এক ফারুক স্যার মেরে দুটা লাঠি ভেঙে ফেলেছিলেন। এরপর আর তাদের কোন দুষ্টুমি করতে দেখিনি। এখন হলে কী করতেন, টিসি না লাঠি? কোনটাই তো পারবেন না, তাহলে?
# আমি বহুজনকে, বহু শিক্ষা প্রশাসনের লোককে দেখেছি শিক্ষকদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে, অবজ্ঞা করে ধমক দিয়ে কথা বলতে। আমার কথা হলো আমার সন্তান যারা আমার ওপর ১০০% নির্ভরশীল তাদেরও তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে অবজ্ঞা করে কোন কথা বললে কিছুই শোনে না, তা শিক্ষককে দিয়ে কী ভাবে করাবেন ?
# মনে রাখতে হবে শিক্ষকও চাকরি করেন, বেতন বৃদ্ধির কথা বলা হয় কথায় কথায়, আমার কথা বেতন কী শুধু শিক্ষকদের বৃদ্ধি করা হয়েছে, নাকি সকল চাকরিজীবীদের বৃদ্ধি করা হয়েছে?
# শিক্ষকরা কি মাদকদ্রব্যের ব্যবসা করেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে? শিক্ষকরা কি দামি এনড্রয়েড ফোন কিনে পর্যাপ্ত ডাটা কিনে দেন পর্ণ ভিডিও দেখার জন্য? সরকারি হাই স্কুলে বহু শিক্ষার্থীর মোবাইল এমনকি ৭ম শ্রেণির শিক্ষার্থীর মোবাইল চেক করেও দেখা গেছে পর্ণ ভিডিও ভরা। উল্লেখ্য মোবাইল আনা নিষিদ্ধ সত্ত্বেও চুরি করে আনে।

# কী নিরাপত্তা আছে আমার শিক্ষকের? বহু শিক্ষকের মাথা ফেটেছে, জীবন গেছে নকল ধরার কারণে, নকল করতে না দেওয়াতে, উত্তর বলাবলি করতে না দেওয়াতে। কই তাদের তো চিকিৎসা এবং কোন সম্মাননা দেওয়া হয়নি? তাহলে অন্য শিক্ষকরা ভালো কাজ করতে প্রণোদনা পাবে কীভাবে?

# আপনার সন্তানকে কি আদর্শ, নীতি, নৈতিকতা শেখার জন্য বিদ্যালয় / কলেজে পাঠান ? নির্ভর করেন ? A+ এর প্রতিযোগিতায় শুধু প্রাইভেট পড়ানোর জন্য পাগল হয়ে যান। ক্লাসে আসতে বাধ্য না করালে তো ওই সময় প্রাইভেট পড়ে বেড়াতে থাকে এ স্যার, ও স্যার, এ কোচিং ও কোচিং। তাহলে দায় কার?
# কিছু শিক্ষক প্রাইভেট পড়তে বাধ্য করেন শুনেছি, তা আপনারা কি নাকে তেল দিয়ে ঘুমান? প্রতিবাদ করতে পারেন না কর্তৃপক্ষের কাছে? খোঁজখবর নিয়ে দেখবেন ওই শিক্ষককে নষ্ট করেছেন অতি প্রাইভেট উৎসাহী অভিভাবক আপনারা। আমাকে ১২/১৫ হাজার টাকার প্রস্তাব দিয়ে বাসায় পড়াতে যেতে অনুরোধ করা হয়েছে বহুবার। আমাকে রাজি করাতে ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু আরেক শিক্ষক তো পড়াতে গেছেন। করণ তার প্রয়োজনটাও অনেক বেশি, ৩/৪ টা ভাইবোন পড়াতে হয়, বাবা-মায়ের জন্য টাকা পাঠাতে হয়। তাহলে এমন প্রস্তাব কেউ না কেউ গ্রহণ করবেনই। এর পুরো দায় কিন্তু অভিভাবকের।
# এবার ভাবুন দায়-দায়িত্ব দিনরাত্রি ৪৫ মিনিট ক্লাস নিচ্ছেন যে শিক্ষক তার বেশি নাকি অভিভাবক, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের বেশি?
এ অবস্থার এখনই যদি লাগাম দেওয়া না যায়, সত্যি অদূর ভবিষ্যৎ-এ দেশের শিক্ষার্থী ও যুবসম্প্রদায়কে অনিবার্য ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা অসম্ভব হয়ে পড়বে।

তাই আসুন প্রত্যেকের অবস্থান থেকে সচেতন হই, আমাদের সন্তানদের মানুষের মতো মানুষ হিসবে গড়ে তুলতে ও দেশের মঙ্গলের জন্য একসাথে কাজ করতে হবে; দোষারোপ না করে বরং আত্মবিশ্লেষণ করি।

লেখক :::
মো: মেহেদী হাসান
প্রভাষক, বাংলা
৩৩তম বিসিএস(সাধারণ শিক্ষা)
সরকারি এম এম কলেজ, যশোর।)

ক্যারিয়ার, ট্রেনিং ও স্কলারশিপ সম্পর্কে
exclusive তথ্য পেতে ফেসবুক গ্রুপে
জয়েন করুন-

Career Intelligence | My Career Partner

Scroll to Top