মাসুমা রায়হানা প্রমা:::: সিভি ( Curriculam Vitae) হচ্ছে- একজন ব্যক্তির অভিজ্ঞতা, যোগ্যতা, ব্যক্তিগত তথ্য সম্বলিত লিখিত রূপ। উত্তর আমেরিকায় সিভিকে রিজিউমে (Résumé) বলা হয়ে থাকে। সিভি চাকরি অথবা বিভিন্ন আনুষ্ঠানিক কর্মসম্পাদনের যোগ্যতা যাচাইয়ের প্রথম ও মূখ্য মাধ্যম। এই প্রবন্ধে আমরা জানাবো সিভি লেখার নিয়ম সম্পর্কে। এছাড়া আছে একটি নমুনা সিভি, যা দেখে আপনি তৈরি করতে পারবেন নিজের সিভি।
একটি সুন্দর সিভির বৈশিষ্ট্য
কোনো কোম্পানি চাকরির জন্য অথবা একজন শিক্ষার্থীকে বিশেষ কাজ, যেমন – গবেষণা/স্কলারশিপ ইত্যাদির জন্য নির্বাচন করার জন্য সিভিই হলো মূল মাধ্যম। সাধারণত একজন ব্যক্তিকে সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকা হয় তার সিভি দেখেই৷ তাই সিভিটি সঠিকভাবে তৈরি করা অত্যন্ত প্রয়োজন৷ অনেকেই কাজেকর্মে দক্ষ, যোগ্য ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন। তবে একটি পূর্ণাঙ্গ সিভি তৈরি করা সম্পর্কে ভালোভাবে জানে না। ফলে চাকরির ইন্টারভিউতে ডাক পান না তারা। আসুন আমরা ভালো সিভির কিছু বৈশিষ্ট্য জেনে নিই।
ভালো সিভির বৈশিষ্ট্য
আমাদের দেশে ক্রনোলজিকাল ফরম্যাটের সিভিই বেশি প্রচলিত। এ সিভিটিতে চাকরির পদবি, স্থান, কার্যকালকে শিরোনাম হিসেবে রেখে হাইলাইট করা হয়। কেউ দীর্ঘদিন কোনো পেশায় কার্যরত থাকলে এটি অধিক উপযোগী হয়।
- ক্যারিয়ার লক্ষ্য
- এলাইন টেক্সটের সিভি
- মানসম্মত আকার – দু’ পেইজের বেশি না হওয়াই উত্তম
- শব্দ ও ভাষা নির্বাচন – প্রত্যাশিত কাজের সাথে সম্পর্কযুক্ত হওয়া প্রয়োজন ও সহজ ভাষায়।
- সঠিক ও সঙ্গতিপূর্ণ তথ্য থাকতে হবে
- ব্যক্তিগত তথ্য
- নিজেকে যোগ্য হিসেবে উপস্থাপনের জন্য যেসব দক্ষতা আছে, অভিজ্ঞতা – শিক্ষাক্ষেত্রে রিপোর্ট তৈরি, মাঠকর্ম গবেষণা এসবও উল্লেখ করতে হবে।
- প্রতিষ্ঠানুযায়ী সিভি তৈরি করা অর্থাৎ, প্রতিটি চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানের জন্য আলাদা সিভি তৈরি করা, সে প্রতিষ্ঠান ও পদে চাকরির আগ্রহকেই প্রমাণ করে।
- যোগাযোগের জন্য মৌলিক তথ্য প্রদান করতে হবে।
সিভি সম্পর্কে জরুরি কিছু প্রশ্নোত্তর
সিভি লেখার নিয়ম : একটি পূর্ণাঙ্গ সিভি তৈরি করবেন যেভাবে
ডান দিকে ফর্মাল ছবি দিয়ে বাম দিক হতে লেখার মাধ্যমে সিভি শুরু করুন। এক্ষেত্রে নিম্নোক্ত প্রক্রিয়া অনুসরণ করুন।
* নাম
* ঠিকানা : বর্তমান ঠিকানা
* মোবাইল নং : যোগাযোগের জন্য একটি সক্রিয় নাম্বার দিন
* মেইল ঠিকানা : ই-মেইল ঠিকানা দিন। এক্ষেত্রে নিজের নামে ইমেইলটি বাঞ্ছনীয়। অনেকে উল্টাপাল্টা বিভিন্ন শব্দ দিয়ে ইমেইল ঠিকানা তৈরি করেন। যেটা কোনোভাবেই আপনার সুন্দর ব্যক্তিত্বের জন্য সহায়ক না।
লক্ষ্য : যে কাজের জন্য সিভি প্রদান হচ্ছে, তার সাথে সংশ্লিষ্টতা রেখে লক্ষ্য হবে।
অভিজ্ঞতা :
* কর্মক্ষেত্রে – কোথাও কর্মরত অবস্থায় থাকলে/ আগে কাজ করে থাকলে তা কোম্পানির নাম ও পদবিসহ উল্লেখ করুন।
* শিক্ষারত অবস্থায় নানান অভিজ্ঞতা : সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অথবা গবেষণা/মাঠকর্ম/প্রতিবেদন ইত্যাদি কাজে যুক্ত থেকে থাকলে তা তুলে ধরুন সিভিতে।
শিক্ষাগত যোগ্যতা : এ পর্যন্ত শিক্ষাগত যোগ্যতা উল্লেখ করুন। এক্ষেত্রে সর্বশেষ অর্জিত সনদটির কথা আগে লিখুন। এরপর তার আগেরটি। সবার আগের অর্জিত সনদের কথা লিখবেন সবার শেষে। পরীক্ষার নাম, সন, বোর্ড ও জিপিএ উল্লেখ করুন। বর্তমানে অধ্যয়নরত হলে তাও উল্লেখ করতে ভুলবেন না।
দক্ষতা : যে কাজে দক্ষতা রয়েছে তা উল্লেখ করুন।
শখ : এক্ষেত্রে অবসর সময়ে কী কাজ করতে ভালোবাসেন তা উল্লেখ করুন। তবে সেটা যদি আপনার কাজের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হয় তাহলে। নতুবা জাগার অপচয় না করাই ভালো।
ব্যক্তিগত তথ্য : বাবা মায়ের নাম, বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা, আপনার জন্মতারিখ ইত্যাদি উল্লেখ করুন। ধর্মীয় পরিচয় দেয়া যেতে পারে। তবে আবশ্যিক না। আপনি বিবাহিত নাকি অবিবাহিত তাও উল্লেখ করা যেতে পারে।
রেফারেন্স : রেফারেন্স সিভির অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ। রেফারেন্সের অংশে চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানে দায়িত্বরত চেনা কেউ থেকে থাকলে তার নাম, পদবি উল্লেখ করা যেতে পারে। শিক্ষাক্ষেত্রে, শিক্ষকের নাম উল্লেখ করা যেতে পারে। আর তাদের সাথে যোগাযোগের ফোন ও ইমেল ঠিকানা উল্লেখ করুন।
রেফারেন্সে এমন কারো নাম দিতে হবে, যে কি-না আপনাকে ব্যক্তিগতভাবে চেনে। যার নাম দেওয়া হচ্ছে, অবশ্যই নাম দেয়ার আগে তার অনুমতি দিতে হবে।
স্বাক্ষর : সর্বশেষ আপনার স্বাক্ষর ও তারিখ দিন।
পরিশেষে বলা যায়, সিভি হচ্ছে আপনার বিজ্ঞাপন। যার মাধ্যমে নিজের যোগ্যতাকে তুলে ধরবেন চাকরিদাতার কাছে। তবে অবশ্যই অপ্রয়োজনীয় তথ্য এড়িয়ে যেতে হবে। আর কোনোভাবেই ভুল তথ্য দেয়া যাবে না।